ময়দান
বিশাল দাস
সু কান্ত সেনশর্মা
সব্যসাচী চক্রবর্তী
আমাদের কথা নতু ন বছর। গতবছরের সব খারাপ আর প্রতিকূ লতাকে সরিয়ে রেখে আবার নতু ন রূপে ময়দান। দেখতে দেখতে সাত মাস হয়ে গেল। এটা আমাদের সপ্তম সংখ্যা। আমরা যখন শুরু করেছিলাম আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে খেলার প্রতি আকৃ ষ্ট করা। ভাল�ো লেখা পড়ান�ো আমাদের মাতৃ ভাষায়। সফল কতটা হয়েছি আমরা জানি না,তবে আপনাদের সবার সাহায্য না পেলে ময়দান এতদূ র আসত না।থেমে যেত অনেক আগেই। তাই নতু ন বছরের শুভেচ্ছা আর ধন্যবাদ দু ট�োই থাকল। আমাদের পাশে থাকবেন। পড়াশুনাটা খু ব দরকার। আর খেলা ভালবাসাটারও। মাথা দিয়ে ত�ো বটেই, বু কের বাঁ দি ক টা দিয়েও। —বিশাল দাস, সব্যসাচ ী চক্রবর ্ তী, সু কান্ত সেনশর ্ মা
ময়দান
সূ চ ী প ত্র ৩
বর্ণময় ও বিতর্কিত সু কান্ত সেনশর্মা
৭
ফুটবল দর্শনের অজানা বিপ্লব স�ৌভাগ্য চ্যাটার্জ্জী
১৩
নীল স্বপ্নের সওদাগর অর্জুন দাস
১৭
৫০০০ : ১ সব্যসাচী চক্রবর্তী
২১
ফাইটার বিশাল দাস
২৭
এক খসে পড়া তারার গল্প রাহুল চক্রবর্তী
২৯
Qই জ ১৫-১৬
আ র ্ কা ই ভ গ ্যা ল া রি
৩
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
বর্ণময় ও বিতর্কিত সু কান্ত সেনশর্মা
একজন খেল�োয়াড় যিনি ব্র্যাডম্যান হতে চেয়েছিলেন। আর্টিকলের হেডিংই এইরকম। ব্র্যাডম্যান হওয়া কি সম্ভব? আবার তাও মাত্র ১৩ টা টেস্ট খেলে। কিন্তু তাতেও সিড বার্নসকে অস্বীকার করার ধৃ ষ্টতা দেখাতে পারবেন কেউ? তের�োটা টেস্টে দুট�ো শতরান,একটা দ্বিশতরান,আর ব্র্যাডম্যানের সাথে ৪০৫ রানের জুটিতে সেই সময়ের বিশ্বরেকর্ড। সেই ইনভিন্সিবল দলের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূ র্ণ সদস্য,যারা ১৯৪৮ এর ইংল্যান্ড ট্যুরে একটিও ম্যাচ হারেননি।
সাল ১৯৩৮। ইংল্যান্ড ট্যুরের জন্য দল ঘ�োষণা হল। নির্বাচিত হল ১৮ বছরের সিড। চঞ্চল স্বভাবের সিডের মাথায় তখন একটাই চিন্তা। তাকে ভাল�ো খেলতে হবে। সবার চেয়ে ভাল�ো। ব্র্যাডম্যানের চেয়েও ভাল�ো। কিন্তু বিধি বাম। জাহাজে পা পিছলে পড়ায় চ�োট লাগল হাতে। সিড বললেন না কাউকে। বললেই ত�ো দেশে ফেরত পাঠান�ো হবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে গেলেন তিনি। জানা গেল তিনমাস বসে থাকতে হবে। কব্জির হাড় ভেঙেছে।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
৪
তিনমাস পরে যখন ক্রিকেট সার্কিটে ফিরে এলেন তিনি,ততদিনে ব্র্যাডম্যান অনেক এগিয়ে গেছেন। রানমেশিন ডনকে ধরা ত�ো অসম্ভব। এরপরেও মাত্র তের�োটি টেস্টে রান করেছিলেন হাজারের ওপর। প্রায় এগার�োশ�ো রান।তেষট্টির ওপর গড় রেখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না এলে তাঁর কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হত নিশ্চই। ধারাবাহিক ব্যাটিং সাফল্য দিয়ে ধরাশায়ী করেছিলেন প্রায় সব ব�োলিং অ্যাটাককেই। বাইশ থেকে তিরিশ, যে সময়টা তাঁর স�োনার সময় হতে পারত, সেই সময়টায় খেলতেই পারলেন না বিশ্বযুদ্ধের কারণে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও বার্নস তাঁর ক্যারিশমা দেখিয়েছিলেন যথেষ্টই। প্রায় নহাজার রান আর ২৬ টা শতরান খুব একটা সহজ কাজ নয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যাসেজে খেলেছিলেন ম�োট আটটি টেস্ট। সেই আট টেস্টের গড় ধরতে গেলে বার্নসের গড় ডনের ওপরে। এবং শুধু তাই নয়,বার্নস সেই সময়ের এক অসাধারণ শর্ট লেগ ফিল্ডার ছিলেন।
অস্ট্রেলীয় টেস্ট দলের হয়ে সিড বার্নস।
বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হল,নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে তাঁর রানের একটু নমুনা দেওয়া যাক। ২০০,১৪,১১৫,১৪৬,৩৪,১৫৪,১০২! এতকিছু র পরেও বার্নসের বিরুদ্ধে অভিয�োগের শেষ নেই। ডনের পর যাঁর প্রাপ্য ছিল য�োগ্য সম্মান, তাঁর ভাগ্যে শুধুই দ�োষার�োপ আর বঞ্চনা।
স্পোর্টিং লাইফ ম্যাগাজিনের কভারে সিড বার্নস।
সাল ১৯৩৪,ঘর�োয়া খেলা চলছে। তখন কিংবদন্তি বিল ‘টাইগার’ ওরিলি দেশে ফিরেছেন সবেমাত্র। সেই ঘর�োয়া খেলায় ওরিলির বিপক্ষে ভাল�োই খেলল একটি নতুন ছেলে। খেলার শেষে ওরিলি খুঁজে বের করলেন ছেলেটিকে। “তুমি তে বেশ ভাল�োই ব্যাট কর�ো!” “তুমিও ত�ো বেশ ভাল�োই বল কর�ো!” ওরিলিকে চটপট উত্তর ছেলেটির। ঘরসু দ্ধু হেসে উঠল সবাই। ছেলেটি সিড বার্নস। স�োজা কথার স�োজা উত্তর অনেকেই নিতে পারেননি। মন যুগিয়ে চলার মতন ল�োক ছিলেন
৫
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
১৯৪৮ লালা অমরনাথকে লেগ বিফ�োর উইকেট আউট করছেন সিড বার্নস।
না তিনি। আদালতের মামলায় টেনে এনেছিলেন দেশের ক্রিকেট ব�োর্ডের সম্পাদককেও। খেলা ছাড়ার পর মন দিয়েছিলেন লেখাতে। ডেলি এক্সপ্রেস, ডেলি টেলিগ্রাফে কড়া সমাল�োচনার জন্য তাঁর প্রিয়পাত্রর সংখ্যা ছিল খুবই কম।
আম্পায়ারের কাছে,এমনকি ডনের টেস্টিম�োনিয়াল ম্যাচে ব্যাট করতে নেমেছিলেন খেলনা ব্যাটে!
ক্রিকেট খেলতে খেলতেই গ্যারেজে কাজ করতেন,ম�োটরবাইক প্রশিক্ষণ দিতেন, ১৯৩৮ এ অভিয�োগ তিনি বিনা অনু মতিতে রাজা রাণীর ছবি তুলেছিলেন,বেড় টপকে নিয়ম লঙ্ঘন করে মাঠে ঢুকেছিলেন বহুবার। নিজের এ্যাডমিশন কার্ড বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তাঁকে দ্বাদশ ব্যক্তি রাখায় প্রতিবাদে জল পরিবেশনের সময় মাঠে ঢুকেছিলেন স্যুট পরে,ড্রেসিং রুমে টেনিস খেলতেন, বরফের চাঁই ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমে ছু ঁড়ে মেরেছিলেন,নিজের স�োয়েটার আম্পায়ারের কাঁধে রাখতে চেয়েছিলেন,মাঠে ঢ�োকা কুকুর জমা করতে চেয়েছিলেন
১৯৪৬-৪৭ এ তাঁর আর ডনের পাহাড়প্রমাণ ৪০৫ রানের পার্টনারশিপ। ব্র্যাডম্যান করেছিলেন ২৩৪ রান। তার কিছু পরেই আউট হয়েছিলেন সিড বার্নস। তখন হাত সেট,চ�োখও। কারুর বুঝতে অসু বিধা হয়নি সিড উইকেট ছু ঁড়ে এলেন নিজের। পরে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এর কারণ। সিড হেসে উত্তর দিয়েছিলেন,ডনের চেয়ে বেশি রান কারুর করা উচিত না। আজও এটা একটা রেকর্ড। একই ইনিংসে সমান সর্বোচ্চ রান দুই ব্যাটসম্যানের। ২৩৪। সিডও আউট হয়েছিলেন, বলা ভাল�ো করেছিলেন সেই একই রানে। ডনকে
তবে সবচেয়ে বড় অভিয�োগ ছিল তিনি ব্র্যাডম্যানের চেয়ে বড় হতে চেয়েছিলেন।কিন্তু সত্যিই কি তাই?
