8 minute read

ময়দান

ফাইটার

— বিশাল দাস

Advertisement

“ ছোনে, এই ছোনে কই তুই ”। জানলা খুলেই তিনি দেখতে পেলেন, তাঁর কাকা দাঁড়িয়ে আছেন, তাকে ডাকছেন। কাকাকে দেখেই ভয়ে মুখ চোখ শুকিয়ে গেলো ওনার, তাহলে কি গতকালের ম্যাচের কথাটা কাকার কানে পৌছে গেলো। “ তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নে, দেশবন্ধু মাঠে প্রাকটিস করাবো।” কাকাকে দেখেই বুঝে গেছিলেন তিনি, যে সেদিন কপালে দুঃখ আছে। অগত্যা তৈরি হয়ে পৌঁছোলেন মাঠে। তাঁর কাকা তাঁকে একটা গোলপোস্টের সামনে নিয়ে গেলেন। তারপর তাঁকে স্কিপিংয়ের দড়ি দিয়ে একটা পোস্টের সঙ্গে পিছমোড়া করে বাঁধলেন। এদিকে তাঁর মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না, কি জানি কাকা হয়তো কোন নতুন হার্ড ট্রেনিং করাবেন। সম্বিত ফিরলো কাকাকে স্পাইক বুট পরতে দেখে, উনি তো কখনও প্রাকটিস করানোর সময় স্পাইক বুট পরেন না। সবসময় কেডসই পরেন। তাহলে কী? হঠাৎ করেই বেজে উঠলো কাকার মুখের হুইসিল বাঁশি, আর কিছু ভাবার আগেই পিছমোড়া অবস্থায় থাকা ভাইপোর পায়ের সিনবোনে পরতে লাগলো কাকার স্পাইক বুটের লাথি। প্রায় মিনিট দশেক চললো এই লাথানো, তারপর আরেকটি বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে থামলো এই লাথি মারা। যেমন খেলার হাফটাইমে বাঁশি বাজে। গম্ভীর কন্ঠে কাকা ভাইপোকে বললেন “ আজ হাফ টাইম অবধি হল, এরপর যদি শুনি আমার ভাইপো হয়ে তুই গোড়াদের দলের বিরুদ্ধে খালিপায়ে পা বাঁচানোর জন্য খেলেছিস, তাহলে এরপর কিন্তু ফুল টাইম অবধি হবে। এটা মাথায় থাকে যেন।” আশা করি এইটুকুতেই চিনতে পেরেছেন কলকাতা ময়দানের দুই প্রবাদপ্রতিম চরিত্রদের। হ্যাঁ, কলকাতা ময়দানের স্যার দুখীরাম মজুমদার ও তাঁর ভাইপো তথা মানসপুত্র সন্তোষ মজুমদার ওরফে ছোনে মজুমদারের কথাই বলা হচ্ছে। বাংলায় ফুটবল কোচিং-এর পথিকৃৎ স্যার দুখীরাম মজুমদারকে নিয়ে কিছুটা লেখালেখি হলেও, তার ভাইপো ছোনে মজুমদার বরাবরই থেকে গেছেন অন্তরালে। ১লা জানুয়ারি, ১৯০০ সালে জন্ম সন্তোষ মজুমদারের। আট বছর বয়স থেকেই পায়ে ফুটবল বুট তুলে দিয়েছিলেন কাকা দুখীরাম বাবু। তাঁর মতে “ For a player, boots must be a part of himself.” তবে এটাও বুঝতে হবে, এই বুট কিন্তু এখনকার আধুনিক হালকা ফুটবল বুট নয়, এ বুট তখনকার ভারি ফুটবল বুট। কিন্তু শুধু বুট পরলেই তো হল না, বুট পরে স্বাভাবিক খেলাটাও তো আয়ত্ত করতে হবে। সেই বুট পরে কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের ফুটপাতের উপর দিয়ে ট্রামের পেছনে দৌড়েছেন ছোনে মজুমদার, ট্রাম রাস্তায় দৌড়ে, পায়ে বুট আয়ত্ত হবে বলে। তারপর অনুশীলন শুরু