Dbox Magazine Test Issue

Page 1

পরীক্ষামূলক সংখ্যা


বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ফুটবল ম্যাগাজিন


সূচী

০২

০২ ফুটবল র�োমান্টিসিজমের প্রাচীন নায়ক ১৯২০ সালের পর ব�োলগনা, তুরিন�ো, ইউয়ভেন্তস আর জেন�োয়ার দাপটে

০১

০১ একজন বিস্মৃতপ্রায় কিংবদন্তির গল্প গল্পটি একজন ক্ষেপাটে ব্যক্তির জীবন নিয়ে। যিনি প্রায় একশ বছর আগে পৃথিবীর বুকে নিজের সাফল্যগাঁথা রচনা করেছিলেন আপন মেধায়। তাঁর অর্জন আজ একশ বছর পরেও উজ্জ্বল হয়ে আছে ইতিহাসের বুকে - লিখেছেন সাইফুল সিয়াম

আন্ডারডগ হয়ে সিরি আতে পড়ে থাকত ইন্টার মিলান। অবশেষে এল�ো ১৯৩০ সালের লীগের শির�োপা নির্ধারনী ম্যাচ; মুখ�োমুখি জেন�োয়া আর ইন্টার - লিখেছেন রাইসু ল ইসলাম

০৪

০৩ 0৩ দুনিয়া কাঁপান�ো ছয় মিনিট

0৪ দলবদলের নানান কূট-ক�ৌশল রবি স্যাভেজ! ইংলিশ ফুটবলের একজন বহুল আল�োচিত ও সমাল�োচিত খেল�োয়াড়। ২০০৮ সালে ‘দ্য ডেইলি মেইল’ তাকে প্রিমিয়ার লীগ ইতিহাসের সবচেয়ে ‘ন�োংরা’ খেল�োয়াড় হিসেবে চিহ্নিত করে। কারণটা নিহিত ছিল তার খেলার ধরণের মধ্যেই। তিনি এতটাই ‘ফাউল’ করে খেলতেন যে, তিনি ওই

“দুনিয়া কাঁপান�ো দশ দিন” – রাশিয়ার সময়টায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হলুদ ‘অক্টোবর রেভেল্যুশন’ নিয়ে লেখা জন কার্ড প্রাপ্ত খেল�োয়াড় ছিলেন - লিখেছেন রিডের বিখ্যাত বই। তবে আজ সেই শাওন আল রাজী দশ দিনের কথা বলব�ো না। আজ বলব�ো “দুনিয়া কাপান�ো ছয় মিনিট”এর কথা। মাত্র ছয় মিনিট আর তাতেই রচিত হল�ো ফুটবলের নতুন ইতিহাস। পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দেয়া সেই ছয় মিনিট! - লিখেছেন মীর রুবাইয়াত অভীক


০৬ আমার জীবনী ০৫ ছ�োট্ট পাখি ও ফুটবল ইতিহাসের সেরা তিন মিনিট!

রক্ত লাল বর্ণের একজন। ডাগ আউটে

একটি ছ�োট্ট পাখি যার ডানা দুট�ো

বেশ পরিচিত। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন,

ঠিক অন্যদের মত নয়! ডান ডানাটি ভিতরের দিকে বাকাঁন�ো আর অন্যটি ছয়

বসে চুইংগাম চিবুচ্ছেন আবার মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে সাইড থেকে মাঠের ছেলেদের নির্দেশনা দিচ্ছেন - ফুটবলে এই দৃ শ্যটা তাঁর নামটির সাথে পরিচিত গ�োটা ফুটবল বিশ্ব - লিখেছেন ম�োহাম্মাদ আসিফ

সেন্টিমিটার ছ�োট! তবুও পাখিটির উড়তে

আর মনমুগ্ধকর - লিখেছেন ম�োহাম্মাদ আসিফ

০৫

স্প্রিন্ট, ড্রিবলিং, নিপুন দক্ষতায় গ�োল করার অসাধারন সহজাত ক্ষমতা ছিল সামাদের। চ�োখ ধাঁধান ক�ৌশল আর মনমুগ্ধকর ফুটবলীয় দক্ষতায় মাতিয়ে রেখেছিলেন পুর�ো উপমহাদেশকে। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর জন্যই পেয়েছেন ফুটবলের জাদুকর খেতাব! - লিখেছেন ম�োহাম্মাদ

ক�োন সমস্যাত�ো হয়ই না বরং উড়ার দিকে তার ক�ৌশল সবার সেরা, উন্নত

০৭ পেলে, ক্রুইফ, ম্যারাড�োনা, বেষ্টদের চেয়ে কি কম ছিলেন আমাদের ফুটবল জাদুকর সামাদ?

০৬

০৮ গ�োললাইন প্রযুক্তির অভিষেকঃ বিতর্কের পরিসমাপ্তি নাকি বিভ্রান্তির সূচনা? বহুদিনের আল�োচনা-সমাল�োচনা পেরিয়ে, অসংখ্য বিতর্কিত ও ‘ভ�ৌতিক’ গ�োলের উদাহরণকে সামনে রেখে এ ম�ৌসু ম থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে গ�োললাইন প্রযুক্তির - লিখেছেন সাইফুল সিয়াম

আসিফ

০৭

০৮


সম্পাদকীয় নতুন পথে হেঁটে চলার শুরুটা হয় এভাবেই! আর�ো একটি নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এল�ো Dbox। এবার আমরা প্রথমবারের মত�ো আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম ফুটবল নিয়ে অনলাইন ডিজিটাল ম্যাগাজিন যার পুর�োটাই বাংলায়। আমরা আর�ো একবার এগিয়ে যাবার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তদের হাতে যুগ�োপয�োগী কিছু তুলে দেবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। যদিও আমরা এখন�ো আমাদের এই প্রচেষ্টার অত্যন্ত ক্ষুদ্র এক পর্যায়ে রয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি এই ছ�োট প্রচেষ্টা গুল�োর মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।


একজন বিস্মৃতপ্রায় কিংবদন্তির গল্প ক�োথায় তাঁর দেহাবশেষ শায়িত রয়েছে তার নেই ক�োন নিশ্চিত চিহ্নপ্রমাণ। এভাবেই এক অনবদ্য মেধাবী কিংবদন্তির শুরু থেকে অন্তিম পরিণতি পর্যন্ত মিশে আছে আক্ষেপ, রহস্য, বেদনা, অবহেলা আর চূড়ান্ত নিরবতা গল্পটি একজন ক্ষ্যাপাটে ব্যক্তির জীবন নিয়ে। যিনি প্রায় একশ বছর আগে পৃথিবীর বুকে নিজের সাফল্যগাঁথা রচনা করেছিলেন আপন মেধায়। তার অর্জন আজ একশ বছর পরেও উজ্জ্বল হয়ে আছে ইতিহাসের বুকে। প্রচন্ড একর�োখা মন�োভাব তাকে পৌঁছে দিয়েছিল সাফল্যের উচ্চতম শিখরে। কিন্তু এই গল্প শুধুমাত্র তার সাফল্যকে ঘিরে নয়। তার জীবনের অন্তিম মূহুর্তগুল�োও এই গল্পের অংশ। যে সময়টা নিয়ে আছে হাজার�ো সংশয়, ক�ৌতুহল আর অনিশ্চয়তা। পরিতাপের বিষয় হল�ো প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা ও রহস্যে ঘেরা তার জীবনের পরিসমাপ্তি। নিজের সেই একগুঁয়ে মানসিকতাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল�ো। তাঁর বেঁচে থাকাই কঠিন করে দিয়েছিলতাঁর জেদ। করুণ পরিণতি ও লক্ষ্যহীন বেঁচে থাকায় সমাপ্তি পেয়েছিলএই কিংবদন্তির জীবনকাহিনী। প্রাপ্য সম্মাননা সেই দুর্বিষহ বেঁচে থাকায় ছিলভিত্তিহীন কল্পনামাত্র। জ�োটেনি প্রিয়জনের সাহচর্য, একটুখানি মমতা ভাল�োবাসা। কালের প্রবাহে প্রকৃতির ইশারায় যথাসময়ে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। আজও তাঁর সমাধিস্থল নিয়ে রয়েছে সংশয়। হারিয়ে গেছেন অন্য সবার মত�ো কালের অতল গহ্বরে। বিশ্বসংসারে নেই আজ তাঁর ক�োন অস্তিত্ব। কিন্তু তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখার দাবিটা আজ সময়ের। পাঠক হয়ত�ো ভাবছেন, এই গল্প এখানে কেন? প্রিয় পাঠক, আপনার মনের গহীন ক�োণে জেগে ওঠা সন্দেহটাই সত্যি। গল্পটা একজন ভুলতে বসা ফুটবল কিংবদন্তির জীবনকে ঘিরে। আসু ন তবে গল্পে প্রবেশ করা যাক।


শুরুতেই একটি মফস্বল শহরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই পাঠককে। মফস্বল শহরটির নাম ট�োঙ্গালা। স্বাভাবিকভাবেই কখন�ো জায়গাটির নাম শ�োনার কথা নয় আপনার। অস্ট্রেলিয়ার ছ�োট্ট অনুন্নত ও অচেনা এক শহর এই ট�োঙ্গালা। অস্ট্রেলিয়ার মেলব�োর্ন নগরী থেকে প্রায় ১৪০ মাইল উত্তরে গেলে দেখা মিলবে ট�োঙ্গালা নামের এই ক�োলাহলবিহীন মফস্বল শহরের। এই শহরে নিরিবিলি পরিবেশে শান্তিতে বসবাস করছে মাত্র ১৬২৩ জন অধিবাসী। তার চেয়েও অধিক সংখ্যক গৃহপালিত পশুর অবস্থান এই ট�োঙ্গালায়। এই শহরে বিশ্ববিখ্যাত নেসলে ক�োম্পানির ছ�োট্ট একটি কারখানা আছে যেখানে প্রস্তুত হয় ম্যাগী নুডলস, স্যুপ ও সস। তাদের কাছ থেকে এই শহর সম্পর্কে জানা গেল�ো অনেক কিছু । এই ট�োঙ্গালা শহর মূলত বিখ্যাত তাদের অসাধারণ স্বাদের মিল্কশেক, স্বর্ণালি গরু এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার লড়াকু ‘লাইট হর্স ব্রিগেড’কে সম্মাননা জানিয়ে তৈরি করা স�ৌধের জন্য। ‘দ্যা গ�োল্ডেন কাউ ডেইরি এজুকেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম সেন্টার’ হল�ো পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে এই শহর ভ্রমণের মূল আকর্ষণ বিন্দু। এখানেই তৈরি হয় প্রায় ৩৯ প্রকার স্বাদের মিল্কশেক যা অস্ট্রেলিয়ার সেরা বলে গর্ব করে ট�োঙ্গালাবাসীরা। কিন্তু এই ট�োঙ্গালা সম্পর্কে এত কিছু বলার কারণ একটাই। ট�োঙ্গালার এসব গর্ব ও ঐতিহ্যের বদান্যতায় বিখ্যাত হওয়ার বাইরেও রয়েছে আর�ো একটি কারণ। এই গল্পের নায়ক সেই কিংবদন্তি ফুটবলারের পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিলএই শহরে। এই শহর তাঁর জন্মস্থান নয়। নয় তাঁর সফলতা অর্জনের আল�োকিত সময়ের স্মৃতিবাহক। এই শহরেই জীবনের অন্ধকারতম সময় অতিবাহিত করেছেন এই কিংবদন্তি। সেই কথায় পরে আসছি। পাঠককে আর অন্ধকারে রাখব�ো না। এবার আপনাকে বলব�ো এই গল্পের মূল চরিত্র সেই প্রতিভাবান ক্ষেপাটে ফুটবলার সম্পর্কে। এই ভদ্রল�োকের নাম অ্যালেক্স ‘স্যান্ডি’ ইয়ং। জাতে স্কটিশ। ১৮৮০ সালের ২৩ শে জুন স্কটল্যন্ডের

স্ল্যামন্যানে জন্ম তাঁর। ক্যারিয়ারের সিংহভাগ খেলেছেন প্রিমিয়ার লীগের কয়েকটি ক্লাবের হয়ে। তবে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে শুরুটা হয়েছিলনিজের শহরের ক্লাব স্ল্যামন্যান জুনিয়র্সের হয়ে। এরপর ১৮৯৯ সালে পেইসলি, ১৮৯৯০১ সাল পর্যন্ত ফলকির্কের হয়ে খেলেছেন। ১৯০১ সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত মাঠ কাপিয়েছেন এভারটনের হয়ে। আজও এভারটনের কিংবদন্তিদের নামের তালিকায় উজ্জ্বল হয়ে আছে তাঁর নাম। খেলেছেন টটেনহ্যাম ও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে। স্কটল্যান্ডের হয়েও খেলেছেন। যদিও জাতীয় দলে পান নি তেমন সাফল্য। তবে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা এই এভারটনের হয়েই পার করেছেন ইয়ং। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম দ্যা লিভারপুল ইক�ো তাঁকে ইতিহাসের অন্যতম মন�োমুগ্ধকর ফুটবলার হিসেবে আখ্যায়িত করে। ১৯০৬ সালে এভারটনের এফএ কাপ জয়ের মূল কারিগর এই স্কটিশ। ফাইনালে তাঁর মহামূল্যবান গ�োলেই তৎকালীন পরাশক্তি নিউক্যাসলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় এভারটন। ১৯০৬-০৭ ম�ৌসু মে প্রিমিয়ার লীগে (তৎকালীন প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ) ২৮ গ�োল করে সর্বোচ্চ গ�োলদাতা হিসেবে পরিসংখ্যানের পাতায় ঠাঁই করে নেন অ্যালেক্স। এভারটনের সর্বকালের ইতিহাসে লীগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ�োলদাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। ২৯৩ ম্যাচে ১১৫টি গ�োল করেছেন লীগে এভারটনের হয়ে। এভারটনের শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তি ডিক্সি ডীনের পর গ্রায়েম শার্পের মত সফল খেল�োয়াড়কে পিছনে ফেলে লীগে এভারটনের সর্বোচ্চ গ�োলদাতার তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন অ্যালেক্স। সব ধরণের প্রতিয�োগিতা মিলিয়ে এভারটনের সর্বকালের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ গ�োলদাতা (৩১৪ ম্যাচে ১২৫ গ�োল) তিনি। এভারটনের হয়ে করেছেন পাঁচ পাঁচটি হ্যাটট্রিক। ১৯১১ সালে ক্লাব ছেড়ে পাড়ি জমান টটেনহ্যামে ক্যারিয়ারের দিগন্ত রেখায় এসে সাউথ লিভারপুল ও প�োর্ট ভ্যালের হয়ে খেলেন তিনি। এরপর ১৯১৪ সালের মে মাসে পাড়ি জমান সু দূর অস্ট্রেলিয়ায়।

মাঠের অ্যালেক্স সম্পর্কে জানতে গিয়ে অনেক চমকপ্রদ তথ্য বের হয়ে আসে। ১৯২৬ সালে দ্যা মিরর পত্রিকা অ্যালেক্সকে ‘ফুটবল মাঠে বিশ্বের সম্ভবত শ্রেষ্ঠ ফুটবল শিল্পী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। মিরর আর�ো বলেছিল�ো, “সেন্টার ফর�োয়ার্ড হিসেবে খেলার একটি মূলধারার স্বতন্ত্র ধারণা অ্যালেক্সের ছিল�ো। কখন�ো কখন�ো সে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে দুর্ভিক্ষের সৃ ষ্টি করত�ো। আক্রমণে উইং ব্যবহারের অসাধারণ ক্ষমতাও ছিলতাঁর। খেলায় ফলাফল যেদিকেই থাকুক না কেন, প্রতিটি খেলার অনুপ্রেরণা নিজের ভেতর সে নিয়ে নিত�ো দক্ষতার সাথে।” দ্যা লিভারপুল ইক�োতে একবার এক সমর্থক অ্যালেক্স সম্পর্কে লিখেছিলেন, “১৮৮০ সালের সেই সময়টা থেকে (যখন ডিক এবং ডবসন খেলতেন এভারটনের হয়ে) আমি এভারটনের একজন নিয়মিত দর্শক হিসেবে আছি। আমি প্রায় প্রতিটা ম্যাচ দেখেছি। আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, অ্যালেক্স ইয়ং এভারটনের নীল জার্সি গায়ে চাপিয়ে খেলা শ্রেষ্ঠ খেল�োয়াড়। অ্যালেক্স এই ক্লাবের বিরাট সম্পদ ছিল এবং আছে।” ১৯১১ সালে যখন এভারটন ছাড়েন অ্যালেক্স তখন তাকে ক্লাবে রেখে দিতে আন্দোলন হয়েছিল বলেও জানা যায়। কিন্তু তিনি এভারটন ছেড়ে যান। ১৯১৪ সালেই ফুটবল থেকে বিদায় নেন এই মহারথী। অস্ট্রেলিয়ার সেই ছ�োট্ট শহর ট�োঙ্গালায় ফিরে আসছি আবার। ১৯১৪ সালে ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান�ো অ্যালেক্স ইয়ং ট�োঙ্গালায় এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেই অ্যালেক্সের ভাই জন ইয়ং বসবাস করতেন যিনি পেশায় মূলত একজন খামারি ছিলেন। অ্যালেক্স অস্ট্রেলিয়ায় আসার পূর্বে জনের সাথে তাঁর সম্পর্কটা ভাল�োই ছিলবলা চলে। কেননা, ১৯১১ সালে জনের সাথে য�ৌথভাবে ট�োঙ্গালায় একটি খামারের পেছনে ম�োটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেন অ্যালেক্স।