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
৬
ময়দান
টপকান�ো ক�োন ব্যাপার ছিল না। তবুও। বিচক্ষণ ও রসিক। হিউমার ছিল তাঁর রক্তে। সেই মানু ষই শেষ জীবনে শিকার হয়েছিলেন ডিপ্রেশনের। ৫৭ বছর বয়সে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। পুলিশের তদন্তে জানা গেছিল ড্রাগ ওভারড�োজে আত্মহত্যা। কিন্তু তিনি চলে গেলেও বিদ্রোহী চরিত্র কে ভ�োলা সম্ভব নয়। লর্ডস টেস্টে বাজি ধরেছিলেন আট পাউন্ডের নিজের সেঞ্চু রির ওপর। প্রথম ইনিংসে শূ ন্য করায় সবাই চেপে ধরেন টাকার জন্য। মুচকি হেসে বার্নস বলেন:”এখনও ত�ো পরের ইনিংস বাকি!” সেই টেস্টেই পরের ইনিংসে ১৪১! ক্রিকেটে খেল�োয়াড় অনেকেই আসেন, চরিত্র আসেন হাতেগ�োনা। তাই সিড বার্নস বিতর্কিত হতে পারেন,বিদ্রোহী হতে পারেন। কিন্তু তিনি বর্ণময়।
সিড বার্নস ও ডন ব্র্যাডম্যান, ৪০৫ রানের বিশ্বরেকর্ড পার্টনারশিপের মুহূর্তে।
৭
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ফুটবল দর্শনের অজানা বিপ্লব স�ৌভাগ্য চ্যাটার্জ্জী
উনিশশ�ো তিপান্ন সাল এর নভেম্বর এর শেষ সপ্তাহের এক বিকেল,লন্ডন এর ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম এ মুখ�োমুখি ইংল্যান্ড আর হাঙ্গেরি। ইউর�োপ কাঁপছে এক মহাকাব্যের তীব্র প্রতীক্ষার উত্তেজনাতে!
আর সেই রেকর্ড টি ইংলিশ দের মধ্যে সঞ্চার করেছিল তাদের সহজাত ঔদ্ধত্য।
কিন্তু কেন এত�ো উত্তেজনা?
ট্যাকটিকস? দরকার নেই, আমাদের গতি এবং শারীরিক সক্ষমতার সাহায্য আমরা বিশ্বের যেক�োন�ো দল কে হারাতে পারি। এমন টাই মনে হয়েছিল তখন ইংরেজদের।
কারণ মুখ�োমুখি হওয়া দল দুট�ো তখন যাকে বলে "টাইটান"। একদিকে হাঙ্গেরি, যারা চব্বিশ ম্যাচ অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা আর বিশ্বের এক নম্বর এর মুকুট মাথায় নিয়ে আসছে, অপরদিকে ইংল্যান্ড যারা ফুটবল খেলা শুরু হওয়ার পর নিজেদের দেশের মাঠে একটি মাত্র ম্যাচ হেরেছে।
ওয়াল্টার উইন্টারবটম, তখন ইংল্যান্ড এর ক�োচ, যাকে এফ এ দায়িত্ব দিয়েছিল�ো দেশের ক�োচিং এর মান উন্নত করার, নিজেই ছিলেন অনভিজ্ঞ। তাই ওনার ফুটবল এ ছিলনা আধুনিকত্বের ছাপ। বরঞ্চ ইংল্যান্ড তখন ও বাতিল হতে চলা ডব্লিউএম ছক এ ফুটবল খেলায় অভ্যস্ত ছিল।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
৮
ম�োটকথা, ইংল্যান্ড ছিল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী এবং সেটা তাদের প্রস্তুতি তে প্রতিবিম্বিত হচ্ছিল�ো। অপরদিকে হাঙ্গেরি দল এর দায়িত্বে ছিলেন হাঙ্গেরির ডেপুটি স্পোর্টস মিনিস্টার, গুস্তাভ সেবেস। সেবেসের অধীনে হাঙ্গেরি দল এর টেকনিক্যাল ফুটবল, এখন প্রচলিত ট�োটাল ফুটবল এর এক ই এক পূ র্বরূপ। সেই ফুটবল এবং নান্দর হিদেকুটি র ডিপ লাইং ফরওয়ার্ড পজিশন এ খেলা বেশ স্বনামধন্য ছিল। তার বদান্যতায় হাঙ্গেরি উনিশশ�ো পঞ্চাশ অলিম্পিক এ গ�োল্ড মেডেল ও জিতেছিল, তাই এমন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী র মুখ�োমুখি হওয়ার মধ্যে তৈরী হয়েছিল এক অজানা উত্তেজনা। এক লাখ পাঁচ হাজার দর্শক এর সামনে শুরু হওয়া খেলা র এক মিনিট এর মধ্যে হাঙ্গেরি কে এগিয়ে দেন হিদেকুটি। হিদেকুটি বারবার ইংল্যান্ড এর সেন্টার হাফ হ্যারি জনস্টন কে নিচে টেনে এনে খালি জায়গা তৈরী করছিলেন হাঙ্গেরি র টেকনিক্যালি সাউন্ড মিডফিল্ডার দের জন্যে। হিদেকুটি র তৈরী করে দেওয়া ফাঁকা জায়গায় আক্রমন করছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ কিংবন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাস। হাঙ্গেরি র লিড বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি, পনের�ো মিনিট এর মাথায় সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড। স্ট্যান মর্টেনসেন এর মাপা থ্রু ধরে গ�োল করে যান জ্যাকি সু য়েল, তবে তার পরেই প্রথমে একটা খারাপ ক্লিয়ারেন্স থেকে হিদেকুটি আবার হাঙ্গেরি কে এগিয়ে দেন। চব্বিশ মিনিট এর মাথায় বক্সের ঠিক বাইরে বল ধরেন পুসকাস। ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন বিলি রাইট তাড়াতাড়ি ট্যাকেল করতে আসেন, কিন্তু পুসকাস বুট এর স�োল দিয়ে পেছনে টেনে নেন বল টা কে, যা ভবিষ্যত এ পুসকাস এর বিখ্যাত ড্র্যাগ ব্যাক নাম পরিচিত হয়, বিলি কেটে যান, এবং পুসকাস ঠান্ডা মাথায় বল গ�োলে পাঠান। সাতাশ মিনিট এ পুসকাস আরেকটি গ�োল করেন,
১৯৫৩ ইংল্যান্ড বনাম হাঙ্গেরী, ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম।
হাফটাইম এর একটু আগে মর্টেনসেন স্কোর 4-2 করেন। দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার ধরন সমান ই থাকে। হাঙ্গেরি র তারল্য এবং ক্ষিপ্রতা র সামনে অসহায় ইংল্যান্ড গ�োল এর পর গ�োল খেতে থাকে। হিদেকুটি হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করেন, ইংল্যান্ড পেনাল্টি থেকে আরেকটি গ�োল দিয়ে কিছু টা সম্মান রক্ষা করে। পরদিন গার্জিয়ান পত্রিকা র প্রতিবেদন এ বের�োয়, " হাঙ্গেরি র গতি, বল কন্ট্রোল এবং পজিশনাল প্লে র সামনে নিষ্প্রভ এবং চূ ড়া থেকে অবস্খলিত পুর�োন�োপন্থী ইংল্যান্ড "। কিংবদন্তী স্যার ববি রবসন বলেন, "আমরা ভেবেছিলাম আমরা ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি কে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব�ো। ওরা শিষ্য, আমরা গুরু। কিন্তু ওরাই বরঞ্চ আমাদের এমন একটা ফুটবল এর ধরন এবং ঘরানা দেখিয়ে গেল�ো যা আমরা আগে দেখিনি, আর ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা আমাদের ইংলিশ ফুটবল এর খ�োলনলচে পাল্টাতে সাহায্য করবে "। করেওছিল, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইংলিশ দল এর ও যে মধ্যে ইউর�োপীয় দল এর কাছে
৯
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
যেতে কিছু বছর। 1882 সালে বার্নলির নেলসনে জন্ম হওয়া হ�োগান ছিলেন একজন মধ্যমানের ফুটবলার, কিন্তু তার দর্শন ছিল সবার থেকে আলাদা। ছ�োট�ো থেকে ফিটনেস আর নিউট্রিশন এর প্রতি ওনার ধ্যানজ্ঞান ছিল বেশ সু ক্ষ। প্র্যাকটিস এ উনি ক�োচ দের ট্যাকটিকস সংক্রান্ত টিপ্পনি ও দিতেন, বদলে জুটত�ো কড়া বকাঝকা। বার্নলি, সু ইন্ডন, ফুলহ্যাম এ খেলার পর যখন তিনি ব�োল্টন এ খেলছেন, ঘটনাচক্রে তার শেষ ক্লাব, উনি বুঝতে পারেন যে ওনার প্রতিভা লুকিয়ে আছে ক�োচিং এ, খেল�োয়াড় হিসেবে নয়। ইংল্যান্ড ওনার ক�োচিং দর্শন মেনে নিতে রাজি হল�োনা। আর্সেনাল এর কিংবদন্তী ক�োচ হার্বার্ট
জিমি হ�োগান।