শ্যামবাজারের শ্যাম স্কোয়ার ও দেশবন্ধু মাঠে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এরিয়ানের সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর থেকেই এরিয়ান ক্লাবের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে জায়গা করে নেন তিনি। ফুটবল মাঠে কোন নির্দিষ্ট পজিশন ছিলো না ছোনে বাবুর, তিনি ছিলেন একদম কমপ্লিট ফুটবলার। সেন্টার ব্যাক হিসেবে সমৃদ্ধি পেলেও, সেন্টার হাফ, ফরোয়ার্ড এমনকি গোলকিপার পজিশনেও খেলেছেন তিনি। দু পায়েই ছিল অনবদ্য শট, তার সাথে দুর্দান্ত ইনসাইড-আউটসাইড ও সূক্ষ্ম ড্রিবলিং-এর অধিকারী ছিলেন তিনি। চলতি বলে অব্যর্থ শটে গোল করতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এমনকি মাথাটিও ছিল তাঁর পুরো পরিস্কার, হেড করার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর। মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৩২ ইঞ্চি বুকের ছাতি দিয়েই আটকে দিতেন তাবড়-তাবড় ইংরেজ খেলোয়াড়দের। তখনকার নর্থ স্ট্যাফোর্ড, শেরউড ফরেস্টার, ব্ল্যাক ওয়াচ, ডারহামস প্রমুখ ইংরেজি দলের ৬ ফুট উচ্চতার বাঘা বাঘা খেলোয়াড়রা তাঁর মাথার উপর থেকে সহজে বল নিতে পারেননি। ১৯১৪ থেকে ১৯৪০, একটানা ২৬ বছর খেলেছেন কলকাতা লীগ প্রথম ডিভিশনে এরিয়ানের হয়ে। ইউরোপীয় বনাম ইন্ডিয়ান দলে তাঁর বরাবরের পজিশন লেফট ব্যাক এবং রাইট ব্যাকে গোষ্ঠ পাল। দলে গোষ্ঠ পালের বদলে দেবী ঘোষ ঢুকলে তিনি চলে যেতেন রাইট ব্যাক পজিশনে। ১৯৩৩ সালে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক খেলায় সিংহলের বিরূদ্ধে অধিনায়ক গোষ্ঠ পালের সাথে জুটি বেধে দুর্দান্ত ডিফেন্স করেছিলেন তিনি, গোষ্ঠ পালের একমাত্র গোলে সেই ম্যাচে জয়লাভ করে ভারত। ১৯৩৪ সালে ভারতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অধিনায়ক সন্মথ দত্ত আহত হওয়ায়, অধিনায়কের মুখ্য দায়িত্ব ওঠে তাঁরই কাধে। সব পজিসনে সমান খেলার দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার এক সংবাদপত্র তাকে বলেছিল— “পটেটো, সব যায়গায় যে মিশে যেতে পারে।” ১৯২৩-২৪ মরশুম, পূর্ণ দাস তখন কলকাতার শ্রেষ্ঠ গোলকিপার এবং এরিয়ানের অধিনায়ক। কিন্তু তাঁর বিগত কয়েক ম্যাচের পারফরম্যান্স একদমই আশাপ্রদ নয়। এমন অবস্থায় লীগের গুরুত্বপূর্ণ খেলা শক্তিশালী মোহনবাগান দলের সাথে। ডালহৌসি মাঠের পিছনে খেলার জন্য তৈরি হচ্ছে দল, গোলকিপার পূর্ণ দাসের জার্সি পরাও হয়ে গেছে। এমন সময় দুখীরাম বাবুর বজ্রকন্ঠ বলে উঠল, “ পূর্ণ, জামা খুলে ফেলো, তুমি খেলবে না আজ।” গোলকিপার জার্সি উঠলো ছোনে মজুমদারের গায়ে। দলের সবাই প্রমাদ গুনলো। সবাই