ঝগড়া বেঁধে যেত�ো দুই ভাইয়ের মাঝে প্রায়শই। যে বিবাদ রূপ নিত�ো মারামারিতে। কখন�ো লাঠি, কাঁটা আর বেলচাও হাতে তুলে নিতে দ্বিধা করতেন না দুই ভাই। রগচটা স্বভাবের অ্যালেক্স নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন না স্বাভাবিকভাবেই। সময়ের সাথে সাথে তাদের মাঝে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। কেননা, জন ইয়ং তার ভাই অ্যালেক্সের কাছ থেকে প্রায়ই বড় অঙ্কের অর্থ ধার করে যাচ্ছিল�ো, যা সে কখন�োই শ�োধ করত�ো না। এভাবেই কাটছিলদিনগুল�ো। ১৯১৫ সালের ৩০ নভেম্বর ইয়ং ভ্রাতৃদ্বয়ের এমনই এক ঝগড়া সামনে থেকে দেখেছিলেন এক পারিবারিক বন্ধু। সেইদিন ঝগড়ার শেষটা হয়েছিল অ্যালেক্সের খামার দখল করে নেবার হুমকি দিয়ে। সেই পারিবারিক বন্ধুর কাছ থেকে জানা যায়, সেই রাতে দুই ভাই খামারের উপর নিজেদের অধিকার নিয়ে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছিল। অ্যালেক্স পুর�ো খামার তাঁর নিজের বলে দাবি করছিল�ো। অন্যদিকে, খামারের অর্ধেকটা নিজের বলে দাবি করছিল জন। বন্ধুটি তখন প্রস্থান করতে চাইলে তার কাছে অ্যালেক্স ও জন এসে দুইজনই আলাদাভাবে নিজেদের জীবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে। তাকে থেকে যেতেও অনুর�োধ করেছিল তারা। তাদের অনুমান বিশেষ কিছু ভুল ছিল�ো না। পরের দিন সকালবেলা। ১লা ডিসেম্বর ১৯১৫। খামারে কাজ করছিলেন জন। অ্যালেক্স সেখানে এসে পুনরায় অর্থ ও খামার নিয়ে ঝগড়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে অ্যালেক্স বন্দুকের গুলি চালান জনের ওপর। পরে নিজে ঘরে ফিরে গিয়ে নিজের মাথায়ও গুলি চালান। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান অ্যালেক্স। পুর�ো দিন আহত অবস্থায় কাটান�ো জন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন সেদিন রাতে। মৃত্যুর পূর্বে জন পুলিশকে জানান, তিনি খামারে গরুর দুধ সংগ্রহ করছিলেন। এসময় অ্যালেক্স সেখানে এসে তাকে হত্যার হুমকি দেন। কিন্তু জন মনে করেছিলেন অ্যালেক্স তাকে ভয় দেখাচ্ছিলেন। জন বন্দুক সরিয়ে রাখতেও বলেছিলেন তার ভাইকে। কিন্তু ক�োন কথা না শুনে অ্যালেক্স গুলি চালিয়েছিলেন বলে দাবি করে যান জন। অ্যালেক্সের মুখেও মেলে একই বর্ণনা। তবে তিনি দাবি করেন, তিনি ঐদিন সকালে খামারে গিয়ে তার ভাইয়ের কাছে ধারের অর্থ ফেরত চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাঁর ভাই জন ইয়ং খামারের ভেতরে ৪০ গজ পথ তাঁকে বেলচা হাতে ধাওয়া করায় তিনি গুলি চালাতে বাধ্য হন। পরে জনের বেলচা হাতে তিনি ঘরে ফিরে যান। গুলি চালান নিজের মাথায়ও। গ্রেফতার হন অ্যালেক্স। তাঁর বিরুদ্ধে ভাইকে হত্যার অভিয�োগ আনে পুলিশ। মামলা দায়ের হয় তাঁর নামে। নিজের করা গুলি অ্যালেক্সের তেমন ক�োন ক্ষতি করতে পারেনি। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এমনটাই ধারণা করা হচ্ছিল�ো। কিন্তু হঠাৎই ঘটনা ম�োড় নেয় অন্যদিকে। গল্পের শেষ এখানেই নয়। এবার একটু আল�োকপাত করা যাক ব্যক্তি অ্যালেক্সের মাঠে কিংবা মাঠের বাইরের আচরণের উপর। অ্যালেক্স গ্রেফতার হওয়ার পর লয়েড’স উইকলি নামের এক সাপ্তাহিক পত্রিকায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু পর্যবেক্ষণ। জানা যায় মাঠের অ্যালেক্সের কথা। জন্মগতভাবেই অ্যালেক্স খিটখিটে, রগচটা ও ঝগড়াটে স্বভাবের ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় সেখানে। নিজের ইচ্ছামত চলার সু য�োগ না পেলে বিগড়ে বসতেন তিনি। তাই মাঠেও সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে নানা অভিয�োগ করে যেতেন তিনি। তাঁর অদ্ভু ত সব বৈশিষ্ট্য ছিল বলেও জানা যায় লিভারপুল ইক�োর এর ১৯১৫ সালের দিকে করা এক প্রতিবেদনে। একা থাকতে ভালবাসতেন তিনি। দলের অনুশীলনে দূ রের পথে হাঁটতে গেলে দীর্ঘসময়েও তাঁর মুখ দিয়ে খুব কম কথাই শ�োনা যেত�ো। ক�ৌতূহল জাগান�ো এক মেজাজ ছিল তাঁর। মাথার অল্প কিছু চুল যা তাঁর কপালে ঠাঁই করে নিয়েছিল�ো, সেগুল�ো কেটে ফেলেছিলেন তিনি। এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার হয়, মাথার যন্ত্রণায় ভুগতেন অ্যালেক্স। পরের বছর লিভারপুল

ইক�োর প্রতিবেদনে উঠে আসে নতুন খবর। লিভারপুল শহরে প্রকাশ্যে ল�োকমুখে অ্যালক্সের অত্যন্ত অস্বাভাবিক উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতার ব্যাপারটি রটিয়ে গেছে যা অনেকাংশেই সত্য ছিল�ো। সবচেয়ে চমকপ্রদ খবরটি যেন সময়ের অপেক্ষায় ছিল�ো। সময় তখন ১৯১৬ সালের জানুয়ারি। অ্যালেক্স তখন ভাই হত্যার দায়ে পুলিশি হেফাজতে। খবর আসে, ১৯১১ সালে যখন অ্যালেক্সকে টটেনহামের কাছে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এভারটন, তখন সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল সমর্থকরা। এমনকি বিপক্ষে অবস্থান নেয় ক্লাবের শেয়ারহ�োল্ডাররা। শেয়ারহ�োল্ডারদের সাথে এক সভায় ১৯১১ সালে এভারটনের চেয়ারম্যান ড. জেমস ব্যাক্সটার বলেছিলেন, “এমন কিছু কথা আমাদের পরিচালকদের কানে এসেছে যা শেয়ারহ�োল্ডাররা এখন�ো জানেননা।” ১৯১৬ সালের জানুয়ারি মাসেই এক সভায় বসে এভারটন কর্তৃপক্ষ এবং শেয়ারহ�োল্ডাররা। সভার একপর্যায়ে আল�োচনা হয় অ্যালেক্সের গ্রেফতার ও তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে। চমকটা এসেছে এই সভার শেষে। অ্যালেক্সের বিরুদ্ধে দায়ের করা ভাই হত্যা মামলায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে তারা। অ্যালেক্সের পাশে এসে দাঁড়ান�োর প্রতিশ্রুতি আসে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। অবাক হয়ে ভাবছেন পরিচ্ছন্ন প্রতিমূর্তির একটি ফুটবল ক্লাব কর্তৃপক্ষ কেন ও কীভাবে একজন হত্যাকারীর পাশে এসে দাঁড়াতে চায়? অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক, যেমনটা হতবাক হয়েছিল সবাই। সবাইকে পিলে চমকে দেয়া এক তথ্য দেয় এভারটন কর্তৃপক্ষ। অ্যালেক্সের বিরুদ্ধে আনিত অভিয�োগের বিচারকার্য পরিচালনাকারী অস্ট্রেলিয়ার আদালতের কাছে তারা প্রমাণ করতে পারবে যে, অ্যালেক্স মানসিকভাবে অসু স্থ। তারা পরবর্তীতে ট�োঙ্গালার মেয়রের কাছে লিখিত ভাবে জানান, তাদের কাছে ১৯০১-১৯১১ সাল পর্যন্ত এভারটনে খেলার সময় অ্যালেক্সের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিবেদন ছিল�ো।


তারা দাবি করেন শুরু থেকেই মানসিকভাবে সু স্থতা পরিলক্ষিত হয়নি অ্যালেক্সের প্রতিবেদনগুল�োতে। শেষরক্ষা করতে পেরেছিল এভারটন কর্তৃপক্ষ। হত্যার মামলার গুরুত্ব নামিয়ে আনা হয় ‘বেআইনী কিন্তু অনিচ্ছাকৃত মানবহত্যা’ শ্রেণীতে যা ‘ম্যানস্লটার কেস’ নামে অভিহিত করা হয়। বিচারকার্যের শুনানির দিন মাত্র এক ঘন্টা সময় নেন বিচারকরা। তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় অ্যালেক্সকে। অস্ট্রেলিয়ার কারাগারে পাঠান�ো হয় তাকে। দাড়িহীন পরিষ্কার গাল নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করেন অ্যালেক্স। কিন্তু তিন বছর পর ১৯১৯ সালের জুলাই যখন বের হন অ্যালেক্স, ততদিনে শ্মশ্রুমণ্ডিত হয়ে গেছেন অ্যালেক্স। বের হওয়ার পর খুব বেশি অর্থের মালিক ছিলেন না অ্যালেক্স। তাঁর নামে আসা বকেয়া ২০০ ব্রিটিশ পাউন্ডের বিল পরিশ�োধ করতে অর্থ সাহায্য চেয়েছিলেন এভারটন কর্তৃপক্ষের কাছে। মিলেছিল মাত্র ২০ পাউন্ড। কারাগার থেকে মুক্তির পর অ্যালেক্সের বাকি জীবন কিভাবে কেটেছিল তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয় আর অনিশ্চয়তা। রহস্য আছে তাঁর মৃত্যু নিয়ে। তাঁর করুণ পরিণতি নিয়ে আছে চাপা দীর্ঘশ্বাস। একটি গুজব আছে যে, ১৯২০ সালে একটি খামারের পশু চুরির দায়ে ধরা পড়লে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলস্থানীয় মানুষ। তবে অধিকাংশ সূত্র এই গুজব সমর্থন করেনি। আছে সাগরপথে ইংল্যান্ডে ফেরার পথে অ্যালেক্সের ন�ৌবাহন তলিয়ে গিয়ে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার গুজবও। কিন্তু এসব গুজবের ক�োন প্রমাণ মেলেনি আজও। বরং অধিকাংশ উৎসগুল�ো থেকে যে কাহিনী সবচেয়ে বেশি প্রচলিত আছে তা অনেকাংশে বাস্তবসম্মত। বলা হয়ে থাকে যে, ১৯২০ সালে মুক্তির পর তিনি ব্রিটেন ফিরে আসেন। ৩৯ বছর ধরে এডিনবরায় এসে বসবাস করেন অ্যালেক্স। ৭৯ বছর বয়সে ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বরে এডিনবরার একটি মানসিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি। মৃত্যুর পূর্বের ৩৯ বছরের জীবনে তিনি বিভিন্ন উপলক্ষে এভারটনের কাছে অর্থসাহায্য চেয়েছিলেন অ্যালেক্স। অর্থসাহায্য চাওয়া ছাড়া এত�োগুল�ো বছর তাঁর কীভাবে কেটেছে তা আজও স্পষ্ট নয়। এই বছরগুল�োয় তিনি যে স্বজনহীন কষ্টময় কাটিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। সাথে অর্থকষ্ট য�োগ হয়েছিলসেই দুর্বিষহ দিনগুল�োতে। মেলেনি মৃত্যুর পরের আনুষ্ঠানিকতাটুকুও। ক�োথায় তাঁর দেহাবশেষ শায়িত রয়েছে তাঁর নেই ক�োন নিশ্চিত চিহ্নপ্রমাণ। এভাবেই এক অনবদ্য মেধাবী কিংবদন্তির শুরু থেকে অন্তিম পরিণতি পর্যন্ত মিশে আছে আক্ষেপ, রহস্য, বেদনা, অবহেলা আর চূ ড়ান্ত নিরবতা।

১৯১১ সালে শেয়ারহ�োল্ডারদের সাথে সভায় এভারটন চেয়ারম্যান জেমস ব্যাক্সটার টটেনহামের কাছে অ্যালেক্সকে বিক্রির সময় বলেছিলেন, “এভারটন কখন�ো তাদের খেল�োয়াড়দের অসম্মান ও অবহেলা করে না। খেল�োয়াড়দের প্রাপ্য সম্মান দিতে এভারটন বদ্ধপরিকর।” এত�ো বছর পর হলেও সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে যাচ্ছে এভারটন কর্তৃপক্ষ। ১০২ বছর পর এভারটন কিংবদন্তি অ্যালেক্সের কবরকে সংরক্ষণ করা ও তাঁর স্মৃতিতে স�ৌধ নির্মাণের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছে এভারটন কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই কাজ শেষ করার আশবাদ ব্যক্ত করেছে তারা। প্রকৃতির অদ্ভু ত খেয়ালে গড়া অ্যালেক্স ‘স্যান্ডি’ ইয়ংকে পৃথিবীর মানবসভ্যতা হয়ত�ো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ‘অবহেলিত এক ক্ষেপাটে প্রতিভাবান’ হিসেবে মনে রাখবে। আজ থেকে শত বছর আগে একজন প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার পরিণত হয়েছিলেন কিংবদন্তিতে। নিজ হাতে লিখে গেছেন আপন গল্পগাঁথা। সত্য ঘটনাটি স্বাভাবিকভাবেই চিরদিন অজানাই থেকে যাবে মানুষের কাছে। কখন�ো যদি অতীতে যাবার যন্ত্র আবিষ্কৃ ত হয়, হাজার বছর পরেও মানুষ হয়ত�ো যাবে অ্যালেক্স ‘স্যান্ডি’ ইয়ং এর খ�োঁজে। জানতে চাইবে এই কিংবদন্তির অজানা দিকগুল�োকে। অ্যালেক্সের মানসিক ভারসাম্যহীনতার ব্যাপারটি লুকিয়ে রেখে এভারটন কর্তৃপক্ষের খেলার অনুমতি প্রদান, জনের মৃত্যুর দিন প্রকৃত ঘটনা, অ্যালেক্সের কারাগার পরবর্তী জীবন, অ্যালেক্সের মৃত্যু ও কবর সম্পর্কিত প্রকৃত সত্য কিংবা অ্যালেক্সের মানসিক ভারসাম্যহীনতা সবই যেন�ো এক অন্তহীন রহস্য। শিহরণ জাগিয়েই আপাতত বিদায় নিচ্ছেন এই স্কটিশ কিংবদন্তি। অজানাকে জানার এক প্রবল ডাক দিয়ে যায় এই অ্যালেক্স ‘স্যান্ডি’ ইয়ং নামটি।


ফুটবল র�োমান্টিসিজমের প্রাচীন নায়ক বাজির সূত্রপাত ইতালি জাতীয় দলের প্রশিক্ষণের সময় যেখানে তিনি অনন্য এক বাইসাইকেল কিকে কমবিকে গ�োল দিয়েছিলেন। কমবি বাজি ধরেছিলেন মেয়াৎসা ক�োন অফিশিয়াল ম্যাচে এভাবে আর গ�োল দিতে পারবেন না। বাজির ফলাফলের জন্যে অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি।

আমি এমন একজনের কথা বলছি যিনি কিনা ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে টানা দুইবার মহাআরাধ্য বিশ্বকাপ জিতেছিলেন, ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপের সেরা খেল�োয়াড় ছিলেন এবং পেলে পূর্ববর্তী যুগে বিশ্বফুটবলের অবিসংবাদিত সম্রাট ছিলেন। আমি ইন্টার মিলানের ইতালিয়ান কিংবদন্তী জ�োসেপ্পে মেয়াৎসার কথাই বলছি।

করে পরাস্ত করতেন এবং শেষে গ�োলবারের সামনে গিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়াতেন। তারপর তিনি প�োষা ছানার মত�ো গ�োলকিপারদের কাছে ডাকতেন এবং ম্যাটাডরদের মত�ো গ�োলকিপারদের উত্যক্ত করতেন। গ�োলকিপার তাঁকে থামান�োর জন্যে সামনে দ�ৌড়াত�ো, মেয়াৎসা শট নেয়ার ভান করতেন, গ�োলকিপার ব�োকাদের মত�ো শুয়ে পড়ত আর মেয়াৎসা আরামসে গ�োল দিতেন।

“আমি এবার শুনে নিন মেয়াৎসার কিছু অনবদ্য কীর্তির কথা। পেলেকেও খেলতে দেখছি। শিল্প, সাফল্য, বিশ্বজ�োড়া খ্যাতি আর উদ্দামতা এক সে মেয়াৎসার অভিজাত খেলার বিরল মেলবন্ধন মেয়াৎসা। পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তিগত ক�ৌশল রপ্ত করতে পারেনি। একদিন আমি ১৯২০ সালের পর ব�োল�োনিয়া, তুরিন�ো, ইউভেন্তুস আর খেলার মাঠে তাকে বিস্ময়কর কিছু করতে স্পন্সরপ্রাপ্ত খেল�োয়াড় ছিলেন তিনি। ফ্যাশনেবল জেন�োয়ার দাপটে আন্ডারডগ হয়ে সিরি আ’তে পড়ে দেখেছিলাম; সে মাঠ থেকে ২ মিটার উঁচুতে গাড়ি, দামি শ্যাম্পেইন আর নারী – এসব খুবই থাকত ইন্টার মিলান। অবশেষে এল�ো ১৯৩০ সালের বাইসাইকেল কিকের মাধ্যমে বল রিসিভ করল, পছন্দ করতেন তিনি। ইতালি জাতীয় দলের লীগের শির�োপা নির্ধারনী ম্যাচ; মুখ�োমুখি জেন�োয়া তারপর বলটাকে তার পায়ে আঠার মত�ো লাগিয়ে একমাত্র খেল�োয়াড় হিসেবে সিগারেট টানার নিল, একজন হতবাক ডিফেন্ডারকে ড্রিবলিং করল আর ইন্টার। প্রথমার্ধেই ইন্টার ০-৩ গ�োলে পিছিয়ে অধিকার তাঁরই ছিল। সেরা সেরা ডিফেন্ডারদের এবং অবশেষে তার চিরচারিত স্টাইলে নিরুপম পড়ে। এরপর শেষ অর্ধে মেয়াৎসার অনবদ্য হ্যাট্রিকে দক্ষতায় গ�োল করল।” অপমান করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন মেয়াৎসা। মাঝেমাঝে ম্যাচ ড্র করে লীগ শির�োপা প্রথমবারের মত�ো ঘরে - প্রখ্যাত ইতালিয়ান বুদ্ধিজীবি লুইগি তিনি সতীর্থদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ত�োলে ইন্টার। ভার�োনেল্লি। ুঘম থেকেই উঠতেন না। ট্যাঙ্গো প্রেমি মেয়াৎসা মাঠে তার ট্যাঙ্গো দক্ষতার প্রয়োগ ঘটিয়ে নিজেকে আর�ো অপ্রতির�োধ্য করে ১৯৩৩ সালে ইউভেন্তুস গ�োলকিপার ও ইতালির অধিনায়ক তুলেছিলেন। অসাধারণ ড্রিবলার মেয়াৎসা যখন দ�ৌড়াতেন, জেল দিয়ে গিয়ামপিয়ের�ো কমবি মেয়াৎসার সাথে দুট�ো বাজি ধরেছিলেন। একটি ছিল সাজান�ো পরিপাটি চুলের একটুও এদিক-সেদিক হত�ো না। তেমন উচ্চতা কমবিকে কেউ গ�োল দিতে পারবে না। আরেকটি বাজির সূত্রপাত ইতালি না থাকলেও হেডেও অদম্য ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের প্রশিক্ষণের সময় যেখানে তিনি অনন্য এক বাইসাইকেল কিকে কমবিকে গ�োল দিয়েছিলেন। কমবি বাজি ধরেছিলেন মেয়াৎসা ক�োন এবার তাঁর ট্রেডমার্ক গ�োল নিয়ে কিছু বলা যাক। মাঝমাঠে তিনি বল অফিশিয়াল ম্যাচে এভাবে আর গ�োল দিতে পারবেন না। রিসিভ করতেন, বারবার ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে প্রতিপক্ষ খেল�োয়াড়দের ড্রিবলিং


বাজির ফলাফলের জন্যে অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ইন্টার আর ইউভেন্তুসের পরবর্তী ম্যাচেই প্রশিক্ষণের সেই অবিশ্বাস্য বাইসাইকেল কিকসহ ম�োট দুটি অসাধারণ গ�োল মেয়াৎসা দিয়েছিলেন কমবির গ�োলবারে। একবার সিরি-আ এর একটি ম্যাচ শুরুর মাত্র ৫ মিনিট আগে মাঠে এসে হাজির হন মেয়াৎসা; যদিও মাঠের পাশেই তাঁর বাসা ছিল। তাঁর সতীর্থরা আর ক�োচ বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন তাঁর প্রতি। ইন্টারের ডিরেক্টররা ম্যাচ শুরুর আগে বলেছিলেন যে তারা ম্যাচ শেষ হওয়ার

সে একজন জাত ফর�োয়ার্ড ছিল। সে খেলাকে পর্যবেক্ষণ করত, পরিস্থিতি বুঝে নিত, সতর্কভাবে বল সরবরাহ করত এবং দলকে আক্রমণে এগিয়ে নিয়ে যেত। তাকে দলে রাখার মানেই হল আপনি ১-০ তে এগিয়ে খেলতে নেমেছেন।” - ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ইতালি দলের ক�োচ ভিত্তোরিও প�োসস�ো। পর দেরীর কারণ তদন্ত করে বের করবেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে মেয়াৎসা সেই ম্যাচে হ্যাট্রিক করে বসেন। ফলাফল সবাই নিশ্চু প। ১৯৩৭ সালে লীগ নির্ধারনী ইয়ুভেন্তুসের সাথে ম্যাচের ১ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ ছিলেন মেয়াৎসা। ইন্টার ডিরেক্টররা চিন্তিত হয়ে গাড়ি দিয়ে খুঁজে আনতে পাঠান তাঁকে। শেষে মেয়াৎসাকে উচ্চস্বরে নাক ডাকা ঘুমন্ত অবস্থায় বাসায় দেখতে পান ইন্টার কর্মকর্তারা। তারা মেয়াৎসাকে মুখে পানি না দিয়েই টেনে হিঁচড়ে স্টেডিয়ামে নিয়ে আসেন। ত�ো স্টেডিয়ামে নিয়ে আসার সময় গাড়িতে বসে তিনি গর্বের সাথে বলছিলেন - “আমি গতকাল রাতে সিংহের মত�ো সঙ্গীর সাথে রাত কাটিয়েছি।” যথারীতি মেয়াৎসা তাঁর ৯ নম্বর জার্সি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন এবং মাঠের সেরা খেল�োয়াড় হিসেবে ইয়ুভেন্তসকে ২টি গ�োল দেন। ইন্টার ২-১ গ�োলে ম্যাচটি জিতে স্কু দেত্তো নিশ্চিত করে।

“মেয়াৎসা কখন�োই ট্যাকটিকস নিয়ে শুনতে চাইত না। সে খুবই সাদাসিধে একজন ল�োক ছিল যে কিনা গ�োলবক্সে ঢ�োকামাত্রই রাজা হয়ে যেত। সে টেকনিক্যাল দক্ষতায় কেবলমাত্র পেলের সাথেই তুলনীয়।” - প্রাক্তন এসি মিলান খেল�োয়াড় ও ক�োচ ব্রুন�ো আসেরি। শেষ ঘটনাটি ১৯৩৮ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের। ব্রাজিলের বিপক্ষে পেনাল্টির সু য�োগ পায় ইতালি। ব্রাজিলের গ�োলবারে দাঁড়ান�ো ছিলেন প্রতিপক্ষ পেনাল্টিটেকারদের ম�োহভ্রষ্ট করায় খ্যাত ওয়াল্টার। যখন মেয়াৎসা পেনাল্টি কিক নিতে দ�ৌড়ে যান, তখন আচমকা তাঁর আগে থেকে ছেড়া শর্টস মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর হাসিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করেন ব্রাজিল গ�োলরক্ষক ওয়াল্টার। মেয়াৎসা অবশ্য এটাকে পাত্তা না দিয়ে এক হাতে মাটি থেকে শর্টস টেনে ধরে হাস্যরত বিভ্রান্ত ওয়াল্টারকে পরাস্ত করে পেনাল্টি থেকে গ�োল করেন তিনি। গ�োল হওয়ার পর নতুন শর্টস না আসা পর্যন্ত শর্টসবিহীন মেয়াৎসাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখেন তাঁর সতীর্থরা। এমনই বর্ণিল ছিল জ�োসেপ্পে মেয়াৎসার ফুটবল কথন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই যুগে মিডিয়া বর্তমান সময়ের মত�ো শক্তিশালী না হওয়ায় এই কিংবদন্তী সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় নি। তবে এই বিষয়ে সন্দেহ নেই, মেয়াৎসা এই যুগে জন্মালে সবটুকু আল�োর ছটা তাঁর উপরই থাকত�ো।


“দুনিয়া কাঁপান�ো ছয় মিনিট” অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় এক মুহূর্ত, এ যেন পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা এক ফুটবল প্রদর্শনী। মিলানের মত এই কঠিন, অস্পৃশ্য দলের বিরুদ্ধে ৩-০ থেকে পিছিয়ে পরে ফিরে আসাকে আপনি কি ফুটবল বলবেন?

“দুনিয়া কাঁপান�ো দশ দিন” – রাশিয়ার ‘অক্টোবর রেভেল্যুশন’ নিয়ে লেখা জন রিডের বিখ্যাত বই। তবে আজ সেই দশ দিনের কথা বলব�ো না। আজ বলব�ো “দুনিয়া কাপান�ো ছয় মিনিট”- এর কথা। মাত্র ছয় মিনিট আর তাতেই রচিত হল�ো ফুটবলের নতুন ইতিহাস। পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দেয়া সেই ছয় মিনিট!

আর প্রচন্ড শ�োকে যখন মুহ্যমান লিভারপুলের সমর্থকরা তখন কি যেন এক ধুম্রজাল তৈরী করছিলেন রাফা বেনিতেজ লিভারপুল ড্রেসিংরুমে। তাঁর মহাকাব্যিক বক্তৃ তা তখন বদলে দিচ্ছিল অল রেডসদের।

কি হতে পারে ছয় মিনিটে? এই সময়ের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া ঘটনায় এসি মিলানের খেল�োয়াড়রা ছু ড়ে ফেলে দিয়েছিল তাদের ম্যাডেল, পৃথিবীর সব জুয়াড়িদের সমস্ত হিসেব-নিকেশকে করে দিয়েছিল এল�োমেল�ো, ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল সমস্ত ফুটবল তত্ত্ব! এই ছয় মিনিটে ক�োনও এক অজানা জায়গায় হয়ত�ো ক�োনও এক ভক্ত আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল আবার ক�োথাও হয়ত�ো কেও রাগে ক্ষোভে ভেঙ্গে ছিল তার প্রিয় টেলিভিশন!

আক্রমন পাল্টা আক্রমনে এগিয়ে চলেছিল খেলা। দুর্দান্ত খেলছিলেন কাকা, শিভচেঙ্ক। একবার ভাবুন যে দলে খেলছেন পিরল�ো, নেস্তা, মালদিনি, কাফু এবং ক্রেসপ�োর মত�ো খেল�োয়াড় তাদের আত্মবিশ্বাস ক�োন পর্যায়ে থাকতে পারে? তার উপর ৩ গ�োলে মিলান তখন এগিয়ে রয়েছে! সব যেন ধরা ছ�োয়ার বাইরে লিভারপুলের জন্য। কিন্তু একজন তখনও স্বপ্ন দেখছেন, তার সমস্ত চিন্তা ভাবনা জুড়ে ছিল কি করে ফিরে আসা যায়, কি করে তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করবেন! পুর�ো দলকে যেন তিনি টেনে নিয়ে গেলেন আর তাকে দিয়েই শুরু হল�ো দুনিয়া কাপান�ো সেই ছয় মিনিট…

যে মানুষটি শুরু করলেন এই “দুনিয়া কাঁপান�ো ছয় মিনিট”, আর সাথে অগণিত মানুষকে করলেন ফুটবল অনুরাগী – তিনি স্টিভেন জেরার্ড! মনে পড়ে ইস্তাম্বু ল? ২৫ মে, ২০০৫, কামাল আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়াম, ইস্তাম্বু ল – প্রথমার্ধে লিভারপুলের বুকে একের পর এক ছ�োরা মেরে দিলেন কাকা, হার্নান ক্রেসপ�ো ও আন্দ্রে শিভচেঙ্ক। “লিভারপুলের জন্য শেষ হয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লীগের স্বপ্ন”, টিভিতে বলে উঠলেন ধারাভাষ্যকার। আনচেলত্তির মুখে হাসি ফুটিয়ে ৩-০ তে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে মিলান। বিষণ্ন

দ্বিতীয়ার্ধে তিনজন ডিফেন্ডার আর পাঁচজন মিডফিল্ডার নিয়ে খেলা শুরু করে লিভারপুল। কে জানত অবিস্মরণীয় হতে যাচ্ছে এই দ্বিতীয়ার্ধ।

৫৪’ মিনিট – ইউম আর্নে রিসার করা ক্রস থেকে হেডে গ�োল করলেন জেরার্ড, ৩-১ ৫৬’ মিনিট - ভ্লাদিমির স্মিত্সার ৩০ গজ দূ র থেকে শট নিলেন আর তা পরাস্ত করল�ো গ�োলকীপারকে, ৩-২ ৫৮’ মিনিট – বক্সের ভেতর জেরার্ডকে ফাউল করলেন গাত্যুশ�ো, পেনাল্টি!!!


মনে পড়ে যখন মাঠ ছেড়ে যাচ্ছিলাম (বিরতিতে) তখন একটা জিনিসই চিন্তা করছিলাম, হচ্ছেটা কি আজ? আমরা ত�ো কিছুই করলাম না। ‘আজকের খেলার ক�োনও এক মুহুর্তে আমরা ফিরে আসব�ো আর সত্যিকার অর্থে খেলব�ো’, এই একটা ইতিবাচক চিন্তা বারবার করছিলাম।’ কিন্তু প্রথমার্ধে আমরা সেটা করতে পারিনি” – স্টিভেন জেরার্ড


আমি শিভচেঙ্কর গ�োলের অপেক্ষায় ছিলাম। আমি কি করতে যাচ্ছি সে দিকে মন�োয�োগ দিতে চাচ্ছিলাম আর ক্রমে স্নায়ুচাপ বেড়ে যাচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম শিভচেঙ্ক নিশ্চিত গ�োল করবে। শিভচেঙ্ক এগিয়ে আসল�ো (পেনাল্টি শট নিতে), আমি আমার মত নড়াচড়া করছিলাম আর ও হঠাৎ থেমে গেল। আমিও সাথে সাথে থেমে গেলাম আর ভাবলাম ‘আমাকে আজ তুমি ব�োকা বানাতে পারবে না। কিছুতেই না’ - ইয়াজে দুদেক


৬০’ মিনিট – আল�োন্সর করা পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দিলেন মিলান গ�োলকীপার দিদা, কিন্তু ফিরতি বল দ্রুত গ�োলে পাঠিয়ে দিলেন আল�োন্স, ৩-৩ মাত্র ছয় মিনিট, পাল্টে গেল সব!!! অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় এক মুহূর্ত, এ যেন পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা এক ফুটবল প্রদর্শনী। মিলানের মত এই কঠিন, অস্পৃশ্য দলের বিরুদ্ধে ৩-০ থেকে পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসাকে আপনি কি ফুটবল বলবেন? লিভারপুল আর একবার জানিয়ে দিল তাদের পরিচয়, তাদের ঐতিহ্য। মিলানের খেল�োয়াড়রা লিভারপুলের অবিশ্বাস্য এই ফিরে আসায় স্বাভাবিকভাবেই ছিল হতাশ। তাদের মন�োবল ভেঙ্গে গিয়েছিল খুব সম্ভবত, যা ব�োঝা গিয়েছে পেনাল্টিতে। পেনাল্টি শুট আউট-এ প্রথম দুটিতেই গ�োল করতে পারেনি মিলানের সার্জিন ও পিরল�ো। একটু একটু করে দূ রের ঘ�োলা জয়টা যেন পরিস্কার হয়ে উঠছিল লিভারপুলের সামনে। অপরদিকে লিভারপুলের হয়ে রিসা গ�োল করতে না পারলেও গ�োল করলেন সিসে, হামান এবং স্মিত্সার। শিভচেঙ্ক যখন শট নিতে আসলেন তখন গ্যলারিতে উত্তেজনায় কাপছে দর্শক। শট নিলেন শিভচেঙ্ক, ঠেকিয়ে দিলেন দুদেক, ৩-২ গ�োলে জয় পেল লিভারপুল! “আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা, আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা, এও কি সম্ভব! আজ যা হল�ো তা অল�ৌকিক ঘটনার চাইতেও বেশি কিছু ” – সারা বিশ্বের মানুষের মনের কথাই যেন বললেন টিভি ধারাভাষ্যকার। দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক হেনরি উইন্টার ইস্তাম্বু ল থেকে ওই মুহূর্তটি এই ভাবে লিখেছিলেন, “এটা ছিল জেরার্ডের দৃ ঢ়তা, তিনি হারের মুখ�োমুখি হতে নারাজ ছিলেন, যদিও পরাজয় একটা বিশাল ছায়া হয়ে তার উপর পড়েছিল, তবে তার দৃ ঢ়তা দলকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, আর দিয়েছিল অতিরিক্ত তিরিশ মিনিট লড়াই করার জীবনী শক্তি। এক অভূতপূর্ব ফিরে আসা, যে সন্ধ্যা শুরু হয়েছিল খারাপভাবে লিভারপুলের জন্য, যেখানে তারা প্রথমার্ধে ৩-০ তে পিছিয়ে ছিল, তখন তাদের ভক্তরা গাইছিল, আজ আমরা ৪-৩ গ�োলে জয়লাভ করব�ো” এই ছয় মিনিট কি শুধুই ফুটবল খেলা? না, এই ছয় মিনিট যেন বলে দিচ্ছে কখনই আশা ছাড়বে না। আজ এত বছর পরেও দুঃসময়ে এই মুহূর্তটি চলার শক্তি দেয় লিভারপুলের খেল�োয়াড় এবং ভক্তদের। ইস্তাম্বু লকে স্মরণ করে একজন খেল�োয়াড় বা একজন ভক্ত লিভারপুলের জার্সি পরেন অনেক গর্ব নিয়ে, যেন অন্য রকম এক ভাল�ো লাগার অনুভুতি। “এই পথ চলায় তুমি একা নও”


দলবদলের নানান কূট-ক�ৌশল ব্যাপারটা অনেকটা ঘ�োড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মত�োই। এর একটা উপায় হচ্ছে, ম্যানেজারকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি ক্লাবের মালিক অথবা চেয়ারম্যানের রুমে চলে যাওয়া। দলে না থাকতে চাওয়ার ব্যাপার সরাসরি তাঁকেই বলা। এতে যা হওয়ার তাই হবে – আঁতে ঘা লাগবে ম্যানেজারের!

বি স্যাভেজ! ইংলিশ ফুটবলের একজন বহুল আল�োচিত ও সমাল�োচিত খেল�োয়াড়। ২০০৮ সালে ‘দ্য ডেইলি মেইল’ তাকে প্রিমিয়ার লীগ ইতিহাসের সবচেয়ে ‘ন�োংরা’ খেল�োয়াড় হিসেবে চিহ্নিত করে। কারণটা নিহিত ছিল তার খেলার ধরণের মধ্যেই। তিনি এতটাই ‘ফাউল’ করে খেলতেন যে, তিনি ওই সময়টায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হলুদ কার্ড প্রাপ্ত খেল�োয়াড় ছিলেন। আর করতেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের উদ্ভট আচরণ, যা ভক্ত, খেল�োয়াড় এমনকি রেফারিদেরকেও য�োগাত�ো নির্মল বিন�োদন! সে যাই হ�োক। এখন তিনি একজন ফুটবল পণ্ডিত হিসেবে সমাদৃ ত। সম্প্রতি তিনি এমন একটি বিষয়কে উপজীব্য করে তার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেছেন যার সু ফল ফুটবল ক্লাব কর্তৃপক্ষরা পেলেও পেতে পারেন! তিনি প্রকাশ করেছেন দল পরিবর্তনের জন্য খেল�োয়াড়দের নিজেদের বানান�ো নানান কূট-ক�ৌশল। তিনি এরকম ম�োট ১১ টি ক�ৌশলের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এর অধিকাংশই তিনি নিজে তার খেল�োয়াড়ি জীবনে ক�োন না ক�োন সময় প্রয়োগ করেছেন। আসু ন পরিচিত হই খেল�োয়াড়দের বিভিন্ন ছল-চাতুরির সাথে!


১ মুখ গ�োমড়া করে থাকা:

স্যাভেজের মতে মুখ গ�োমড়া করে থাকা বা সবসময় মনমরা হয়ে বসে থাকাটা ক্লাবে না থাকতে চাওয়ার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য একটা অভিনব কায়দা। এরকম ‘ভাব’ ধরার মাধ্যমে একজন খেল�োয়াড় স্পষ্ট জানিয়ে দিতে পারেন যে, তিনি ক্লাবে সু খী নন। এর মাধ্যমে তিনি পুর�ো দলটিতেই একটা মনমরা ভাবের অবতারণা করে ফেলেন যা দলের জন্য আর যাই হ�োক, উপকারি নয়। ব্যাপারটা আমরা আমাদের পরিবারের ক্ষেত্রে কল্পনা করলেই বুঝতে পারি। পরিবারের ক�োন সদস্য মন খারাপ করে দিনের পর দিন বসে থাকলে পুর�ো পরিবার জুড়েই ঐ মনমরা ভাবটা নেমে আসতে বাধ্য।

২ নিশ্চু প থাকা:

কিছু ই হয়নি, তবু কথা না বলে চুপচাপ থাকাটা আরেকটা ফলপ্রসূ কায়দা। খ�োদ স্যাভেজই নাকি এই ক�ৌশলটা চর্চা করতেন প্রয়�োজন বুঝে। স্যাভেজ কি করতেন তা ব্যাখ্যা করলেই ব্যাপারটা ব�োঝা যাবে। তিনি সাধারণত খুবই প্রাণচঞ্চল, আম�োদ-ফুর্তি প্রিয় একজন মানুষ। কিন্তু কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ হঠাৎ তিনি একদম নিশ্চু প হয়ে যেতেন! ফলে তার আশেপাশের ল�োকজন ঠিক ধরে ফেলতেন যে তার কিছু একটা হয়েছে। তিনি স্বাভাবিকভাবে ট্রেনিং-এ যেতেন, কিন্তু ট্রেনিং শেষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি উধাও! এমনকি তিনি সতীর্থদের সাথে খাওয়ার জন্যও অপেক্ষা করতেন না। তিনি সম্পূর্ণভাবে উধাও হয়ে যেতেন। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে কিছু একটা ব�োঝান�োর জন্য আর কি চাই!


৩ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ভান করা:

স্যাভেজের মতে, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ভান করাটা খেল�োয়াড়দের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক�ৌশল। এর মাধ্যমে একজন খেল�োয়াড় সহজেই জানিয়ে দিতে পারেন যে, তিনি তার দলের ভালবাসা আর চান না! তবে আগের মত এত সহজে এখন এই কাজটা করা যায় না। আঘাত পাওয়ার কথা বলার সাথে সাথেই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট তা যাচাই করেন এবং আধা ঘণ্টার ভিতর পুর্নাঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। তাই এই ধ�োঁকা দেওয়ার কাজটা এখন আর অত�ো সহজে করা যায় না। কিন্তু তারপরও, কিছু ফায়দা ত�ো নেয়া যায়ই।

৪ সংবাদপত্রে ভুয়া খবর প্রচার:

পত্রিকাগুল�োতে কিছু কিছু খেল�োয়াড়দের বন্ধু-বান্ধব থাকে এবং তারা এই সু য�োগটা কাজে লাগান। তারা পত্রিকা গুল�োয় নানান গুজব ছড়াতে অনুর�োধ করেন। স্যাভেজ এই ক�ৌশলটা নিয়েছিলেন। তিনি পত্রিকার রিপ�োর্টারদেরকে তার নিজের পছন্দের ক্লাবের সাথে তার নাম জড়িয়ে রিপ�োর্ট করতে বলতেন। অবশ্য, তিনি মাথায় রাখতেন তার নিজের অবস্থানটা। কারণ, আর যাই হ�োক – রিয়াল মাদ্রিদের সাথে তার নিজের নাম জড়িয়ে খবর প্রকাশ করার ক�োন অর্থই হয় না, কারণ, তাহলে সবাই সাথে সাথে সেটা ধরে ফেলত। যাই হ�োক, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, এসবই হত�ো বানান�ো খবর। এর ফলে যেটা হত�ো – তিনি তার নামটা

ফলাও করে প্রচার করতে পারতেন এবং তার প্রতি অন্যান্য দলের সম্ভাব্য আগ্রহকে জাগিয়ে তুলতে পারতেন। তবে এই যুগে এটা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে যেহেতু, মিডিয়া এখন প্রায়শই বুঝে ফেলে ক�োনটা সত্য ক�োনটা মিথ্যা।

৫ টেলিভিশন মিডিয়ার দ্বারস্থ হওয়া:

পত্রিকা যদি কাজে না দেয় ত�ো স্যাভেজের মত�ো আর�ো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যায় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। স্যাভেজ একবার জনৈক ম্যানেজারের উপর চাপ সৃ ষ্টির জন্য একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বসলেন! ট্রেইনিং-এর মাঠে তাদেরকে এমন এক দিন আসতে বললেন, যেদিন সবাই থাকবে ছু টিতে। সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটা বার্তা দেয়া যে তাকে জ�োর করে ট্রেইনিং করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ঐদিন রাতেই এই রিপ�োর্টটা টেলিভিশনে প্রচারিত হল। স্যাভেজ মনে করলেন তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ম্যানেজার তার ক�ৌশলটি সাথে সাথে ধরে ফেলেছিলেন! ফলে তার উদ্দেশ্য ত�ো হাসিল হয়ই নি, বরং নিজেকে একজন স্রেফ ব�োকা সাজিয়েছিলেন।

৬ ম্যানেজারকে পাত্তা না দেওয়া:

ব্যাপারটা অনেকটা ঘ�োড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মত�োই। এর একটা উপায় হচ্ছে, ম্যানেজারকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি ক্লাবের মালিক অথবা চেয়ারম্যানের রুমে চলে যাওয়া। দলে না থাকতে

১০ ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ খেলা: যদিও কাজটা কঠিন, কিন্তু অন্তত নিজের সেরা খেলাটা উপহার না দিয়ে ম্যানেজারকে মনঃক্ষুণ্ণ করাই যায়। কাজটা কঠিন কারণ, এর ফলে একজন খেল�োয়াড় শুধু নিজের প্রতিই অবিচার করলেন না, অবিচার করলেন নিজের দলের সাথে, ভক্তদের সাথে আর নিজের পরিবারের সাথে। স্যাভেজ শুধুমাত্র একবারই এরকম করেছিলেন এবং তিনি এই কাজটার জন্য সাথে সাথে অনুতপ্তও হয়েছিলেন। ১১ নিজের ইচ্ছের কথাটা অন্যান্য ক্লাবকে জানিয়ে দেয়া: যদিও এটা অবৈধ কিন্তু ব্যাপারটা হর-হামেশাই ঘটে চলেছে। এই কাজটা খেল�োয়াড়রা যেমন করেন, করেন ম্যানেজাররাও। আন্তর্জাতিক খেলাগুল�ো চলার সময় এই কাজগুল�ো বেশি হয়।

চাওয়ার ব্যাপারটা সরাসরি তাকেই বলা। এতে যা হওয়ার তাই হবে – আঁতে ঘা লাগবে ম্যানেজারের! এই ব্যাপারটাই ঘটিয়েছিলেন স্যাভেজ। একবার তিনি সরাসরি চেয়ারম্যানের রুমে ঢুকে যান এবং জানিয়ে দেন যে তিনি আর দলে থাকতে ইচ্ছু ক নন। খবরটা ম্যানেজারের কানে যথারীতি পৌঁছল। পরের দিন সকালে ম্যানেজার তার জন্য রিসিপশনে অপেক্ষা করছিলেন। তাকে দেখেই স্যাভেজ বুঝতে পেরেছিলেন তিনি রেগে আছেন! গ�োলমাল পাকান�োর জন্য এরচেয়ে ম�োক্ষম উপায় আর কি আছে!

৭ সতীর্থদের সাথে ঝামেলা পাকান�ো:

এটা একটু বেশিই হয়ে যায়, তবু হর-হামেশাই ঘটছে। স্যাভেজের ব্যাপারটাই ধরুন। ক�োন একটি ক্লাবে তার সতীর্থরা জানতেন যে তিনি ক্লাব ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ ব্যাপারটা ভাল�ো চ�োখে দেখেননি। ড্রেসিং রুমে এটা নিয়ে চাঁপা একটা উত্তেজনাও ছিল। একদিন দলের গ�োলরক্ষকের সাথে স্যাভেজ বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন। একপর্যায়ে সেটা ধস্তাধস্তিতে রূপ নিল। গ�োলরক্ষক স্যাভেজের গলা টিপে ধরলেন, আর স্যাভেজের মাথার আঘাতে তার ঠ�োঁট কেটে গেল।

স্টাফদের কাছে নিজের দুঃখের গল্প করা:

ফিজিওথেরাপিস্ট, ক�োচিং স্টাফ, ক্যান্টিনের কর্মচারী

এরা সবাই ম্যানেজারের কাছে রিপ�োর্ট করতে পারেন। সু তরাং কাঙ্ক্ষিত খবরটি পৌঁছে দেয়ার জন্য তাদের কাছে নিজের দুঃখের আলাপ করাই যায়! বেশি দিন লাগে না ম্যানেজারের কানে খবরটা পৌঁছাতে। ক�োন একটা ক্লাবে স্যাভেজ একদিন ফিজিও রুমে বসে ছিলেন। তিনি হঠাৎ বলে বসলেন যে তিনি অন্য একটা ক্লাবে যেতে চান, এমনকি এটাও বললেন যে, ঐ ক্লাবের সাথে চুক্তির ব্যাপারে তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে আর মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যেই তিনি ঐ ক্লাবের হয়ে খেলার আশা রাখেন। এর ফলে যা হওয়ার তাই হল! পরের দিন স্যাভেজকে শ�ো-কজ করতে বলা হল।

খারাপ ভাবমূর্তি অর্জন করা:

ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ ভাবমূর্তি অর্জন করার কাজটা ড্রেসিং রুমে এবং মাঠে দুই জায়গায়ই করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে খেল�োয়াড়রা যাই করুক না কেন তা অত্যন্ত বাজেভাবে করে থাকেন। ম্যানেজার ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে পারেন না।


ছ�োট্ট পাখি ও ফুটবল ইতিহাসের সেরা তিন মিনিট! একটি ছ�োট্ট পাখি যার ডানা দুট�ো ঠিক অন্যদের মত নয়! ডান ডানাটি ভিতরের দিকে বাকাঁন�ো আর অন্যটি ছয় সেন্টিমিটার ছ�োট! তবুও পাখিটির উড়তে ক�োন সমস্যাত�ো হয়ই না বরং উড়ার দিকে তার ক�ৌশল সবার সেরা, উন্নত আর মন�োমুগ্ধকর! ছ�োট্ট এই পাখিটি হল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ড্রিবলার ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি গাহিন্সা – The Little Bird.


জন্মেছিলেন বাকাঁন�ো আর ছয় সেন্টিমিটার ছ�োট একটি পা নিয়ে! ফুটবল মাঠে খেলতেন নতুন উড়তে শেখা দূ রন্ত পাখির মত, ডিফেন্ডারদের ঘ�োল খাওয়াতেন শৈল্পিক ড্রিবল আর জাদুকরী ফুটবলীয় কলাক�ৌশলে। অন্যরকম পা নিয়ে সমস্যা ত�ো ছিলই না বরং ছিল আশীর্বাদ হিসেবে; বল নিয়ে ক�োন দিকে যাবেন এটা সহজে আর বুঝতেন না ডিফেন্ডাররা। যত দিন খেলেছেন মাঠে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে; প্রতিপক্ষ, দর্শক সবাই অপার আনন্দ পেয়েছেন তার অনন্য ফুটবল শিল্পে, তিনি প্রতিনিয়তই মুগ্ধ আর অবাক করেছেন গ�োটা ফুটবল দুনিয়াটাকে। মানুষকে যেমন আনন্দ দিয়েছেন তেমন ভালবাসাও পেয়েছেন তিনি। ভালবেসে ফুটবল শিল্পী গাহিন্সাকে ডাকা হয় Joy of People নামেও! ‘The angel with bent legs’ মহান এই কারিগর আমাদের উপহার দিয়েছেন ফুটবল ইতিহাসের সেরা তিন মিনিট! মহাকাব্যিক তিন মিনিট! কি ঘটেছিল সেই তিন মিনিটে? ১৯৫৮ সাল, সু ইডেন বিশ্বকাপ। গ্রুপের শেষ খেলায় সেলেসাওদের প্রতিপক্ষ আসরের অন্যতম শির�োপার দাবিদার বিশাল বপুদের স�োভিয়েত ইউনিয়ন রাশিয়া। স�োভিয়েত তখন নিয়ে এসেছে বিজ্ঞানসম্মত ফুটবল ক�ৌশল! তাদের খেল�োয়াড়দের শারীরিক শক্তি ও দীর্ঘ সময় খেলার সক্ষমতা ছিল অন্য পর্যায়ের। এমন গুজব ছিল যে, রাশিয়ান এই দলটি খেলতে পারবে টানা ১৮০ মিনিট! সে সময়ে আবার গ�োলমুখে দাঁড়িয়ে আছে গ্রেট লেভ ইয়েসিন! সেই সাথে সাম্বার ছন্দের সাথে শক্তির লড়াইটা কেমন যেন বেমানান মনে হচ্ছিল। তার উপর আবার ঐ সময় ছিল না ক�োন খেল�োয়াড় বদলি করার সু বিধা! ক�ৌশলী ব্রাজিলিয়ান ক�োচ ফিওলা এবারে একাদশে নিলেন পেলে নামের এক কিশ�োর ও ছ�োট্ট পাখি গাহিন্সাকে। এটাই তাদের বিশ্বকাপ অভিষেক ম্যাচ। পরের রাউন্ডে যেতে দরকার রাশিয়ার সাথে শুধু ড্র! অস্ট্রিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের দুই খেলাতে ছিল না এই দুই জনের কেউই। প্রথমবারেই এমন চাপের একটি ম্যাচ খেলার জন্য দুজনের কেউ মানসিকভাবে সক্ষম নন; এমনটাই জানিয়েছিলেন ব্রাজিল দলের মন�োবিজ্ঞানী ডঃ জ�োয়াও কারভালেস। ব্রাজিলই শুধু মাত্র তখন সাথে করে মন�োবিজ্ঞানীকে নিয়ে এসেছিলেন, যেন খেল�োয়াড়েরা মানসিকভাবে শক্ত ও তাদের লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারে। কেননা ১৯৫০ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফলাফল দলের অনেক খেল�োয়াড়ের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। গ্রুপের প্রথম দুই খেলায় গাহিন্সাকে দলে না নেওয়ার কারণও একটি

ইতিহাস। একটি অসাধারণ আর দুঃসাহসী গ�োল! বিশ্বকাপের ঠিক পূর্বে ইতালির ক্লাব ফিওরেন্তিনার বিপক্ষে একটি খেলায় গাহিন্সা করলেন তার বিখ্যাত গ�োলগুল�োর একটি; চারজন ডিফেন্ডারকে অসাধারণ ড্রিবলে পরাস্ত করার পর গ�োলমুখে গিয়ে গ�োলরক্ষককেও ফাঁকি দিলেন দারুণ ভাবে, কিন্তু বল তখন�ো জালে জড়ালেন না ড্রিবলিং মাস্টার, অপেক্ষা করলেন পিছনে ফেলে আসা ভিড়ের জন্য! নির্দিধায় চমৎকার কিন্তু দুঃসাহসী দায়িত্বহীন এই কাজটি পছন্দ হয়নি ক�োচের। আর তাই বিশ্বকাপের গ্রুপের প্রথম দুই খেলায় একাদশে রাখা হয়নি গাহিন্সাকে। কিন্তু গ্রুপের গুরুত্বপূর্ন শেষ খেলাতে গাহিন্সা মাঠে নামলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলার কিশ�োর পেলের সাথে। খেলা শুরুর তিন মিনিটেই গাহিন্সা ভাভা, পেলে, দিদিদের নিয়ে ফুটবলকে দিলেন ফুটবল স�ৌন্দর্য্যের সেই কাব্যিক মূহুর্ত; ফুটবল ইতিহাসের সেরা তিন মিনিট! খেলার ঠিক প্রাক্কালে ব্রাজিল ক�োচ অধিনায়ক দিদিকে বলে দিলেন, “ভুলে যেও না দিদি, প্রথম বলটাই যাবে গাহিন্সার কাছে।” এর পরের তিন মিনিট ত�ো হয়ে গেল ইতিহাস! গাহিন্সা বল পেলেন খেলার ১৫ সেকেন্ডেই! ড্রিবল! ড্রিবল! আর ড্রিবল! গাহিন্সার বাঁকা পায়ের ড্রিবলের শ�োভায় রাশানরা পরাস্ত হয়ে যেন শুধু তাকিয়ে ছিল পায়ের দিকে! এমন পা নিয়ে কিভাবে সম্ভব! সর্বপ্রথম বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ জার্নালিস্ট গ্যাব্রিয়েল ঐ মূহুর্ত গুল�ো বর্ণনা করেছেন ‘ফুটবল ইতিহাসের সেরা তিন মিনিট’ হিসেবে। গ্যাব্রিয়েলকে সমর্থন করে ব্রাজিলিয়ান লেখক নেলসন রদ্রিগেজ অসাধারন ভাবে বর্ননা করেছেন রুপকথার মত সেই তিন মিনিটের। বন্ধুরা বিশ্বাস করুন শুধু তিন মিনিটেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল বনাম রাশিয়ার খেলাটি। আবার বলছি প্রথম তিন মিনিটের যুদ্ধে গাহিন্সা পরাজিত করেছে রাশিয়ার সাথে সাইবেরিয়া এবং অন্য সব কিছু কে। ব্রাজিলের দরকার ছিল শুধু ড্র, কিন্তু গাহিন্সা ড্রয়ে বিশ্বাস করেন না! তিনি প্রতিপক্ষের অংশে নিজেকে বন্দুকের গুলির মত করে উপস্থাপন করেছেন। তিনি একটি ড্রিবল করলেন, আরেকটি ড্রিবল, এবং চমৎকার ভাবে প্রবেশের সময় তিনি আবার ড্রিবল করলেন একেবারে রাসপুটিনের দাড়িতে গিয়েও! বন্ধুরা রাশিয়ানদের রক্ষন ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে তখনই যখন গাহিন্সা প্রথম বলটি স্পর্শ করেছিলেন!’


বিয়াস্কি, যিনি লিখতেন মানচেতে এসপর্তিভাতে, সেই তিন মিনিটের একটি আকর্ষনীয় ম্যাচ রিপ�োর্ট করেছিলেন। তিনি লেখেন, “মসিয়ে গিগে বাঁশিতে ফুঁ দিলেন খেলা শুরু করতে; দিদি দ্রুতই বল ঠেলে দিলেন ডান দিকে; খেলার ১৫ সেকন্ড পার হয়েছে। গাহিন্সা পায়ের উপরিভাগ দিয়ে বলটি নিলেন; ২০ সেকেন্ড। কুযনেতযভ তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন। গাহিন্সা বাম দিকে যাওয়ার ভাব করলেন কিন্তু ড্রিবল করে গেলেন ডান দিকে। কুযনেতযভ মাটিতে পড়ে গেলেন বিশ্বকাপের প্রথম ‘Joao’ হিসেবে; ২৫ সেকেন্ড! গাহিন্সা আবার বৃত্তাকার করে কুযনেতযভকে কেন্দ্র করে বল নিয়ে ঘুরলেন; ২৭ সেকেন্ড। এবং আবার; ৩০ সেকেন্ড। এবং আরও একবার! দর্শকরা উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেছেন। আকস্মিক বিষ্ময়ে কুযনেতযভ তখনও মাটিতে; ৩২ সেকেন্ড। গাহিন্সা বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, কুযনেতযভ তাঁর পিছে আরেকবার ছু টলেন, এবার আরও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন ভনভ ও ক্রিজভেস্কি; ৩৪ সেকেন্ড। গাহিন্সা স�োজা বল টেনে নিয়ে যেতে থাকলেন এবং তারপর ডান দিক দিয়ে বল টেনে নিলেন। সেই সাথে তাকে আটকাতে গিয়ে তিন রাশিয়ান মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে গেলেন, ভনভ বাতাসে পিঠ দিয়ে যেন পরে গেলেন! গ�োটা স্টেডিয়াম অট্টহাসিতে ফেটে পরল; ৩৮ সেকেন্ড! কঠিন ক�োণ থেকে গাহিন্সা গ�োলে শক্তিশালী শট করলেন, বল রকেটের গতিতে ইয়েসিনের বাম দিক দিয়ে বের হয়ে গ�োল কিক; ৪০ সেকেন্ড। দর্শক উন্মাদনায় পুর�ো স্টেডিয়াম গমগম! গাহিন্সা সবময়ের মত বেঢপ ভাবেই মাঠের মাঝে ফিরে আসলেন। দর্শকরা ব্যাপক করতালিতে তাকে অভিনন্দন জানালেন। গাহিন্সা আবার যখন বল নিয়ে সামনে দ�ৌড়চ্ছেন দর্শকরা উত্তেজনায় আবারও দাঁড়িয়ে গেলেন! ‘Joao’ কুযনেতযভ আবারও হুড়মুড় করে পরে গেলেন গাহিন্সাকে আটকাতে গিয়ে! দিদি বল চাইলে গাহিন্সা বাঁকান�ো ক্রসে নেত্তোর মাথার উপর দিয়ে বল পাঠালে পেলের পায়ে গিয়ে পড়ে সে বল, পেলে ছ�োট করে বল দেন ভাভার কাছে, ভাভা দিদিকে, দিদির থেকে গাহিন্সা এবং শেষে আবার পেলের পায়ে ফিরে আসে বল, পেলে গ�োলে শট করেন, বল ফিরে আসে গ�োলবারে লেগে! গতির সাথে গাহিন্সার ছন্দ অচিন্তনীয়! ইয়েসিনের শার্ট ঘামে পুর�ো ভিজে গেছে, যেন সে মাঠে ঘন্টাখানেক ধরে আছে! আক্রমনের ঢেউ চলছেই। সময়ের সাথে গাহিন্সা একাই রাশান রক্ষন ধংস করে চলছেন। স্টেডিয়াম জুড়ে দর্শকদের স্নায়ুতে স্নায়ুতে অদম্য এক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই উত্তেজনার বিষ্ফোরন ঘটে ঠিক তিন মিনিটের মাথায় ভাভা যখন গ�োল করেন! অসাধারন! অবশ্যই অবাক হতে হয়, কিভাবে এত নিখুঁত হতে পারেন একজন! এবং এটা কতটা অতিরঞ্জিত এই প্রশ্নটা একদমই জিজ্ঞেস করবেন না। চলুন হৃদয়ে সযত্নে লালন করি একজন বাঁকা পায়ের ফুটবল কারিগর গাহিন্সার উপাখ্যান; সেই উপাখ্যান যেখানে একজন একাই বাধ্য করেছে ফুটবল সু পারপাওয়ার রাশিয়াকে নত হতে!’


গাহিন্সার মহাকাব্যিক প্রদর্শনীর খেলাটিতে ঐতিহাসিক দলের সাথে সেদিন সাম্বার ব্রাজিল জয় লাভ করে ২-০ গ�োলে। এর পরে পুর�ো আসর জুড়ে ছিল শুধু গাহিন্সার কাব্যিক প্রদর্শনী! ছ�োট্ট পাখির রুপকথার আখ্যান রচনার সময়ের সাথে সাথেই বিশ্বকাপের মুকুট প্রথমবারের মত নিজেদের করে নেয় ব্রাজিলিয়ানরা। ফাইনালে সেলেসাওরা সু ইডেনকে হারায় ৫-২ গ�োলে। সেই সাথে শুরু হল সাম্বার উন্মাতাল ছন্দের জয়জয়কার। আর মানুষের আনন্দ-গাহিন্সা যতদিন মাঠে ছিলেন দেখিয়েছেন ফুটবল শুধু শক্তির খেলা নয় স�ৌন্দর্য্য আর শিল্পের খেলাও। গাহিন্সা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার সতীর্থ পেলে বলেছেন, “গাহিন্সা ছাড়া আমি কখনই তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী হতে পারতাম না।” ব্রাজিলে পেলের যতটা ভালবাসা মানুষের ঠিক ততটা ভালবাসা রয়েছে গাহিন্সার জন্যও। ফুটবল ইতিহাসের সেরা তিন মিনিট আর ছ�োট্ট পাখি গাহিন্সা-যে কিনা উড়ে আকাশের সবচেয়ে উপরে – Let’s cherish the tale of ‘The angel with bent legs’.


আমার জীবনী

১৯৯৯ সালে নাইট উপাধি পাওয়া স্যার অ্যালেক্স সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন তাঁর আত্মজীবনী - ‘My Autobiography’। বইটি ইতিমধ্যে বেশ সারা ফেলেছে ক্রীড়া জগতে। আল�োচনা-সমাল�োচনা এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ২৫ অধ্যায়ের বইটিতে উঠে এসেছে অনেক জানা-অজানা সময়ের কথা, অনেক স্মৃতি...

ক্ত লাল বর্ণের একজন। ডাগ আউটে বসে চুইংগাম চিবুচ্ছেন আবার মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে সাইড থেকে মাঠের ছেলেদের নির্দেশনা দিচ্ছেন - ফুটবলে এই দৃ শ্যটা বেশ পরিচিত। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, তাঁর নামটির সাথে পরিচিত গ�োটা ফুটবল বিশ্ব। জন্ম ১৯৪১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগ�ো নগরীর ছ�োট্ট শহর গ�োভানে। ফুটবলের সাথে ওতঃপ্রোত ভাবে জড়িত এই মানুষটির সাথে ফুটবলের সম্পর্কের শুরু সেই ১৯৫৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্ট্রাইকার হিসেবে শুরু করেন কুইন্স পার্কের হয়ে। খেলেছেন স্কটল্যান্ডের হয়ে তবে খেল�োয়াড় হিসেবে নয় ফার্গুসন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও পরিচিত ক�োচ হিসেবে।

১৯৭৪ সালে শুরু করা ক�োচিং জীবনের প্রায় ৩৯ বছরের মধ্যে ২৭ বছর ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে! ১৯৮৬ সালে হেমন্তের এক মিষ্টি সময়ে এসেছিলেন ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে। সেই থেকে শুরু; এ পর্যন্ত জিতেছেন ম�োট ৪৯ টি শির�োপা, এর মধ্যে ইউনাইটেডের হয়ে ২ টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ২ টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ১৩ টি প্রিমিয়ার লীগ ও ৫ টি এফএ কাপ শির�োপা সহ জিতেছেন ম�োট আটত্রিশটি শির�োপা। দীর্ঘ ক�োচিং ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়েছেন গত বছরে। ১৯৯৯ সালে নাইট উপাধি পাওয়া স্যার অ্যালেক্স সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন তাঁর আত্মজীবনী - ‘My Autobiography’। বইটি ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে ক্রীড়া জগতে। আল�োচনা-সমাল�োচনা এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ২৫ অধ্যায়ের বইটিতে উঠে এসেছে অনেক জানা-অজানা সময়ের কথা, অনেক স্মৃতি আর প্রিয় মুহূর্তের কথা। পুর�োন�ো ক্লাবের স্মৃতিচারণ সহ ওল্ড ট্রাফ�োর্ডের স্মৃতিময় সময়ের কথা ত�ো আছেই, আরও আছে নিজের ভাবনা, দর্শন, ভাল লাগা আর মন্দ লাগা ব্যাপার গুল�োও।


তবে লক্ষনীয় একটি ব্যাপার হচ্ছে যে, ফার্গুসন বেশ কঠিন ভাবেই লিখেছেন ‘গ্ল্যামার বয়’ ডেভিড বেকহ্যাম (তারকা খ্যাতি নিয়ে বেশি আচ্ছন্ন), দীর্ঘ সময়ের সাবেক ইউনাইটেড অধিনায়ক রয় কীন (মুখ বেশি চলে), ইংলিশ তারকা ডেনিস ওয়াইজ, মিডিয়া আর রেফারি নিয়ে! দুই স্কটিশ রয় কীন ও ফার্গির মধ্যকার তিক্ত সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই পরিচিত। ফার্গির লেখা বইতে সেই তিক্ততার শুরু থেকে শেষের পরিণতি বর্নিত হয়েছে প্রায় সবিস্তারে । কঠিন ভাষায় রয় কীনের সমাল�োচনা করলেও প্রশংসা যে করেননি ফার্গুসন - তা নয়। দলে এবং ড্রেসিং রুমে রয়ের কতটা প্রভাব ছিল তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন সাবেক ইউনাইটেড ক�োচ। রয় বেশ বুদ্ধিমান আর আলাপচারিতায় দারুন পারদর্শী ছিলেন। যখন রয়ের মেজাজ ভাল থাকত তাঁর আলাপচারিতা সকলকে মুগ্ধ করত। ফার্গি জানিয়েছেন ফিজিও তাঁর কাছে প্রায়ই জানতে চাইতেন আজ রয়ের মেজাজ কেমন? কেননা ওর মেজাজের উপরেই নির্ভর করছে পুর�ো ড্রেসিং রুম তথা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সকল খেল�োয়াড়ের ঐ দিনের অবস্থা! এমন মুগ্ধ করার মত চরিত্রের সাথে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে ধীরে ধীরে বেশ নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে! রাগান্বিত রয় বেশ আক্রমনাত্মক মেজাজে থাকেন! “সে একই সাথে ভীতিকর আর হিংস্র।”, বলেছেন ফার্গুসন। ফার্গির মতে তাঁর সাথে সহকারী কার্লোসও নাকি একমত যে রয়ের আচরন পাল্টে যেতে থাকে যখন থেকে তার ফর্ম খারাপ হতে শুরু করল, যখন রয় বুঝতে পারলেন সেই আগের রয় তিনি আর নেই! উরুর অপারেশনের পর বয়সের সাথে শারীরিকভাবে কিছু টা দুর্বল ে হার মানতে রাজি ছিলেন না রয় কীন। তাই নিজেকে ফিরে পেতে হয়ে পড়েন; কিন্তু যে খেলার প্রতি এত টান তাঁর সেখানে এত সহজ় মরিয়া রয়ের বদলে যাওয়া আচরণের প্রভাব পরতে থাকে মাঠের খেলাতেও। খেলতে থাকেন মাঠের সবখানে, দলের কারও কাছে বল গেলে নিজের পজিশন ছেড়ে সেখানে গিয়েই রয় বল চান! ফার্গি এটা নিয়ে রয়ের সাথে কথাও বলেছেন এবং অনাকাঙ্খিত এই স্বভাব বদলান�োর জন্য কাজও করেছেন তাঁরা, কিন্তু ফলাফল শূ ন্য! রয় নিজেও জানতেন মাঝমাঠ তাঁর জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা আর এখানে তিনি সবচেয়ে কার্যকর। কিন্তু সময়ের সাথে বয়স বেড়ে যাচ্ছে আর কুয়াশার আড়ালে চলে যাচ্ছে আগের দূ র্দান্ত রয় কীন; এটা মেনে নিতে পারছিলেন না রয়। “সে ভাবত সে পিটার প্যান।” বদলে যেতে থাকল আর মেজাজ খিটখিটে হতে থাকল রয়ের। সরাসরি সম্পর্কে ফাটল ধরা শুরু করল ২০০৫-০৬ ম�ৌসু মে পর্তুগালের ট্রেইনিং ক্যাম্প থেকে। সেখানে ইউনাইটেডের সবাই উঠেছিলেন একটি স�ৌখিন আর বিলাসবহুল রিস�োর্টে। ফ্রান্স থেকে ফিরে এসে ফার্গি বিশ্বাস করতে পারেন নি রুম নিয়ে রয়ের সাথে সহকারী কার্লোসের দুঃস্বপ্নের মত একচ�োট হয়ে গেছে! প্রথম রুমে ও দ্বিতীয় রুমে এসি নেই এমন অভিয�োগ ত�োলেন রয়। কিন্তু এরপর তৃতীয় যে রুমটা দেওয়া হয় তা নাকি একদম দারুন ছিল অন্য সকলের রুমের মত। ফার্গির ভাষ্যমতে- দেখা গেল রয় থাকতে চান নিকটস্থ গ্রামে তার পরিবারের সাথে। পরে এটা নিয়ে যখন ফার্গুসনের সাথে রয়ের কথা হয় তখন অভিয�োগের পর অভিয�োগ করতে থাকেন রয়, এটা সেটা সামান্য বিষয় নিয়েই, যেগুল�ো প্রায় সমাল�োচনার মতই শ�োনাচ্ছিল। কেন আমরা এখানে ক্যাম্প করছি? এমন প্রশ্নও করেন রয়।


রয়ের আচরণে কিছু টা মনঃক্ষুন্ন হন ওল্ড ট্রাফ�োর্ডের সম্রাট স্যার অ্যালেক্স। ওল্ড ট্রাফ�োর্ডের সাথে রয় কীনের সম্পর্কের চূ ড়ান্ত টানাপ�োড়েন শুরু হয় এক সাক্ষাতকারের পর। পর্তুগাল থেকে ফিরে আসার পর ক�োন একদিন MUTV তে এক সাক্ষাতকার দেন রয়। সাক্ষাতকারে কঠ�োর ভাবে তিনি তার দলের অনেক সদস্যদের সমাল�োচনা করেন; ফার্গি বলেছেন এটা ছিল ‘অসম্মান’ আর ‘ক�ৌতুক’। রয় সাক্ষাতকারে কীয়েরানকে ‘অলস ডিফেন্ডার’, কেন ফ্লেচারকে নিয়ে স্কটিশরা এত মাতামাতি করে তার সন্দেহ আছে, ফার্ডিন্যান্ড একশ বিশ হাজার পাউন্ড সপ্তাহে আয় করে বলেই এবং টটেনহামের সাথে বিশ মিনিট খেলেই নিজেকে সু পারস্টার মনে করা শুরু করেছে - এরকম বেশ কিছু কঠিন কথা বলেন। এই সাক্ষাতকারের জন্যই ২০০৫ সালে প্যারিসে লিলার বিপক্ষে খেলার পূর্বে ওয়ার্ম আপের সময় ইউনাইটেডের খেল�োয়াড়দের দুয়ো দেয় দর্শকরা! পরে সাক্ষাতকার নিয়ে ফার্গি ও রয় একান্ত ভাবে কথা বলেন; ড্রেসিং রুমে যে প্রভাব রয়ের ছিল তা খাটাতে চেয়েছিলেন হয়ত রয়, তাই নিজেই পরামর্শ দেন যে সাক্ষাতকারের ভিডিওটি ড্রেসিংরুমে সবাইকে দেখান�ো হ�োক এবং সকলেই সিদ্ধান্তটি নিক। ড্রেসিং রুমে ভিডিও দেখান�ো শেষে রয় নিজেই বললেন কারও কিছু বলার থাকলে বলতে পারে। এডউইন ফন দার সার তখন জানালেন যে রয় যা বলেছেন তা সীমা লংঘন করে গেছে। এটি শ�োনার পর আর মেজাজ ধরে রাখতে পারেন নি রয় কীন, কথার আক্রমণ করে বসেন এডউইনকে! এডউইন নিজেকে কি মনে করেন? এডউইনকে সমর্থন জানালে নিস্টেলরয়কে এক হাত দেখে নেন রয়। সবশেষে ফার্গুসনকে রয় অপমান করেন যে তিনি নিজের ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার ক্লাবের সাথে জড়িয়েছেন! এরপর সকলে একে একে রুম থেকে বের হয়ে যান সেই সাথে ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে রয় কীনের ভাগ্যও! কার্লোসকে ফার্গি তখনই বলেন, “তাকে চলে যেতে হবে।” কার্লোস শত ভাগ সমর্থন জানালে ২০০৫ সালেই শেষ হয়ে যায় কীনের দীর্ঘ দিনের ওল্ড ট্রাফ�োর্ড অধিনায়কত্ব আর ক্যারিয়ার! দীর্ঘদিনের সম্পর্ক চুকিয়ে রয় য�োগ দেন স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকে। যে রয় কীন এক সময় মাতিয়ে রাখতেন ড্রেসিং রুম, সেই রয় কীন চলে যাওয়ার পর নাকি স্বস্তি ফিরে আসে ড্রেসিংরুমে! সেল্টিকে ম�োটামুটি ভাল কাটছিল রয়ের সময়। পরে এক সময় রয় ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে এসে দেখা করেন ফার্গির সাথে, জানান পূর্বের ব্যবহারে জন্য তিনি অনুতপ্ত। সম্পর্ক কিছু টা জ�োড়া লাগলেও এরপর আবারও রয় সমাল�োচনা করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের; তারা তাকে ভুলে গেছে! ফার্গি অবাক হন এই ভেবে যে, যিনি ক্লাবকে এত কিছু দিয়েছেন তাকে কিভাবে ভুলে যাওয়া সম্ভব? রয় কীনের ক�োচিং ভবিষ্যত নিয়ে তখন মন্তব্য করেছেন ফার্গুসন। ফার্গির মতে একটা টিম গড়ে ত�োলার মত ধৈর্য রয়ের নেই! ২০১১-১২ ম�ৌসু মে সানডে টাইমসের সাক্ষাতকারে রয় আবার ফার্গুসনকে খ�োঁচা দিয়ে কথা বলেন। এরপর ক�োন এক শুক্রবারে ফার্গি আর রয় একটি সমঝ�োতায় আসেন যে তারা আর নিজেদের মধ্যকার পুর�োন�ো কাসু ন্দি ঘাটবেন না! তবে ফার্গুসন দাবি করেছেন যে প্রথমে চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন রয় নিজেই। রয় সান্ডারল্যান্ডের ক�োচ থাকা কালে দাবি করেন যে ইউনাইটেড তাঁকে অপমান করেছে আর ক্লাব ছাড়তে বাধ্য করেছে। এমন দাবির প্রেক্ষিতে ইউনাইটেড নাকি আইনি পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিল কিন্তু ফার্গির পরামর্শে শেষ পর্যন্ত তা আর করে নি কতৃপক্ষ। “আমি মনে করি আমাদের সম্মান আমরা অক্ষুন্ন রাখলাম।” ডেভিড বেকহ্যাম, সে ছিল আমার সন্তানের মত, লিখেছেন ফার্গুসন! মাত্র ১৪ বছর বয়সে ডেভিডকে ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে নিয়ে আসেন ফার্গুসন। গিগস, স্কোলসদের মতই চ�োখের সামনে বড় হয়েছেন ইংলিশ তারকা ডেভিড, পেয়েছেন খ্যাতি, পরিণত হয়েছেন তারকায়। কিন্তু ইউনাইটেড ছাড়তে হয় ডেভিডকে ফার্গির সাথে সম্পর্কের চরম অবনতির কারণে। এমনকি ইউনাইটেডে থাকাকালেই একসময় কথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে! বেকহ্যাম গিগস, স্কোলসদের মত হতে পারতেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি, এমনকি এখনও হয়ত খেলতেন ইউনাইটেডে! তবে তা কিন্তু হয় নি! ওল্ড ট্রাফ�োর্ড ছেড়ে ডেভিড পাড়ি জমিয়েছিলেন বার্নাব্যুতে।


এরপর আবার ২০০৭ সালে রিয়াল ছেড়ে আমেরিকার লস এঞ্জেলেস গ্যালাক্সি ক্লাবে য�োগ দেন ডেভিড। ফার্গুসন মনে করেন এটা করা ছাড়া অন্য ক�োন উপায় ছিল না তাঁর। তবে গ্যালাক্সিতে য�োগদান শুধুমাত্র ফুটবলীয় কারন ছিল না বলে মনে করেন ফার্গি। ডেভিডের চ�োখ ফুটবল ছাড়াও ছিল হলিউডের দিকে! রিয়াল যখন ছেড়েছেন তখনই নিজের ক্যারিয়ারের একটি বড় অংশ ত্যাগ করতে হয়েছে গ্ল্যামার সচেতন এই খেল�োয়াড়কে। এর পরে অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি ইংল্যান্ড দলে ফেরার। নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন অনেক খেল�োয়াড়কে ফার্গি। তাঁর গড়ে ত�োলা খেল�োয়াড়দের মধ্যে শুধুমাত্র ডেভিডই চেয়েছেন ‘বিখ্যাত’ হতে আর ফুটবলের বাইরেও যার একটা মিশন ছিল! সেটা হচ্ছে গ্ল্যামার দুনিয়া! ফুটবল খেলে যা আয় হত তার চেয়ে দ্বিগুন তিনি এর বাইরে কামাই করতেন। ইউনাইটেডে নিজের শেষ ম�ৌসু মে ফর্ম হারাতে থাকেন ডেভিড। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এফ এ কাপের পঞ্চম রাউন্ডে আর্সেনালের কাছে ইউনাইটেড হারে ২-০ গ�োলে। ঐ খেলায় প্রায় জগিং এর মত করে দ�ৌড়াচ্ছিলেন ডেভিড। একজন তাঁর পাশ দিয়ে বল নিয়ে গেলেন। তিনি যদিও পারতেন দ�ৌড়ে গিয়ে আটকাতে কিন্তু তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করার ক�োন ইচ্ছা দেখান নি তিনি! পরে ড্রেসিং রুমে কথা বলার একপর্যায়ে রেগে গিয়ে মেঝেতে পরে থাকা বুটে ফার্গুসন লাথি মারলে বুট গিয়ে লাগে ডেভিড বেকহ্যামের কপালে; চ�োখের উপরে বেশ ক্ষত হয়ে যায় তার! ফার্গির দিকে তেড়ে আসলে নাকি সতীর্থরা তাকে আটকান। “বস, তুমি নিজের দলকে হারিয়ে দিয়েছ। যত খুশি পার�ো তর্ক কর।”, বলেছিলেন ডেভিড। পরের দিন ফার্গি ডেভিডকে ডেকে ভিডিও দেখিয়ে ওর ভুল দেখাতে চাইলে ক�োন সাড়া দেন নি ডেভিড, ক�োন কথা বলেন নি, এমনকি ক�োন প্রশ্নের জবাবও দেন নি। এরপরের দিন ঘটনাটি চলে আসে খবরে, আর ক্ষত দেখাতে বেকহাম মাথায় এলিস ব্যান্ড পরা শুরু করলেন! ফার্গি এর পর আর এক মুহূর্ত দেরি করেন নি, ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়ে দেন ডেভিডকে ছাড়তে হবে ওল্ড ট্রাফ�োর্ড! অনেক দিনের পরীক্ষিত সেনাপতি অ্যালেক্স ফার্গুসন, কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে তাকে অন্ধের মত। আর তাই সেই সাথে ইউনাইটেডে বেজে গেল ডেভিড বেকহামের বিদায়ের ঘন্টা! যদিও রিয়ালের সাথে ওল্ড ট্রাফ�োর্ড কর্তৃপক্ষের কথা শুরুর আগে থেকেই নাকি রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে ডেভিডের সাথে কথা হয় রিয়ালের! “যে মূহুর্ত থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেল�োয়াড়েরা মনে করবে তারা ম্যানেজারের চেয়ে বড়, তাদের ক্লাব ছড়তে হবে।” ফার্গুসন বলেছেন, “আমার বড় সমস্যা হল - আমি সত্যিই একজন ফুটবলের মানুষ, সে ভিক্টোরিয়ার প্রেমে পড়ল এবং এটা সবকিছু বদলে দিল।” ১৬ বছর বয়সী ডেভিড ছিলেন একেবারে ফুটবলপ্রেমী, মাঠে অনেক বেশি সময় দিতেন, ব্যায়াম করতেন; ভালবাসতেন ফুটবল। কিন্তু তারকা বনে যাবার পর বদলে যান ডেভিড, ফুটবলের চেয়ে এর বাইরেই বেশি সময় দেন!


২০০০ সালে লেস্টার সিটির সাথে ম্যাচের আগে প্রশিক্ষন মাঠে ডেভিড বেকহাম পুর�ো মাথা ঢাকা বেনি হ্যাট পরে আসেন, সাথে প্রায় ২০ জন ফট�োগ্রাফার! এমনকি ঐ দিন রাতের খাবারের টেবিলেও তিনি হ্যাটটি খুলেন নি। ফার্গি বারবার বলার পরও অমান্য করেন ডেভিড। রাতের খাবারের টেবিলে হ্যাট পরে বসে থাকার কি মানে! পরদিন ম্যাচের পূর্বে ওয়ার্মআপের সময়েও ডেভিড হ্যাট পরেই নামতে চান; এবার ফার্গি পরিষ্কার জানিয়ে দেন ম্যাচে খেলতে হলে এখনই খুলতে হবে নইলে বাদ! হ্যাট খুলতেই দেখা গেল পুর�ো মাথা ন্যাড়া; পরিকল্পনা ছিল মাঠে নেমে একবারে হ্যাট খুলে নতুন চুলের কাট দেখাবেন দর্শকদের, পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় বেশ ক্ষেপে যান তিনি! ২০০২ বিশ্বকাপের আগে কিছু টা চ�োট পান ডেভিড বেকহ্যাম, তেমন গুরুতর কিছু ছিল না। সেটি ব�োঝা যেত না আর তাই বিশ্বকাপ খেলার নেশায় নিজে থেকেও কিছু আর জানান নি ডেভিড। হালকা পাতলা চ�োট নিয়েই জাপান বিশ্বকাপে খেলেন বেকহ্যাম। তবে তিনি যে মানসিক বা শারীরিক - যে ক�োন একদিকেই হ�োক - পুর�োপুরি প্রস্তুত ছিলেন না তা ধরা পরে ক�োয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলাতে। আর সাথে সাথে সব দ�োষ গিয়ে পরে ফার্গির ঘাড়ে! স্কটিশ ল�োকটা নিশ্চয়ই ইংলিশদের ভাল চাইবেন না! তবে ফার্গিও জবাবে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যদি স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ইংলিশরা খেলত তাহলে অবশ্যই তিনি খারাপ চাইতেন। এখানে এমন কিছু অবশ্যই ছিল না। তাঁর হাতে গড়া অনেক ইংলিশ আল�োকিত করেছেন ফুটবল মঞ্চ; ফার্গিও সবসময় তাঁর শিষ্যদের ভাল চান। পিএসজি’র হয়ে ৩৭ বছর বয়সে ডেভিডের খেলা মুগ্ধ করেছে ফার্গিকে। এই বয়সেও এত সামর্থ্য ধরে রাখা কিভাবে সম্ভব! ইউনাইটেডকে অনেকবার মুগ্ধ করেছিলেন ডেভিড তাঁর কারিশমা দেখিয়ে। শেষ বয়সেও মুগ্ধ করেছেন অগণিত ফুটবলপ্রেমীকে। একসময় নিজের ছেলের মত দেখেছেন যাকে তাঁর জন্য ফার্গুসন শুভ কামনা জানিয়েছেন। যত সমাল�োচনা করুন না কেন ক�োথায় যেন একটা মায়ার টান থেকে যায়! নিজের আত্মজীবনীতে অ্যালেক্স ফার্গুসন অকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন মরিনিয়োর। মরিনিয়ো যেমন তার ভাল বন্ধু ঠিক তেমনি ডাগ আউটের লড়াইতে ছিলেন ‘স্পেশাল রাইভাল’। মরিনিয়ো - ‘দ্যা স্পেশাল ওয়ান’ এর সাথে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের প্রথম দেখা ২০০৩-০৪ ম�ৌসু মের

চ্যাম্পিয়ন্স লীগের খেলায়, তখন মরিনিয়ো প�োর্তোর ম্যানেজার। প্রথমবারের দেখাতে হেরে যান ফার্গি। প্রথম দিকে ফার্গির সাথে মরিনিয়োর কিছু টা দ্বন্দ্ব থাকলেও পরে তারা পরিণত হন একে অন্যের শুভাকাঙ্খী এবং ভাল বন্ধতে। ফার্গি বর্ননা করেছেন যে আর্সেনালের ক�োচ জর্জ গ্রাহামের বিপক্ষে প্রথম খেলাতে দ্বন্দ্ব লাগলেও পরে তাঁদের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, একই ব্যাপার ঘটেছে মরিনিয়োর বেলাতেও। মরিনিয়োর ক�োচিং দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ফার্গি তার বইতে। মরিনিয়ো জানেন তাঁকে কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে। “মরিনিয়�ো সার্ফব�োর্ডে ঢেউয়ের মধ্যে অন্য সকলের চেয়ে বেশিক্ষন থাকা ল�োকদের মধ্যে একজন।” আপনি এত দিনে ভাল মতই বুঝে গেছেন ফার্গি কি ব�োঝাতে চেয়েছেন! ফার্গি শুরুতে মনে করেছিলেন মরিনিয়োকে নিয়ে খুব আলাদা ভাবে চিন্তা ভাবনার কিছু নেই যেন তিনি কল�োনির নতুন মুখ! কিন্তু ২০০৪ সালে চেলসিতে আসার পর মরিনিয়োর বিপক্ষে স্ট্যামফ�োর্ডে ক�োন খেলাতে জয়ের মুখ দেখেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ১৯৫৫ সালের পর চেলসি আবার প্রিমিয়ার লীগ শির�োপা জেতে মরিনিয়ো আসার পর, এবং তা প্রায় ৫০ বছর পর! ফার্গুসনের মতে লন্ডনে আসার আগে ইউনাইটেডকে ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে এসে পরাজিত করাটা ছিল মরিনিয়োর প্রতিভার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। খেল�োয়াড়দের সাথে মরিনিয়ো সবসময় অসাধারণ। তাঁর ব্যক্তিত্ব অন্যরকম যার জন্য দলের খেল�োয়াড়েরা তাকে বেশ পছন্দ করতেন। তিনি নিজেকে নিয়ে মজা করতে পারেন, ক�ৌতুক করতে পারেন; ওয়েঙ্গার বা বেনিতেজের এই বৈশিষ্ট্য আছে বলে মনে করেন না ওল্ড ট্রাফ�োর্ড কিংবদন্তি। মাদ্রিদে সময়টা কঠিন কেটেছে মরিনিয়োর এটা ভাল মতই বুঝতে পেরেছেন ফার্গি। কেননা মরিনিয়োর ফুটবলীয় দর্শনের সাথে মাদ্রিদের দর্শন ঠিক সমান্তরালে চলাটা কঠিনই ছিল। বার্নাব্যুতে অনেকেই মনে করেন যে ১-০ জয়ের চেয়ে ৫-৪ তে হার শ্রেয়। তিনি ইন্টার মিলান আর প�োর্তোর হয়ে দুটি ইউর�োপিয়ান শির�োপা জিতলেও বলার মত সফল হন ে শনাল ফুটবল কতটা নি মাদ্রিদে। বার্সার দুর্দান্ত টিম ওয়ার্কের সাথে পজ় ভয়ংকর তা বিশ্ব জানে। তবে মরিনিয়ো জানতেন কিভাবে আটকাতে হবে তাদের, এবং পেরেছিলেন শেষ পর্যন্ত। ইন্টারে থাকাকালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালে বার্সার বিপক্ষে মরিনিয়োর ক�ৌশলে মুগ্ধ ফার্গুসন; তার


২০০৪ সালের গ্রীষ্মে মরিনিয়ো আসলেন চেলসিতে আর সাংবাদ সম্মেলনে ঘ�োষনা করলেন, “আমি স্পেশাল ওয়ান।” ফার্গি সেদিন ভেবেছিলেন মরিনিয়ো একটি ‘উদ্ধত তরুন চারাগাছ!’, যে কিনা বড় বড় কথা বলে শুধু! সেই ছ�োট্ট চারাগাছ আজ পরিণত হয়েছে মহীরুহে! প্রথমে র�োমে তারপর ওয়েম্বলিতে ফার্গির ইউনাইটেড হার মেনেছে বার্সার কাছে। আর ফার্গির মতে বার্সাই সেরা দল। বার্সার খেলার ধরন, ওদের সম্মিলিত দলীয় পারফরমেন্স অবাক করেছে ফার্গুসনকে; কিভাবে সম্ভব? মেসি, ইনিয়েস্তা, জাভি এই ছ�োট্ট মানুষগুল�োর ফুটবলীয় শৈল্পিক দক্ষতা অসাধারন; মাঠে তারা সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন ফার্গির দলকে। তবে ফার্গি মনে করেন বার্সায় পিকে আন্ডাররেটেড একজন খেল�োয়াড়, তিনি দারুন একজন কিন্তু মূল্যায়নটা যেন একটু কম বলেই মনে হয়। একসময় পিকে ছিলেন ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে, ফার্গুসনের শিবিরে। গুয়ার্দিওলা একবার ফার্গিকে বলেছিলেন তাঁর সেরা চুক্তিটি হল পিকে কে বার্সায় নিয়ে আসা। ২০১১ সালে ওয়েম্বলিতে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে বার্সেল�োনার কাছে হেরে যায় ইউনাইটেড; সেরা দলের কাছে হারায় ক�োন ঈর্ষা নেই ফার্গির মনে তবে জিততে না পারায় আক্ষেপ ঠিক রয়ে গেছে, সবারই থাকে এবং থাকা উচিত। আর ঠিক দুই বছর আগে র�োমে বার্সার বিপক্ষে পরাজয় ছিল ক�োন ইউর�োপীয় ফাইনালে ফার্গুসনের প্রথম পরাজয়। র�োমের ফাইনালে হারার ব্যাপারে ফার্গি বইয়ে কারন দেখিয়েছেন হ�োটেলের, যেখানে তাঁরা

ঊঠেছিলেন! “এটি ছিল কসাইখানার মত!” রুমে লাইট ছিল না, খাবার এসেছিল দেরিতে তাও ঠান্ডা! ফার্গি দাবি করেছেন নিজেরা সাথে করে রাঁধুনি নিয়ে গেলেও তাকে কাজ করতে দেওয়া হয় নি, এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে খাবার খেয়ে নাকি দলের দুই তিনজন কিছু টা দূ র্বল হয়ে পরেন, এমনকি গিগসের মত খেল�োয়াড়ও! বার্সার যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে ক্রুইফের ট�োটাল ফুটবলের দর্শন থেকে, আর হাত বদলের সাথে সাথে গুয়ার্দিওলা য�োগ করেছেন নতুন মাত্রা। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখ�ো, তিন সেকেন্ডের বেশি যেন বল তারা পায়ে রাখতে না পারে আর নিজেদের বলের দখল অবশ্যই ঠিক রাখ�ো। পেপ গুয়ার্দিওলার বার্সা স্প্যানিশ প্রথম দল যারা এক ম�ৌসু মে ট্রেবল জিতে অনন্য রেকর্ড গড়ে। আর অন্য সব প্রতিপক্ষের চেয়ে ফার্গুসন নির্দ্বিধায় সেরা মানছেন এই বার্সা দলটিকেই। অ্যালেক্স ফার্গুসনের সাথে মিডিয়ার দ্বন্দ্বটা অনেক পুর�োন�ো। দীর্ঘ সময় ফুটবলের সাথে জড়িত থাকার সু বাদে মিডিয়া ও মিডিয়ার ব্যক্তিবর্গ সম্বন্ধে বেশ ভাল অভিজ্ঞতা আছে ফার্গির। এদের বলা হয় একরকম আর এরা প্রকাশ করে আরেক রকম ভাবে; পুর�ো ৩৬০ ডিগ্রী উলট�ো! বইতে দু’ একটি অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন ফার্গি। চেলসির বিপক্ষে খেলার সময় সু য়ারেজের কামড়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ফার্গুসনের উত্তর ছিল, “আমি জানি তাদের অনুভূতি, কারন কাত�োনা এক দর্শককে কুংফু লাথি দেওয়ার জন্য নয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিল।” আশ্চর্য! পরে

চেলসির সাথে খেলাতে সু য়ারেজের কামড়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ফার্গুসনের উত্তর ছিল, “আমি জানি তাদের অনুভূতি, কারন কাত�োনা এক দর্শককে কুংফু লাথি দেওয়ার জন্য নয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিল।” আশ্চর্য! পরে শির�োনাম আসল “লিভারপুলের প্রতি ফার্গুসনের সমবেদনা।”

শির�োনাম আসল “লিভারপুলের প্রতি ফার্গুসনের সমবেদনা।” মিডিয়ার অপরিপক্ক আর কান্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্য ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে নিষিদ্ধ করেছিলেন ফার্গুসন। হঠাৎ তারা একদিন খবরে প্রকাশ করে বসল রুনি আর ফার্গি সম্পর্কে ফাটল, তারা প্রশিক্ষন ক্যাম্পে কথা বলেন নি। ফার্গির দাবি দলের সবাই জানেন ব্যাপারটা ম�োটেই সত্যি নয়। ভীষণ ক্ষেপে যান ফার্গি। মিডিয়ার সাথে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম নয় আর শেষও নয়। খেল�োয়াড় থাকা অবস্থায় মিডিয়ায় সামান্য একটি কথা বলার জন্য স্কটিশ লীগে সাত ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ফার্গুসন। মিডিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল ২০০৪ সালে। ‘ফার্গি এন্ড সন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে বিবিসি। যেখানে দেখান�ো হয় জ্যাপ স্ট্যাম ও মাসিমিওর ইউনাইটেড থেকে দল বদলের ব্যাপারে একটি নামি দামি স্পোর্টস এজেন্সির সাথে ফার্গুসনের ছেলে জ্যাসনের আঁতাত ছিল! এই তথ্য চিত্রের পর ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ তাদের দলের ব্যাপারে জ্যাসনের যে ক�োন ধরনের সংশ্লিষ্টতা নিষিদ্ধ করে। ফার্গুসন জানিয়েছেন তথ্যচিত্রটি ছিল ডাহা মিথ্যা। বিবিসি ক�োন ধরনের দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চায় নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও পরে উকিল ও জ্যাসনের অনুর�োধে সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়ান অ্যালেক্স ফার্গুসন। সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে ফার্গুসন সতর্ক থাকেন সবসময়।


খেলা পূর্ববতী সম্মেলনে ক�োচের উপর নির্ভর করে অনেক কিছু । ফার্গি লিখেছেন যে তিনি সবসময় আগে থেকেই গুছিয়ে রাখেন নিজেকে। সামান্য একটি মন্তব্য দলের খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে। আল�োড়ন তুলতে পারে গ�োটা ফুটবল দুনিয়ায়। সাংবাদিকদের বড় প্রশ্ন পছন্দ করেন ফার্গি কেননা মনে মনে গুছিয়ে ফেলা যায় সবচেয়ে ভাল উত্তরটি; কিন্তু ‘কেন ত�োমরা আজ খারাপ করলে?’ এই ধরনের ছ�োট প্রশ্নকে বেশ অস্বস্তিকর মনে করেন ফার্গি। দলের দুর্বলতা সংবাদ সম্মেলনে গ�োটা বিশ্বের কাছে লুকিয়ে রাখাও কিন্তু একটি শিল্প। সবাই কিন্তু এটি পারে না! খেলা শেষে রেফারিদেরকেও সমাল�োচনার তীরে বিদ্ধ করেছেন অনেকবার, আত্মজীবনীতেও ছাড় দেননি অ্যালেক্স ফার্গুসন। রেফারিদের পারফরমেন্সে ঠিক সন্তুষ্ট নন ফার্গি। খেলা পরিচালনা করার জন্য ফার্গুসনের পছন্দ শারীরিকভাবে য�োগ্য রেফারি। মাঠে খেল�োয়াড়দের গতির সাথে মানিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় অনেক সময় প�ৌছতে পারেন না রেফারিরা; কেননা অনেক সময় তারা তুলনামূলক দুর্বল থাকেন। ফার্গি মনে করেন ইংলিশ লীগে রেফারিদের শারীরিক দক্ষতা পর্যাপ্ত নয়। ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে ২০০৯ সালে সান্ডারল্যন্ডের সাথে ড্র করে ইউনাইটেড। ঐ খেলায় রেফারি ছিলেন এলান উইলি। ফার্গি এলান উইলির কঠ�োর সমাল�োচনা করে বলছেন যে ঐ খেলা পরিচালনা করার সামর্থ্য ছিল না উইলির। কেননা তখন তার ওজন বেশি ছিল, ঠিক মত দ�ৌড়াতে পারতেন না আর খেলার মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হত উইলিকে। দৈহিক গঠন নিয়ে কথা বলার জন্য পরে অবশ্য উইলির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন ফার্গি। রেফারির সমাল�োচনার জন্য ২০০৩ ও ২০০৭ সালে দুইবার ডাগ আউটে নিষিদ্ধ হন

ফার্গুসন, এমনকি একবার তাঁকে ৩০,০০০ ইউর�ো জরিমানাও করা হয়! তবে ফার্গির মতে সবচেয়ে ভাল রেফারিং প্রক্রিয়ার জন্য প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুল�োর মত তাদের পেশাদার হওয়া জরুরী; ফুটবল খেলাতে এখন অনেক টাকা আর এটা করা খুব কঠিন কিছু না। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের রেফারিরা একটু উদ্ধত ধরনের এমন দাবি করে ফার্গুসন বলেছেন যে ইউর�োপে তাঁর চারবারের ফাইনালে মাত্র একবার রেফারি সবচেয়ে ভাল রেফারিং করেছেন, ১৯৯৯ সালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে। মরিনিয়োর প�োর্তোর বিপক্ষে রেফারিং ছিল অবিশ্বাস্য এবং ফার্গুসনের দাবি রেফারি ছিলেন তাদের হারের অন্যতম কারণ! রেফারিরাও মানুষ, তাঁদের ভুল হতে পারে তবে ফার্গুসন মনে করেন একটি নির্দিষ্ট মানদন্ড থাকা উচিত রেফারিং এর ক্ষেত্রে। খেলার একটা অন্যতম অংশ রেফারি। খেলার হার জিতে রেফারির ভূমিকা বলাটা এখন অত্যুক্তি হয়ে যাবে। “চাপের মধ্যে, দ্রুত সিদ্ধান্ত।” এ সব কিছু নিয়েই ফুটবল। অ্যালেক্স ফার্গুসনের আত্মজীবনীতে লিভারপুলের কিংবদন্তি তারকা স্টিভেন জেরার্ডকে নিয়ে যা বলেছেন তা নিয়ে সমাল�োচনার ঝড় বয়ে গেছে ইতিমধ্যে। ফার্গুসন বিশ্বাস করেন যে জেরার্ড উচু মাপের খেল�োয়াড় নন! ে রার্ড। সত্যি এমনকি ইউনাইটেডের বিপক্ষে কখনই ভাল করতে পারেননি জ় কথা বলতে ব্যাপারটি কিছু টা ভিন্ন! ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে ইস্তাম্বুলে প্রায় একাই খাদের কিনারা থেকে দলকে জিতিয়েছেন জেরার্ড। ইউনাইটেডের বিপক্ষে জেরার্ড নিষ্প্রভ - ফার্গির এই কথাটি তেমন ধ�োপে টিকে না যখন আপনি জানেন স্টিভেনের শক্তি সামর্থ্য আর দক্ষতা। ২০০৩ সালের লীগ কাপ ফাইনালে ইউনাইটেডের বিপক্ষে জয়সূচক গ�োলের জ�োগান


দাতা কিন্তু ছিলেন এই স্টিভেন জেরার্ড। লিভারপুলের বর্তমান ক�োচ ব্রেন্ডান রজার্সের নিয়োগের সিদ্ধান্ত ভুল বলে মনে করেন ফার্গি। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মার্সিসাইডে য�োগ দেন রজার্স, এত অল্প বয়সের ক�োচ নিয়োগ দেওয়ায় অবাক হয়েছেন ফার্গি। যদিও অবাক করার মত তেমন ঘটনা এটা না। তরুনদের সু য�োগ দেয়ায় রজার্সের প্রশংসা অবশ্য করেছেন ফার্গি। তবে সমাল�োচনা করে ফার্গি লিখেছেন শির�োপা জেতান�োর মত প্রায় আটজন খেল�োয়াড় দরকার লিভারপুলের! দলবদলের বাজারে ক�োন ভুল করলে চলবে না। লিভারপুলের ক�োচ থাকা অবস্থায় রাফা বেনিতেজ দলে নিয়ে এসছিলেন দুই তরুন তুর্কীকে; পেপে রেইনা ও তরেস’কে। ফার্গুসনের মতে দারুন দুটি কাজ করেছিলেন রাফা। যাই হ�োক মাত্র ১৬ বছর বয়সের তরেস’কে ওল্ড ট্রাফ�োর্ডে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন ফার্গি; যদিও তা আর হয় নি। ওয়েন অথবা রবি ফাওলারের পরে তরেস’কেই লিভারপুলের সেরা স্ট্রাইকার মনে করেন ফার্গুসন। ফার্গুসনের মতে ইউনাইটেড ও সিটির পর্যায়ে আসার জন্য বর্তমানে বেশ বড় ধরনের বিনিয়োগের দরকার লিভারপুলের। দরকার পরিবর্তনের! সেই পুর�োন�ো অ্যানফিল্ড; লিভারপুলের ড্রেসিং রুম প্রায় বিশ বছরের পুর�োন�ো, দরকার নতুন কিছু র।ফার্গির মতে লিভারপুলের নতুন স্টেডিয়াম দরকার ছিল। আজকের দিনে নতুন স্টেডিয়াম করতে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউর�োর খরচা! সমীকরণ এত সহজ নয়, যত সহজে ফার্গুসন বই লিখেছেন!


পেলে, ক্রুইফ, ম্যারাড�োনা, বেষ্টদের চেয়ে কি কম ছিলেন আমাদের ফুটবল জাদুকর সামাদ? ফুটবলের মহান শিল্পীতে পরিনত হওয়া সামাদ মাঝমাঠ থেকে কাটিয়ে গ�োলে শট করেন, বল গ�োলবারে উপর দিয়ে যায়। দ্বিতীয় শটেও একই কান্ড! কিংবদন্তি সামাদ রেফারীকে বললেন, “গ�োলপ�োষ্টের উচ্চতা কম আছে। তা না হলে আমার দুই শটেই গ�োল হত”; সেবার গ�োলপ�োষ্ট প্রায় ৪ ইঞ্চি কম ছিল! বাইরে যাওয়া শটেই গ�োল দিলেন রেফারী... স্প্রিন্ট, ড্রিবলিং, নিপুন দক্ষতায় গ�োল করার অসাধারন সহজাত ক্ষমতা ছিল সামাদের। চ�োখ ধাঁধান�ো ক�ৌশল আর মন�োমুগ্ধকর ফুটবলীয় দক্ষতায় মাতিয়ে রেখেছিলেন পুর�ো উপমহাদেশকে। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর জন্যই পেয়েছেন ফুটবলের জাদুকর খেতাব! একাই খেলার ম�োড় ঘুরিয়ে দিতে পারতেন আমাদের সামাদ।


১৯৩৩ সালে সামাদের নেতৃত্বে তার অসাধারন পারফর্মেন্সেই সর্বভারতীয় দল ৪-১ গ�োলে হারায় বিশ্বসেরা গ্রেট ব্রিটেন কে, তারকা ভরপুর শক্তিশালী ইউর�োপীয় টিমকে হারায় ২-১ গ�োলে। সামাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পরে এশিয়া পেরিয়ে ইউর�োপসহ সারা বিশ্বে! সামাদবিহীন দল একেবারে সাদামাটা, প্রমান মেলে আফ্রিকা সফরে সামাদ নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর, বলার মত সাফল্যই নেই। ইংল্যান্ডের খ্যাতিমান ফুটবলার এলেক হেসি বলেছিলেন, “বিশ্বমানের যে ক�োন দলে খেলার য�োগ্যতা সামাদের রয়েছে।” উপমহাদেশে জন্মেছিলেন বলেই হয়ত তার নাম আজ বিশ্বফুটবল প্রেমীরা জানে না, আমরা কতটুকু জানি সেটাও ভাবার বিষয়! ফুটবলের এই কিংবদন্তির ভারতে পূর্নিয়ার ভুরি গ্রামে ১৮৯৫ সালের ৬ই ডিসেম্বরে। ১৯১২ সালে কলিকাতা মেইন টাউন ক্লাবের হয়ে শুরু। ১৯১৫ সালে কলিকাতার দ্বিতীয় বিভাগের দল এরিয়ান্সে য�োগ দিয়েই প্রথম বিভাগে তুলে আনেন দলটিকে। ১৯২৪ সালে ডাক পান সর্বভারতীয় জাতীয় দলে। ১৯২৭ সালে শুরু করেন সে সময়ের সেরা দল ঢাকার ভিক্টোরিয়া ক্লাবের হয়ে। ১৯৩৩ সালে য�োগ দেন ম�োহামেডানে। এর পরই টানা ৫ বার আই এফ এ শিল্ড ও লীগ জেতে ম�োহামেডান। প্রায় ২৩ বছরের ফুটবলের ক্যারিয়ারে খেলেছেন অভাবনীয় ফুটবল, জন্ম দিয়েছেন নানা ঘটনার। ঘটনা ১ – জাভায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে প্রায় ৫/৬ জন কে কাটিয়ে শট করলেন গ�োলে, বল প�োষ্টের ক্রসবারে লেগে ফিরে আসল! রেফারীকে চ্যালেঞ্জ করেন জাদুকর সামাদ – যে প�োষ্ট ছ�োট আছে! প�োষ্ট মেপে দেখা গেল সত্যিই প�োষ্ট স্ট্যান্ডার্ড এর চেয়ে ছ�োট! রেফারি গ�োল দিতে বাধ্য হয়! ঘটনা ২ - ফুটবলের মহান শিল্পীতে পরিনত হওয়া সামাদ মাঝ মাঠ থেকে কাটিয়ে গ�োলে শট করেন, বল গ�োলবারে উপর দিয়ে যায়। দ্বিতীয় শটেও একই কান্ড! কিংবদন্তি সামাদ রেফারীকে বললেন, “গ�োলপ�োষ্টের উচ্চতা কম আছে। তা – না হলে আমার ২ শটেই গ�োল হত”; সেবার গ�োলপ�োষ্ট

প্রায় ৪ ইঞ্চি কম ছিল! বাইরে যাওয়া শটেই গ�োল দিলেন রেফারী। ঘটনা ৩ - খেলার আগে একটি মাঠ ঘুরে জাদুকর জানালেন তাঁদের দল এই মাঠে খেলবে না কারন মাঠ আন্তুর্জাতিক মাপের চেয়ে কিছু টা ছ�োট! সামাদ সবসময়ই ছিলেন নির্ভুল। এবার�ো তাই! এমনও শ�োনা যায় সামাদ মাঠের দর্শকদের জিজ্ঞেস করতেন কত গ�োল দিব আজ! দর্শক চাহিদা মতই নাকি গ�োল হত! এমন বহু ঘটনা শ�োনা যায়। বলা হয় বিশ্ব ফুটবলের মুকুটবিহীন সম্রাট তিনি। ১৯৩৬ সালে মাঠে গুরুতর আহত হবার পর আর সেই ভাবে ফিরতে পারেননি, ১৯৩৮ সালে ফুটবল প্রেমীরা দেখল মুকুটবিহীন সম্রটের নীরব অবসর! ‘৪৭ এর দেশ বিভাগের পর আপন করে নেন বাংলার মাটিকেই, চলে আসেন পার্বতীপুরে। বাস করতে থাকেন পার্বতীপুরের রেলওয়ে কল�োনিতে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই বাস করেন তিনি। বিনা চিকিৎসায় মারা যান ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারী। নন্দিত এই ফুটবলার কে প্রাপ্য সম্মান দিতে পারে নি আমাদের এই দেশ। আক্ষেপ ছিল প্রাপ্য মর্যাদা না পাওয়ার। মারা গেছেন অনেক কষ্ট বুকে নিয়েই। সামাদের মত ফুটবলার যুগে যুগে জন্মায় না। স্বাধীনতার পরও তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বাফুফেরও তেমন উদ্যোগ নেই। নেই তাঁর নামে ক�োন স্টেডিয়াম, নেই স্মৃতি সংগ্রহের ক�োন চেষ্টা! যেখানে ভারতের আসামে তাঁর নামে একটি স্টেডিয়াম আছে, সেখানে শুধু আমরাই পারলাম না তাঁর জন্য কিছু করতে! একমাত্র তাঁর নামের ফুটবল জাদুকর সামাদ টুর্নামেন্টও বন্ধ হয়ে গেছে! অসাধারন এই মানুষটি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে সম্মানিত করেছিলেন আমাদের ফুটবলকে, সম্মানিত করেছেন বাংলার ফুটবল প্রেমিদের। কিন্তু সেই সম্মানের ছিটে ফ�োঁটাও দিতে পারেনি আমরা তাকে। বেঁচে থাকুক ফুটবল জাদুকরের কৃতিত্ব, চিরজীবী হ�োক তাঁর স্মৃতি।

১৯৩৮ সালে ফুটবল প্রেমীরা দেখল মুকুটবিহীন সম্রটের নীরব অবসর! সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের পর বাস করতে থাকেন এদেশের পার্বতীপুরের রেলওয়ে কল�োনিতে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই বাস করেন তিনি। বিনা চিকিৎসায় মারা যান ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারী


গ�োললাইন প্রযুক্তির অভিষেক: বিতর্কের পরিসমাপ্তি নাকি বিভ্রান্তির সূচনা? ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড সেই গ�োল টনক নড়ায় ফিফার, যেটা গ�োল হিসেবে বিবেচনা হয়নি সেদিন। এরপর ফিফার অনুম�োদিত হক-আই প্রযুক্তি অনুম�োদন পায় ৩টি জার্মান প্রযুক্তিকে পিছে ফেলে। বহুদিনের আল�োচনা-সমাল�োচনা পেরিয়ে, অসংখ্য বিতর্কিত ও ‘ভ�ৌতিক’ গ�োলের উদাহরণকে সামনে রেখে এ ম�ৌসু ম থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে গ�োললাইন প্রযুক্তির। বিভিন্ন সময়ে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে ম্যাচ পরবর্তী উত্তেজনা, আক্ষেপ, পত্রিকাগুল�োয় বিশেষজ্ঞদের কলামে সমাল�োচনার ঝড়; সবই পরিসমাপ্তির পথে, এমনটাই দাবি এ প্রযুক্তির উপস্থাপকদের। ক্রিকেটের চলমান অ্যাশেজ সিরিজে আরও একবার প্রমানিত হয়েছে যে, এখন�ো ভিডিও প্রযুক্তিতে সমস্যা বিদ্যমান। খ�োলা চ�োখে ব�োধগম্য সঠিক সিদ্ধান্ত থেকে দূ রে গিয়ে উভয়পক্ষের জন্য ক্ষতিকারক ফলাফল উপস্থাপন প্রায়ই এ প্রযুক্তিতে পরিলক্ষিত হয়। প্রিমিয়ার লিগে ব্যবহার হতে চলা এই প্রযুক্তির সঙ্কট কাটিয়ে উঠার সক্ষমতা এবং ফুটবলের মত সময় সাশ্রয়ী খেলায় এর উপয�োগিতা প্রশ্নবিদ্ধ।


বিতর্কের শুরুটা ২০০৬ সালে, যখন প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ ফুলহ্যাম ট্রেনিং গ্রাউন্ডে হক-আই প্রযুক্তি পরীক্ষা শুরু করে। কিন্তু মেলেনি সমাধান। সেপ ব্ল্যাটার এবং ফিফা-উয়েফার মধ্যে চলে বিতর্ক। উঠে আসে প্রযুক্তির ব্যবহারে খেলার গতিতে বাধা পড়া ও রেফারির কর্তৃত্বকে খর্ব করার মত বিষয়ও। ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড সেই গ�োল টনক নড়ায় ফিফার, যেটা গ�োল হিসেবে বিবেচনা হয়নি সেদিন। এরপর ফিফার অনুম�োদিত হক-আই প্রযুক্তি অনুম�োদন পায় ৩টি জার্মান প্রযুক্তিকে পিছে ফেলে।

এই প্রযুক্তিতে উচ্চগতিসম্পন্ন ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়, যা স্টেডিয়ামের উভয় প্রান্তে বলের গতিবিধি পর্যবেক্ষন ও অবস্থা নির্নয়ের কাজ করে। এমনকি গ�োল হলে রেফারির হাতে থাকা ইলেকট্রনিক যন্ত্রে প�ৌছে যাবে গ�োলের বার্তা। ইপিএল এর ২০টি ভেন্যুর সবগুল�োতেই এ প্রযুক্তি বসান�ো হচ্ছে যার খরচ পড়ছে ম�োট ২৫০,০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড। এই খরচের পুর�ো অর্থই জ�োগান দিচ্ছে কেন্দ্রীয় লিগের তহবিল থেকে। প্রিমিয়ার লিগের প্রধান রিচার্ড স্কুয়াডম�োর বলেনঃ “ফুটবল সৃ ষ্টিগতভাবে সরল খেলা। অধিক গ�োল করতে পারা দলই এখানে বিজয়ী বলে বিবেচিত হয়। যেহেতু এই প্রযুক্তি আমাদের গ�োল নির্ধারনে সহায়তা করে বিজয়ী খুঁজে পেতে সাহায্য করে, তা ব্যবহার করা কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমাদের অবশ্য কর্তব্য”। “মূলত এখানে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুব জরুরি। খেলার সাথে জড়িত সকলেই গ�োলের ব্যাপারে নিখুঁত সিদ্ধান্ত চায়, ঠিক যেমনটা চাই আমরাও”। এদিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম সানডে পিপলে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এই প্রযুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন রিও ফার্ডিন্যান্ড। এই ব্যাপারে সাবেক রেফারি গ্রাহাম প�োলকেও নিজ দলে পাচ্ছেন তিনি। আর উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনি পূর্বেই এর ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এর ব্যবহারের অনুমতি দেননি। যেক�োন�ো প্রকার প্রযুক্তি ব্যবহারের বরাবর বিপক্ষে তিনি। অন্যদিকে ‘দি এফ এ’-এর সাধারণ সচিব আ্যলেক্স হর্ন এই প্রযুক্তিকে নিখুঁত ও যথার্থ বলে উল্লেখ করেছেন। স্পেনের লা লিগায়ও অচিরেই দেখা মিলতে পারে এই গ�োললাইন প্রযুক্তির। ২০১৪ বিশ্বকাপেও ব্যবহৃত হবে এটি। এর ভবিষ্যৎ সময়ই বলে দিবে হয়ত�ো। তবে আপাত দৃ ষ্টিতে শক্ত-প�োক্ত অবস্থানেই আছে প্রযুক্তিটি।


ফুটবল সন্দেশ Dbox-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিদিনের ফুটবল সন্দেশ থেকে সেরা সন্দেশগুল�ো একসাথে দেয়া হল


আপনি জানেন কি? ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি পেলের আসল নাম এডসন আরাঞ্চ দ�ো নর্সিমিয়ান্তু চিলির ফুটবলার কার্লস কাস্যেলি প্রথম ফুটবলার যিনি ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপে লাল কার্ড দেখেন। দিনটি ছিল ১৪ জুন, ১৯৭৪

আপনি জানেন কি?

গ�োলকীপারদের জার্সি

১৯১৩ সালের আগে গ�োলকীপারদের জন্য ভিন্ন জার্সির ব্যবস্থা ছিল না। ভিন্ন রঙের জার্সির প্রচলন হয় ১৯১৩ সালের পর থেকে। ছবিতে এক্সটার সিটি ফুটবল দল। ছবিটি ত�োলা হয় ১৯১৪ সালে

পৃথিবীর প্রথম বাস্কেটবল খেলাটি আসলে হয়েছিল একটি ফুটবল খেলার বল দিয়ে!

আপনি জানেন কি?

সব থেকে পুরন�ো ফুটবল ক্লাব

পৃথিবীর সব থেকে পুরন�ো ফুটবল ক্লাব শেফিল্ড এফ.সি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৭ সালে। প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশ আর্মির দু’জন অফিসার কর্নেল ন্যাথানিয়াল ক্রিসউইক এবং মেজর উইলিয়াম প্রিস্ট আপনি জানেন কি?

ইংলিশ লীগ ফুটবলের যাত্রা

যে ১২টি দল নিয়ে ইংলিশ লীগ ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় – এক্রিংটন, এস্টন ভিলা, ব্লাকবার্ন র�োভার্স, ব�োল্টন ওয়ান্ডারার্স, বার্নলি, ডার্বি কাউন্টি, এভারটন, নটস কাউন্টি, প্রিস্টন নর্থ এন্ড, স্টোক (এখন স্টোক সিটি), ওয়েস্ট ব্রোমউইচ আলবিওন এবং উলভারহেম্টন ওয়ান্ডারার্স। যদিও তখন এই লীগের নাম ছিল ‘দি ফুটবল লীগ’ যা শুরু হয় ১৮৯২ সালে

পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি ছিল একটি ‘চ্যালেঞ্জ ম্যাচ’ যেখানে স্কটল্যান্ড খেলেছিল ইংল্যান্ড এর বিরুদ্ধে। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় হ্যামিলটন ক্রিসেন্ট এর ওয়েস্ট অব স্কটল্যান্ড ক্রিকেট ক্লাব মাঠে নভেম্বর ৩০, ১৮৭২ সালে। এই মাঠ স্কটল্যান্ডএর পার্টিকে অবস্থিত। উল্লেখ্য খেলাটি ড্র হয় ০-০ গ�োলে আর মাঠে প্রায় ৪০০০ দর্শক উপস্থিত ছিল। সাবেক জার্মান আন্তর্জাতিক খেল�োয়াড় অলিভার কান বিশ্বের প্রথম গ�োলকীপার যিনি বিশ্বকাপে ‘ম�োস্ট ভ্যালুএবল প্লেয়ার’ পুরস্কার জিতে নেন। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে তিনি এই মর্যাদা পান। ক�োনও গ�োলকীপার আগে এই পুরস্কার পাননি


আপনি জানেন কি?

আপনি জানেন কি?

টেলিভিশনে প্রথম ম্যাচ

পৃথিবীর প্রথম যে ফুটবল ম্যাচটি টেলিভিশনে প্রচারিত হয় সেটি ছিল আর্সেনালের একটি অনুশীলন ম্যাচ। যা অনুষ্ঠিত হয় হাইবারী গ্রাউন্ড-এ ১৯৩৭ সালে। ছবিতে ১৯৩৭/১৯৩৮ ম�ৌসু মের আর্সেনাল দল আপনি জানেন কি?

স্ট্যানলি ম্যাথুউস

সাবেক ইংল্যান্ড এবং স্টোক সিটির খেল�োয়াড় স্যার স্ট্যানলি ম্যাথুউস (১৯১৫–২০০০) তার ৩৩ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে কখনই কার্ড দেখেননি! তিনি একমাত্র খেল�োয়াড় যিনি খেল�োয়াড় থাকা কালীন সময়ে নাইট উপাধি পান। আরও মজার বিষয় হচ্ছে ৫০ বছর বয়সেও তিনি শীর্ষ লীগে খেলেছেন! অনেকের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। আপনি জানেন কি?

পেশাদারী ফুটবল

আমেরিকার প্রথম পেশাদারী ফুটবল লীগ ছিল ইউ এস এস এ, যা ১৯১৯ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত চালু ছিল। সেই সময় খেল�োয়াড়দের প্রতি গ�োলের জন্য ৩৫ সেন্ট করে দেয়া হত�ো! ছবিতে সেই সময়ের একটি আমেরিকান ফুটবল দল

চেলসি মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড-এর IQ স্কোর ১৫০ এর উপরে, যেখানে সাধারন মানুষের (শতকরা ৯৫ ভাগ) IQ স্কোর হয়ে থাকে ৭০-১৩০! আইনস্টাইনের IQ স্কোর ছিল ১৬০! স�োজা ভাষায় বলা যায় ল্যাম্পার্ড একজন জিনিয়াস! চেলসির ক্লাব ডাক্তার ব্রায়ান ইংলিশ এই তথ্য প্রদান করেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেল�োয়াড় প্যাট্রিস এভরা চাইলে তার ভাই ব�োনদের দিয়ে দুইটি ফুটবল দল তৈরী করতে পারবেন! কারন তার ভাই ব�োনের সংখ্যা ২৩!!! সাবেক ওয়েলস আন্তর্জাতিক এবং বর্তমানে স্টোক সিটির ম্যানেজার মার্ক হিউজ একবার একই দিনে দুটি প্রতিয�োগিতামূলক খেলায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন! সকালে ওয়েলস-এর হয়ে খেলেন চেক�োস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে, খেলা শেষে বর্ডার অতিক্রম করে জার্মানি পৌঁছান, বিকেলে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে অংশ গ্রহন করেন বুরুশিয়া মনচেনগ্লাদবাখের বিপক্ষে। সেদিন খেলাটি জিতে নিয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ! চেলসির গ�োলকীপার পেতার চেখ (Petr Cech) ইংলিশ, পর্তুগিজ, চেখ এবং স্প্যানিশ এই চারটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন!


১৯৯০ এর বিশ্বকাপে ইতালির বিখ্যাত ডিফেন্ডার ফাবিও কান্নাভার�ো একজন ‘বল বয়’ ছিলেন। এমনকি সেই বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা বনাম ইতালির সেমি-ফাইনাল খেলায় তিনি ‘বল-বয়’ হিসেবে স্টেডিয়ামে ছিলেন যে খেলায় ইতালি পরাজিত হয়। ঠিক ১৬ বছর পর ইতালির ক্যাপ্টেন হিসাবে ২০০৬-এর বিশ্বকাপ তিনি নিজের হাতে তুলে নেন!


মিকেল লাউড্রপ বার্সেল�োনায় থাকাকালীন সময়ে টানা চার বার লা লিগা শির�োপা জিতে নেন। এরপর তিনি রিয়াল মাদ্রিদে য�োগ দেন এবং পঞ্চমবারের মত�ো লা লিগা শির�োপা পান। তিনি ইতিহাসে প্রথম খেল�োয়াড় যিনি টানা পাঁচবার লা লিগা শির�োপা জিতেছেন ভিন্ন দুটি ক্লাবে থেকে।


পরীক্ষামূলক সংখ্যা

পেছনের মানুষগুলি Idea, Concept & Design - মীর রুবাইয়াত অভীক Technical Support - আব্দুল মুত্তালিব মারুফ Writers

ম�োহাম্মাদ আসিফ সাইফুল সিয়াম

রাইসু ল ইসলাম শাওন আল রাজি মীর রুবাইয়াত অভীক Editors শাওন আল রাজি জিশান সায়েদ আসিম আবদুল্লাহ সাইফুল সিয়াম

সাইফুল ইসলাম শাকিল আদনান আল রাহিন

আপনার মতামত আমাদের জানান

Email: magazine@dboxb.com Facebook: www.facebook.com/dboxb Twitter: www.twitter.com/dboxb Google Plus: www.google.com/+dboxb Web: www.dboxb.com

#dboxmag


Turn static files into dynamic content formats.

Create a flipbook
Issuu converts static files into: digital portfolios, online yearbooks, online catalogs, digital photo albums and more. Sign up and create your flipbook.