শেখার আছে, তা প্রথম অনু ভব করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর কিংবদন্তী বস, স্যার ম্যাট বুসবি। ওনার প্রর�োচনাতেই ইংল্যান্ড এর দল গুলি ইউর�োপিয়ান কাপ এ প্রতিয�োগিতা করা শুরু করে। কিন্তু হাঙ্গেরি কে এই ফুটবল শেখাল�ো কে? সেবেস? উত্তর টা সেবেস নিজেই দিলেন, "আমরা যে ফুটবল টা খেলেছি, সেটাই আমাদের শিখিয়েছেন জিমি হ�োগান। যখন আমাদের ফুটবল ইতিহাস লেখা হবে, তখন ওনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।" কে এই জিমি হ�োগান? কার জাদুকাঠি র ছ�োঁয়া তে সম্ভব হল�ো এই স�োনালী দ�ৌড়? এই অসাধ্যসাধন? কিভাবে উনি পাল্টে দিলেন মধ্যে ইউর�োপীয় ফুটবল এর চাল চিত্র? জানতে গেলে পিছিয়ে
ব�োল্টনের হয়ে খেলার সময় জিমি হ�োগান।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
১০
চ্যাপম্যান এর তৈরী করে দেওয়া 3-5-2 ছক এ খেলে ইংল্যান্ড তখন ইউর�োপে রাজত্ব করছে, তারা সেখান থেকে সরে যেতে রাজি নয়। তাই ব�োল্টন এর সাথে এক প্রাক মরশুম টুর্নামেন্ট খেলতে নেদারল্যান্ড গিয়ে আর ফিরলেন না জিমি, ডরড্রেখট বলে একটি ক্লাব এ ক�োচিং শুরু করলেন। 1914 সালে উনি বুদাপেস্ট এর এমটিকে ক্লাব এর দায়িত্ব নিয়ে নিজের ক�োচিং জীবন এর সবচেয়ে বড়�ো অধ্যায় টি শুরু করেন। হ�োগান মনে করতেন পাসিং এবং বল পজেশন নির্ভর ফুটবল এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে ফুটবলে সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। তাই তিনি জ�োর দেন পাসিং এবং মুভমেন্ট এর ওপর। সেটাকে আর�ো তুলে ধরার জন্যে তার সাথে ১৯৩৪ সালে ফুলহামের ম্যানেজার নিযু ক্ত হলেন জিমি হ�োগান। জুড়ে দেন ফিটনেস নামক মশলা যা সারামাঠে 1930 সালে ওনার জীবনে আবার এক ম�োড় ফুটবল তারল্যের ঝংকার ফুটিয়ে ত�োলে। হ�োগান আসে। হুগ�ো মিসেল এর বিখ্যাত "ওয়ান্ডারটিম " এর ফুটবল দেখে মনে হত�ো, মাঠ নয়, যেন নামে পরিচিত অস্ট্রিয়া দল এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার এক কার্পেট এর ওপর ফুটবলার রা খেলছেন। জন্যে ওনার ডাক আসে, উনি য�োগদান ও করেন, এমনই বিখ্যাত হয় ওনার ফুটবল যে ইউর�োপে কিন্তু 1934 এ ঘরের দল ফুলহ্যাম এর ডাক না তা পরিচিত হয়ে যায় "দানিয়ু বিয়ান ব্র্যান্ড অফ ফেরাতে পেরে দেশে ফিরে যান। ফুটবল" হিসেবে। এরপর আসে বাধা, ইউর�োপে জ্বলে ওঠে যুদ্ধের আগুন, 1918 সালে বাধ্য হয়েই দেশে ফিরতে হয় হ�োগান কে। সেখানে এফএ তাকে পরিষ্কার বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দেয় বিদেশে ফুটবল প্রশিক্ষণ করার জন্যে।
ফুলহ্যাম এ তার অভিজ্ঞতা সু খকর হল�োনা। কিছু ম্যাচ এর পরেই ফুটবলার রা বেঁকে বসল�ো, তারা বলল�ো আমরা হ�োগান এর ফুটবল শিখতে চাইনা। তাই মাত্র 31 ম্যাচ পরেই ফুলহ্যাম এর ক�োচ এর পদ থেকে ছাঁটাই হন জিমি।
ক্ষুব্ধ হ�োগান আবার বেরিয়ে পড়েন নিজের ভবঘুরে যাত্রা তে, জার্মানি হয়ে উনি পৌঁছান সু ইজারল্যান্ড এ, ভবিষ্যতে যা সু ইজারল্যান্ড কে অলিম্পিক ফাইনাল খেলতে সাহায্য করে আর জার্মানি কে আজকের জার্মানি হয়ে ওঠার আত্মবিশ্বাস দেয়।
ইংল্যান্ড সেই মুহূর্তে আত্মম্ভরিতা র তুঙ্গে। আমরা যাদের বল এ লাথি মারা শিখিয়েছি, তারা আমাদের শেখাবে, এটা ইংল্যান্ড এর ক�োচ এবং ফুটবলার রা মেনে নিতে অরাজি ছিল, তাই হয়ত�ো মধ্যইউর�োপ এর নতুনত্ব নিয়ে আসা হ�োগান এর ইংল্যান্ড এ নিবাস ছ�োট�ো হয়ে যায়।
1920 সালে উনি আবার ফিরে আসেন এমটিকে বুদাপেস্ট এ এবং শির�োপা জেতার প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
হ�োগান চাইতেন একটা খালি স্লেট যেখানে নিজের ইচ্ছেমত�ো লেখা যাবে। প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যে উনি ফিরে আসেন অস্ট্রিয়া, এবং তাদের 1936
১১
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
১৯৩৬ সালের অস্ট্রিয়ার অলিম্পিক দলের ক�োচ হিসেবে জিমি হ�োগান।
অলিম্পিক এর ফাইনাল এ নিয়ে যান। তবুও ঘরের টান ক�োন�োদিন ই উপেক্ষা করতে পারেননি জিমি। হয়ত�ো ক�োথাও একটা চাপা জেদ ছিল ইংল্যান্ড এ সাফল্য পাওয়ার, তাই এইবার সদ্য অবনমিত দল এস্টন ভিলা র ক�োচিং এর দায়িত্বে আসেন উনি। এসেই উনি ভিলা কে প্রথম ডিভিশনে জায়গা ফিরিয়ে দেন এবং এফ এ কাপ এর সেমিফাইনাল এ নিয়ে যান। এত�ো সাফল্য র পরেও ওনার ক�োচিং জীবন এর ইতি হয় অত্যন্ত বিয়�োগান্ত ভাবে। এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে শুয়ে থাকার সময় জানতে পারেন,উনি ক�োচের পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা এক অমর ক�োচ এর প্রথম শ্রেণী র ফুটবলে অবদান এর তালিকায় অসময়ের যবনিকা ফেলে দেয়। যুদ্ধের পর যেটুকু নগণ্য ক�োচিং জীবন বাকি ছিল তাতে জিমি ব্রেন্টফ�োর্ড, সেল্টিক এর মত�ো দল এর ক�োচিং করেন এবং এস্টন ভিলার যুব টিম এর ও ক�োচ হন। এই সময় ওনার প্রশিক্ষণে
খেলা দুই ফুটবলার যারা ভবিষ্যতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর ক�োচিং কিংবদন্তি হন, ড�োচার্টি আর আটকিন্সন বলেন, "ওনার কাছে ফুটবল ছিল একটা রাপিস�োডির মত�ো, ওয়ান টু থ্রি, ওয়ান টু থ্রি, পাস মুভ মাস, ইনসাইড আউটসাইড, ইনসাইড আউটসাইড "। "স্টেপ ওভার সহ বল এর সাথে ফুটবলার দের ঘনিষ্ঠতা করান�োর জন্যে সবকিছু ই তিনি করতেন। আমরা সিট এর সাথে আঠার মত�ো লেগে থাকতাম আর শুনতাম। " এমনটাই বলেন ওনারা। ফুটবল প্রশিক্ষণ জীবন এর বেশিরভাগ টাই ল�োকচক্ষুর অন্তরালে হলেও, হ�োগান এর কৃতিত্ব ওনার দূ রদর্শিতার মধ্যে এবং প্রায় দু দশক ধরে ইউর�োপের বিভিন্ন প্রদেশ এ ক�োচিং করান�োর সাহসিকতা র মধ্যে। হ�োগান এর কাজ এর সর্বোচ্চ উদাহরণ হয়ে থাকবে "ম্যাজিকাল মাগিয়ার্স " হাঙ্গেরি র সেই দল যারা অলিম্পিক স�োনা এবং ইংল্যান্ড এর বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে এনেছিল।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
১২
হ�োগান এর ফুটবল দর্শন এর সাথে কিন্তু আধুনিক ফুটবল দর্শন এর একটা সরাসরি সংয�োগ আছে। মিসেল এর অস্ট্রিয়া থেকে সেবেস এর হাঙ্গেরি থেকে মিচেল এর নেদারল্যান্ডস থেকে ক্রুয়েফ এর বার্সেল�োনা থেকে পেপ গুয়ার্দিওলা র বার্সেল�োনা, বায়ার্ন, ম্যান সিটি, কিংবদন্তী র য�োগায�োগ টা ভীষণ স্পষ্ট। হ�োগান প্রথম দুজনের সাথে কাজ করেছেন এবং সময়ের স্রোতের সাথে বাকিদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, তাই তাকে এই বল এর দখল নির্ভর ফুটবল দর্শন এর পিতা বলাই যায়। হাঙ্গেরি র সেই জয় এর দিন জিমি মাঠে ছিলেন, কিন্তু মিচেল এর নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপ খেলার ঠিক ছ মাস আগে, 1974 সালে, বিশ্ব ফুটবল এর ইতিহাসের এই প্রবাদপ্রতিম প্রশিক্ষক দেহত্যাগ করেন। বিখ্যাত ফুটবল লেখক জনাথন উইলসন এর মতে উনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ক�োচ হিসেবে মন�োনয়ন পাওয়ার য�োগ্যতা রাখতেন।