দুখীরাম বাবুকে অনুরোধ করলো, একেই বাচ্চা তার উপর বেঁটে কখনও গোলকিপার পজিশনে খেলেও নি, লীগের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ও কিভাবে খেলবে। কারোর কথায় কর্ণপাত না করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে তিনি ছোনে বাবুকেই খেলালেন গোলে। বাকিটা অবিশ্বাস্য! ওই বেঁটে হয়েই দরজা দিলেন এঁটে। কোন গোল করতে পারলো না মোহনবাগান। খেলা শেষে দলের সবাই পিঠ চাপড়ে দিলেন তাঁর। কেমন ডিফেন্ডার ছিলেন তিনি? একটা ঘটনার কথা বলি। ১৯৩৭ সালের ডুরান্ড কাপের চতুর্থ রাউন্ডের খেলায়, এরিয়ান মুখোমুখি হয়েছে বর্ডার রেজিমেন্টের। বর্ডার রেজিমেন্ট; আর্মি দল, আক্রমণে আক্রমণে জেরবার হয়ে যেতে লাগলো এরিয়ান ডিফেন্স। কিন্তু ডিপ-ডিফেন্সে বড় মহীরুহর মতো ছোনে বাবু দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেনার সকল আক্রমণ তাঁর কাছে গিয়ে আটকে যাচ্ছিল। খেলা অমীমাংসিত রইলো সেইদিন। এভাবে দুই দিন খেলা অমীমাংসিত থেকেছিল। পরেরদিন সংবাদপত্রে লেখা হলো “ S Majumdar holds a Military Attack. ” যদিও শেষরক্ষা হয়নি। তৃতীয়দিনের খেলায় পরাজিত হয়েছিল এরিয়ান, কিন্তু তাতেও ছোনে মজুমদারের কৃতিত্বকে কোনমতে খাটো করা চলে না। খেলার শেষে বড়োলাট লর্ড লিনলিথগো হাত মিলিয়ে বলেছিলেন যে এই দেহে এবং এই স্বাস্থ্যে এমন খেলা তাঁর কল্পনাতীত। ছোনে মজুমদার ফরোয়ার্ড, বিশেষত সেন্টার ফরোয়ার্ডেও নিয়মিত খেলেছেন এবং ভুরি ভুরি গোলও করেছেন। ১৯৩১ সালে আই.এফ.এ শীল্ডের কোয়ার্টার ফাইনালে এরিয়ান-ক্যালকাটা চ্যারিটি ম্যাচে, এরিয়ান দু গোল খেয়ে, ছোনে মজুমদারের করা দর্শনীয় গোলে এক গোল শোধ করেছিল। ১৯৩৪ মহামেডানের সোনার টিম, সেই দলকে ৩-২ গোলে পরাজিত করেছিল এরিয়ান। সেই খেলায় এরিয়ানের সকল আক্রমণ শুরু হয়েছিল তাঁর পা থেকেই, একটি গোলও করেছিলেন তিনি। ১৯৩২ সাল, লীগ শীর্ষে ইস্টবেঙ্গল। দুরন্ত ফর্মে থাকা ইস্টবেঙ্গল দলকে হারিয়ে দিয়ে, তাদের প্রথম লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশায় বাধ সাধলো এরিয়ান। খেলার ফলাফল ২-১। দুটি গোলই করেছিলেন ছোনে মজুমদার। সারাজীবন এরিয়ান ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েও ছোনে বাবু একবার ভবানীপুর ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন। সালটা ১৯৩৯, মোহনবাগানের মুখোমুখি ভবানীপুর। সেন্টার ফরোয়ার্ডে ছোনে মজুমদারের একক দক্ষতায় জয়ী হয়ে মাঠ ছাড়লো ভবানীপুর। ম্যাচের ফলাফল হয়েছিল ২-১। ভবানীপুরের হয়ে দুটি গোলই করলেন ছোনে মজুমদার, প্রথম গোলটি সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকারের মতো বক্সের ভেতর থেকে এবং দ্বিতীয় গোলটি বক্সের বাইরে থেকে একটি দুরন্ত ফ্রী-কিকে। ৩৮ বছর বয়সেও এমন ফুটবল খেলার সৌজন্যে পরেরদিন স্টেটসম্যান হেডলাইন করলো, “ মজুমদার ইন সানসেট গ্লোরি” অবশেষে ১৯৪০ সালে এরিয়ানের হয়ে আই.