১৯৩৬ সালে এস্টন ভিলার ক�োচ হিসেবে হ�োগান।
এত�ো বছর পরেও কিন্তু জিমি হ�োগান ইংল্যান্ড এ সেই সেদিন এর মত�োই উপেক্ষিত। নতুন কিছু
শিখতে না চাওয়ার "ট্যাবু" আজও ইংরেজ তে অবচেতন থেকে ওনাকে দূ রে সরিয়ে রেখেছে। জিমি হ�োগান ছিলেন নতুন আল�োর দিশারী। আর ইতিহাস সাক্ষী যে গ্যালিলিও থেকে যীশু, প্রতিটা নতুন চিন্তা র দাম চিন্তাকারী তে দিতে হয়েছে রক্ত দিয়ে। তাই বিশ্বফুটবল এর শক্তিসংস্থান এর মানচিত্র পাল্টাবার দাম টা ও জিমি হ�োগান কে দিতে হয়েছে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়ে। কিন্তু অতলতল এর সেই অন্ধকার এ বাস করেও জিমি জানেন না, ফুটবল এর সর্বোচ্চ হল অফ ফেম এ এক সিংহাসন তার নীরব অপেক্ষা তে আজও মগ্ন আছে।
নভেম্বর ১৯৫৩ সালে জিমি হ�োগান।
১৩
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
নীল স্বপ্নের সওদাগর অর্জুন দাস
'স্যার, আপ মেরে সাথ আওগে? মুঝে প্লেন সে ডর লাগতা হ্যাঁয়...' নিজের প্রথম বিমানযাত্রার আগে কাঁচুমাচু হয়ে ক�োচের কাছে আবেদন করলেন সদ্যসদ্য দলে আসা তরুণ বাঁহাতি পেসার। সস্নেহে তাঁর আবদার মেনে নিলেন মুম্বাই রঞ্জি দলের তৎকালীন ক�োচ বিদ্যাধর পারাদকর। জীবনের এই প্রথম উড়ানের পর প্রায় দেড় দশক ধ'রে ক্রিকেটজগতের অন্তরীক্ষে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। পরবর্তীকালেও প্রতিটা উইকেট নিয়ে হাত ছড়িয়ে গা ভাসিয়েছেন দেশের সাফল্যে, তৃপ্তির হাসিতে মিলিয়ে দিয়েছেন আসমুদ্রহিমাচলের চাঞ্চল্য। মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলা। সেখানেই এক ছ�োট্ট মফঃস্বল, শ্রীরামপুরে বেড়ে ওঠা জাহিরের চিরকালীন সঙ্গী ছিল ক্রিকেট বল। ক্রিকেটের প্রতি কঠ�োর আনু গত্যের দায়ে ছেড়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং। বন্ধু দের অনেকেরই পছন্দের ছিল ব্যাটিং, অথচ তাঁর সমস্ত স্বপ্ন
বন্দী ছিল দু'আঙু লে চাপা লাল বলের সেলাইয়ে! পেস ব�োলার হিসেবে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে খেলতে তাঁর ডাক পড়ল�ো এম আর এফ পেস ফাউন্ডেশনে, যেখানে তিনি হয়ে উঠলেন অজি কিংবদন্তী ডেনিস লিলির প্রিয়তম ছাত্র। সু য�োগ পাবার পরই বর�োদার হয়ে জিতলেন রঞ্জি ট্রফি। ফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট সহ ম্যাচে সব মিলিয়ে আট উইকেট নিয়ে নজর কাড়লেন জাতীয় নির্বাচকদের। সাফল্যখচিত এক রঙিন যাত্রাপথ শুরু হ'ল ২০০০ সালে, নাইর�োবিতে। নতুন অধিনায়ক স�ৌরভের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে এলেন শেহওয়াগ, ভাজ্জি, যুবরাজ, নেহেরা, কাইফরা। ড্রেসিংরুমে একদিকে এসব তরুণ বন্ধু স্থানীয় সতীর্থ, অন্যদিকে রাহুল, শ্রীনাথ, কুম্বলে, শচীনের মত�ো অগ্রজের সহাবস্থান। বিচক্ষণ জাহির সমৃদ্ধ হলেন দু'দিক থেকেই। স্থিরতা আর ধৈর্যের সাথে মেলবন্ধন ঘটল�ো আগ্রাসনের। এই অম�োঘ সংমিশ্রণেই তিনি হয়ে উঠলেন
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
১৪
পৃথিবীর অন্যতম এবং ভারতের সর্বাধিক সফল ভারতীয় বাঁ হাতি পেসার। ২৩শে মার্চ, ২০০৩। ওয়ান্ডারার্স। বছর তেইশের ছেলেটা ছু টে আসছে করলেট ড্রাইভ এন্ড থেকে। চ�োখে স্বপ্নপূ রণের বিশ্বাস, আঙু লের ফাঁকে নতুন ক�োকাবুরা বলের সীম। সামনে প্রবলতম প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। সারা ট্যুর্নামেন্টে মাত্র একুশ এভারেজে আঠার�োটা উইকেট নেওয়া জাহির ব্যর্থ হলেন নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে। দুরন্ত অস্ট্রেলিয়ার সামনে নাস্তানাবুদ হ'ল স�ৌরভ গাঙ্গুলির টিম ইন্ডিয়া। অথচ কে জানত�ো! সেদিনের সেই ব্যর্থতা চ�োয়াল শক্ত করেছিল ঐ বছর তেইশের বাঁহাতি পেসারের। সেই দৃ ঢ়তা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে। দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষার পর আবার ফিরে এল�ো সেই মঞ্চ। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে বল হাতে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিলেন জাহির, সাক্ষী রইলেন বিশ্বজয়ের। শুধু ফাইনালেই নয়, গ�োটা ট্যুর্নামেন্টে তুলে নিলেন একুশটি উইকেট, হলেন যুগ্ম সর্বোচ্চ উইকেটগ্রাহক। তাঁর নব আবিষ্কৃ ত নাকল-বলের শিকার হলেন ইয়ান বেল, কলিংউড, মাইক হাসির মত�ো কিংবদন্তীরা। ছিল নতুন বলের পাশাপাশি পুরন�ো বলে রিভার্স সু ইং করান�োর মুন্সিয়ানা। এতকিছু র পরেও একসময় খারাপ ফর্মের জেরে বাদ পড়লেন জাতীয় দল থেকে। চ�োয়াল শক্ত ক'রে ফিরে আসার লড়াই শুরু করলেন জাহির। সে মরশুমে ওরচেস্টারশায়ারের হয়ে তুলে নিলেন ৭৮টি উইকেট। এবছরই এসেক্সের বিরুদ্ধে এক ইনিংসে ৯টি উইকেট দখল করার পরেও আফস�োস থেকে গেল�ো উইকেট কিপারের ড্যারেল গফের ক্যাচ ফেলে দেওয়ায়, অধরা থেকে গেল�ো ঐ কাউন্টির ইতিহাসে প্রথম ব�োলার হিসেবে এক ইনিংসে দশ উইকেট ত�োলার বিরল রেকর্ড। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। মূ ল কারিগর ছিলেন দীর্ঘ একুশ বছর পর বিলেতে টেস্ট সিরিজ জয়ের।এছাড়াও একটি অনন্য কৃতিত্বের জন্য তাঁর জায়গা হয়েছে রেকর্ডবুকে। বিশ্বের তাবড়-তাবড় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান-
২০১১ বিশ্বকাপে জাহির খান।
দের কাছে দুঃস্বপ্নের মত�ো ছিলেন জাহির খান। গ্রেম স্মিথ, সাঙ্গাকারা, ম্যাথিউ হেডেন, জয়সূ র্যকে ক্রমাগত ফাঁসিয়ে গেছেন নিজের সু ইংয়ের জালে। চ�োদ্দ বছরের সু দীর্ঘ কেরিয়ারে আসা প্রতিটা চ্যালেঞ্জ, প্রতিটা চ�োট-আঘাতকে ধূ লিসাৎ করেছেন নিখুঁত ইয়র্কারে। টিমহ�োটেলের এককালের রুমমেট লক্ষ্মণকে নিয়ে যেতেন সাঁইবাবার মন্দিরে, ভারতবর্ষকে বেঁধে দিতেন অদৃ শ্য এক সম্প্রীতির সূ ত্রে। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালের নিরাশা কাটিয়ে পরবর্তী বিশ্বকাপ ফাইনালের অনবদ্য জয়সূ চক কৃতিত্বের যাত্রা আসলে আট বছরের নয়, এই যাত্রা জীবনের যাবতীয় ব্যর্থতা কাটিয়ে সাফল্যের চূ ঁড়াকে ছু ঁয়ে ফেলার। এই যাত্রা নাইর�োবি থেকে জ�োহানেসবার্গ হয়ে ওয়াংখেরে স্টেডিয়ামে এক বসন্তের দুপুরের, যেখানে সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে সাদা ক�োকাবুরা বল নিয়ে নিজের ছন্দময়, ধ্রুপদী রান-আপে ছু টে আসেন জাহির খান, একটা অস্থির ভারতবর্ষকে এক ঝটকায় সাম্প্রদায়িকতার অসু খ ভুলিয়ে দিতে দিতে...
সনথ জয়সূ র্য
জিনেদিন জিদান
১৭
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
৫০০০ : ১ সব্যসাচী চক্রবর্তী
নেলসন ম্যান্ডেলা একবার বলেছিলেন "ক�োন�ো কাজ সম্পূ র্ণ না হওয়া পর্যন্ত সবসময় অসম্ভব মনে হয়।" ২০১৫ সালের মে মাসের শেষে যদি ক�োন�ো উগ্র ইতিবাচক ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হত�ো যে "লেস্টার সিটি দল কি পরের বছর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে?" তখন সেই ব্যাক্তিও হয়ত�ো বিদ্রুপই করত। কিন্তু ফুটবলের এইটাই হয়ত�ো সবথেকে র�োমান্টিক দিক যে এই খেলায় সত্যি ক�োনকিছু ই হয়ত�ো অসম্ভব নয়। ২০১৪ সাল। টানা ৫ বছর দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার পর প্রিমিয়ার লিগে খেলার য�োগ্যতা অর্জন করে লেস্টার সিটি দল এবং ২০১৪-১৫ মরশুমে স্বাভা-
বিক ভাবেই তারা সবথেকে দুর্বলতম দল হিসেবে ১৪০ দিন প্রিমিয়ার লিগের শেষে অবস্থান করে। সবাই যখন ধরেই নিয়েছিল যে লেস্টার সিটির অবনমন নিশ্চিত, তখনই শেষ ৯ ম্যাচে ৭টি জিতে একপ্রকার মিরাকল করে তারা অবনমন বাঁচায়। ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে অতদিন লিগ টেবিলের শেষে অবস্থান করে ক�োন�ো দল অবনমন বাঁচাতে সক্ষম হয়নি। এই অবনমন বাঁচান�োর লড়াইয়ের নামই হয়ে যায় "ডা গ্রেট এস্কেপ"। আর�ো একবছর প্রিমিয়ার লিগে টিকে যায় লেস্টার সিটি। তাদের মালিক, থাইল্যান্ডের নাগরিক ভিছাই শ্রীবা-
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
১৮
লেস্টার সিটি ক�োচ হিসেবে ক্লদিও রানিয়েরী।
ধানপ্রভা সেই অবনমন বাঁচান�োর উৎসব হিসেবে গ�োটা দলকে উড়িয়ে নিয়ে যান থাইল্যান্ডে একটি ট্যুরে। কিন্তু ট্যুরে ঘটে কিছু আপত্তিকর ঘটনা যার জেরে তিন লেইস্টার সিটি প্লেয়ার (হুপার, স্মিথ এবং জেমস পেয়ার্সন) এবং তাদের ক�োচ নিজেল পেয়ার্সনকে তৎক্ষণাৎ বহিস্কৃ ত করা হয়। এবং দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় প্রাক্তন চেলসি ক�োচ ক্লদিও রানিয়েরীর হাতে। ক্লডিও রানিয়েরীর অন্তর্ভুক্তি অনেককেই আশ্চর্য করে কারণ অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তাকে "ফুরিয়ে যাওয়া" তকমা দিয়ে দিয়েছিলেন যার মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন ইংলিশ স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার।
২০১৫ সালের প্রিমিয়ার লিগের খেলা শুরু হয়, "বিগ সিক্স" দলগুলি হঠাৎ করেই নিজেদের মত�ো নানান ধরনের গন্ডগ�োলে জড়িয়ে পড়ে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে লুই ভান হাল দলের নিয়ন্ত্রণ হারান, ম্যানচেস্টার সিটি নতুন ক�োচ পেপ গার্দিওলাকে নিযুক্ত করে এবং তিনি প্রথম বছর ইংলিশ ফুটবলের সঙ্গে নিজেকে রপ্ত করতে কিছু টা সময় নিয়ে নেন। চেলসিতে হ�োসে মরিনহ�ো, "তৃতীয় বছরের সিনড্রোম" আবার দেখা যায় এবং তিনিও তার দলের নিয়ন্ত্রণ হারান। লিভারপুলের ক�োচ ব্রেন্ডন রজার্স অক্টোবরে বহিষ্কৃ ত হন এবং জুর্গেন ক্লপ সদ্য আগমণ করেন। খালি আর্সেনাল ও টটেনহ্যাম নিজেদের লিগ জেতার দাবিবার হিসেবে ভাবতে শুরু করে।
১৯
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
গ�োলের পরে উচ্ছ্বসিত জেমি ভার্ডি এবং রিয়াদ মাহারেজ।
তারই মাঝে লেস্টার সিটি দল প্রিমিয়ার লিগের শুরুটা অত্যন্ত ভাল�োভাবে শুরু করে এবং প্রথম ৬টি ম্যাচে অপরাজিত থেকে ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে। অনেক বিশেষজ্ঞই এই শুরুর খেলাগুলিকে নেহাত ভাগ্যের জের বলে উড়িয়ে দেয় এবং প্রত্যেকেই বলে যে এই ভাগ্যের চাকা কিছু দিনেই থেমে যাবে। এবং ৭ নম্বর খেলাতেই তারা আর্সেনালের কাছে ২-৫ গ�োলে হেরে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলাবলি করেন যে লেস্টার এবার হয়ত�ো নিজেদের আসল অবস্থানে ফেরত যাবে। কিন্তু তারপরেই শুরু হয় এক অবিশ্বাস্য দ�ৌড়। তার পরের আগামী ১০টি ম্যাচে ৮টি জিৎ এবং দুটি ড্র অর্জন করে লেইস্টার সিটি বড়দিনের সময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষস্থানে অবস্থান করে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে একমাত্ৰ লিভারপুল বাদে যেই দল বড়দিনের সময় লিগশীর্ষে অবস্থান করে, তারাই সব সময় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। এই পরিসংখ্যান সত্যি ক্লাউডিও রানিয়েরীর দলকে কিছু টা
হলেও চাপে ফেলে দেয়। এবং বক্সিং ডে খেলায় লিভারপুলের কাছে তারা হেরেও যায়। কিন্তু লেস্টার সিটি দল ততদিনে বুঝে গেছে যে তারা অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম। জেমি ভার্ডি, রিয়াদ মাহারেজ, এন গ�োল�ো কান্তে, ব্রাউন, ড্যানি ড্রিংকওয়াটার, অকাজাকির মত�ো খেল�োয়াড়রা যারা ইংলিশ ফুটবলে ২০১৫'র আগে অপরিচিত ছিল তারা হয়ে ওঠে বিশ্ব ফুটবলের সব থেকে আল�োচিত নাম। ভার্ডির অসম্ভব গতি এবং মাহারেজের ড্রিবলিংএর দক্ষতার ওপর নির্ভরকরে লেস্টার সিটি যেক�োন দলকে হারান�োর আত্মবিশ্বাস অর্জন করে। ভার্ডি টানা ১১টি ম্যাচে গ�োল করে রেকর্ড করে এবং তাদের এই প্রিমিয়াম লিগের রেসে প্রধান প্রতিপক্ষ টটেনহ্যাম কে তাদের মাঠেই ১-০ হারায় এবং আবার শীর্ষস্থান ফিরে পায়।
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
২০
৫০০০:১ সম্ভবনার সেই বিখ্যাত টিকিট হাতে লেস্টার সিটি সমর্থক।
তখনও বাকি ১৭টি খেলা কিন্তু সেই অসম্ভবকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয় ক্লাউডিও রানিয়েরীর ছেলেরা। বাকি খেলায় মাত্র একটি ম্যাচে হার শিকার করে এবং শীর্ষস্থান বজায় রেখে একটি রূপকথার জন্মদেয় লেস্টার সিটি দল। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তে নরউইচের বিপক্ষে লেস্টার সিটির হয়ে যখন ৮৯ মিনিটে আর্জেন্টাইন ফর�োয়ার্ড লিওনার্দো উল্লয়া ম্যাচের একমাত্র গ�োলটি করেন তখন গ�োটা গ্যালারিতে লেস্টার সাপ�োর্টারদের উন্মাদনার বিস্ফোরণ ঘটে। সেই উন্মাদনার রেশ এতটাই ছিল যে লেইস্টার শহরে সিসমিক গ্রাফে ০.৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনু ভব হয়। আগস্ট মাসের শুরুতে যেই দলের প্রিমিয়ার লিগ জেতার ৫০০০-১ সম্ভাবনা ছিল, সেই দিল যারা ঠিক একবছর আগেই ক�োন�োক্রমে মিরাকল রূপে অবনমন বাঁচায়, সেই দল সব ফুটবল বিশেষজ্ঞকে ভুল প্রমাণ করে আধুনিক ফুটবলের সব থেকে বড় রূপকথার জন্ম দেয়।
৪০ বছর পূ র্বে ব্রায়ান ক্লাউ নটিংহাম ফরেস্ট দলকে নিয়ে যে রূপকথা লিখেছিলেন, সেই রুপকথার পুনরাবৃ ত্তি ঘটাতে সক্ষম হন ক্লডিও রানিয়েরী। তবে পরিস্থিতি হয়ত�ো আর�ো প্রতিকূল। বিশ্ব ফুটবলে ২০০০ সালের পর যে অর্থের অন্তর্ভুক্তি হয়েছে, যার ফলে বড় দল এবং ছ�োট দলের মধ্যে ফারাক ক্রমশ বৃ দ্ধি পেয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে লেইস্টার সিটির এই অসম্ভব কীর্তি ফুটবলের ইতিহাসের স�োনালী পাতায় চিরন্তন লেখা থাকবে।
২১
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ফাইটার বিশাল দাস
“ ছ�োনে, এই ছ�োনে কই তুই ”। জানলা খুলেই তিনি দেখতে পেলেন, তাঁর কাকা দাঁড়িয়ে আছেন, তাকে ডাকছেন। কাকাকে দেখেই ভয়ে মুখ চ�োখ শুকিয়ে গেল�ো ওনার, তাহলে কি গতকালের ম্যাচের কথাটা কাকার কানে প�ৌছে গেল�ো। “ তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নে, দেশবন্ধু মাঠে প্রাকটিস করাব�ো।” কাকাকে দেখেই বুঝে গেছিলেন তিনি, যে সেদিন কপালে দুঃখ আছে। অগত্যা তৈরি হয়ে পৌঁছ�োলেন মাঠে। তাঁর কাকা তাঁকে একটা গ�োলপ�োস্টের সামনে নিয়ে গেলেন। তারপর তাঁকে স্কিপিংয়ের দড়ি দিয়ে একটা প�োস্টের সঙ্গে পিছম�োড়া করে বাঁধলেন। এদিকে তাঁর মাথায় ত�ো কিছু ই ঢুকছে না, কি জানি কাকা হয়ত�ো ক�োন নতুন হার্ড ট্রেনিং করাবেন। সম্বিত ফিরল�ো কাকাকে স্পাইক বুট পরতে দেখে, উনি ত�ো কখনও প্রাকটিস করান�োর সময়
স্পাইক বুট পরেন না। সবসময় কেডসই পরেন। তাহলে কী? হঠাৎ করেই বেজে উঠল�ো কাকার মুখের হুইসিল বাঁশি, আর কিছু ভাবার আগেই পিছম�োড়া অবস্থায় থাকা ভাইপ�োর পায়ের সিনব�োনে পরতে লাগল�ো কাকার স্পাইক বুটের লাথি। প্রায় মিনিট দশেক চলল�ো এই লাথান�ো, তারপর আরেকটি বাঁশি বাজান�োর সাথে সাথে থামল�ো এই লাথি মারা। যেমন খেলার হাফটাইমে বাঁশি বাজে। গম্ভীর কন্ঠে কাকা ভাইপ�োকে বললেন “ আজ হাফ টাইম অবধি হল, এরপর যদি শুনি আমার ভাইপ�ো হয়ে তুই গ�োড়াদের দলের বিরুদ্ধে খালিপায়ে পা বাঁচান�োর জন্য খেলেছিস, তাহলে এরপর কিন্তু ফুল টাইম অবধি হবে। এটা মাথায় থাকে যেন।” আশা করি এইটুকুতেই চিনতে পেরেছেন কলকাতা ময়দানের দুই প্রবাদপ্রতিম চরিত্রদের।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
২২
হ্যাঁ, কলকাতা ময়দানের স্যার দুখীরাম মজুমদার ও তাঁর ভাইপ�ো তথা মানসপুত্র সন্তোষ মজুমদার ওরফে ছ�োনে মজুমদারের কথাই বলা হচ্ছে। বাংলায় ফুটবল ক�োচিং-এর পথিকৃৎ স্যার দুখীরাম মজুমদারকে নিয়ে কিছু টা লেখালেখি হলেও, তার ভাইপ�ো ছ�োনে মজুমদার বরাবরই থেকে গেছেন অন্তরালে।
১লা জানু য়ারি, ১৯০০ সালে জন্ম সন্তোষ মজুমদারের। আট বছর বয়স থেকেই পায়ে ফুটবল বুট তুলে দিয়েছিলেন কাকা দুখীরাম বাবু। তাঁর মতে “ For a player, boots must be a part of himself.” তবে এটাও বুঝতে হবে, এই বুট কিন্তু এখনকার আধুনিক হালকা ফুটবল বুট নয়, এ বুট তখনকার ভারি ফুটবল বুট। কিন্তু শুধু বুট পরলেই ত�ো হল না, বুট পরে স্বাভাবিক খেলাটাও ত�ো আয়ত্ত করতে হবে। সেই বুট পরে কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের ফুটপাতের উপর দিয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে এরিয়ান দলে য�োগ দেন ছ�োনে মজুমদার। ট্রামের পেছনে দ�ৌড়েছেন ছ�োনে মজুমদার, ট্রাম রাস্তায় দ�ৌড়ে, পায়ে বুট আয়ত্ত হবে বলে। তারপর অনু শীলন শুরু শ্যামবাজারের শ্যাম স্কোয়ার ও ফুট উচ্চতার বাঘা বাঘা খেল�োয়াড়রা তাঁর মাথার দেশবন্ধু মাঠে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এরিয়ানের উপর থেকে সহজে বল নিতে পারেননি। সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর থেকেই এরিয়ান ক্লাবের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে জায়গা করে ১৯১৪ থেকে ১৯৪০, একটানা ২৬ বছর খেলেছেন নেন তিনি। কলকাতা লীগ প্রথম ডিভিশনে এরিয়ানের হয়ে। ইউর�োপীয় বনাম ইন্ডিয়ান দলে তাঁর বরাবরের ফুটবল মাঠে ক�োন নির্দিষ্ট পজিশন ছিল�ো না ছ�োনে পজিশন লেফট ব্যাক এবং রাইট ব্যাকে গ�োষ্ঠ বাবুর, তিনি ছিলেন একদম কমপ্লিট ফুটবলার। পাল। দলে গ�োষ্ঠ পালের বদলে দেবী ঘ�োষ ঢুকলে সেন্টার ব্যাক হিসেবে সমৃদ্ধি পেলেও, সেন্টার তিনি চলে যেতেন রাইট ব্যাক পজিশনে। হাফ, ফর�োয়ার্ড এমনকি গ�োলকিপার পজিশনেও খেলেছেন তিনি। দু পায়েই ছিল অনবদ্য শট, তার ১৯৩৩ সালে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক খেলায় সাথে দুর্দান্ত ইনসাইড-আউটসাইড ও সূ ক্ষ্ম ড্রিসিংহলের বিরূদ্ধে অধিনায়ক গ�োষ্ঠ পালের সাথে বলিং-এর অধিকারী ছিলেন তিনি। চলতি বলে জুটি বেধে দুর্দান্ত ডিফেন্স করেছিলেন তিনি, গ�োষ্ঠ অব্যর্থ শটে গ�োল করতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। পালের একমাত্র গ�োলে সেই ম্যাচে জয়লাভ করে এমনকি মাথাটিও ছিল তাঁর পুর�ো পরিস্কার, হেড ভারত। করার অদ্ভু ত ক্ষমতা ছিল তাঁর। মাত্র ৫ ফুট ২ ১৯৩৪ সালে ভারতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইঞ্চি উচ্চতা ও ৩২ ইঞ্চি বুকের ছাতি দিয়েই অধিনায়ক সন্মথ দত্ত আহত হওয়ায়, অধিনায়কের আটকে দিতেন তাবড়-তাবড় ইংরেজ খেল�োয়াড়মুখ্য দায়িত্ব ওঠে তাঁরই কাধে। সব পজিসনে সমান দের। তখনকার নর্থ স্ট্যাফ�োর্ড, শেরউড ফরেস্টার, খেলার দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্ল্যাক ওয়াচ, ডারহামস প্রমুখ ইংরেজি দলের ৬ এক সংবাদপত্র তাকে বলেছিল— “পটেট�ো, সব
২৩
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
না করে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে তিনি ছ�োনে বাবুকেই খেলালেন গ�োলে। বাকিটা অবিশ্বাস্য! ওই বেঁটে হয়েই দরজা দিলেন এঁটে। ক�োন গ�োল করতে পারল�ো না ম�োহনবাগান। খেলা শেষে দলের সবাই পিঠ চাপড়ে দিলেন তাঁর।
সন্তোষ মজুমদার ওরফে ছ�োনে মজুমদার।
যায়গায় যে মিশে যেতে পারে।” ১৯২৩-২৪ মরশুম, পূ র্ণ দাস তখন কলকাতার শ্রেষ্ঠ গ�োলকিপার এবং এরিয়ানের অধিনায়ক। কিন্তু তাঁর বিগত কয়েক ম্যাচের পারফরম্যান্স একদমই আশাপ্রদ নয়। এমন অবস্থায় লীগের গুরুত্বপূ র্ণ খেলা শক্তিশালী ম�োহনবাগান দলের সাথে। ডালহ�ৌসি মাঠের পিছনে খেলার জন্য তৈরি হচ্ছে দল, গ�োলকিপার পূ র্ণ দাসের জার্সি পরাও হয়ে গেছে। এমন সময় দুখীরাম বাবুর বজ্রকন্ঠ বলে উঠল, “ পূ র্ণ, জামা খুলে ফেল�ো, তুমি খেলবে না আজ।” গ�োলকিপার জার্সি উঠল�ো ছ�োনে মজুমদারের গায়ে। দলের সবাই প্রমাদ গুনল�ো। সবাই দুখীরাম বাবুকে অনু র�োধ করল�ো, একেই বাচ্চা তার উপর বেঁটে কখনও গ�োলকিপার পজিশনে খেলেও নি, লীগের এই গুরুত্বপূ র্ণ ম্যাচে ও কিভাবে খেলবে। কার�োর কথায় কর্ণপাত
কেমন ডিফেন্ডার ছিলেন তিনি? একটা ঘটনার কথা বলি। ১৯৩৭ সালের ডুরান্ড কাপের চতুর্থ রাউন্ডের খেলায়, এরিয়ান মুখ�োমুখি হয়েছে বর্ডার রেজিমেন্টের। বর্ডার রেজিমেন্ট; আর্মি দল, আক্রমণে আক্রমণে জেরবার হয়ে যেতে লাগল�ো এরিয়ান ডিফেন্স। কিন্তু ডিপ-ডিফেন্সে বড় মহীরুহর মত�ো ছ�োনে বাবু দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেনার সকল আক্রমণ তাঁর কাছে গিয়ে আটকে যাচ্ছিল। খেলা অমীমাংসিত রইল�ো সেইদিন। এভাবে দুই দিন খেলা অমীমাংসিত থেকেছিল। পরেরদিন সংবাদপত্রে লেখা হল�ো “ S Majumdar holds a Military Attack. ” যদিও শেষরক্ষা হয়নি। তৃতীয়দিনের খেলায় পরাজিত হয়েছিল এরিয়ান, কিন্তু তাতেও ছ�োনে মজুমদারের কৃতিত্বকে ক�োনমতে খাট�ো করা চলে না। খেলার শেষে বড়�োলাট লর্ড লিনলিথগ�ো হাত মিলিয়ে বলেছিলেন যে এই দেহে এবং এই স্বাস্থ্যে এমন খেলা তাঁর কল্পনাতীত। ছ�োনে মজুমদার ফর�োয়ার্ড, বিশেষত সেন্টার ফর�োয়ার্ডেও নিয়মিত খেলেছেন এবং ভুরি ভুরি গ�োলও করেছেন। ১৯৩১ সালে আই.এফ.এ শীল্ডের ক�োয়ার্টার ফাইনালে এরিয়ান-ক্যালকাটা চ্যারিটি ম্যাচে, এরিয়ান দু গ�োল খেয়ে, ছ�োনে মজুমদারের করা দর্শনীয় গ�োলে এক গ�োল শ�োধ করেছিল। ১৯৩৪ মহামেডানের স�োনার টিম, সেই দলকে ৩-২ গ�োলে পরাজিত করেছিল এরিয়ান। সেই খেলায় এরিয়ানের সকল আক্রমণ শুরু হয়েছিল তাঁর পা থেকেই, একটি গ�োলও করেছিলেন তিনি। ১৯৩২ সাল, লীগ শীর্ষে ইস্টবেঙ্গল। দুরন্ত ফর্মে থাকা ইস্টবেঙ্গল দলকে হারিয়ে দিয়ে, তাদের প্রথম লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশায় বাধ সাধল�ো এরিয়ান। খেলার ফলাফল ২-১। দুটি গ�োলই করেছিলেন ছ�োনে মজুমদার।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
২৪
১৯৩৬ সালে ইউর�োপীয় দলের অধিনায়ক ডেনিস ও ইন্ডিয়ান্স দলের অধিনায়ক ছ�োনে মজুমদার করমর্দন করছেন, পাশে দাঁড়িয়ে রেফারি সি. মেঞ্জি।
সারাজীবন এরিয়ান ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েও ছ�োনে বাবু একবার ভবানীপুর ক্লাবে য�োগ দিয়েছিলেন। সালটা ১৯৩৯, ম�োহনবাগানের মুখ�োমুখি ভবানীপুর। সেন্টার ফর�োয়ার্ডে ছ�োনে মজুমদারের একক দক্ষতায় জয়ী হয়ে মাঠ ছাড়ল�ো ভবানীপুর। ম্যাচের ফলাফল হয়েছিল ২-১। ভবানীপুরের হয়ে দুটি গ�োলই করলেন ছ�োনে মজুমদার, প্রথম গ�োলটি সু য�োগ সন্ধানী স্ট্রাইকারের মত�ো বক্সের ভেতর থেকে এবং দ্বিতীয় গ�োলটি বক্সের বাইরে থেকে একটি দুরন্ত ফ্রী-কিকে। ৩৮ বছর বয়সেও এমন ফুটবল খেলার স�ৌজন্যে পরেরদিন স্টেটসম্যান হেডলাইন করল�ো, “ মজুমদার ইন সানসেট গ্লোরি” অবশেষে ১৯৪০ সালে এরিয়ানের হয়ে আই.এ-
ফ.এ. শীল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে এরিয়ান ক্লাব থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এই ছিল�ো ছ�োনে মজুমদারের ফুটবলজীবনের সার-সংক্ষেপ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এইবার একটু ক্রিকেটার ছ�োনে মজুমদার কেমন ছিলেন দেখা যাক। সে কী! ফুটবলের সাথে সাথে আবার ক্রিকেট। আজ্ঞে হ্যাঁ, ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলেছেন ছ�োনে মজুমদার এবং খেলার মত�োই খেলেছেন। রঞ্জি ট্রফি প্রবর্তনের অনেক আগেই ক্রিকেটার ছ�োনে মজুমদার রিটায়ার করেছেন, তাই হয়ত�ো রেকর্ড বুকে তাঁর ক্রিকেট কীর্তির হদিশ পাওয়া যাবেনা। তাই বলে তাঁর অবদানকে ছ�োট করে দেখাটাও ভুল হবে। প্রতিনিধিত্বমূ লক বার্ষিক ক্রিকেট খেলাগুলিতে ওনার স্থান ছিল
২৫
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
অনেক পর থেকে তার মারকুটে খেলা দেখা যায়। ক্লাব ক্রিকেটে সেঞ্চুরিত�ো আছেই, বালিগঞ্জের মাঠে গভর্নর একাদশের বিরূদ্ধেও বেরহেল্ডের মত�ো সাংঘাতিক ব�োলারকে অগ্রাহ্য করে ভারতীয় একদশের হয়ে ১০২ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এটিই সম্ভবত তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইনিংস। এছাড়াও বালিগঞ্জ ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে, এরিয়ানের হয়ে ৮১ ও ৮৬ রানের ম্যাচ বাঁচান�ো ইনিংস খেলেছেন ছ�োনে মজুমদার। ১৯৩৬ এরিয়ান দলে ছ�োনে মজুমদার ( দাঁড়িয়ে ডান দিক থেকে প্রথম)
বাঁধা। কেমন ক্রিকেটার ছিলেন তিনি? তিনি ছিলেন যাকে বলে প্রকৃত অলরাউন্ডার। ব্যাটিং, ব�োলিং, ফিল্ডিং ত�ো বটেই তার সাথে সাথে তিনি উইকেটকিপিংও করতেন এবং সে উইকেটকিপিং যা তা উইকেটকিপিং নয়। উইকেটকিপার ছ�োনে বাবু ছিলেন ব্যাটসম্যানদের হৃৎকম্প, তাকে দেখে কে বুঝবে যে তিনি দলের নিয়মিত উইকেটকিপার নন। ইউর�োপীয় বনাম ইন্ডিয়ান ক্রিকেট খেলা চলছে, মাত্র পঞ্চাশ রান মত�ো বাকি, হাতে রয়েছে পাঁচ উইকেট। ঝপাঝপ তিন উইকেট পরে গেল�ো বেঙ্গল জিমখানা দলের উইকেটকিপার এস মজুমদারের স�ৌজন্যে, দুটি রান আউট, একটা স্ট্যাম্প। শেষ পাঁচ রান করতে না পেরে পরাজিত হল�ো ইউর�োপীয়ান দল।
ব্যাটিং, ব�োলিং, কিপিং ত�ো হল�ো এবার ফিল্ডিংটাই বা বাদ যায় কেন? ছ�োনে মজুমদার যে বড়�োমাপের ফিল্ডার ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। একটা ছ�োট গল্পই না হয় বলা যাক। প্রোফেশনাল ইংলিশ ক�োচ বিল হিচ এসেছেন ক�োচবিহারের মহারাজার ক্রিকেট দলের ক�োচ হয়ে। একদিন ভবানীপুরের মাঠে তার নির্দেশে ক্যাচিং প্রাকটিশ হচ্ছে। ব্যাট দিয়ে অনেক উঁচুতে বল মারছেন তিনি, আর বাকিরা এক এক করে ক্যাচ ল�োফার চেষ্টা করছে। অনেকে ক্যাচ লুফছে, আবার অনেকে ক্যাচ লুফেও বলের গতির জন্য ব্যালেন্স না রাখতে পেরে মাটিতে পরে যাচ্ছে। এবার পালা এল�ো ছ�োনে মজুমদারের। প্রথমদিকে দু হাতে, তারপর থেকে এক হাতে ক্যাচগুল�ো লুফতে লাগলেন তিনি। তিনি যত�ো ক্যাচ ধরেন, বিল হিচ তত�ো রেগে গিয়ে পরের বল আরও জ�োরে, আরও উঁচুতে মারার চেষ্টা করেন। এই ভাবে ছ�োনে বাবু আঠার�ো-কুড়িটা ক্যাচ ল�োফার পর রণে ভঙ্গ দিলেন পরিশ্রান্ত বিল হিচ।
ঢাকায় জ্যাকসন কাপ খেলতে গেছে ইস্টবেঙ্গল, অফস্পিনার ছ�োনে মজুমদার একটানা ৫২ ওভার বল করলেন, পেলেন ৫ উইকেট ১০২ রান দিয়ে। ফুটবলের মত�ো ক্রিকেটেও হাতেখড়ি কাকা দুখীরাম মজুমদারের থেকেই। তবে দুখীরাম বাবুর জীবৎকালে স্টিক টু দ্য উইকেট নীতি লঙ্ঘন করে চালিয়ে খেলার সাহস তিনি পাননি। কাকার মৃত্যুর
যু গান্তর পত্রিকা থেকে সংগৃহীত
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
২৬
এবার সবার শেষে আসি হকির কথায়। হ্যাঁ, ফুটবল, ক্রিকেটের মত�ো হকিও চুটিয়ে খেলেছেন ছ�োনে মজুমদার। প্রথম বিভাগ লীগ ও বেটন কাপে নিয়মিত খেলেছেন তিনি। এরিয়ান ক্লাবের নিজস্ব হকি দল না থাকায় খেলেছেন গ্রীয়ার, ভবানীপুর, ম�োহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মত�ো দলের হয়ে। হকিতেও ওনার সব পজিশনে সমান খেলার দক্ষতা ছিল। হকিতে তিনি ম�োহনবাগানের হয়ে রাইট-হাফ পজিশনে খেলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গলের হয়েও তাই। গ্রীয়ারের হয়ে লেফট আউট পজিশনে খেলেছেন এবং ভবানীপুরের হয়ে তিনি ব্যাক হিসেবে খেলেছিলেন। এই বিরল ক্ষমতার অধিকারী খেল�োয়াড় সন্তোষ মজুমদার ওরফে ছ�োনে মজুমদারের শেষের দিনগুল�ো একদমই ভাল�ো কাটেনি। দৃ ষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে হতে, দুটি চ�োখ পুর�োপুরি অন্ধ হয়ে যায়। চিরকুমার এই মানু ষটির শেষ জীবনে সঙ্গী বলতে ছিল শুধু অবহেলা ও অর্থাভাব। উপার্জনক্ষমতা বিহীন এই মানু ষটির কাছে তার নিজের জীবনই রূপকথা বলে মনে হত�ো তখন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৭৬, ইহল�োকের মায়া ত্যাগ করলেন ছ�োনে মজুমদার। পরে রইল শুধু কিছু রূপকথার মত�ো গল্প। এই গল্পগুল�োই থেকে যায়, ভেসে বেড়ায় গড়ের মাঠের ঘাসের উপর দিয়ে। আজও হয়ত�ো সু সজ্জিত এরিয়ান গ্যালারির আনাচে কানাচে কান পাতলে শ�োনা যাবে সেই সব গল্প। এই ভাবেই ময়দানের মিথগুল�োর মধ্যে দিয়েই থেকে যাবেন ছ�োনে মজুমদারের মত�ো চরিত্ররা, অমর হয়ে।
ছ�োনে মজুমদারের প্রয়াণের খবর যু গান্তর পত্রিকায়।
২৭
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
এক খসে পড়া তারার গল্প রাহুল চক্রবর্তী
ব্রাজিল, অ্যামাজনের দেশ, যে দেশ যুগের পর যুগ বহু অভিযাত্রীকে টেনে নিয়ে এসেছে স�োনার শহর এলড�োরাড�োর আশায়, অভিযানের নেশায়, ব্রাজিল, যার সাম্বার জাদু বিশ্ববাসীকে সম্মোহিত করেছে সেই পেলের যুগ, কখন�ো বা সেই উদ্দামতা স্তব্ধ হয়েছে মারাকানার চাপা কান্নার কাছে। তবুও তারা হাসতে ভ�োলেনি, তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে একটাই অমৃত, ফুটবল। ১৯৮২, ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ এর বছর, ব্রাজিলের ফুটবল আঙ্গিনায় তখন জিক�ো, ফ্যালকাও, সক্রেটিসের অবাধ বিচরণ ৷ ঠিক সেই বছরে ফেব্রুয়ারির এক স্যাঁতস্যাঁতে দিনে রিওর এক অন্ধকার বস্তিতে জন্ম নিল অ্যালমির লেইটে রিবিয়ের�োর পুত্রসন্তান আড্রিয়ান�ো। সেই সন্তানকে তিনি আগলে
রাখলেন রাগ আর অস্ত্র কারবারের কাল�ো ছায়া থেকে। বাবা হয়ে উঠল আদ্রিয়ান�োর কাছে হির�ো। মাত্র 17 বছর বয়সে আদ্রিয়ান�োর ব্রাজিলের লিগে হাতেখড়ি হল বিখ্যাত ক্লাব ফ্ল্যামিঙ্গোর জার্সি গায়ে চাপিয়ে ৷ প্রথম সিজনেই 28 ম্যাচে 10 গ�োল। ইউর�োপের ক্লাবগুল�ো হীরকখণ্ডটি কে চিনতে ভুল করল না। 2001 সাল, ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলান মাত্র 19 বছর বয়সে সই করাল�ো বিস্ময় প্রতিভাটিকে ৷ বালক আদ্রিয়ান�ো সঙ্গ পেল ব্রাজিলের লেজেন্ড সেন্টার ফরওয়ার্ড র�োনাল্ডোর যাকে সে এতদিন গুরু বলে মেনে এসেছে। প্রথম সিজনে ইন্টারের হয়ে আট ম্যাচে মাত্র এক গ�োল, যদিও তখন সিরি - আতে তারকা'র ছড়াছড়ি ৷ আদ্রিয়ান�ো য�োগ দিল ইতালির ক্লাব ফিওরেন্তিনাতে।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ফলাফল? 15 ম্যাচে 6 গ�োল ৷ পার্মা, ইতালির অন্য একটি ক্লাব তখন ব্যস্ত তাদের সেরা স্ট্রাইকার ক্যানাভার�োকে বিক্রি করে অ্যাড্রিয়ান�োকে করাতে সই করাতে। 2002-2004 সিজনে পার্মার হয়ে আদ্রিয়ান�ো করলেন 37 ম্যাচে 23 গ�োল ৷ ইন্টার মিলান তখন তাদের নতুন সু পারস্টারকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ৷ সাধ করে তারা তার নাম রাখল এম্পেরর, সম্রাট। 2005, আদ্রিয়ান�ো তখন ইন্টারের জার্সিতে ফুল ফ�োটাচ্ছেন ৷ উত্তুঙ্গ গতি, বাঁ পায়ে গ�োলার ম ত�ো শট আর তার সঙ্গে সে ই অবিশ্বাস্য সফট টাচ ম নে করাচ্ছে স�োনালী দিনের র �ো ন া ল্ডোকে ঠি ক তখনই ঘটল�ো ছ ন্দ প ত ন ৷ রিও থেকে একটি লং ডিস্টেন্স ফ�োন কল, আলমির লে ই টে রিবিয়ের�ো আর নেই ৷ বিস্ময়বিহ্বল আদ্রিয়ান�ো সেখানেই বসে পড়লেন। বাকিটা তার সতীর্থ জ া নেট্টির কথায় " সেই আর্তনাদ এখন�ো আমার কানে বাজে, গায়ের ল�োম খাড়া হয়ে ওঠে"। বাবার মৃত্যু আদ্রিয়ান�ো কে যেন পাগল করে তুলল৷ কিসের আক্রোশে যেন ছিন্নভিন্ন হতে লাগল বিপক্ষ ক্লাবগুল�ো। কিন্তু সে নিতান্তই সাময়িক, প্রদীপের শেষবার নিভে যাবার আগে দপ্ করে জ্বলে ওঠার মত�ো। অতিরিক্ত মদ্যপান মাদক সেবন আর সেই অনু পাতে ওজন বৃ দ্ধি তার ক্যারিয়ারের যবনিকা টানল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে 53 ম্যাচে 27 গ�োল দিয়ে । Zlatan Ibrahmovic যাকে absolute animal বলেছিলেন সেই ইন্টার মিলানের ভাল�োবাসার এম্পের�োর 2014 সালে থামলেন 241 ম্যাচে 107 গ�োল নিয়ে ৷ আদ্রিয়ান�ো লেইটে রিবিয়ের�ো, ফুটবলের
ময়দান
২৮ আকাশে ক�োন দ্রুবতারা নন বরং তিনি সেই নীল উল্কা, খসে পড়া তারা, যারা আমাদের চ�োখের সু খ দেয় প্রশান্তি দেয় আর স্বপ্ন পূ রণের গল্প শ�োনায় আর ফুটবলের প্রতি আবেগ কে উস্কে দিয়ে শুকতারা হয়ে বেঁচে থাকে ৷
৫
ময়দান
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
১. আই.পি.এলে প্রথম হ্যাট্রিক কে করেন? ২. সবথেকে বেশি বয়সে চ্যাম্পিয়নস লীগে গ�োল কে করেছেন? ৩. প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ক�োন দল? ৪. রঞ্জী ট্রফিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান কে করেছেন? ৫. ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের হয়ে সবথেকে বেশি গ�োল কে করেছেন? ৬. ইউর�ো কাপে সবথেকে বেশি সময় গ�োলদূ র্গ অক্ষত রাখার রেকর্ডটি কার দখলে? ৭. এই স্টেডিয়ামটির নাম কি?
৮. ইনি একজন বিখ্যাত ফুটবল রেফারি, এনার নাম কী?
Qইজের প্রশ্নগুলির উত্তর পাঠিয়ে দিন https://facebook.com/moydanmagazine পেজের ইনবক্সে এই ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে। আগে পাঠান�োর ভিত্তিতে প্রথম তিনজন সবকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরদাতার নাম, পরের সংখ্যায় প্রকাশিত হবে।
প্রথম বর্ষ। সপ্তম সংখ্যা । জানু য়ারি ২০২১
ময়দান
Qইজ গ ত স ং খ ্যা র উ ত্ত র : ১. বিশ্বকাপ ফুটবলে সর্বপ্রথম আত্মঘাতী গ�োল কে করেন ম্যানু য়েল র�োসা। ২. ভারতে প্রথম ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় আই.টি.আই ব্যাঙ্গাল�োর। ৩. চেতন শর্মা ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম হ্যাট্রিক করেন। ৪. দিয়েগ�ো মারাদ�োনা সর্বপ্রথম আর্জেন্টিন�োস জুনিয়র ক্লাবে য�োগ দিয়েছিলেন। ৫. “ Beating the Field: My own story ” আত্মজীবনীটি ব্রায়ান লারার লেখা। ৬. আই পি.এলে সবথেকে দ্রুত অর্ধশতরানটি কে করেছেন কে.এল. রাহুল। ৭. ছবিতে যে ভারতীয় উইকেটরক্ষক দেখা যাচ্ছে, তার নাম অজয় রাত্রা।
৮. বিশ্বফুটবলের এই বিখ্যাত খেল�োয়াড়ের নাম জাঁ ফঁতে।
সবকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরদাতা অমিত কুমার রায় প্রধান
অভিনন্দন
৩০
Š Moydan Magazine, All rights reserved. The information contained in this magazine may not be published, broadcast, rewritten, or redistributed without the prior written authority of Moydan Magazine.