এফ.এ. শীল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে এরিয়ান ক্লাব থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এই ছিলো ছোনে মজুমদারের ফুটবলজীবনের সার-সংক্ষেপ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এইবার একটু ক্রিকেটার ছোনে মজুমদার কেমন ছিলেন দেখা যাক। সে কী! ফুটবলের সাথে সাথে আবার ক্রিকেট। আজ্ঞে হ্যাঁ, ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলেছেন ছোনে মজুমদার এবং খেলার মতোই খেলেছেন। রঞ্জি ট্রফি প্রবর্তনের অনেক আগেই ক্রিকেটার ছোনে মজুমদার রিটায়ার করেছেন, তাই হয়তো রেকর্ড বুকে তাঁর ক্রিকেট কীর্তির হদিশ পাওয়া যাবেনা। তাই বলে তাঁর অবদানকে ছোট করে দেখাটাও ভুল হবে। প্রতিনিধিত্বমূলক বার্ষিক ক্রিকেট খেলাগুলিতে ওনার স্থান ছিল বাঁধা। কেমন ক্রিকেটার ছিলেন তিনি? তিনি ছিলেন যাকে বলে প্রকৃত অলরাউন্ডার। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তো বটেই তার সাথে সাথে তিনি উইকেটকিপিংও করতেন এবং সে উইকেটকিপিং যা তা উইকেটকিপিং নয়। উইকেটকিপার ছোনে বাবু ছিলেন ব্যাটসম্যানদের হৃৎকম্প, তাকে দেখে কে বুঝবে যে তিনি দলের নিয়মিত উইকেটকিপার নন। ইউরোপীয় বনাম ইন্ডিয়ান ক্রিকেট খেলা চলছে, মাত্র পঞ্চাশ রান মতো বাকি, হাতে রয়েছে পাঁচ উইকেট। ঝপাঝপ তিন উইকেট পরে গেলো বেঙ্গল জিমখানা দলের উইকেটকিপার এস মজুমদারের সৌজন্যে, দুটি রান আউট, একটা স্ট্যাম্প। শেষ পাঁচ রান করতে না পেরে পরাজিত হলো ইউরোপীয়ান দল। ঢাকায় জ্যাকসন কাপ খেলতে গেছে ইস্টবেঙ্গল, অফস্পিনার ছোনে মজুমদার একটানা ৫২ ওভার বল করলেন, পেলেন ৫ উইকেট ১০২ রান দিয়ে। ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও হাতেখড়ি কাকা দুখীরাম মজুমদারের থেকেই। তবে দুখীরাম বাবুর জীবৎকালে স্টিক টু দ্য উইকেট নীতি লঙ্ঘন করে চালিয়ে খেলার সাহস তিনি পাননি। কাকার মৃত্যুর অনেক পর থেকে তার মারকুটে খেলা দেখা যায়। ক্লাব ক্রিকেটে সেঞ্চুরিতো আছেই, বালিগঞ্জের মাঠে গভর্নর একাদশের বিরূদ্ধেও বেরহেল্ডের মতো সাংঘাতিক বোলারকে অগ্রাহ্য করে ভারতীয় একদশের হয়ে ১০২ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এটিই সম্ভবত তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইনিংস। এছাড়াও বালিগঞ্জ ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে, এরিয়ানের হয়ে ৮১ ও ৮৬ রানের ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলেছেন ছোনে মজুমদার। ব্যাটিং, বোলিং, কিপিং তো হলো এবার ফিল্ডিংটাই বা বাদ যায় কেন? ছোনে মজুমদার যে বড়োমাপের ফিল্ডার ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। একটা ছোট গল্পই না হয় বলা যাক। প্রোফেশনাল ইংলিশ কোচ বিল হিচ এসেছেন কোচবিহারের মহারাজার ক্রিকেট দলের কোচ হয়ে। একদিন ভবানীপুরের মাঠে তার নির্দেশে ক্যাচিং প্রাকটিশ হচ্ছে। ব্যাট দিয়ে অনেক উঁচুতে বল মারছেন তিনি, আর বাকিরা এক এক করে ক্যাচ লোফার চেষ্টা করছে। অনেকে ক্যাচ লুফছে, আবার অনেকে ক্যাচ লুফেও বলের গতির জন্য ব্যালেন্স না রাখতে পেরে মাটিতে পরে যাচ্ছে। এবার পালা এলো ছোনে মজুমদারের। প্রথমদিকে দু হাতে, তারপর থেকে এক হাতে ক্যাচগুলো লুফতে লাগলেন তিনি। তিনি যতো ক্যাচ ধরেন, বিল হিচ ততো রেগে গিয়ে পরের বল আরও জোরে, আরও উঁচুতে মারার চেষ্টা করেন। এই ভাবে ছোনে বাবু আঠারো-কুড়িটা ক্যাচ লোফার পর রণে ভঙ্গ দিলেন পরিশ্রান্ত বিল হিচ। এবার সবার শেষে আসি হকির কথায়। হ্যাঁ, ফুটবল, ক্রিকেটের মতো হকিও চুটিয়ে খেলেছেন ছোনে মজুমদার। প্রথম বিভাগ লীগ ও বেটন কাপে নিয়মিত খেলেছেন তিনি। এরিয়ান ক্লাবের নিজস্ব হকি দল না থাকায় খেলেছেন গ্রীয়ার, ভবানীপুর, মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মতো দলের হয়ে। হকিতেও ওনার সব পজিশনে সমান খেলার দক্ষতা ছিল। হকিতে তিনি মোহনবাগানের হয়ে রাইট-হাফ পজিশনে খেলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গলের হয়েও তাই। গ্রীয়ারের হয়ে লেফট আউট পজিশনে খেলেছেন এবং ভবানীপুরের হয়ে তিনি ব্যাক হিসেবে খেলেছিলেন। এই বিরল ক্ষমতার অধিকারী খেলোয়াড় সন্তোষ মজুমদার ওরফে ছোনে মজুমদারের শেষের দিনগুলো একদমই ভালো কাটেনি। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে হতে, দুটি চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়। চিরকুমার এই মানুষটির শেষ জীবনে সঙ্গী বলতে ছিল শুধু অবহেলা ও অর্থাভাব। উপার্জনক্ষমতা বিহীন এই মানুষটির কাছে তার নিজের জীবনই রূপকথা বলে মনে হতো তখন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৭৬, ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলেন ছোনে মজুমদার। পরে রইল শুধু কিছু রূপকথার মতো গল্প। এই গল্পগুলোই থেকে যায়, ভেসে বেড়ায় গড়ের মাঠের ঘাসের উপর দিয়ে। আজও হয়তো সুসজ্জিত এরিয়ান গ্যালারির আনাচে কানাচে কান পাতলে শোনা যাবে সেই সব গল্প। এই ভাবেই ময়দানের মিথগুলোর মধ্যে দিয়েই থেকে যাবেন ছোনে মজুমদারের মতো চরিত্ররা, অমর হয়ে।

যায়গায় রয তমদশ রযদত পাদর।”

This article is from: