Anjali 2020 Magazine

Page 1



Anjali

Durga Puja Program October 24, 2020

Puja Pushpanjali Prasad & Lunch Entertainments Arati & Bisarjan

… … … … …

11:30 AM 12:30 PM 1:30 PM 3:00 PM 4:15 PM

ॐ सर्वे भवन्तु सुखिनः सर्वे सन्तु निरामयाः । सर्वे भद्राणि पश्यन्तु मा कश्चिद् दुःखभाग्भवेत ् । ॐ शान्तिः शान्तिः शान्तिः ॥ Venue: Karasuyama Community Center, 6-2-19 Minamikarasuyama, Setagaya-ku, Tokyo 157-0062, Tel: 03-3326-3511 © Bengali Association of Tokyo, Japan (BATJ). All rights reserved. Disclaimer: The articles compiled in this magazine are personal opinion of the authors and in no way represent any opinion of BATJ.




সম্পাদকীয় সারা পৃথিবীর মানু ষের শুভকামনা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২০ সাল। অনেক আশা, আকাঙ্খা, পরিকল্পনার মাঝে শুরু করা এই বছরটি একেবারে গ�োড়ার দিক থেকেই বইতে থাকে ভিন্ন খাতে। হঠাৎ এক প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত অতিমারীর সাথে ম�োকাবেলা করার সম্পূ র্ণ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখ�োমুখি হয় মানবজাতি। স্থিতিশীল জীবনে অভ্যস্ত মানু ষ স্বভাবতই ভীত, সন্ত্রস্ত, উদ্বিগ্ন। নানান আশঙ্কা, আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটিয়ে চলেছে তাদের দিন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অগণিত মানু ষ, চীনে উদ্ভূত সেই প্রাণঘাতী কর�োনা ভাইরাসে সংক্রমিত, এবং এদের একাংশ প্রাণ হারিয়েছেন। এরই প্রভাবে ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়েছে অনেক মানু ষের, বিধ্বস্ত হয়েছে বহু দেশের অর্থনীতি এবং প্রত্যক্ষ ও পর�োক্ষ ভাবে হয়েছে আরও অনেক ক্ষতি। জাপানের বহু আকাঙ্খিত অলিম্পিক এক বছরের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান এই অতিমারীর কবলে সম্পূ র্ণ বিপর্যস্ত। অন্নসংস্থানের সু য�োগ হারিয়েছে অসংখ্য মানু ষ। তারা শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে তা সাধারণ মানু ষ কল্পনাও করতে পারবে না। আবার অন্যদিকে প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে ম�োকাবেলা করবার চাপ মানু ষকে শিখিয়েছে নতুনভাবে ভাববার উপায়। অনিশ্চয়তার মধ্যেও সামনে এগিয়ে চলার অভিনব পদ্ধতি, প্রয়�োজনে কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন, নিজের শারীরিক প্রতির�োধ ক্ষমতা বৃ দ্ধি এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উপযু ক্ত প্রযু ক্তির ব্যবহার, ইত্যাদি চিন্তাধারা ইত�োমধ্যেই আগামী দিনের নতুন নিয়ম হিসেবে আখ্যা পেতে শুরু করেছে। মানু ষের ধর্মই হল স্থিতাবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করা। আশা করি দুর্গতিনাশিনী মায়ের কৃপায় অদূ র ভবিষ্যতে আজকের ঘ�োর সঙ্কট কেটে যাবে। মানবজাতির ইতিহাসে যে দুরূহ সমস্যা দেখা দিয়েছে তা কেটে গিয়ে আবার শুরু হবে উজ্জ্বল দিনের অধ্যায়। নতুন উপলব্ধি, নতুন চেতনা সমগ্র মানবসমাজের উত্তরণ ঘটাবে। ত�োকিয়�োতে নানান বিধিনিষেধ মেনে এবারকার পুজ�োর আয়�োজন করা হয়েছে। ‘অঞ্জলি’ও পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে শুভানু ধ্যায়ীদের অনু র�োধে অনলাইনে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবছর অঞ্জলির পঁচিশ বছর পূর্তি। দুঃখের বিষয় এটি উদযাপনের ক�োনও আয়�োজন এবছর করা সম্ভব হল না। তবে ক্ষেদ নেই, কারণ এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বিচিত্র স্বাদের, বিবিধ লেখার সম্ভার নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে এবারকার অঞ্জলির অনলাইন সংস্করণ। পাঠকদের ভাল�ো লাগলে আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। এই সঙ্কটের দিনে অঞ্জলির পাঠকবর্গ সপরিবার সু স্থ্য থাকুন, কল্যাণময়ী দেবী দূর্গার কাছে সেই প্রার্থনা জানাই।। সবার জন্য রইল শারদীয় শুভেচ্ছা।।

www.batj.org

Durga Puja 2019


Editorial Like every other year, 2020 also began with usual prayers and exchanges of New Year’s greetings among people across the world. Despite all the high hopes it had, shortly after the start, year 2020 went astray. All of a sudden, mankind was thrown into an unexpected and unprecedented challenge to face a pandemic caused by a deadly virus. As a consequence, this disruption put people living peacefully, in a frightened, worried and anxious state of mind. As of today, this virus that had originated from China, has infected a huge number of people across the globe, and also claimed many lives. This pandemic has brought miseries to individuals, impacted several economies, and caused too many direct and indirect losses. Long awaited Olympic 2020 got postponed for one year. Many industries are on the verge of collapse. Innumerable people have lost their livelihoods and have therefore been put into immense pains. On the brighter side, by facing such indomitable challenges one has learnt how to think differently. Concepts such as, creative ideas of moving forward embracing uncertainties, changing working style according to the needs of the day, developing self-immunity, leveraging technology to manage unexpected situations, are becoming new norms of the day. Human beings generally wish to regain normalcy in life as soon as possible. Let’s hope that by the grace of Goddess Durga, we get over the present crisis soon. Let the darkness created by this seemingly unbeatable problem in the history of mankind vanish, and let the spirit of brightness show up again. Let the new realization revitalize mankind and elevate them to a higher level of maturity. We have arranged this year’s puja strictly conforming to guidelines issued by the authorities. In accordance with the changed situation, this year we have decided to publish Anjali exclusively online. This year is the 25th anniversary of Anjali. Unfortunately, we could not do anything to specifically commemorate that event. We do not regret much as we could compile this edition with many interesting articles of various genres despite the current unusual situation. We will be rewarded if this edition gets readers’ appreciation. We pray for the wellbeing of our readers and their families. Anjali extends best wishes to all its readers.


Anjali 2020

CONTENTS Theme - Covid-19 9 Takeaways from Corona

- Yogendra Puranik ‘Yogi’

11 COVID-19

- Anirvan Mukherjee

41 লঙ্কা কাণ্ড

12 Light In The Darkness

- গ�ৌতম সরকার 42 দেবীপক্ষের সূ চনা   - আগমনী পাঠক 43 ঈশ্বর, ত�োমার কুঞ্জবনে   - হেমন্ত কুমার সরকার 44 বিনিময়   - দু হিতা সেনগুপ্ত 45 শরৎ ও ব্রাত্যজন   - সু ব্রত বনিক 46 পৃ থিবীর প্রতিশ�োধ   - ক�ৌশিক ভট্টাচার্য্য 46 আত্মকথা   - বিশ্বনাথ পাল 47 প্রকৃতি ও প্রলয়   - সু প্রীতি গুড়িয়া (ভূ ঁইয়া)

- Sougata Mallik

13 The New Normal

- Shoubhik Pal

14 Distance & COVID-19   - Purnima Ghosh 15 2020 - लोचनी अस्थाना

16 ক্ষু দ্‌দার মনে হচ্ছে “বন্যেরা বনে সু ন্দর”

- অনু পম গুপ্ত 18 করুণাময়ী কর�োনা - শান্তনু চক্রবর্তী 19 অতিমারী - অরুণ গুপ্ত

48 Lord Buddha and His Parables   - Swami Medhasananda

Feature, Story, Travelogue, Poetry

52 Conversations with Swami Nityasuddhananda

20 গানের ভিতর দিয়ে দেখি ভুবন খানি

- Suneel Bakhshi 54 Vietnamese Lacquer Art

- স্বামী দিব্যনাথানন্দ

- Gunjan Verma

22 অপরাজেয় বাঙ্গালী বিদ্যাসাগর

55 Sach Khand: The Great Mystery

- শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় 26 নজরুলের চেতনায় মা   - মানিকচন্দ্র ঘ�োষ 28 ক�ৌতুকপ্রিয় রবীন্দ্রনাথ   - ভাস্বতী সেনগুপ্ত ঘ�োষ 30 বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ রায়   - পার্থ কুমার 33 যে ভক্তি ত�োমারে লয়ে ধৈর্য নাহি মানে,   - শুভা ক�োকুব�ো চক্রবর্তী 34 ক�োলকাতার র�োড-নামচা   - তপন কুমার রায় 36 এমন তরণী বাওয়া   - শঙ্কর বসু 37 সফর   - শুচিতা দাসগুপ্ত 38 গলি   - বেবী বসু গুপ্ত 39 শতবর্ষে রবীন্দ্র সর�োবর   - মিত্রা মুখার্জি 40 স�োনালি স্মৃতি   - শমিত রায় 6

- Harjas Sahni 56 Economic Opportunities   - Mona Khandhar 58 Modernization drive on Indian Railways   - Ravindra Verma 61 Save Twilight   - Utso Bose 62 Asuras in Hindu Mythology   - Viswa Ghosh 66 Dooars – A Distant Dream   - Joyita Basu Dutta 68 India – A Perennial Idea   - Varun Tomar 70 A Tale of Two Cities   - Amit Roy 71 One never forgets their first time...   - Jyotsna Bhatti (nee Chandrani) 72 Tokyo Olympics - Our Ability to Deal with Uncertainity   - Arnab Gupta 75 Impermanence   - Twisha Dasgupta Anjali

www.batj.org


76 The Trunks

- Piali Bose

77 Still Alive

- Udita Ghosh

78 Tribute to Sushant Singh Rajput

- Arjyama Choudhury

79 Reminiscence – The awakening of spirits

- Soumitra Talukder

80 The Broken Clock   - Somik Ghosh 81 マントラ オームの歌   - 佐藤 洋子 82 タゴールと渋沢栄一   - 佐々木 理香 83 私と「自国」の文化   - アナンニミシャ 84 Yoga Common Protocol/CYP〜ヨーガ共通手順〜   - Chiaki Hanari 86 距離   - ロイ れい子 87 नवरात्र : एक स्वप्न   - राजेश्वर वशिष्ठ 89 सबसे खतरनाक होता है , हमारे सपनो का मर जाना   - मनमोहन सिंह साहनी 90 महामारी और त्याग   - पुर्निमा शाह 92 वर्षा की सीख.........   - नीलम मलकानिया 93 कविताओं का संग्रह   - प्रभा मित्तल 94 आँख मिचोली महोब्बत के संग   - सेजल मेहता 95 पद्मश्री इरफान खान साहब को श्रद्धांजलि   - रिमझिम मोहं ती 96 ज्योति   - शारं ग 96 अमन बिक गया है   - सुनील शर्मा

Children's Section 97 Travel to City of Peace - Tosani Ghosh, Grade III 98 Trip to ISKCON, Mayapur

107 Drawings 113 New Borns 113 Anjali Editorial Team

114 Photography 115 Arts

Tribute 120 কল্যাণদা

- রঞ্জন (গ�ৌতম) গুপ্ত

123 A “Genuine” Person - Rita Kar

124 কেমন হল গ�ো? – কল্যাণদার স্মৃতি-

- কাজুহির�ো ওয়াতানাবে

126 কল্যাণদার স্মরণে

- মাসাইয়ু কি উসু দা 128 কল্যাণদার স্মৃতি   - কিয়�োক�ো নিওয়া

129 コッリャンダの「ওগ�ো オゴ〜、」   - 奥田由香 131 K. Dasgupta 家との思い出   - Akiko Nara 131 コッラン・ダーシュグプト先生の思い出   - 齋藤 治之

- Abheek Dutta, Grade VI 99 Spring - Shonayaa Verma, Grade III 100 My Little Doves - Ashmita (Tias) Paul, Grade VIII 102 End of a Nightmare - Arnab Karmokar, Grade VIII 104 Perks of being an introvert - Akanksha Mukherjee, Grade X 105 The Fulfillment - Kshitij Singh, Grade XII 106 My Mother’s House - Kavya Sharma

www.batj.org

Durga Puja 2020

7


Acknowledgements We are pleased to bring out our autumnal publication, Anjali on the auspicious occasion of Durga Puja celebration, 2020. Covid-19 has shaken the lives of everyone and the whole world is shattered because of this pandemic. Our worries for the wellbeing of our families and friends have multiplied manifold in recent days. While we are facing many disruptions, we are also adapting to the new normal as it comes up from time to time. In the midst of such a special situation, we carefully considered if we should continue publishing Anjali this year also. Needless to mention, that we got an overwhelming affirmation in support of publishing. Hope Anjali could bring some diversion in present worrisome lives. Anjali’s continuing success is made possible by the support of many well-wishers. The Embassy of India in Tokyo continues to extend their gracious support for which we are very thankful. We hope to receive the same patronage in future as well. For last 24 years we had been regularly receiving sponsorship from our advertisers. In this unusual time, some of our sponsors may be facing challenges in their business. As a mark of gratitude and solidarity we offered our regular advertisers a free advertisement in this 25th edition of Anjali. We wish our sponsors to quickly overcome the challenges and enjoy a bright future ahead. Every year Anjali is being enriched by the valuable contributions from native speakers of different languages and various cultural backgrounds. We sincerely thank each of them for their support. We convey our gratitude to the contributors who have sent us their contributions from outside Japan. We are happy to note that readership of our online version is expanding. At different stages of this process, we received valuable advices from many well wishers. We tried to incorporate their suggestions as much as possible. We convey our sincere thanks to all of them.

Editorial Team

Editorial Team Ranjan Gupta Ruma Gupta Sanjib Chanda Meeta Chanda

8

Cover Artwork & Collages Meeta Chanda

Articles Integration & Design Sanjib Chanda

Ads Compilation Sanjib Chanda

Anjali

www.batj.org


Takeaways from Corona   - Yogendra Puranik ‘Yogi’ - Edogawa City Councillor, Tokyo, Japan

L

ooking at the past, corona (covid-19) pandemic is going to be one of the biggest lessons for the mankind, isn’t it? As of this date, more than 30 million people got infected with corona virus across the world leading to a bit less than 1 million deaths. On the negative side, corona has created a divide - divide between the rich and the poor, divide between the healthy and not so healthy, divide between the educated and the uneducated, divide between the informed and the uninformed, divide between the adaptive and the conservative and so on. I think, corona came with a plan, and that is why it has stayed with us longer than initially expected. We the mankind, somewhere during the course, probably forgot that we are not the only one on this earth. Corona gave us a strong realization that we are the tiny ones in the whole ecosystem of the living beings. On the positive side of things, good news is that Himalayas are now visible from a distance of 500 to 600 kms, people are spending more time at home with their families, corporates are offering work from home opportunities to their employees and are looking for further process improvements and better product adoptions. People are trying to suppress their wants and unnecessary actions, reducing waste and pollution to a greater extent. In-fact, going beyond these positives, I envisage that corona will bring loads of opportunities to us. The first and foremost, it will offer us an opportunity to look into our private lives and social lives to bring in higher sense of compassion, towards families and society and the environment. On the face of it, people might sound to be selfish, that is what usually happens when disaster strikes. However, corona will ultimately make people think and change from inside. From a community perspective, sad that we are going to miss the festivals and get together that we have every year. However, we are giving much more importance to information sharing regarding all possible matters. Corona pandemic will offer us a chance to make those things happen which we never ever thought to be possible in

near future. For example, for most of the Japanese companies, working from home was a taboo. However, that changed since May of this year. More than 20% of Japanese companies, including the hard-headed financial institutions, have employed work from home (WFH) schemes or staggered working shifts thereby reducing the congestion in morning trains and in the offices. Even if this working style does not continue after the end of corona crisis, we would have surely acquired the knowledge and experience to execute the same again in the case of a future crisis. People, in general, will start questioning and improving things. While, there will be job losses in some specific industries and work types, a new talent pool is expected to get added to the overall workforce owing to new ideas and work types shaping up. Technology leverage is definitely going to increase. The Japanese public schools are gearing up with giga school scheme that will handover tablets to each primary and secondary school students thereby creating equal opportunity of online education for all the kids. Many adults have chosen online programs as a means of continuous education giving them a sense of new achievements. On the administrative side, I am already witnessing discussions about change in the allocation of budgets. Governments are deliberating on a larger shift in the way tax money is utilized. We will surely have much more efficient disaster management systems, medical services etc. at our hands. I am actually seeing a big push in the implementation of Sustainable Development Goals (SDGs) especially since the corona crisis. It could also mean rapid changes in laws etc. creating new opportunities. I have lived for 43 years, and experienced SARS, Lehman shock and the great eastern Japan earthquake. But this corona is different in many ways. All of the other disasters taught us lessons, to get blurred over a period of time. However, corona pandemic will leave a deep impact on each one of us, practically changing our lives in so many ways, not allowing us to go back to the same scheme of things. I would like to see a higher degree of international cooperation to handle such disasters.

コロナ感染症からの学び - 江戸川区議会議員 よぎ(プラニク・ヨゲンドラ)

過去からみても、コロナ感染症は人類にとって最大の学びに なるのではないでしょうか。こんにちまで、世界中では3000万人 以上が感染し、約100万人が亡くなられています。 コロナ感染症のマイナス面と言えば、コロナによって発生した 分断や格差です。貧困と裕福の間の分断、健常者と病人の間の 分断、教育のある者と教育のない者の間の分断、情報を持つ者 と情報を持たない者の間の分断、適応力のある者と保守的な者 www.batj.org

の間の分断です。 私は、コロナ感染症が長引いたことに意味があると感じます。 我々人類は、いつの間にか、地球上にいるのは我々人間だけ ではない、という事実を忘れてしまっていました。でも、コロナに よって、我々人間が地球上の生態系の中でとても小さな存在で あることを改めて認識させられました。

Durga Puja 2020

9


Takeaways from Corona コロナ感染症のプラスな面と言えば、ヒマラヤ山脈が500~600 から物事の在り方を問うようになり、改善を求めていくでしょう。 キロの距離から見渡せるようになったこと、人が家族と過ごす時 一部の業界や職種では失業者が出ているが、工夫や職種が増 間が長くなったこと、企業が在宅勤務を許可し、社内のプロセス え、新たな労働力が生まれるでしょう。 や商品改善に努めるようになったことなどです。人が自らの欲望 と無駄な行動を抑え、ゴミや汚染を減らしています。 技術の使用や浸透はもちろん広がります。日本全国の公立小 中学校ではギガスクール計画の一貫として学生一人ひとりにタ 実は、これらのプラスな面を超え、私にはコロナ感染症がもた ブレットが配布され、オンライン教育の推進により教育格差が縮 らすたくさんの可能性が見えてくるのです。先ずは、個人として、 まると思われます。大人の方も継続教育として様々なオンライン 我々は自分自身の生活や社会生活を覗き、家族や社会に対し 講座に参加し、達成感を味わっています。 更なる思いやりを感じるようになると思います。表面では、人は 身勝手に見えるかもしれない、災害が発生した場合はそれもお 行政の面では、既に予算編成における変化が生じています。 かしくないが、コロナ感染症の影響で人は反省を重ね、芯から 政府が税収の使い方への変化について議論をしています。災 変わると感じます。コミュニティーとして、例年のように祭りやイベ ントなど楽しむことは出来ないが、活発な情報共有により助け合 害対策や医療サービスはもっと充実するでしょう。コロナ感染症 発生後、持続可能な開発目標(SDGs)の導入が推進されてお いが進んでいます。 り、法改正などにより色々な機会が作られるのでしょう。 コロナ感染症のお蔭で近未来に可能だと思ってもいなかった ことが実現されています。例えば、国内企業にとって在宅勤務 はタブーでした。でも、今年の5月からその状況が一変し、頑固 な金融機関まで含め、20%以上の企業が在宅勤務や時差出勤 を導入し、通勤電車やオフィス内の密集を避けました。 この勤務体制がコロナ収束後に継続しないにしても、今後同 様な危機が発生した場合にどのように行動すれば良いか、我々 がその知識や経験を得ることが出来ました。これから、人は普段

10

生まれてから43年生き続ける中で、サーズ、リーマンショック、 東日本大震災を経験しました。でも、今回のコロナ感染症が大 きく違います。他の震災は色んなことを認識させてくれたが、時 間が経つに連れ、その認識が薄れました。但し、コロナ感染症 は大きな影響を残し、我々の生活に関わる色んなことが実際に 変更され、元の状態に戻ることは不可能であろう。今後、このよう な災害の際により高いレベルの国際協力を期待したいと思いま す。 

Anjali

www.batj.org


COVID-19   - Anirvan Mukherjee myopic lens, my experience has been that that older people tend to be less critical. Their experience tells them that events in life are often cyclical or fractal. Hence nothing surprises them, and they assure us that - “this too shall pass away”. Unfortunately, today we are bereft of the “old wise man” - who experienced the Spanish Flu or even the Great Depression. We are devoid of his wise counsel and are basically left to fend it for ourselves. It is interesting that, with all our modern technological prowess and perhaps a sense of hubris that whilst we conquered the Moon and the Mars, we feel so vulnerable against such a tiny adversary.

I

was probably 16 years old when I first saw “The Scream” painting by Edvard Munch. I was gripped by the sense of fear it projected. But I reasoned that it bore no resemblance to reality. However, 2020, reality turned out to be even stranger than Munch’s fertile imagination, thanks to an uninvited guest, barely visible to our naked eyes and being anointed a rather nerdy nomenclature – COVID-19. I considered myself lucky to have born in a year in which man went to moon. During my late teens I witnessed the collapse of Communism (symbolized by the fall of Berlin Wall). Growing into adulthood – I witnessed the birth of Internet, the horrors of 9/11 and the Great Financial Crisis (that too as an employee of Lehman). By then I felt that I have mostly “lived live to the lees” (to quote Tennyson) and what remained of my life would be rather sedentary by comparison. How wrong I was! There is absolutely no doubt in my mind that 2020 will be regarded as the most significant year of my lifetime, as well as of many others. This year will be immortalized by future generations – in forms of novels, poetry, scientific literature, new economic paradigms and last (but not the least) a cultural shift. As I write this article, I am tempted to provide statistics about the nature of the virus, its genesis, the number of fatalities, the hope of a vaccine etc. But I would rather resist that temptation. There is hardly anything consequential, that you the “googled” reader do not know by now. It is fair to assume that, you the reader already know enough COVID-19, that you are less inclined to be bombarded by additional facts and figures. Hence, I would like to limit myself to just one piece of sobering statistics that highlights the economic impact of the crisis – a table that “says it all”.

Event Spanish Flu Great Depression Great Recession COVID-19

Year Real GDP Growth 1919 0.40% 1930 -8.60% 2008 -0.10% 2020 -8.50%

In our households, old people are revered for a simple reason – their experience of having lived life, a bit longer than ours. Whilst the young, tend to pontificate on all events through

www.batj.org

As I write this article, Governments across the world are grappling to deal with this pandemic. And this crisis has exposed the best and worst of different political dispensations, some democratic, some authoritarian and many other variants in between. However, I do not envy any government, for the current situation and predicament they are in. I truly empathize with all governments, for I truly believe that no government (regardless of its political stripes) would ever want its citizens to suffer. They are doing the best that they can, with limited resources – and may history be their judge. I have no doubt that sooner or later, this pandemic will be over. Once it gets over, I am keen to know, what lessons have been learnt. Will this pandemic lead to a more humane and less unequal society? Given the economic pains suffered by the vulnerable, do we opt for a new economic order, with a “universal basic income” for all? Do we continue to witness a “Clash of Civilizations” between superpowers, or do we welcome a comity amongst Nations, humbled by the fact that “after all we are just ordinary men” ? Do we discard prophesies such as “The End of History” (Francis Fukuyama) and strive for a new political order, that is a step-up over western liberal democracy? My optimism about a better future for mankind is not entirely unfounded. I would like to cite two historical events involving pandemics that lead to great advancement of mankind: •

The Black Death between 1348-1350 was one of the most devastating pandemics in human history, claiming once-third of the population of Continental Europe. As labor became scarce, the wages of artisans went up. This attracted the best talent and lead to a new era of artistic creativity which also extended to advancements in science and humanism. This period is now known as Renaissance.

During the Great Plague of London, a 23-year-old Issac Newton quarantined himself to his family farm at Woolsthorpe Manor. One sultry afternoon he sat beneath an Apple tree. And our lives changed forever.

Let me conclude with an upbeat and insightful quote by Albert Camus (The Plague - 1947) “What’s true of all the evils in the world is true of plague as well. It helps men to rise above themselves.” 

Durga Puja 2020

11


Light In The Darkness   - Sougata Mallik

2

020 has been a wild and wonderful time.

A bio element takes over the world unexpectedly and dictates tumultuous change in everyone’s work, home lives. What was usual so far is not so now. What was unusual sometime ago is the new normal at present. The new normal has imposed several hurdles definitely, but has also given us a lot in our daily existence – sanitary surrounding, healthier habits, wholesome home cooked food, family togetherness and universal bonding between family and friends across the world. Wherever we are, we have connected with each other to find out about our wellbeing. Only a phone call, a text message, a line in email has made all the difference. While we often forget the usual caring gestures, the new virus has taught these qualities to us all over again. Not only care and concern the virus has taught me self-realization, introspection, retrospection which I seem to have brushed aside for many years. city.

Let me start with an anecdote. It goes way back, in Tokyo

I had enrolled in Information Science and Library Management course in Scotland through distance education. In the second year of studies I was required hands-on-training Internship. British Council Library & Information Centre in Shinjuku-Ku then had very kindly accepted me as an Intern. This was the best I could do pursuing studies in Scotland and living in the Far East. BCL was an amazing library, a pyramid of resources and I was totally submerged in the array of its literary richness. I recall it was Oprah’s book club sessions running with introduction to new and unknown authors. A library patron asked me if “East of Eden” by John Steinbeck would be available. I was young (er) foolish (er) and kind of looked down on the patron’s request. I thought to myself that “East of Eden” published in 1952, John Steinbeck a Nobel Prize winner author who deceased in 1968…….. where and how does this fit into Oprah’s book club of new authors. I seemed to lose faith in the patron’s knowledge and familiarity with literature. I had perhaps portrayed disregard and disinterest for the patron’s request. The perspective of recent education and pedagogy had possibly played conceit in my mind and I succumbed to arrogance, pride, loftiness. It is not until COVID isolation that I got to rethink this episode. Suddenly I realize that I had done it all wrong. The library patron who asked for assistance was a fellow traveller on the road to reading adventure. The vanity in my mind did not permit me to understand her new-found excitement. She was elated in her search for the new, happy to try something diverse and ignorance was not part of it at all. Any weakness or shortcoming that was associated with it was not hers, it was solely mine. This self-realization has been a pivotal moment for me! I so wished I could have grasped it then. COVID isolation phase has also taught me introspection. As I write for “Anjali 2020” I perceive that I have been associated with this magazine for the last 2 decades. At the end of summer every year I always receive a message from Management and Administrators for articles to be published in the magazine. I am always happy to receive this, but probably have never utilized my time to understand how much that is of worth at the receiving end, that is me. “Anjali” has remembered me for 20 long years!

12

I remember many years back when I was entrusted with the work of looking after “Anjali Kids’ Section”. The beautiful kids were all our children – infants, toddlers, youngsters and they had the power of pristine creativity. They could draw pictures, write poems, reflect on their school experience. I recall once I got up early to commute to a friend’s house to collect her child’s writing. I wanted to have this before the week gets busy for all of us. There was the paper - and on it was a little child’s imaginative mind communicated through the purest expression and penned in the most beautiful child-like handwriting. Nothing in the world could buy me better happiness than that small note. I am grateful to all of you for making my 2 decades of “Anjali” experience so memorable. You have been like family to me. And through the magazine you have let me enter your homes like family. I have read all your articles and learnt so much from you every year. You have accepted my literature always and have given me the opportunity to be creative. My connection with you is through words only. You have allowed me to either create them, preserve them or bring them back to life. I have always been passionate about words. The mere 26 letters added with a dash of punctuation mark can make us laugh, cry, delight us or perplex us. I am so honoured to have played a role with you all as kind of Concierge of words, and I thank you for that. Retrospection is another gift that COVID isolation has given me. I stumbled upon this by chance when a friend posted photo of our children growing up in Tokyo. The picture was of the little kids perhaps all in lower elementary school age, gathered together in friendship, trust, happiness. As I looked at their faces I also seemed to see their shinning bright appearances of adulthood. All of them are in their twenties in age, pursuing higher education, have completed studies, working in professional fields, preparing to plunge into the next phase of their lives. The photo also reminded me they are now scattered across the globe living in Japan, Canada, USA, Germany, India etc. When parents let their children out in the world, we are all scared and sceptical. But each of these children have proved our fears wrong. They are all buzzing with energy, locked into their success, cutting edge technologies, digital pathways of an increasingly wired world. There are more products, services now, new ways to do old things. Each of these children have accepted the challenges, opportunities and have navigated their lives towards success. It is hard to sum up this feeling in short. But when I look at these children and however little I may know about creation, I can still say with certainty that the world’s immediate future looks impressive! COVID phase will pass someday soon and the world will gear up to restructure itself in a new way. Till then we may not be able to meet each other in person, laugh or cry, share food, jokes, stories, fashion, music and so much more. But we will always remember this phase, treasure this time, reflect fondly on the high-s low-s and moments in between. While new emergence is on the horizon and time seems near to quit this wild and wonderful ride – I keep faith that we will meet again and soon, in the new world. 

Anjali

www.batj.org


The New Normal   - Shoubhik Pal

M

y mother was never particularly digitally inclined. She doesn’t own a fancy iPhone, neither does she share or do anything of note with her Facebook profile. Forget about her even having a Twitter or Instagram account. She went to her institute to teach people Japanese, and went to the supermarket to get all of our groceries. She had a routine of watching something on Zee Bangla at 6:30 pm on the dot every day. And when it came to everyday food, she usually played it safe, except for certain weekends where the dum biryanis and bhetki paturis made special appearances. This way of life became a habit for her, and habit became muscle memory. She was used to this being her normal.

As a lover of sports and live events, I am resigned to the fact that I won’t be able to go to a game or a concert with many people around for a while. However, I do appreciate the steps taken by people in these various fields to replicate these experiences online. During this pandemic, I saw several live plays, readings and concerts on video conferencing platforms like Zoom. My friends recently went to a drive-in theatre, where they saw a movie on a giant screen while staying inside their car throughout. Sports, especially basketball, have seamlessly resumed post lockdown without missing a beat, simulating the atmosphere through innovations like virtual fans. But despite all this, I still miss the sheer joy of celebrating with many people

Then something happened this year. A new normal, precipitated by the devastating worldwide COVID19 pandemic. It has caused many of us to reimagine the way we look at life, because it is very possible that things may never be the same. Now, my mother has groceries delivered to our doorstep through an app. She tries new recipes every week by watching YouTube videos. She watches shows on streaming platforms like Amazon Prime and Netflix. (Although that 6 :30pm Zee Bangla show is still a daily fixture.) She teaches multiple classes everyday on Skype, Google Meet, Zoom and Webex. She practices yoga every morning on Zoom Call with her friends, learning from an instructor in Baroda. COVID19 turned her life around, and she had the flexibility to adjust to it - maybe from all that yoga. It is of no doubt that this pandemic has been devastating and tragic. But the sociological impact of it has been fascinating, at least to the various facets of my life. As an employee, I was very happy at the ease in which I transitioned to work from home. (Consequently, not so happy with my year-long salary cut.) In general, work has been streamlined, and I get time to ideate in isolation - something that is so hard to do in a buzzing office environment. Pre-pandemic, I had to regularly go to my clients’ office halfway across town (which is a horror story if you consider Bangalore traffic) to explain ideas and campaigns, because of this misconceived notion that they have to see your passion in person to make them buy into your idea. Now, with proper visual aids in the form of presentations and references, it is as effective, if not more, to take them through it on a Microsoft Teams video call. Should we stop working from home once this pandemic goes away, or should we continue this way? For me, the answer lies somewhere in the middle.

www.batj.org

around. I certainly will miss the bustling puja pandals this year. And as a friend, this time has really helped a person like me (who is horrible at keeping in touch) to get close to past and present friends in a virtual capacity. If we don’t have work, we video chat. If we don’t video chat, we end up playing online ludo or UNO. If we’re tired of games, we catch something on Netflix and chat about it using the Netflix Party Plugin. I could go on and on, but the free time (mainly from not having to commute) has really helped strengthen these relationships. After all, if you get through a pandemic together, aren’t you friends for life? It’s hard to say when this pandemic will be well and truly behind us. But the fact that we’ve adjusted to it is a victory in itself. Hearty congratulations to all of you for that, and hope you and your families continue to stay safe! Happy Durga Puja.

Durga Puja 2020

13


Distance & COVID-19   - Purnima Ghosh The full moon in the night sky is beautiful from a distance; Mount Fuji at a distance, in the twilight, is splendid at a glance. From a distance, a flock of birds in the sky looks marvelous; From a distance, earth’s view in the bird’s eye is gorgeous. From a distance, the Supreme Being mingles with His creation; The boundless sky kisses the bounded earth at the horizon; He touches gently without touching, exists without dwelling; From a vast distance, He remains unknown but kind and caring. Distance makes many things, beautiful, awesome, and great. It helps discover love in relation, putting masks on odds and hate. Distance gives us tips realizing bonding and affiliation among us. Now, that distance keeps us safe, from the frightful coronavirus. But in the COVID Era, we are worried and running with fear, To me, every minute that we pass in this era, is a nightmare. Our loved ones afar make worried hearts heavy with weight; None knows when it will end and we will be free from this state. I pray that He keeps everyone healthy, no matter the distance. It seems, He is the only hope. I seek His grace and assistance.

14

Anjali

www.batj.org


2020 - लोचनी अस्थान

ह वर्ष आरम्भ होने से पूर्व नववर्ष शुभकामना संदश े ों में मिला एक संदश े मुझे रह रह कर याद आता है। किसी ने लिखा था – भगवान करे नववर्ष 19 पर 20 रहे.. कहने का अभिप्राय यह था कि 19 चाहे जैसा बीता हो लेकिन 20 उससे बेहतर रहे। पर ये क्या.. 20 का साल तो वाकई 19 पर बहुत भारी पड़ गया! पूरा विश्व यह वर्ष अभूतपूर्व संकट में गुज़ार रहा है। चीन के शहर वुहान से निकले कोरोना वायरस कोविड-19 ने देखते देखते महामारी का रूप लेकर समूचे विश्व को अपने शिकं जे में ले लिया और मौत एक आँकड़ा बन कर हमारी दिनचर्या का हिस्सा बन गई। दुनिया के सम्पन्न और विकसित देशों में ही सबसे पहले कोविड का कहर बरपा और सैंकड़ों लोग हर दिन मौत के आगोश में समाने लगे। चिकित्सीय, सामाजिक और आर्थिक ढाँचे चरमरा गये। न्युयॉर्क जैसे अग्रणी महानगर में मरीज़ों की बढ़ती तादाद ने तो सबके हाथ पैर फु ला दिये। आम लोगों में कहीं दहशत थी तो कहीं बेफिक्री भी नज़र आई। उन्हें प्रशासन की ओर से लगाई गयी बंदिशें तोड़ने में भी समझदारी दिखी। बहरहाल, इस कोविड संकट ने हमारी कमज़ोरियों और ताकतों को उजागर किया और हमारी कमियों को भी रे खाँकित किया है। हमें अपने गिरे बान में झाँक कर, नये सिरे से अपनी प्राथमिकताएं तय करने का भी अवसर दिया है। कोई भी संकट हमें अधिक मज़बूती से उठ खड़े होने की चुनौती ही तो देता है। अति आधुनिकता और बाज़ारवाद ने हमें जाने अनजाने जकड़ रखा है। हमारी जीवनशैली में पिछले 50 साल में जिस तेज़ी से परिवर्तन हुआ है उतना शायद पहले कभी न हुआ होगा। सुख और ऐश्वर्य की एक नई इबारत लिखी गई है। शहर कस्बों में कारों की भीड़, होटल, रे स्तराँ, पब जाना कोई बड़ी बात नहीं, आये दिन बाहर से पैक डिनर मंगवाना कब चुपके से शहरियों की ज़रूरतों में शुमार हो गया पता ही न चला। सप्ताहाँत पर कहीं भी घूम आना एयर बीएनबी ने कितना आसान कर दिया। उपभोक्तावाद इस कदर सर चढ़ कर बोलने लगा कि मान बैठे बस यही है ज़िन्दगी, कितनी खूबसूरत है ये ज़िन्दगी! लेकिन कोरोना ने आकर मानो हमें सोते से जगा दिया। झकझोर के बताया कि जिन छोटे छोटे सुखों को भूल गये हो वही असली ज़िन्दगी है। किस अन्धी दौड़ में हो, थोड़ा ठहरो, अपने भीतर झाँको.. घर में रहो, परिवार संग रहो और ज़िन्दगी जीने के तौर तरीकों पर फिर से विचार करो। बाज़ार-हाट बंद, पार्क स्टेडियम बंद, होटल रे स्तराँ बंद, सिनेमा जिम बंद, मॉल बंद... सब कु छ बंद लेकिन ज़िन्दगी फिर भी चली। कम संसाधनों में चली। घर में बने हल्के फु ल्के भोजन से चली। घर के सारे छोटे बड़े काम काज स्वयं किये तो बचत भी कितनी हुई। छोटी छोटी चीज़ों की बड़ी क़द्र करने लगे और उनकी भी अहमियत समझने लगे जिन पर कभी ध्यान नहीं जाता था। खिड़की से झाँकता पीपल का पेड़ और उसकी पत्तियों से छन कर आती सुबह की धूप कितनी आकर्षक लगती है, और ढलते सूरज का सिन्दूरी उजाला छज्जे के इस

www.batj.org

कोने तक आता है कभी जाना ही नहीं था! जीवन की आपाधापी में प्रकृ ति से दूर ही नहीं हुए, जाने अनजाने उसके साथ बदसलूकी करते रहे। मुझे याद है साठ सत्तर के दशक में जब हम स्कू ल जाते थे तो अपने साथ मिट्टी की बनी छोटी सी सुराही में पीने का पानी लेकर जाते थे। हमारे शहर में कोई स्कू ल बस नहीं होती थी। स्कू ल कॉलेज पैदल ही जाते थे। नौकरी में भी शुरू के कु छ वर्ष साइकिल से आना जाना रहा। धीरे धीरे समय बदला और सड़कों पर दिनों दिन बढ़ती वाहनों की भीड़ को हम समृद्धि का सूचक मानने लगे, सुराही के स्थान पर प्लास्टिक की रं गबिरं गी वॉटर बॉटल दिखाई देने लगीं, यूज़ एंड थ्रो, वन टाईम यूज़ जैसे सामान को अच्छे स्वास्थ्य की गारण्टी मान कर शहर में कचरे के पहाड़ खड़े कर लिये। देखते देखते घर दफ्तर के आसपास के तालाब गायब हुए और वहाँ ऊँची ऊँची इमारतें खड़ी हों गईं। खूबसूरत इमारतें देख मन हर्षाता कि शहर बदल रहा है, समृद्ध हो रहा है। जिन सड़कों से हो कर पैदल स्कू ल कॉलेज जाते थे उन्हीं पर अब ट्रैफिक से डर लगने लगा। पैदल चलने को रास्ता नहीं बचा। साइकिल की जगह स्कू टर, मोटरसाइकिल, सिटी बस ने ले ली थी। ये हाल तो मेरे छोटे से शहर का था। बड़े शहरों में आये बदलाव भी बड़े थे। कई कई मंज़िला इमारतें, इमारतों की विशाल खिड़कियों में जड़े बड़े बड़े काँच जो ताज़ा हवा के लिये भी कभी खुलते नहीं थे क्योंकि हर खिड़की पर एक अदद एयरकं डीनर भी तो जड़ा रहता है। बाहर कितनी भी गर्मी क्यों न हो, अन्दर हर दम ठं डक बरकरार रहती। सुख सुविधा और ऐश्वर्यपूर्ण जीवन में खलल डालने ये मुआ कोविड-19 आ गया। विशेषज्ञों ने आगाह कर दिया है कि वातानुकूलित बंद स्थानों पर इसके तेज़ी से फै लने की आशंका है, सो सिनेमाघर, जिम, थियेटर आदि बंद और जो के न्द्रीकृ त वातानुकूलित दफ्तर बंद करना संभव नहीं वहाँ कार्मिकों की संख्या घटानी पड़ी। धरती करवट ले रही है या कम्प्युटर की भाषा में कहें तो रीबूट हो रही है। इं सान ने अपना जीवन सुखमय करने के लिये पिछले 50-60 बरस में जो मेहनत की, शायद धरती को वह रास नहीं आ रही। संकेत तो कई बरस से दे रही थी लेकिन हम ही अनदेखी करते रहे। सो अब वैश्विक महामारी ने आकर हमारी तंद्रा भंग की और झकझोर के जताया है कि हम बहुत ज्यादती कर चुके हैं धरती मैया के साथ। अब और सहन नहीं करे गी। पर्यावरण को हम इस कदर असंतुलित कर चुके हैं कि ऋतुचक्र बौरा गये हैं। गर्मी साल दर साल नये कीर्तिमान दर्ज करती है। तूफान, बाढ़, हिमस्खलन, पहाड़ों का दरकना तो जैसे रोज़मर्रा की ज़िन्दगी का हिस्सा बनता जा रहा है। हमें नये सिरे से अपनी जीवनशैली पर गम्भीरता से विचार करके , अपनी आवश्यकताओं और आकांक्षाओं के बीच संतुलन साधना ही होगा। महामारी से पैदा समस्याओं का निदान और उपाय भले ही सरकारों और वैज्ञानिकों को तलाशने हों लेकिन हम अपने स्तर पर एक ज़िम्मेदार नागरिक के तौर पर जो कु छ कर सकते हैं उससे हमें नज़र नहीं चुरानी चाहिए तभी हम राष्ट्र और मानवता के प्रति अपना कर्तव्यनिर्वहन एक उत्तरदायी नागरिक के रूप में कर सकें गे। 

Durga Puja 2020

15


ক্ষুদ্‌দার মনে হচ্ছে “বন্যেরা বনে সু ন্দর” আজ অপ্রাসঙ্গিক

২০১৯ সালে ক্ষু দ্‌দা ও রমলা ব�ৌদিকে ৬ মাসের জন্য জাপানে যেতে হয়েছিল। বছরের শেষ দিকে তারা দেশে ফিরলেন। দেশে ফেরার কিছু দিন পরে, মানে ২০২০ সালের গ�োড়ার দিকে শ�োনা গেল সারা বিশ্ব কর�োনাভাইরাস নিয়ে চিন্তিত, আতংকিত। কর�োনা ভাইরাসের উৎপত্তি নাকি চিনদেশের উহান প্রদেশের বাদু রের মাংস ভক্ষণে। হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। উৎপত্তি যেখানেই হ�োক, ব্যুৎপত্তি নিয়ে সারা বিশ্ব চঞ্চল। নিরাময়ের উপায় নিয়ে সারা বিশ্বে আল�োচনার পর আল�োচনা চলছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “ফুরায়ে গেল ঊনিশ পিপে নস্য”, কিন্তু তাতেও কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ক্ষু দ্‌দা ব�ৌদিকে ব�োঝালেন, এই অতিমারীর প্রধান হির�ো কর�োনা নাকি ডাকনাম, আদরের নাম, যেমন করুণা, আলপনা, ময়না, স�োনা, রূপা, জুঁই, টগর ইত্যাদি। নামগুল�ো শুনলে মনে হয় যেন কত কাছের। রমলা খুবই কাছের ছিল, কিন্তু এখন কি খুব একটা কাছের? কিন্তু এই কর�োনা যখন দেশ-বিদেশে মিটিং করতে যায়, ডাবলিউ এইচ ও’র থেকে সমীহ আদায় করে এবং অবশ্যই চ�োখ রাঙ্গায়, তখন বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশ, অনু ন্নত দেশ, উন্নতিকামী দেশ, রাজার দেশ, প্রজার দেশ, ধনতন্ত্র, গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ---সব দেশের কাছে কর�োনার একটাই নাম “নভেল ক�োভিড নাইন্টিন” এ যেন আমাদের ভ�োলা মহেশ্বরের মত। শ্মশানে ছাই মেখে বাঘছাল পরে নন্দী ভৃঙ্গী নামে দু ই চামচার সাহায্যে গঞ্জিকা সেবন করে স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের বছরে একবার কৈলাশ থেকে বেরিয়ে মর্তে যাওয়ার পারমিশান দেওয়ার মধ্যে ভ�োলা ভালা শিবের ছবি ফুটে ওঠে এবং সেইজন্য কিনা জানা নেই যে শিবরাত্রিতে কুমারী মেয়েরা শিবের মাথায় জল ঢেলে প্রার্থনা করে যে ওই রকম একটা বর চাই যে বিয়ের পরে বাপের বাড়ি যেতে দিতে আপত্তি করবে না (ক্ষু দ্‌দাও আপত্তি করেন না), সংসারে বাজে খরচের ব্যাপারে মাথা গলাবে না, লজ্জা নিবারণের জন্য ন্যুনতম প�োশাক পরে পার্টিতে গেলেও আপত্তি করবে না। তবে বাঘছাল পরিহিত হাজব্যান্ডকে নিয়ে নিউইয়র্ক, র�োপ্পঙ্গি বা পার্কস্ট্রীটে পার্টি করা যায় কিনা সেটা কিন্তু জানা যাচ্ছে না, মিডিয়াও চেপে গেছে। কিন্তু শিবেরই আরেকটি নাম নটরাজ যিনি স্বর্গ মর্ত পাতাল লণ্ড ভণ্ড করে দিয়েছিলেন। এই নভেল ক�োভিড নাইন্টিনও মর্তকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। স্বর্গ আর পাতালের খবর জানা নেই, কারণ ওখান থেকে এখনও ক�োন�ো এস ও এস, এস এম এস বা টুইট আসেনি। প্রেরক ও গ্রাহক দু পক্ষই ত�ো আইস�োলেশনে অন্তরীণ। তার মানে ভ�োলা মহেশ্বর ও নটরাজ এবং কর�োনা ও নভেল ক�োভিড নাইন্টিন একই মুদ্রার দু পিঠ। ক্ষু দ্‌দাও রমলা ব�ৌদির দু ট�ো রূপ প্রায়ই দেখেন। কর�োনা এবং তা থেকে উদ্ভুত লকডাউন মর্তকে লণ্ডভণ্ড করেছে ত�ো বটেই, তার আগ্রাসী হিংস্র থাবায় সাহিত্যও ক্ষতবিক্ষত। সাহিত্যিক সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পালাম�ৌ গ্রন্থের বিখ্যাত উক্তি “বন্যেরা বনে সু ন্দর, শিশুরা মাতৃ ক্রোড়ে” কর�োনা এবং লকডাউনের অত্যাচারে পদদলিত হয়ে অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়�োজনীয় এবং অতীত হয়ে গেছে। দিনের শুরুতে দেখা যায় একটি সদ্য ঘুম থেকে ওঠা শিশুকে তার মা নিকটবর্তী কিন্ডারগার্টেন স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে সন্তানকে উচ্চ মেধাবী করার প্রয়াসে। কর�োনার ভয়ে ওই স্কুলের গেটে তালা ঝ�োলান�ো হয়েছে। স্কুলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে শিশুদের খেলার জায়গার দখল নিয়েছে চড়াই, শালিক এবং বড় বড় আগাছা। আগাছা পরিষ্কার করার জন্য যিনি ছিলেন তিনি এখন দ্বারভাঙ্গা জেলার একটি গ্রামে পরিবারের সঙ্গে কর্মসংস্থানের পরবর্তী উপায় নিয়ে আল�োচনায় মগ্ন। ক্ষু দ্‌দা ব�ৌদিকে ব�োঝালেন, প্রকৃতি দেবীই সব কিছু র জন্য আলাদা আলাদা স্থান নির্বাচন করেছেন এবং তাদের স�ৌন্দর্য সেখানেই। পশু পাখিদের স�ৌন্দর্য বনে জঙ্গলে, চিড়িয়াখানায় নয়। সকালে শিশুদের স�ৌন্দর্য নির্ধারিত হয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে টুইংকিল টুইংকিল লিটল্‌স্টার আবৃ ত্তির ঐকতানের মধ্যে, বাড়িতে নয়। সব শিশুই এখন বাড়িতে বন্দী। ব�ৌদি বললেন, 16

- অনু পম গু

ভাগ্যিস তাদের নাতি-নাতনীরা এই স্টেজ পেরিয়ে গেছে। কিন্ডারগার্টেন বন্ধ ত�ো কি হয়েছে, ঠাকুরমা’র কাছে “কাকাতুয়ার মাথায় ঝুঁটি” শিখতে পারত। কিন্তু ওই ঠাকুরমারা হয় আকাশের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট, নতুবা ওল্ড এজ হ�োমের বাসিন্দা। ফ�োনেটিক সিস্টেমে বানান শেখান�োর আন্টিরা এখন হ�োম আইস�োলেশনে বন্দী। মাঝের গ্রুপটার নাম দশটা পাঁচটার বাবু । সকালে খবরের কাগজে ম�োদী মমতার ঝগড়ার খবর না পড়ে বাজারে গিয়ে নিজের হাতে বেছে নেওয়া টাটকা মাছ এনে স্ত্রী’কে দেবেন যাতে ঐ মাছের ঝ�োল ভাত খেয়ে সাড়ে ন’টা / দশটায় অফিসে হাজিরা দিয়ে বিকেল পাঁচটা/ ছ’টায় অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন। কর�োনার লকডাউনে সব গ�োল্লায় চলে গিয়ে এল�ো ডাবলিউ, এফ, এইচ অর্থাৎ ওয়ার্ক ফ্রম হ�োম। অফিসে যেতে হবে না, বাড়িতে বসেই অফিসের কাজ করতে হবে। ব�ৌদি বললেন, “ওমা! এ আবার হয় নাকি? ট্রাম, বাস, ট্যাক্সি, উবের, মেট্রোর কি হবে”? ক্ষু দ্‌দা বললেন, লকডাউনে সবই বন্ধ ছিল। সামান্য পরিমাণে হলেও এখন একটু একটু চালু হচ্ছে। তবে বাসে বাদু র ঝ�োলা ভিড় আর বাদু রের মাংস ভক্ষণ, এখন দু ট�োই অন্তর্হিত। তার মানে বাড়ির গিন্নীর স্বামী সব সময় বাড়িতেই থাকছেন। ওমা, তাহলে পাশের আবাসনের রায় গিন্নীর স্বামী সব সময় বাড়িতেই থাকছেন। রায় গিন্নীর সঙ্গে দ্বিপ্রাহরিক পরনিন্দা পরচর্চা, যেটা মহিলাদের প্রিয় বিষয়, তার কি হবে? ওই একই আবাসনের দশ তলার আবাসিক গভর্নমেন্ট অফিসার শৈল সেনের পিছনে যে ভিজিলেন্স লেগেছে, সেটা কতদূ র গড়াল�ো, জানার ত�ো দরকার। অফিসে মাঝেমধ্যে একঘেয়েমী কাটান�োর জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে একটু গল্পও করা যায়। এখানে সেই সু য�োগ নেই। বাস ভাড়া বা ট্যাক্সির খরচ যখন লাগছে না, তখন সেই টাকা দিয়ে বড় ফ্লাস্ক কিনে সারা দিনের মত চা বা কফি ভর্তি করে কর্তার অফিস ঘরে দিয়ে আসতে হয়। আবার ওয়ার্ক ফ্রম হ�োমে অন্য সমস্যাও আছে। গুরগাঁও থেকে সদ্য বিবাহিত আই,বি,এম কর্মী বিকাশ মেহতা তার সদ্য পরিণীতা বধূ সাক্‌সেনাকে ক�োলকাতায় নিয়ে এসেছেন যিনি নিজেও একজন আই,টি ইঞ্জিনিয়ার এবং একই অফিসে কর্মরত। এদের দিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হ�োম করান�ো যেতেই পারে, কিন্তু সেই ওয়ার্ক কি সব সময় নির্ভুল হবে? এই ভুলের জন্য প্রকৃতি দেবী ও লকডাউনই দায়ী। দাদা হেসে ব�ৌদিকে বললেন, “মধু চন্দ্রিমাতে নির্ভুল ওয়ার্ক নিশ্চয়ই আশা করা উচিত নয়”। এদের মাঝে আরেকটি গ্রুপ আছে। কবিশেখর কালিদাস রায়ের লেখা ‘ছাত্রধারা’ কবিতায় কবি লিখেছেন, “বর্ষে বর্ষে দলে দলে আসে, বিদ্যামঠ তলে, চলে যায় তারা কলরবে কৈশ�োরের কিশলয় পর্ণে পরিণত হয় য�ৌবনের শ্যামল গ�ৌরবে”। আগেকার দিনে ট�োলে পণ্ডিতমশাই পড়াতেন। পাঠশালায় পড়াতেন গুরুমশাই। সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমাতে আমরা দেখেছি মাস্টারমশাইদের স্নেহ ও শাসনে লালিত পালিত হয় ছাত্রছাত্রীরা। বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রস্ফুটিত হয়। স্কুলে ছু টির ঘন্টা বাজার সময় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেখা যেত এক সাময়িক মুক্তির আনন্দ। শান্তিনিকেতনের পঠন পাঠন একটু অন্যরকম হলেও মূ ল ধারা একই। কিন্তু লকডাউন এবং কর�োনা ভাইরাসের প্রভাবে সব রীতিনীতি পাল্টে গিয়ে চলে এল�ো অনলাইনে পড়া ও পড়ান�ো। ছাত্রছাত্রীদের দরকার ল্যাপটপ, ট্যাব বা স্মার্টফ�োন। উর্ধাঙ্গে স্কুলের ইউনিফর্ম, নিম্নাঙ্গে বাড়ির প�োশাক। পরীক্ষার পদ্ধতিও অভিনব। শুধু টিক্‌ দাও। রচনা লেখার ব্যাপার নেই। খুব কমন রচনা ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ’ বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের আর লিখতে হবেনা। “প্রথম পানিপথের যু দ্ধ” অনলাইনে অপ্রয়�োজনীয়। স্কুলের ছেলেমেয়েদের বাড়ি থেকে স্কুলে নিয়ে আসা এবং বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক পুল কারের আবির্ভাব হয়েছিল। তারা এখন কর্মহীন হয়ে বর্তমানে প�োলট্রি ডিমের

Anjali

www.batj.org


ক্ষুদ্‌দার মনে হচ্ছে “বন্যেরা বনে সু ন্দর”

হ�োম ডেলিভারির ব্যবসায়ী। টিফিনের সময় স্কুলের গেটের পাশে হজমী বা বনকুলের আচার বিক্রি হত। বিক্রেতা এখন বিহারের ছাপরা জেলায় একশ�ো দিনের কাজের প্রকল্পে মাটি কাটছে। শৈশবে সবাইকেই পড়তে হয়েছে --“ধ�োপা কেমন কাপড় কাচে নাপিত ভায়া দাড়ি চাঁছে”। কর�োনা এবং লকডাউনের জন্য এই দু ট�ো লাইন এখন অপ্রাসঙ্গিক। ক�োনও শহরে এখন পুকুর নেই। কাপড় কাচার জন্য ধ�োপারা এখন মফঃস্বলে পুকুরের কাছে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রেন চলছেনা। ধ�োপারা সেখান থেকে কাচা এবং ইস্ত্রি করা কাপড় আনবে কি করে? তাছাড়া ইস্ত্রি করা জামাকাপড়ের দরকারটাই বা কি? কেউ অফিসে যাচ্ছেনা, স্কু ল কলেজও বন্ধ। সিনেমা থিয়েটারের গেটে তালা ঝুলছে। বার, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল কবে খুলবে কেউ জানেনা। লাইফ পার্টনার নির্বাচন করার জন্য যারা লেকের বেঞ্চিতে বসত, তারা তাদের অভিভাবকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে পারলেও পুলিশকে এড়াতে পারছেনা। তাহলে ইস্ত্রি করা জামা কাপড়ের এখন কি দরকার? ওরা এখন আলমারিতে ন্যাপ্‌থেলিনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আছে। আর যে জামা কাপড়গুল�ো ধ�োপাকে কাচতে দেওয়া হয়েছিল সেগুল�ো হয়ত�ো ধ�োপার পরিবারের সকলে এখন নিজেরাই পরছে। ধ�োপারা এখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে হয়ত�ো পুকুরের পাড়ে কলমী শাকের চাষ করছে। আজকাল ইয়ং ছেলেরা দাড়ি চাঁছেনা, রাখে। দেশের বর্তমান ক্রিকেট ক্যাপটেন বিরাট ক�োহলি এবং তার সতীর্থরা দাড়ি কাটেনা, রাখে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও দাড়ি চাঁছেনা, রাখে। চুল কাটার সময় কি সামাজিক দূ রত্ব বজায় রাখা যায়? অতএব সেলু ন বন্ধ। নাপিত ভায়ারা এখন কর্মহীন। তাদের উপার্জনের পরবর্তী প্ল্যান ভ্রাম্যমান সব্জি বিক্রেতা হওয়া। দু দিন আগেও একটা ছেলে লেকে বা প্রিন্সেপ ঘাটে বা নন্দন চত্বরে তার বান্ধবীকে রাবীন্দ্রিক স্টাইলে বলেছিল --সব পথ এসে মিলে গেল শেষে ত�োমার দু খানি নয়নে নয়নে নয়নে ---কিন্তু এখন তাদের পথ নয়নে না মিলে বেরসিক পুলিশের কেস ডায়রীতে মিশছে --- একটু মেলামেশা দেখলেই জামিনয�োগ্য অপরাধের কেস দিয়ে দিচ্ছে। “আমি ত�োমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ”, কিম্বা “আন�ো নব পল্লবে নর্তন উল্লোল, অশ�োকের শাখা ঘেরি বল্লরীবন্ধন”, এই গানগুল�ো দু ’জনে বসে গঙ্গার পাড়ে গাইতে হলে ছয় গজ দূ রত্বে বসে মুখে মাস্ক পরে গাইতে হবে। তার থেকে ঘরে বসে ইউটিউবে মাইকেল জ্যাকসনের গান শ�োনা অনেক ভাল। রমলা ব�ৌদি ক্ষু দ্‌দাকে বললেন, মনে নেই, কত ঝড়জলের মধ্যেও আহিড়ীট�োলার গঙ্গার ঘাটে আমার সঙ্গে দেখা করতে তুমি আসতে। পাড়ার ল�োকেরা ত�োমার উদ্দেশে সু কুমার রায়ের ভাষায় বলত�ো ---

www.batj.org

“লাখ�োবার যায় যদি সে যাওয়া তাঁর ঠেকায় কিসে”। সত্যিই ছেলেমেয়েদের ক�োনভাবেই আটকান�ো যায়নি, দেখা সাক্ষাত তাদের হ�োতই। কিন্তু এখন লকডাউনের জন্য তাদের দেখা সাক্ষাত নেই। কর�োনা এবং লকডাউনের জন্য ওইসব ডায়ালগ এখন অতীত। একটু এদিক ওদিক হলেই হয় চ�োদ্দ দিনের ক�োয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, নয়ত�ো ভাল উকিলের সাহায্যে থানা থেকে জামিন নিয়ে বের�োতে হবে। মর্তের কথা বাদ দিলেও কৈলাশের দেবতারাও এখন নিজগৃ হে বন্দী। কেউ ডাকছেনা, তাঁদের পুজ�ো বন্ধ। ৯ই মার্চ দ�োল উৎসব খুব জ�োর বেঁচে গেছে। কিন্তু নীলের পুজ�ো, অন্নপূর্ণা পুজ�ো, হালখাতা পুজ�ো, বাসন্তী পুজ�ো, মনসা পুজ�ো, শ্রীকৃষ্ণের হ্যাপি বার্থ ডে পুজ�ো, সব নষ্ট। নামীদামী দেবতারাই যেখানে অসহায়, সেখানে রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল সন্ধ্যা নিয়ে কেই বা অনু ষ্ঠান করবে? বিশ্বকর্মার কেসটা একটু আলাদা। কারখানা এবং ইলেক্ট্রিশিয়ানদের দ�োকান খুললে এবং রিক্‌সা চালু হলেই বিশ্বকর্মা পুজ�ো হওয়ার কথা। সবথকে বেশি টেনশনে আছেন গণপতি পাপ্পা, মানে গণেশ ঠাকুর এবং পুর�ো সন্তান সন্ততি সহ দেবী দু র্গা। কৈলাশ থেকে ইস্যু করা পাসপ�োর্ট ওনাদের থাকলেও, মর্তের ভিসা পাওয়া যাবে কিনা ব�োঝা যাচ্ছে না। মনে হয় শেষ মুহূর্তে ভিসা স্যাংশন হয়ে যাবে। হলেও পুর�ো আয় ব্যয় হবে সীমিত। ওই সামান্য আয় দিয়ে কৈলাশের মতন জায়গায় দেবতাদের একটা বছর চালান�ো খুবই কষ্টকর। সাহিত্যিক বা শিক্ষাবিদ্‌দের উক্তি, প্রবাদবাক্য, ছড়া, গানের বা কবিতার কথা এখন কর�োনা ও লকডাউনের জন্য অপ্রাসঙ্গিক, অর্থহীন, অবান্তর হয়ে গেছে। কর�োনা নিজস্ব অরবিটে ঘুরছে। সে ঘুরছে ঘুরুক। দম ফুরিয়ে গেলেই অরবিট থেকে ছিটকে বেরিয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু যাওয়ার আগে লকডাউনের অবস্থানকালে আমাদের চির পরিচিত প্রবাদ বাক্য “বন্যেরা বনে সু ন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে” অপ্রাসঙ্গিক হয়ে অতীতের ঘরে মিশরের মমি হয়ে যেতে পারে। ক্ষু দ্‌দা বললেন, “তারা মমি, মামা, মামি যাই হ�োক না কেন, আমাদের কিছু বলার নেই। শুধু একটা কথাই বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে বঙ্গ ভাণ্ডারের অপূ রণীয় ক্ষতি”। রমলা ব�ৌদি যেমন ক্ষু দ্‌দার ওপর রাগ হলে আহিড়ীট�োলায় বাপের বাড়িতে চলে যান এবং নিজের রাখা মূ লধন ফুরিয়ে গেলেই আবার ক্ষু দ্‌দার কাছে চলে আসেন। বঙ্গ ভাণ্ডারের প্রয়�োজনে প্রবাদ বাক্যরা কি আবার প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাবে? রমলা ব�ৌদি ক্ষু দ্‌দাকে হাসিমুখে বললেন, “আমি যদি ত�োমার কাছে ফিরে আসতে পারি, সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বন্যেরা বনেই’ তাদের স�ৌন্দর্য ফিরে পাবে। এই লকডাউনের দিনে ইউটিউবে একটা গান ভেসে আসছে, নাই নাই ভয় হবে হবে জয় খুলে যাবে এই দ্বার --

Durga Puja 2020

17


করুণাময়ী করোনা

- শান্তনু চক্

ক্ষুদ্র সে এক পরজীবী, নাড়িয়ে দিল�ো বিশ্বটাকে! সবাই ঘরের ভেতর সেঁধ�োয়, বিবমিষার করুণ ডাকে !! ঘটল�ো ব্যাঘাত জীবন ছন্দে, ভাবের ঘরে শুধু ই ভীতি, সমাজ সংজ্ঞা বদলে গিয়ে,, দূ রত্ত্ব আজ নতুন রীতি !!

গরিব গুর্বোর প্রাণ যাই যাই, দু ই দানবের আস্ফালনে, করুণাহীন কর�োনা আর, জঠরজ্বালা’র নিষ্পেষণে !!

হাঁচি, কাশি, স্পর্শ নিষেধ মুখাবরণ হল�ো নিদান অ্যালক�োহল আজ ভদ্র হল�ো স্যানিটাইজার তার পরিধান

জীবনদেব এর এই কেলাসে ভয় ও দ্বেষ এর উপস্থিতি, অরাজক এই বিদ্যালয়ে, মানবতার নেই যে স্থিতি !!

বলছে সবাই "সাহস রাখ�ো, দু র্বল এই নতুন জূ জূ, এই সময়ে বাঁচতে হলে, হতেই হবে ত�োমায় ঋজু !"

অন্তর্যামী মুচকি হেসে, কর�োনা কে দেন বাহবা! তাহার কর্মফলে নাকি, পরিস্রুত বিশ্বসভা !!

বিশ্বজ�োড়া এ দু র্যোগে, অসাধু জন এই সু য�োগে ঝ�োপ বুঝে ক�োপ, দারুন মারে, ভরায় জীবন অর্থয�োগে!

নতুন করে ডাকছে পাখি, বাতাসেতে নু তন প্রাণ, সাগর নদী হাস্যময়ী, শ�োন�ো ভাল�ো লাগার গান !!

রাজনীতি! সে এক কাহিনী ! প্রজাসেবা’র ভড়ং ধরে, নিজ আখের গুছিয়ে নিয়ে, নিজ,নিজ ভাঁড়ার ভরে !!

মানব ভিন্ন অন্য প্রাণী, আনন্দেতে ডগমগ, বৃ দ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে কহে, “বন্দি মানব, তুমি ভ�োগ�ো!" ঈশ্বর আজ কহেন ডাকি, “ওরে মানব, জাগ ত�োরা, প্রকৃতি কে নমন করে আমার কাছে দে ধরা!"

18

Anjali

www.batj.org


অতিমারী

- অরুণ গ

যমের ডাকে কর�োনা আসে দাঁড়ায় করজ�োড়ে যম হেসে কয় এত শক্তি ধরলি কেমন করে? ত�োর ছ�োবলে মরছে মানু ষ বিশ্বজুড়ে হাহাকার মরছে মানু ষ নির্বিশেষে সবাই একাকার। বেঁচে ফিরছে ঘরে যারা অর্ধমৃত সবাই তারা হাসপাতালে নিয়েছে শুষে তবেই তারা, পেয়েছে ছাড়া। ত�োর কাজেতে বেজায় খুশি য�োগ্য সহকারী বিশ্বময় ছড়িয়ে দিলি র�োগটা অতিমারী। কিন্ত পাচ্ছি ভয় মনে মনে আসছে নাকি ভ্যাকসিন তাতেই নাকি বাঁচবে মানু ষ (আর) পঞ্চভূতে তুই বিলীন।।

www.batj.org

Durga Puja 2020

19


গানের ভিতর দিয়ে দেখি ভুবন খানি

- স্বামী দিব্যনাথ

ঙ্গীত আমাদের মনের ভাব প্রকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম। ভক্তিমার্গের অনেক সাধক সঙ্গীতকে ভগবানের প্রতি ভাব প্রকাশের অন্যতম পন্থা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। মীরাবাঈ, নানক, সু রদাস, রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত প্রভৃতি উচ্চমার্গের সাধক-সাধিকা গানের মধ্যে দিয়ে তাঁদের অন্তরের আর্তি ও ব্যাকুলতা প্রকাশ করতেন।

রবীন্দ্রনাথের গান, বিশেষ করে পূ জা পর্যায়ের গানও বাংলা সাহিত্য তথা বাংলাদেশের ভক্তির ধারাকে সমৃ দ্ধ করেছে। সে সব গান ভাষার গভীরতায় ও সু রের মাধু র্যের গুণে আমাদের মনকে সহজে ঈশ্বরাভিমুখী করে ত�োলে। আমরা অনু মান করতে পারি, কত সাধক এ সব গানের মধ্যে প্রার্থনার ভাষা খুঁজে পেয়েছেন। তাই, ঠিক যেমন শ্রবনেন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির উপায় হিসাবে সঙ্গীতকে ব্যবহার করা যেতে পারে, তেমনি, ভাব�োদ্দীপক সঙ্গীত আমাদের মনকে উচ্চ ভাবে রাঙ্গিয়ে জন্ম মরণের বন্ধন শিথিল করতে সাহায্য করে। কবিগুরুর ভাষায় গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে রুদ্ধবাণীর অন্ধকারে কাঁদন জেগে উঠে ॥ বিশ্বকবির চিত্তমাঝে ভুবনবীণা যেথায় বাজে জীবন ত�োমার সু রের ধারায় পড়ুক সেথায় লু টে ॥ ছন্দ ত�োমার ভেঙে গিয়ে দ্বন্দ্ব বাধায় প্রাণে, অন্তরে আর বাহিরে তাই তান মেলে না তানে। সু রহারা প্রাণ বিষম বাধা-- সেই ত�ো আঁধি, সেই ত�ো ধাঁধা-গান-ভ�োলা তুই গান ফিরে নে, যাক সে আপদ ছু টে ॥ আমাদের এই জীবনের চলার পথে নানা মানু ষ নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে এগিয়ে যান। সু খ-দু ঃখ যদিও কম বেশি সকলের জীবনেই আসে, তবু কার�োর জীবনে দু ঃখকষ্ট যেন জন্ম থেকেই ছায়ার মত নিত্যসঙ্গী। কার�োর শারীরিক অক্ষমতা, কেউ দারিদ্র্যে ক্লিষ্ট, কেউ বা পাপ-ব�োধে জর্জরিত। আবার সু খের অভাব না থাকলেও মানসিক অশান্তি ও অতৃপ্তি পেয়ে বসে অনেককে। অধিকাংশ মানু ষই এর বাইরে ক�োনও আশার আল�ো দেখতে পান না, তাই জীবনের একমাত্র সম্বল হয়, দীর্ঘ নিঃশ্বাস। কিন্তু ক�োন ক�োন ভাগ্যবান, অনাথশরণ ভগবানকে ডাকেন আকুল হয়ে, যিনি ভক্তকে এই সু খ-দু ঃখ পূর্ণ সংসারের পারে নিয়ে যেতে পারেন। তার�ো তার�ো, হরি, দীনজনে। ডাক�ো ত�োমার পথে, করুণাময়, পূ জনসাধনহীন জনে॥ অকূল সাগরে না হেরি ত্রাণ, পাপে তাপে জীর্ণ এ প্রাণ– মরণমাঝারে শরণ দাও হে, রাখ�ো এ দু র্বল ক্ষীণজনে॥ আমাদের চার পাশের যে সব জিনিষ কে অবলম্বন করে সাধারনতঃ আমরা চলি, যেমন আত্মীয় পরিজন, বন্ধু -বান্ধব, নিজেদের সংসার, টাকাপয়সা, সমাজ, ইত্যাদি, যদিও সেসব আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়, তবু অনেকের জীবনেই পরিণত বয়সে একটি অতৃপ্তি যেন পেয়ে বসে। এসবে তারা পরিপূর্ণ আনন্দ পান না। তখন তারা নিজ অন্তরে খ�োঁজেন তৃপ্তি। শাস্ত্র ও মহাপুরুষেরা বলেন, ইন্দ্রিয় সু খে মানু ষ যখন আর তৃপ্তি পায় না, যখন মানু ষ ইন্দ্রিয়াতীত কিছু র অন্বেষন করে, ধর্ম জীবন তখন শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই সত্যটি তাদের কাছে উন্মোচিত হয়, যে তিনিই একমাত্র প্রেমাস্পদ, এই ক্ষণভঙ্গুর অনিত্য সংসারে নিত্য বস্তু একমাত্র তিনি। তাঁর চেয়ে প্রিয়, আপনার আর কেউ নেই। সু খ-শান্তি-সম্পদঐশ্বর্য ও তিনি। এই অনু ভব হলে তিনি ভগবানের দিকে তাকিয়ে বলতে পারেনঃ প্রভু আমার, প্রিয় আমার পরম ধন হে। চিরপথের সঙ্গী আমার চিরজীবন হে ॥ তৃপ্তি আমার, অতৃপ্তি ম�োর, মুক্তি আমার, বন্ধনড�োর, দু ঃখসু খের চরম আমার জীবন মরণ হে॥ আমাদের শাস্ত্র বলেন, আমরা প্রত্যেকেই সচ্চিদানন্দ-স্বরূপ। অনন্ত জ্ঞান, অসীম আনন্দের খনি রয়েছে আমাদের অন্তরে। তাহলে বাইরের জগতে আমরা আনন্দ খুঁজি কেন? কেননা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি এমন ভাবে তৈরি, যে তারা বাইরের শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধ এই পাঁচটি বিষয়ের দিকে ক্রমাগত ছু টছে। ক�োন ক�োন ভাগ্যবান, অমৃ তত্ব লাভ করার জন্য মনকে অন্তর্মুখী করার জন্য সচেষ্ট হন। আমাদের অন্তরের ভেতর থেকে তিনি আমাদের ডাকছেন, কিন্তু তা বু ঝতে না পেরে আমরা বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি, বাইরের আপাত মন�োহর সু খের অন্বেষণে। কিন্তু তৃপ্তি পাই কি? কিসের দিকে ছু টে চলি, বু ঝতে পারি না। ফিরি আমি উদাস প্রাণে, তাকাই সবার মুখের পানে, ত�োমার মত�ো এমন টানে কেউ ত�ো টানে না॥ আকাশে কার ব্যাকুলতা, বাতাস বহে কার বারতা, এ পথে সেই গ�োপন কথা কেউ ত�ো আনে না॥ ভগবান আমাদের একমাত্র প্রেমাস্পদ। তিনি আমাদের সবচেয়ে ভালবাসার ধন। কিন্তু আমাদের মন স্বভাবতঃ বহির্মুখ বলে তাঁর দিকে আকর্ষণ হয় না। আমাদের এই দেহ-মন-চিত্ত-অহঙ্কার কে ঘিরে যে ছ�োট ‘আমি’ সেই ‘আমি’ কে ঘিরে কত আকাঙ্খা, কত চাহিদা। আমরা দেহ ও মনের নানা সু খ চাই, মান চাই, ভালবাসা চাই, তাই কখনও অন্তরের গভীরে সেই অসীমের আহ্বান এলেও, এই ছ�োট ‘আমি’কে ছেড়ে, তাঁর ডাকে সাড়া দিতে পারি না। আমরা অনেকেই ভগবান বিশ্বাস করি, মন্দিরে-তীর্থে যাই, পুজার্চনা করি, কিন্তু নিজের সু খ-দু ঃখের এই জগত ছেড়ে কিছু তেই বেরিয়ে আসতে পারি না। 20

Anjali

www.batj.org


গানের ভিতর দিয়ে দেখি ভুবন খানি

জানি হে তুমি মম জীবনে শ্রেয়তম, এমন ধন আর নাহি যে ত�োমা-সম, তবু যা ভাঙাচ�োরা ঘরেতে আছে প�োরা ফেলিয়া দিতে পারি না যে।

ত�োমারে আবরিয়া ধু লাতে ঢাকে হিয়া মরণ আনে রাশি রাশি, আমি যে প্রাণ ভরি তাদের ঘৃ ণা করি তবু ও তাই ভাল�োবাসি।

আমাদের দৈন্য, অক্ষমতা, দু র্বলতার সঙ্গে লড়াই করে আমরা যখন ম্রিয়মান হয়ে পড়ি, তখন আমাদের ভিতর জেগে ওঠে প্রার্থনার আকাঙ্ক্ষা। সেজন্য যু গ যু গ ধরে সাধকেরা প্রার্থনা করে আসছেন - অসত�ো মা সাদ্গময়, তমস�ো মা জ্যোতির্গময়, মৃ ত্যোর্মা আমৃ তম্ গময়। রবীন্দ্রনাথের গানেও আমরা একই ভাব পাই। ভয় হতে তব অভয়মাঝে নূতন জনম দাও হে ।। দীনতা হতে অক্ষয় ধনে, সংশয় হতে সত্যসদনে, জড়তা হতে নবীন জীবনে নূতন জনম দাও হে ।। আমার ইচ্ছা হইতে, প্রভু, ত�োমার ইচ্ছামাঝেআমার স্বার্থ হইতে, প্রভু, তব মঙ্গলকাজেঅনেক হইতে একের ড�োরে, সু খদু খ হতে শান্তিক্রোড়েআমা হতে, নাথ, ত�োমাতে ম�োরে নূতন জনম দাও হে ।। সাধক যত সাধনার উচ্চ শিখরে আর�োহন করে চলেন, তাঁর আরাধিত ভগবানের সঙ্গে ভাব যত গাঢ় হতে থাকে, তত নিজেকে আরও বেশী সমর্পণ করতে চান তাঁর চরণে। তখন দু ঃখের নিবৃ ত্তির জন্য বা কষ্ট লাঘব করার জন্য তিনি তাঁর কাছে প্রার্থনা জানান না, তাঁরই ইচ্ছায় নিজের ক্ষুদ্র জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চান। সাধকের দৃ ঢ় ধারনা হতে থাকে, যিনি মঙ্গলময়, তাঁর দ্বারা কখনও অমঙ্গল হতে পারে না। তখন তাঁর ঈশ্বর আরাধনায় আত্মসমর্পণের ভাব জাগে আমারে তুমি করিবে ত্রাণ এ নহে ম�োর প্রার্থনা-তরিতে পারি শকতি যেন রয়। আমার ভার লাঘব করি নাই-বা দিলে সান্ত্বনা, বহিতে পারি এমনি যেন হয়।। নম্রশিরে সু খের দিনে ত�োমারি মুখ লইব চিনে-দু খের রাতে নিখিল ধরা যে দিন করে বঞ্চনা ত�োমারে যেন না করি সংশয়।। সাধকদের জীবনে ভগবানের যখন কৃপা আসে, তখন তাঁদের নিজ সত্তার বিলু প্তি ঘটে, প্রতি ক্ষণে, প্রতি মুহূর্তে, প্রতি ঘটনায় ভগবানের ইচ্ছা অনু ভব করেন, তখন তাঁর অনু ভুতিতে ধরা পড়ে, তিনি যাঁকে কৃপা করেন, তাঁর কাছ থেকে সু খ কেড়ে নেন তাকে অনন্ত সু খী করতে চান বলে। অনেক সময় আত্মীয় স্বজনকে কেড়ে নেন, তিনিই যে পরমাত্মীয়, তা ব�োধ করাবার জন্য। তাঁর ভক্তের জীবনকে তিনি ভেঙ্গে নতুন ছাঁচে গড়ে ত�োলেন। সাধক তখন আনন্দের সঙ্গে বলতে পারেনঃ সু খ সু খ করে দ্বারে দ্বারে ম�োরে কত দিকে কত খ�োঁজালে, তুমি যে আমার কত আপনার এবার সে কথা ব�োঝালে– করুণা ত�োমার ক�োন্ পথ দিয়ে ক�োথা নিয়ে যায় কাহারে– সহসা দেখিনু নয়ন মেলিয়ে, এনেছ ত�োমারি দু য়ারে॥

ওঁ

www.batj.org

তত্

সৎ

Durga Puja 2020

21


অপরাজেয় বাঙ্গালী বিদ্যাস -

দ্বিশততম জন্মবার্ষি কীর আল�োকে   - শ্রীকান্ত চট্টো দখলদারি সম্পূ র্ণ হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে। শাসক হিসেবে এই নতুন বিদেশী শাসকেরা তাদের পূর্বসূ রীদের থেকে পৃ থক ছিল না। শাসিতের কল্যাণ নয়, শক্তি এবং প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের প্রভূ ত্ব বিস্তার এবং সমৃ দ্ধি সাধনই ছিল তাদের মুল লক্ষ্য। তবে পূর্বসূ রীদের থেকে এক জায়গায় তাদের লক্ষণীয় পার্থক্য ছিল। নবজাগরণে আল�োকপ্রাপ্ত ইউর�োপ থেকে তারা এনেছিল যু ক্তিবাদী চিন্তা-ভাবনা এবং অনু সন্ধিৎসা যা ছিল তৎকালীন রুদ্ধ এবং পশ্চাদ্মু খী ভারতীয় সমাজে নিতান্তই অনু পস্থিত।

রাজা রামম�োহন রায় এবং বাংলার নবজাগরণের শুরু

ভারতে ক�োন ইউর�োপীয় শক্তির সাথে প্রথম উল্লেখয�োগ্য আদানপ্রদান হয় বাংলার মাটিতে, যেখানে বৃ টিশ শাসনের পত্তন হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশের ক্ষেত্রে এই আদান-প্রদান মানবেতিহাসে এক উল্লেখয�োগ্য ঘটনা। এর ফলে একটি স্থবির, অবক্ষয়ী প্রাচীন সভ্যতা নিজেকে পুনরায় আবিষ্কার করতে শুরু করল। প্রাচীন সভ্যতাটি নতুনকে বরণ করে নিয়ে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে পুনরায় সামনের দিকে যাত্রা শুরু করল। ইউর�োপের নতুন চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা বিদগ্ধ বাঙ্গালীদের আকৃষ্ট করল এবং তাঁদের মাধ্যমেই ‘ভারতের নবজাগরণ’এরও সূ ত্রপাত হ’ল। এই নবজাগরণের জনক বলা হয় রাজা রামম�োহন রায়কে, যিনি ছিলেন একাধারে পণ্ডিত, সমাজ-সংস্কারক, শিক্ষাবিদ এবং ভূ -পর্যটক। তৎকালীন অনেক গর্হিত এবং নিষ্ঠুর সামাজিক প্রথা (যথা সতীদাহ) বিল�োপ করার জন্য তিনি অনলস চেষ্টা করে গেছেন এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছেন।

ভূমিকা এবং পটভূমিকা

ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণের অন্যতম প্রাণপুরুষ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে। তৎকালীন বঙ্গীয় এবং ভারতীয় সমাজ জীবনের প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের জীবন এবং কাজকর্ম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আল�োচনার মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা এই প্রবন্ধের মূ ল উদ্দেশ্য। মানব ইতিহাস পর্যাল�োচনায় দেখা যায় যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতির যেমন উত্থান ঘটেছে, তেমনি তাদের অনেকের অবক্ষয় বা পতনও হয়েছে। আবার তাদের কার�ো কার�ো পুনরুত্থানও ঘটেছে। যে ভূ খণ্ড এখন ভারতীয় উপমহাদেশ নামে পরিচিত, সেখানে যে সভ্যতা বিকশিত হয়েছে সেটিও এই উত্থান-পতনের চক্রে আবর্তিত হয়েছে। পুনঃপুনঃ বৈদেশিক আক্রমণ এবং অনু প্রবেশে সেই সভ্যতার অবক্ষয় এবং পরিবর্তন ঘটেছে এবং তা বাধ্য হয়েছে বিদেশী শক্তির বশীভূত হতে এবং বিদেশী সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত হতে। পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন অভিবাসীদের আগমন এখানকার অধিবাসীদের জীবনধারাকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্তসাম্রাজ্যের পতনের পর কয়েক শ’ বছর বাংলা (তখনকার নাম গ�ৌড়) সহ উত্তর ভারত অনেকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। এই রাজ্যগুলি প্রায়শই নিজেদের মধ্যে যু দ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকত। সেজন্য তারা সম্মিলিতভাবে বিদেশী আক্রমণ প্রতিহত করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ত্রয়�োদশ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ার আক্রমণকারীরা উত্তরপশ্চিম ভারত দখল করে। তারপর দখল করে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতার কেন্দ্র দিল্লী। এর পর পাঁচশ�ো বছর ধরে বিদেশী শাসককুল ভারতের উত্তর অঞ্চল শাসন করে। এই শাসকদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে তারা সকলেই ছিল মুসলমান। এদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত হ’ল মুঘলরা। তারা দু শ�ো বছরেরও বেশী সময় ধরে শাসনক্ষমতায় ছিল। প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ ভারতের কিয়দংশে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়। ভারতের জনগণের বৃ হদংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। প্রবল পরাক্রমশালী বিদেশী শাসকদের প্রতিহত করতে না পেরে তারা বাধ্য হয় নিজভূমে প্রায়-পরবাসী হয়ে জীবনযাপন করতে। তাদের সভ্যতা চলচ্ছক্তিহীন, অবক্ষয়ী সভ্যতায় পরিণত হয়।

বৃটিশের ভারত দখল – রাজনৈতিক প্রভূ ত্ব এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন

ইতিমধ্যে ইউর�োপে রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সূ চনা হয়েছে। রেনেসাঁ-সমৃ দ্ধ ইউর�োপীয় জাতিগুলি মানব-প্রচেষ্টার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি করছে। যান্ত্রিক এবং সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তারা দূ রবর্তী ভূ খণ্ডে ভ্রমণ এবং সেগুলি দখল করে নেবার ক্ষমতা অর্জন করছে। এইভাবে অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বৃ টিশরা ভারত দখল শুরু করে এবং এই 22

রামম�োহন রায়ের প্রভাবে বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি তাঁর ধ্যান-ধারণা এবং কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হলেন। পরবর্তী একশ�ো বছরে প্রথমে তাঁর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ অনেক বিদগ্ধ বাঙালী এবং পরবর্তীকালে অনেক বিদগ্ধ ভারতীয়ের আবির্ভাব হয়। বিজ্ঞান, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, ভাষা, রাজনীতি, সমাজবিদ্যা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিদগ্ধ ব্যক্তিদের অবদান সাধারণ মানু ষের জীবনকে স্পর্শ করে এবং এর ফলে ভারতীয় জীবনে পরিবর্তন ও আধু নিকীকরণ সূচিত হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর – অসাধারণ পণ্ডিত এবং সমাজ-সংস্কারক

এবার আসা যাক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথায়, যাঁর জীবনাদর্শে এবং বিপুল অবদানে বাংলা তথা সমগ্র ভারত আল�োকিত ও উপকৃত হয়েছে। আমি আশা করি এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধটি বর্তমান প্রজন্মের কিশ�োর-কিশ�োরী, তরুণ-তরুণী, যারা তাদের পূর্বপুরুষের সাংস্কৃতিক পরিবেশের চেয়ে ভিন্নতর পরিবেশে বড় হচ্ছে, তাদের মনে অনু সন্ধিৎসা জাগাবে। হয়ত�ো তাদের কেউ কেউ আর�ো পড়াশ�োনা, আর�ো অনু সন্ধান করে এই প্রাচীন ভূ খণ্ডের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস এবং বিশ্বসভ্যতায় তাঁদের অবদানের প্রেক্ষিতে নিজেদের বহুবিধ সংস্কৃতিব�োধকে সমৃ দ্ধ করতে পারবে। নবজাগরণের এই অন্যতম পথিকৃতের অবদানকে সম্যক উপলব্ধি করতে প্রবন্ধের পটভূমিকায় বিবৃ ত বিগত কমবেশী হাজার বছরের ভারতইতিহাসকে অনু ধাবন করা প্রয়�োজন। একজন বাঙালী ব্রাহ্মণ সন্তান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনকাল ১৮২০ – ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দ। ‘বিদ্যাসাগর’ হল তাঁর সাম্মানিক উপাধি যার অর্থ হ’ল বিদ্যার সাগর, বা পরম বিদ্বান। শিক্ষাদীক্ষায় তিনি প্রকৃতই ছিলেন বিদ্যার সাগর। একাধারে তিনি ছিলেন সু পণ্ডিত, বাংলা গদ্য রচনার পথিকৃত, সমাজ-সংস্কারক, শিক্ষাব্রতী এবং দরিদ্র ও নিপীড়িত মানু ষের সহমর্মী। দয়া এবং মমত্বব�োধের জন্য তাঁর আর একটি উপাধি হ’ল ‘করুণাসিন্ধু ’, যার অর্থ ‘দয়ার সাগর’। পার্থিব ধনদ�ৌলত বা বংশগত আভিজাত্য বলতে তাঁর তেমন কিছু ছিল না, তিনি ছিলেন সাধারণ মানু ষেরই একজন। যে বাধা এবং প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা অনেক সংগ্রামীর পক্ষেও সম্ভব হয় না, বিদ্যাসাগর সেগুলি অতিক্রম করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। তাঁর চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে বাঙ্গালী কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যথার্থই বলেছেন “অদৃ ষ্টেরে ব্যর্থ তুমি করলে বারংবার”।

বিদ্যাসাগরের পারিবারিক পরিচয়, বাল্যকাল, শিক্ষা এবং কর্মজীবন

‘ঈশ্বর’ (তাঁর বাবা-মা তাঁকে এই নামেই ডাকতেন)-এর জন্ম তৎকালীন বাংলার হুগলী জেলার অন্তর্গত বীরসিংহ গ্রামে এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবারে। তাঁর বাবা-মা দরিদ্র ছিলেন। কিন্তু তাঁরা ছিলেন সমসাময়িক

Anjali

www.batj.org


অপরাজেয় বাঙ্গালী বিদ্যাসাগর সামাজিক এবং ধর্মীয় গ�োঁড়ামি থেকে মুক্ত। সেই সময় অনেকেই কিন্তু তা ছিলেন না। ঈশ্বরের জীবনে মা ভগবতীদেবীর প্রভাব ছিল অপরিসীম। এক সহজ সরল গ্রাম্য মহিলা ছিলেন তিনি। স্কু ল-কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ছিল না, কিন্তু হিন্দু ধর্মশাস্ত্র এবং মহাকাব্যগুলি তিনি হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। ভাষা ও সাহিত্যে বালক ঈশ্বরের আগ্রহ ও অনু রাগ এবং দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি মমত্ব ও কর্তব্যব�োধ অনেকাংশে তাঁর মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। ভগবতীদেবীর বৈষয়িক সঙ্গতি বিশেষ ছিল না, কিন্তু তাঁর হৃদয়টি ছিল বিশাল। যাদের নেই বা কম আছে, তাদের সাথে নিজের সীমিত সম্পদই ভাগ করে নিতেন। ঈশ্বর মায়ের এই গুণগুলি খুবই পছন্দ করতেন এবং নিজেও সেগুলি আয়ত্ব করেন। স্বর্ণালঙ্কার মহিলাদের খুবই প্রিয়, কিন্তু তাঁর দরিদ্র মায়ের ক�োন অলঙ্কার ছিল না। কথিত আছে, ঈশ্বর যখন প্রতিষ্ঠিত নব্যযু বক, তখন তিনি মাকে কিছু স্বর্ণালঙ্কার কিনে দিতে চেয়েছিলেন। মায়ের সগর্ব উত্তর ছিল ঈশ্বরের মত হৃদয়বান, দরিদ্র-দরদী পুত্রই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অলঙ্কার! আর এক বার গ্রামের ক�োন একটি ধর্মীয় উৎসবে বিদ্যাসাগরের কাছে উপর�োধ আসে একটি বড় অঙ্কের আর্থিক সাহায্যের। উত্তরে মায়ের কাছে ঈশ্বর প্রস্তাব করলেন উৎসবের পরিবর্তে দরিদ্রনারায়ণের সেবাতেই বরং অর্থের সদ্ব্যবহার করা যাক। মায়ের দ্বিধাহীন উত্তর ছিল যদি বিভিন্ন উৎসবের জন্য সংগৃ হীত অর্থে সারাবছর দরিদ্রদের সাহায্য করা যায়, তবে পূ জা করার, উৎসব পালনের ক�োন প্রয়�োজন হবে না। পুত্রহিসেবে বিদ্যাসাগর ছিলেন পিতামাতার প্রতি অনু গত ও শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি ছিলেন নির্ভীক স্পষ্টবক্তা। একবার বিদ্যাসাগর যখন তাঁর পিতামাতার সঙ্গে কাশীতে রয়েছেন, একদল কাশীবাসী ব্রাহ্মণ তাঁর কাছে আর্থিক সাহায্য চাইতে আসেন। তাঁরা নিশ্চয়ই দাতা হিসেবে বিদ্যাসাগরের খ্যাতির কথা জানতেন এবং হয়ত আশা করেছিলেন পুণ্যভূমি কাশীতে তিনি আরও মুক্তহস্ত হবেন। কিন্তু তাঁদের অবস্থা ও স্বভাব লক্ষ্য করে বিদ্যাসাগর তাঁদের দয়া বা ভক্তির পাত্র বলে মনে করলেন না এবং তাঁদের স্পষ্ট বলে দিলেন - “এখানে আছেন বলিয়া আপনাদের যদি আমি ভক্তি বা শ্রদ্ধা করিয়া বিশ্বেশ্বর বলিয়া মান্য করি, তা হ’লে আমার মত নরাধম আর নাই।” এই অপ্রত্যাশিত প্রত্যাখ্যানে ক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণকুল তাচ্ছিল্যের স্বরে তাঁকে ইঙ্গিত করলেন যে তিনি তা হলে হয়ত কিছু ই মানেন না। পিতা-মাতার দিকে তাকিয়ে বিদ্যাসাগর উত্তর দিলেন যে পিতামাতাই তাঁর বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণা। আবার বিদ্যাসাগরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই পিতাই যখন বিদ্যাসাগরের পুত্র নারায়ণকে শিক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠাতে অনু মতি দিলেন না, বিদ্যাসাগর বিরক্ত হয়ে পিতাকে বললেন – “আপনি নিজেকে নিরামিষাশী বলেন অথচ স্নেহবশে আমার পুত্রের মস্তকটি চর্বণ করিতেছেন!” ঈশ্বরের শৈশবকালে বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় কর্মরত ছিলেন। তখন কলকাতা ছিল বৃ টিশ ভারতের রাজধানী। ঠাকুরদাস উচ্চশিক্ষিত ছিলেন না, কিন্তু তিনি পুত্রের শিক্ষার জন্য বিশেষ যত্নবান ছিলেন। ন’বছর বয়সের ঈশ্বরকে কলকাতায় এনে ভাল স্কুলে তার পড়ার ব্যবস্থা করেন। সংস্কৃত কলেজে তখন সংস্কৃত এবং ইংরাজী দু ট�োই শেখান�ো হত। ঈশ্বর সেখানে ইংরাজী শিখলেন। তার সাথে শিখলেন সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্য ছাড়াও ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র এবং দর্শন। দশ বছর ধরে সংস্কৃ ্ত কলেজে পড়ার সময় তিনি অনেকগুলি বৃ ত্তিও পেয়েছিলেন, যেগুলি আর্থিক দিক থেকে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সহায়ক হয়েছিল। কর্মজগতে তাঁর প্রথম প্রবেশ ফ�োর্ট উইলিয়ম কলেজের হেড পণ্ডিত বা সংস্কৃত শিক্ষক হিসাবে। কয়েক বছর পরে তিনি সংস্কৃত কলেজে য�োগদান করেন প্রথমে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে। ক্রমশ তিনি এই কলেজটির অধ্যক্ষের পদ পান এবং সঙ্গে সরকারের শিক্ষা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ, বাংলার কয়েকটি জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর অফ স্কু লস, হিসেবেও তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর আগে এই পদে ক�োন ভারতীয় নিযু ক্ত হন নি। এই পদের সু বাদে তিনি বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে শিক্ষাবিস্তারের, বিশেষতঃ স্ত্রী-শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নিতে সমর্থ হয়েছিলেন।

বিদ্যাসাগরের স্মরণীয় সাফল্য

বিদ্যাসাগরের সৃ জনশীল এবং ব্যস্ত কর্মজীবনের কথা বিশদভাবে লিখতে গেলে কয়েকশ�ো পাতার একটা বই হয়ে যাবে। আমি তাই তাঁর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সাফল্য নিয়ে এখানে সংক্ষেপে আল�োচনা করছি। তাঁর এই সাফল্যগুলির জন্য প্রত্যেক বাঙালী এবং বাংলার বাইরের ভারতীয়রাও উপকৃত হয়েছে। এই সাফল্যের ক্ষেত্রগুলি হ’ল – (১) বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য, (২) সমাজ-সংস্কার, বিশেষতঃ বিধবা-বিবাহ আইন প্রণয়নের জন্য তাঁর প্রচেষ্টা এবং (৩) স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার – বিশেষতঃ গ্রাম বাংলায়। www.batj.org

(১) বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য

– ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা ভাষার এক অসাধারণ বিকাশ ও উন্নতি হয়। এরই প্রভাবে উনিশ ও বিশ শতকের অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলা সাহিত্যেরও উল্লেখয�োগ্য সম্বৃদ্ধি ঘটে এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম ও ন�োবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের সাহিত্যসৃ ষ্টি জগৎজ�োড়া খ্যাতি ও সমাদর লাভ করে। বিদ্যাসাগর-কৃত বাংলা ভাষার সংস্কার ছিল এই বিস্ময়কর উন্নতির প্রধান স�োপান। বাংলাভাষার খ্যাতিমান সাহিত্যস্রষ্টারা প্রত্যেকেই এজন্য বিদ্যসাগরের কাছে গভীরভাবে ঋণী। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার বিবর্তন ও উন্নতিতে বিদ্যাসাগরের অসাধারণ অবদান বিভিন্ন প্রসঙ্গে বারবার শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের বিচারে বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল বাংলা ভাষার আধু নিকীকরণ। বিদ্যাসাগরের আমলেও বাংলা লেখার একটা ভঙ্গী বা স্টাইল ছিল। কিন্তু তা ছিল সংস্কৃতের উপর নির্ভরশীল বা সংস্কৃত- ঘেঁসা, কথ্য বাংলার সাথে তার মিল ছিল সীমিত। লিখিত বাংলা সংস্কৃতকেই অনু সরণ করত এবং তার ফলে সেই ভাষায় স্বচ্ছন্দ প্রবাহের অভাব ছিল। সংস্কৃত ব্যাকরণের জটিলতার আবর্তে বাংলা ভাষার গতি-প্রকৃতি ছিল শ্লথ। বিদ্যাসাগর নিজে ছিলেন সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্যে সু পণ্ডিত। তিনি ব্যাকরণের জটিল নিয়ম-কানু নকে সরল করে বাংলা ভাষাকে আরও বিকশিত করে ত�োলেন। ধ্রুপদী সংস্কৃত ব্যাকরণকে সরলতর করে বাংলা ভাষায় তিনি দু টি বই প্রকাশ করেন যাতে সংস্কৃত ভাষা-শিক্ষার্থীদের সু বিধা হয় এবং সংস্কৃত ও বাংলা ভাষার পারস্পরিক সম্পর্ক ও স্বাতন্ত্র্য সহজে ব�োঝা যায়। এই যু গান্তকারী বইদু টির নাম “ব্যাকরণ-ক�ৌমুদী” ও “সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা”, যা আজও সংস্কৃত-অনু রাগী বাঙ্গালী পাঠকের নিত্যসঙ্গী। বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে বর্ণপরিচয় প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাগ নামে বাংলা অক্ষর পরিচয়ের এবং ব্যবহারবিধির দু টি সু সংহত ভিত্তিপুস্তক প্রকাশ করেন। নতুন শিক্ষার্থীদের প্রয়�োজন এবং দক্ষতা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে তাদের বাংলা ভাষা শিক্ষার জন্য এ দু টি ছিল প্রথম স�োপান এবং বিদ্যাসাগরের অসামান্য সাফল্যের সার্থক ফসল। ব্যাকরণের সহজ-সরল নিয়ম প্রয়�োগ করে এগুলি সরল বাংলা গদ্য লিখতে শেখায় এবং তারপর সেই গদ্যের মাধ্যমে গল্প বলে নীতিশিক্ষা দেয়। এইভাবে সু কুমারমতি বালক বালিকাদের জন্য ভাষাশিক্ষার সাথে নীতিশিক্ষার লক্ষ্যটি পূ রণের চেষ্টা হয়। বিদ্যাসাগরের এই উদ্যোগে সংস্কৃত ব্যাকরণের জটিলতা ছাড়াই সরল বাংলায় গদ্য লেখার প্রচলন হ’ল। পরবর্তীকালে সমৃ দ্ধ বাংলা গদ্যের যে বিকাশ হয়েছে তা বিদ্যাসাগরের এই উদ্যোগেরই ফল এ কথা আগেই বলা হয়েছে। এত বছর পরে আজকের দিনেও বেশীরভাগ বাঙালী ছাত্রছাত্রী তাদের প্রথাগত শিক্ষা শুরু করে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে বিদ্যারম্ভের জন্য নতুন নতুন পুস্তক লিখিত হলেও তারা প্রত্যেকেই বিদ্যাসাগরের যু গান্তকারী সৃ ষ্টির ঋণ স্বীকার করে। এগুলি ছাড়া বিদ্যাসাগর তাঁর নিজস্ব ভঙ্গীতে এবং আঙ্গিকে বেশ কিছু বহুল প্রচলিত সংস্কৃত সাহিত্যের অনু বাদ করেন। এর ফলে বৃ হত্তর সমাজের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে বাংলা ভাষা তার নিজস্ব শক্তিতেই ভাব প্রকাশ করতে এবং য�োগায�োগের মাধ্যম হয়ে উঠতে সক্ষম। এ বাপারে অন্য ভাষাগুলির সাথে বাংলা ভাষার দক্ষতার ক�োন পার্থক্য নেই। বিদ্যাসাগর বাংলায় বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং ছ�োটগল্প লেখেন এবং তাঁর সমাজ-সংস্কারের প্রচেষ্টাগুলির সপক্ষে জ�োরাল�ো যু ক্তি দিয়ে ছ�োট ছ�োট প্রচারপত্র প্রকাশ করেন। বাংলা, ইংরেজি এবং সংস্কৃতে স্বল্প দৈর্ঘ্যের লেখা ছাড়াও তিনি বাংলা, হিন্দী এবং সংস্কৃতে কমবেশী এক ডজন বই প্রকাশ বা সম্পাদনা করেন। এই ভাষা এবং সাহিত্য-সাফল্যগুলি তাঁর প্রজ্ঞা, পাণ্ডিত্য এবং অধ্যবসায়ের পরিচায়ক। শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগরের কিন্তু ব্যবসায়ী বু দ্ধিরও অভাব ছিল না। তিনি তাঁর নিজের রচিত বইগুলির মুদ্রণ এবং বিক্রয়ের দায়িত্ব অন্য ক�োন প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে Sanskrit Press Depository নামে একটি পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন এবং তাঁর বইগুলি সরাসরি এখান থেকেই বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন। তাঁর রচিত পাঠ্যপুস্তকগুলির বাজার এতই ভাল ছিল যে বিদ্যাসাগরের আয় এক সময় বেশ উচ্চ স্তরে পৌঁছে যায় যার ফলে তিনি তাঁর সংস্কার-মূ লক কাজকর্মের যাবতীয় ব্যয়ভার নিজেই বহন করতে সক্ষম হন। তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর রচিত বর্ণপরিচয়ের বিক্রয়-সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল তিন লাখেরও বেশী। তাঁর এই বিপুল আয় কিন্তু তাঁর নিজের সহজ-সরল জীবনযাত্রায় ক�োন পরিবর্তন আনে নি। বরং অকাতরে দান এবং সংস্কারমূ লক কাজে খরচ করতে গিয়ে তিনি প্রায়শই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন।

Durga Puja 2020

23


অপরাজেয় বাঙ্গালী বিদ্যাসাগর

(২) সমাজ-সংস্কার – হিন্দু সমাজে প্রচলিত নারী নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগরের একক লড়াই – বিদ্যাসাগরের

সাফল্য বহুমুখী, কিন্তু তিনি নিজে মনে করতেন সমাজ-সংস্কার, বিশেষতঃ হিন্দু বিধবা-বিবাহ আইনসম্মত করাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই বিষয়টির গুরুত্ব সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে হ’লে তৎকালীন হিন্দু সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়�োজন। হিন্দু সমাজে মহিলাদের স্থান ছিল যু গপৎ সম্মানিতার এবং নিপীড়িতার। নিজেদের পরিবারের মধ্যে পারিবারিক খরচপত্র সামলান�োর দায়িত্ব ছিল মহিলাদের। পরিবারের সদস্য/সদস্যাদের বিবাহ এবং বয়স্ক/বয়স্কাদের যত্ন, সেবা-শুশ্রুষার ব্যাপারেও তাঁদের মতামত গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হ’ত। হিন্দু সমাজে মহিলাদের সাথে সম্মানজনকভাবে আচার-ব্যবহারের রীতি তখনও ছিল, এখনও আছে। যেমন মহিলাদের ‘মা’ বা ‘ভগিনী’ বলে সম্বোধন করা। এসব সত্ত্বেও সমাজ মহিলাদের পুরুষের সমকক্ষ বলে মেনে নিত না। পুরুষদের তুলনায় তাঁদের সম্পত্তির অধিকার এবং শিক্ষাদীক্ষার সু য�োগ ছিল সীমিত। বিবাহিতা মহিলাদের পরিচয় ছিল স্বামীর পরিচয়ে, আর অবিবাহিতাদের পিতৃপরিচয়ে। এই সব সামাজিক বিধিনিষেধের গন্ডির মধ্যে মহিলারা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা সামাজিক মান্যতা প্রত্যাশা করতে পারতেন না। এছাড়া বালক-বালিকাদের বাল্যবিবাহ এবং ক�োন ক�োন বর্ণের পুরুষদের মধ্যে বহুবিবাহের মত কুপ্রথা এবং পরিস্থিতিবিশেষে সদ্যোজাত কন্যাসন্তান হত্যার মত নিষ্ঠুর প্রথাও হিন্দু সমাজে প্রচলিত ছিল। উপর�োক্ত প্রথাগুলি ছাড়াও সম্ভবত আরও অমানবিক এবং নিষ্ঠুর দু টি প্রথা চালু ছিল। হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের অধিকার ছিল না এবং তাঁদের অনেকেই স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বাধ্য হয়ে কুখ্যাত সতীদাহ প্রথার শিকার হতেন। বাংলার সমাজ সংস্কারের পুর�োধা রামম�োহন রায়ই নিষ্ঠুর সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং এটির অবলু প্তির জন্য তৎকালীন ইংরেজ গভর্ণর উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় প্রয়�োজনীয় আইন প্রণয়ন করাতে সমর্থ হ’ন। তাঁর প্রচেষ্টায় অপেক্ষাকৃত অল্পসময়ের মধ্যেই বাংলার সমাজ থেকে চিরতরে সতীদাহ প্রথার বিল�োপ ঘটে। এর পর বাকি থাকে মহিলাদের নিপীড়নের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে সংস্কার। বিদ্যাসাগর সেই কাজে ব্রতী হলেন। কথিত আছে একবার বিদ্যাসাগর গ্রীষ্মের ছু টিতে কলকাতা থেকে গ্রামের বাড়িতে গেলে একটি পরিবারের বিবাদ মীমাংসার জন্য অনু রুদ্ধ হ’ন। ব্যাপারটা ছিল এই যে এগার�ো বছরের এক বালবিধবা প্রচণ্ড গরমে এক উপবাসের দিনে লু কিয়ে জলপান করেছিল। তৎকালীন সামাজিক বিধি অনু সারে নিরম্বু উপবাসের দিনে বিধবাদের জন্য সামান্য জলপানও নিষিদ্ধ ছিল। বিদ্যাসাগর পরিবারটিকে এবং গ্রাম্য মাতব্বরদের ব�োঝান�োর চেষ্টা করেন যে একটি বালিকার জন্য এরকম কঠ�োর নিয়ম শিথিল করাই সঙ্গত। কিন্তু গ�োঁড়া মাতব্বররা যু ক্তি দেখান যে এই সামাজিক নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এবং এতে শাস্ত্রেরও সম্মতি আছে। এই ঘটনার পর বিদ্যাসাগর অনু সন্ধান করতে শুরু করলেন যে হিন্দুশাস্ত্রে ক�োথাও বিধবা মহিলাদের পুনর্বিবাহের বিধান আছে কিনা। যখন তিনি ঋষি পরাশরের ‘পরাশর সংহিতা’য় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের সপক্ষে যু ক্তি খুঁজে পেলেন, তখন তিনি যারপরনাই আনন্দিত হলেন। সংহিতার বিধানটি এই রকম “নষ্টে মৃ তে প্রব্রজ্যিতে ক্লীবে চ পতিতে পত�ৌ। পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিরন্যো বিধীয়তে।” অর্থাৎ যে পাঁচটি পরিস্থিতিতে স্ত্রী পুনর্বিবাহ করতে পারবেন তা হল - স্বামী দু শ্চরিত্র হলে, মারা গেলে, সন্ন্যাস গ্রহণ করে সংসার ত্যাগ করে গেলে, নপুংসক হলে অথবা জাতিচ্যুত (পতিত) হলে। এই শাস্ত্রীয় বিধানকে বৃ হত্তর সমাজে গ্রহণয�োগ্য করে তুলতে বিদ্যাসাগরের সংগ্রাম শুরু হল। তিনি ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দের জানু য়ারী মাসে বিধবা-বিবাহের সপক্ষে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করলেন যাতে পরাশর সংহিতার বিধানগুলির উল্লেখ ছিল। দ্য হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় এই প্রচারপত্র সম্পর্কে লেখা হয়েছিল যে প্রচারপত্রটি যু ক্তিগ্রাহ্য, ব্যবসায়িক দক্ষতায়, পরিস্কার সহজব�োধ্য ভাষায় লেখা হয়েছে এবং প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এটি সমাজে আল�োড়ন তুলেছে। দ্য হিন্দু প্যাট্রিয়ট আরও লিখেছিল যে প্রচারপত্রের বৈপ্লবিক বাণী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে পৌঁছেছিল এবং বাঙালী সমাজকে তা গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। সমাজের অনেকেই তখন মনে করেছিলেন যে বিদ্যাসাগর যে পরিবর্তনগুলি করতে চাইছিলেন সেগুলি হিন্দু সমাজের প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতিকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে এবং তা সামাজিকভাবে ক্ষতিকর হবে। তাঁরা বিদ্যাসাগরের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতির�োধ গড়ে তুললেন। কদর্য ভাষায় এবং অনেক সময় বিদ্যাসাগরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে প্রচারপত্র প্রকাশ করা হল। প্রচলিত রীতিকে সমর্থন না করে তার 24

বির�োধিতা করার জন্য বিদ্যাসাগরের পাণ্ডিত্যকে ব্যঙ্গ করা হ’ল। এমনকি তাঁর প্রাণনাশের এবং সম্পত্তিহানির ভীতি প্রদর্শন করা হতে থাকল। কিন্তু বিদ্যাসাগর ছিলেন ল�ৌহকঠিন মানসিকতার মানু ষ। তাঁর এক বড়ভাইও তাঁকে এই বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা থেকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর তাঁকে স্পষ্ট বলেছিলেন, “আমি যখন আমার উদ্দেশ্যের যথার্থতা বু ঝতে পারি, তখন ক�োন কিছু ই আমাকে সে উদ্দেশ্য সাধনের সংগ্রাম থেকে নিরস্ত করতে পারে না। যে সামাজিক অনাচার বিধবাদের জীবনকে দু র্বিষহ করে ত�োলে তা চিরতরে দূ র করতে প্রয়�োজনে আমি সব কিছু , এমনকি আমার জীবনও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।“ প্রসঙ্গত উল্লেখয�োগ্য যে ২০১১ সাল থেকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ‘আন্তর্জাতিক বিধবা দিবস’ চালু করেছে। এটি প্রতিবছর ২৩শে জুন পালিত হয়। এটি যেন সু দীর্ঘ কালের ব্যবধানে এক বাঙ্গালী সমাজসংস্কারকের যু গান্তকারী সু কীর্তিরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

বিদ্যাসাগর অসম্ভবকে সম্ভব করলেন -

বিদ্যাসাগরের প্রস্তাব ১৮৫৫ সালের নভেম্বর মাসে আইনসভায় পেশ করা হ’ল। প্রাথমিক বিবেচনার পর আইনসভা সেটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাল। ১৮৫৬ সালের মার্চ মাসে এই প্রস্তাবের বির�োধিতা করে ৩৩,০০০ স্বাক্ষর সম্বলিত একটি দরখাস্ত কমিটিতে পেশ হ’ল। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক দরখাস্ত - ক�োনটি প্রস্তাবকে সমর্থন করে, আবার ক�োনটি এর বির�োধিতা করে - সিলেক্ট কমিটিতে পৌঁছাল। ইতিমধ্যে বিদ্যাসাগর তাঁর প্রস্তাবের সপেক্ষে আরও জ�োরাল�ো যু ক্তি দিয়ে আর একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করলেন। দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের পর আইনসভা অবশেষে হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের সকল বাধা দূ র করে ১৮৫৬ সালের পঞ্চদশ আইনটি পাশ করল। বিদ্যাসাগর তাঁর নিষ্ঠুর এবং সংকীর্ণমনা বির�োধীদের বিরুদ্ধে বিপুলভাবে জয়লাভ করলেন। তবে তিনি এই নতুন আইন নিয়ে ক�োন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নি। নির্যাতিতা বিধবাদের মুক্তির একটা উপায় খুঁজে পাওয়াতেই তিনি খুশী হয়েছিলেন। এমনই আত্মপ্রচার-বিমুখ মানু ষ ছিলেন বিদ্যাসাগর। শুধু আইন পাশ করিয়েই কিন্তু বিদ্যাসাগর থেমে যান নি। ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৬৭’র মধ্যে নিজ উৎসাহে এবং প্রচেষ্টায় এবং প্রায়শ নিজের খরচে তিনি প্রায় ৬০টি বিধবা বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। অনেক ব্রাহ্ম যু বক এই কাজে তাঁর সহায়ক হয়েছিলেন, কিন্তু গ�োঁড়া হিন্দু সমাজের অনেকে তাঁর শুধু বির�োধিতাই করেন নি, তাঁর শারীরিক বা বৈষয়িক ক্ষতি করার, এমন কি প্রাণনাশেরও ভয় দেখিয়েছিলেন। এই ধরণের বির�োধিতা এবং ভীতি-প্রদর্শন বিদ্যাসাগরের উদ্যোগকে অবশ্যই স্তিমিত করতে পারে নি। কিন্তু কিছু কিছু অবস্থাপন্ন মানু ষ যাঁরা তাঁকে সংস্কারমূ লক কাজকর্মে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা তাঁর সংসর্গ পরিত্যাগ করেন। ফলে সমস্ত খরচের ভার বিদ্যাসাগরকে বহন করতে হয়। বিদ্যাসাগর কিন্তু ঋণগ্রস্ত হয়েও তাঁর উদ্যোগ থেকে সরে আসেন নি। এ কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে বিদ্যাসাগরের সমাজসংস্কারের নিন্দা শুধু সাধারণ বাঙ্গালীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রও কিছু কিছু ব্যাপারে তাঁর বিরূপ সমাল�োচকদের অন্যতম ছিলেন। আবার, অন্যদিকে, বিদ্যাসাগরের চরিত্রের বহুমুখী বিশিষ্টতার প্রশংসাও যে আসে নি তা নয়। প্রতিভাবান কবি-সাহিত্যিক মাইকেল মধু সূদন দত্ত ছিলেন বিদ্যসাগরের সমসাময়িক এবং কাছের মানু ষ। মধু কবির ভাষায় বিদ্যাসাগরের ছিল “wisdom of an ancient Indian sage, energy of an Englishman and the heart of a Bengali mother.” লিপিবদ্ধ নথি থেকে জানা যায় যে কলকাতায় প্রথম বিধবা-বিবাহ অনু ষ্ঠিত হয়েছিল বিদ্যাসাগরের উপস্থিতিতে ১৮৫৬ সালের ৭ই ডিসেম্বর। পাত্রীর বয়স ছিল এগার�ো বছর। আর পাত্র সংস্কৃত শিক্ষায় শিক্ষিত আঠার�ো বছরের নবযু বক। এর পর ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও বিধবাবিবাহের সংবাদ আসতে শুরু করল, যাতে ব�োঝা গেল ব্যবস্থাটি ধীরে ধীরে বৃ হত্তর সমাজে গ্রহণয�োগ্য হচ্ছে। কিছু সমাল�োচক প্রচার করলেন যে বিদ্যাসাগরের সাফল্য নিতান্তই ‘পরস্মৈপদী’, অর্থাৎ অনাত্মীয়ের মধ্যে বিধবা বিবাহে তাঁর সম্মতি থাকলেও তিনি নিজের ক�োন আত্মীয়ের এভাবে বিবাহ নিশ্চয়ই দেবেন না। শীঘ্রই সেই পরীক্ষাও উপস্থিত হল, যখন তাঁর পুত্র এক বিধবাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করল। এই বিবাহ সংঘটিত হ’লে বিদ্যাসাগর এবং তাঁর পরিবারকে পরিত্যাগ করবেন বলে কিছু আত্মীয় হুমকি দিলেন। বিদ্যাসাগর তাঁদের দৃ ঢ়ভাবে জানিয়ে দিলেন যে ক�োনকিছু ই পুত্রের বিবাহস্থলে তাঁর উপস্থিতি আটকাতে পারবে না। বস্তুত, তাঁর পুত্র স্বেচ্ছায় বিধবা-বিবাহ করছে – এতে বিদ্যাসাগরের মন�োবল বেড়ে গেল

Anjali

www.batj.org


অপরাজেয় বাঙ্গালী বিদ্যাসাগর এবং তাঁর অবস্থান আরও দৃ ঢ় হ’ল। উৎফুল্ল বিদ্যাসাগর এবং আরও অনেকের উপস্থিতিতে বিদ্যাসাগর-পুত্র নারায়ণ বিধবা ভবসু ন্দরীকে বিবাহ করলেন। অবশ্য এই অনু ষ্ঠানে বিদ্যাসাগরের পিতা-মাতা এবং স্ত্রী য�োগদান করেন নি।

(৩) স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার – বিদ্যাসাগরের আর একটি প্রচেষ্টা -

বিধবাবিবাহ প্রচলনের মত আর একটি সমান দু রূহ কাজে বিদ্যাসাগর তাঁর উদ্যম এবং পরিশ্রম নিয়�োগ করেছিলেন। তা হ’ল বাংলায় স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার। জন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথু ন নামে কেম্ব্রিজে শিক্ষিত এক ইংরেজ সাহেব ১৮৪৮ সালে কলকাতায় আসেন এডুকেশন কাউন্সিলের সেক্রেটারী হিসাবে। বেথু নসাহেব খাঁটি-বাঙ্গালী বিদ্যাসাগরের সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হলেন। অবশ্য তার আগেই তিনি বিদ্যাসাগরের পাণ্ডিত্যের কথা শুনেছিলেন। বিদ্যাসাগর বেথু নসাহেবকে জানালেন যে গ�োঁড়া হিন্দুদের (মিথ্যা) বিশ্বাস যে স্ত্রী-শিক্ষা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর এবং সেজন্য স্ত্রীশিক্ষায় শাস্ত্রের সমর্থন নেই, যদিও ‘স্ত্রী-শিক্ষায় ধর্মশাস্ত্রের সমর্থন নেই’ এই মত তিনি নিজে প�োষণ করেন না। সু তরাং সংশয়ী বিদ্যাসাগর আবার শাস্ত্রানুসন্ধান শুরু করলেন হিন্দুদের সামাজিক রীতিনীতিতে তাঁর নিজের বিশ্বাসের সমর্থনে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য। একটি প্রাচীন পুঁথিতে দেখলেন যে সেখানে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে ‘পুত্রের মত কন্যাকেও একইভাবে লালন-পালন করবে এবং তার শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করবে।’ সরকারী অনু দানে এবং বাংলার কিছু কিছু সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তির আর্থিক সাহায্যে নভেম্বর ১৮৫৭ থেকে মে ১৮৫৮-র মধ্যে বাংলার চারটি জেলার গ্রামাঞ্চলে বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে ৪০টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বিদ্যাসাগর এমন উৎসাহের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের ব্যাপারটি চালনা করছিলেন যে জনগণের কাছে সরকারের সহায়তার ভূমিকাটি তেমনভাবে পরিস্ফুট হচ্ছিল না। এতে করে ব্রিটিশ অফিসাররা অখুশী ছিলেন। তাঁরা এই মর্মে হুকুম জারী করলেন যে বিদ্যাসাগর যেন নতুন কর্মসূ চী নেবার আগে সরকারের অনু মতি নেন। তাছাড়া সরকারী সাহায্যের প্রত্যাশায় যে স্কু লগুলি তিনি ইতিমধ্যে চালু করেছিলেন সেগুলির জন্য প্রয়�োজনীয় আর্থিক অনু দানও দেওয়া হল না। এর ফলে শিক্ষকদের প্রাপ্য বেতনও বন্ধ হয়ে গেল। বিদ্যাসাগরই এই শিক্ষদের নিয়�োগ করেছিলেন। সু তরাং নীতিগতভাবে বেতন দেবার দায়টি বিদ্যাসাগরের উপরই বর্ত্তাল। প্রয়�োজনীয় টাকার অঙ্কটা ছিল তিন হাজার। তখনকার দিনে এটা একটা বিরাট অঙ্কের টাকা। বিদ্যাসাগর তাঁর নিজের সামর্থ্য থেকে বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেন। কিন্তু নতুন স্কু ল খ�োলা তাঁকে বন্ধ করতে হ’ল। এতে তিনি অপমানিত ব�োধ করলেন এবং হত�োদ্যম হয়ে পড়লেন। ঠিক করলেন যে সরকারী বেতনভ�োগী তিনি আর থাকবেন না। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের মত মর্য্যাদাসম্পন্ন উচ্চপদ সমেত অন্যান্য যাবতীয় সরকারী পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিলেন। তাঁর সরকারী বেতনের বাইরের আর্থিক স্বাচ্ছন্দের কথা আগে বলা হয়েছে, তাই উচ্চ বেতনের ম�োহ তাঁকে আটকে রাখতে পারে নি। এটা ছিল ১৮৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। যাই হ�োক, একবছর পরে সরকার পিছু হটে বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত স্কু লগুলির আর্থিক অনু দান পুনরায় চালু করল। এর মাধ্যমে বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টা যা এতদিন অস্বীকৃত ছিল তা সরকারী স্বীকৃতি পেল। স্ত্রী-শিক্ষার কার্যক্রম চলতে থাকল। সারা বাংলাতেই বিদ্যসাগর-প্রতিষ্ঠিত স্কু লগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা আজকের দিনেও শিক্ষাবিস্তারে, বিশেষত স্ত্রী-শিক্ষাবিস্তারে, বিদ্যাসাগরের অবদানের সাক্ষ্য বহন করে। এ কথাটাও মনে রাখা দরকার যে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন শুধু নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না। সাধারণ মানু ষের মানসিকতার পরিবর্তন হতে সময় এবং শিক্ষার প্রয়�োজন হয়। তাই বিধবাবিবাহ আইনসম্মত করে বা স্ত্রী-শিক্ষার বিস্তারে গ্রামে-গঞ্জে স্কু ল খুলে বিদ্যাসাগর যে তাৎক্ষণিক সাফল্য অর্জন করেছিলেন তার ফল সু দূরপ্রসারী কতটা হয়েছিল তা নিয়ে তর্কের অবকাশ এখনও আছে। যাবতীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে হিন্দুসমাজে স্ত্রী- পুরুষ বৈষম্য আজও বর্তমান।

শহরে বীতশ্রদ্ধ বিদ্যাসাগরের সাঁওতাল পল্লীতে স্বেচ্ছানির্বাসন

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে বিদ্যাসাগরের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। বহু বছর ধরে নিজের শরীরের এবং সু খ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি নজর না দিয়ে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। কলকাতার মত বড় এবং ব্যস্ত শহরে তাঁর স্বাস্থ্যের উপর ব্যস্ত জীবনের হানিকর প্রভাব পড়েছে। বিদ্যাসাগর প্রায় চুপিসাড়ে কলকাতা ত্যাগ করে সাঁওতাল পরগণার কারমাটাড় নামে এক ছ�োট পল্লীতে বাড়ি করে স্বেচ্ছানির্বাসনের জীবন শুরু করেন। কারমাটাড় বর্তমানে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্তর্গত। এখানকার সাঁওতাল অধিবাসীরা বিদ্যাসাগরকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করল। তাদের কাছে তিনি ছিলেন ‘নরদেহে ঈশ্বর’ এবং তারা তাঁকে ‘ঈশ্বর’ (ভগবান) বলেই www.batj.org

ডাকত। বিদ্যাসাগরের নাম ‘ঈশ্বর’ কথাটির অর্থও হ’ল ভগবান। বিদ্যাসাগর এই পরিশ্রমী, সহজ-সরল সাঁওতালদের খুব ভালবাসতেন। সাঁওতাল ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি একটি বিদ্যালয় এবং বড়দের জন্য একটি নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। দু ট�োতেই তিনি পড়াতেন। অসু খ-বিসু খে তিনি তাদের হ�োমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও করতেন।

শেষের কথা

১৮৭৫ সালে নিজ হস্তাক্ষরে একটি উইল লিখে বিদ্যাসাগর তাঁর সম্পত্তির থেকে ৪৫ জন প্রাপকের জন্য নিয়মিত মাস�োহারার নির্দেশ দেন। এখানে উল্লেখয�োগ্য যে এঁদের মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন তাঁর আত্মীয় পরিমণ্ডলের বাইরের। উইলে তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং তাঁর মায়ের নামে স্থাপিত একটি বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য নিয়মিত অর্থসংস্থান রাখেন। কিন্তু তিনি নিজের একমাত্র পুত্রকে অনৈতিক এবং পরিবারের পক্ষে মর্যাদাহানিকর কাজকর্মের জন্য উইলের সু বিধাভ�োগীদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেন নি। এই উইলটি লেখার পর বিদ্যাসাগর আরও ১৬ বছর জীবিত ছিলেন, কিন্তু উইলটির ক�োন পরিবর্তন করেন নি। এত কিছু সাফল্য সত্ত্বেও বিদ্যাসাগর ছিলেন প্রখর মর্যাদাব�োধসম্পন্ন একজন সাদাসিধে মানু ষ। তাঁর প�োষাক ছিল একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ধু তি, একটি চাদর এবং পায়ে একজ�োড়া চামড়ার চটি, যা ‘বিদ্যাসাগরী চটি’ নামে বিখ্যাত হয়। তিনি গাড়িভাড়া বাঁচাতে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতেন। আবার কেউ সাহায্য চাইলে তিনি ছিলেন মুক্তহস্ত। তাঁর দয়া এবং মমত্বব�োধের অনেক কাহিনী আছে। ভারতীয় হিসাবে সম্মানহানিকর ক�োন কিছু র সঙ্গে তিনি ক�োনদিন আপস করেননি। তিনি ছিলেন একজন গর্বিত বাঙালী, তবে নবজাগরণের পথিকৃত হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল ভারতজ�োড়া। বিদ্যাসাগর সম্পর্কে ভারতের পুনরুত্থানের আর এক মহানায়ক মহাত্মা গান্ধীর উক্তি – “পৃ থিবীতে বিদ্যাসাগরের মত মানু ষ খুব কমই জন্মগ্রহণ করেছেন। বলা হয় যে ঈশ্বরচন্দ্র যদি ইউর�োপের ক�োন দেশে জন্মাতেন, তবে ব্রিটিশরা যেমন নেলসনের নামে স্মৃতিস্তম্ভ গড়েছে, তেমনি তাঁর নামেও গড়া হ’ত। তবে ঈশ্বরচন্দ্র ক্ষুদ্র-বৃ হৎ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বাঙালী হৃদয়ে উচ্চ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত।” তাঁর সমসাময়িক বাঙালী সমাজ বিদ্যাসাগরের প্রতি যে দু র্ব্যবহার করেছে তাকে ইঙ্গিত করে ১৮৯৫ সালের এক স্মরণসভায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, বিদ্যাসাগরের মহত্ব তাঁর দয়ায় নয়, তাঁর বিদ্যাতেও নয়, তা ছিল যে বিশেষ মানবিক দৃ ষ্টিভঙ্গীতে তিনি নারীদের দেখেছিলেন সেই দৃ ষ্টিভঙ্গীতে। ... । নিজদেশে তিনি ছিলেন নিতান্ত একাকী, এখানে তাঁর যেন নিজের মানু ষ বলতে কেউ ছিল না। এই সমাজে তাঁর জীবন সু খের ছিল না। আর এই দু র্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কর্মহীন, দাম্ভিক, তার্কিক জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের এক সু গভীর ধিক্কার ছিল কারণ তিনি ছিলেন সর্ব বিষয়েই ইহার বিপরীত। ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই বিদ্যাসাগর, যতদূ র জানা যায়,‌যকৃতের ক্যান্সার র�োগে ভুগে তাঁর উত্তর কলকাতার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘বীরসিংহের সিংহশিশুর’ নির্ভীক বলিষ্ঠ চরিত্র ছিল অপরাজেয়, তাঁর শির ছিল চির-উন্নত ও সকল তুচ্ছতার ঊর্ধে। ন্যায্য সংগ্রামের পথ, তা যতই কন্টকাকীর্ণ হ�োক, তিনি কখনও ত্যাগ করেন নি। তাঁর চরিত্রে পাণ্ডিত্য ও মমত্বব�োধের এই বিরল সমাবেশ তাঁর বন্ধু কবি মাইকেল মধু সূদন দত্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় প্রকাশ করেছিলেন - বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে/ করুণার সিন্ধু তুমি সেই জানে মনে দীন যে, দীনের বন্ধু । মধু সূদন নিজেও ছিলেন বিভিন্নভাবে বিদ্যাসাগরের কৃপাধন্য, তাই তাঁর এই প্রশস্তি বিশেষভাবে অর্থবাহী। গল্প আছে যে বিদ্যাসাগরের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গ�োস্বামী সদ্য-প্রয়াত বিদ্যাসাগরের ‘দর্শন’ লাভ করেন। শ্রী গ�োস্বামী ছিলেন একজন সাধু পুরুষ এবং সেই সময় তিনি ঢাকাতে ছিলেন। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে তাঁকে বলতে শ�োনা গিয়েছিল, “আহা, কি মন�োরম দৃ শ্য! দেবদূতেরা বিদ্যাসাগরকে ঘিরে রয়েছে এবং তাঁর রথটি নানারঙের উজ্জ্বল আল�োকে আল�োকিত। বিদ্যাসাগর আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।” পরদিন ঢাকায় খবর এল যে আগের দিন বিদ্যাসাগর কলকাতায় দেহরক্ষা করেছেন। তাঁর প্রয়াণদিবস ২৯শে জুলাই ১৮৯১। গল্পটি নিঃসন্দেহে এই হিন্দু বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত যে একজন পর�োপকারী ভালমানু ষ তাঁর সু কর্মের জন্য সু ন্দর পারল�ৌকিক জীবন ভ�োগ করেন। এটি ক�োন ক�োন অনু রাগীর চক্ষে বিদ্যাসাগরের সু উচ্চ ভাবমূর্তির প্রতিফলন। 

Durga Puja 2020

25


নজরুলের চেতনায় ম

দু

- মানিকচন্দ্র

র্গাপূজ�ো বাঙালীর মাতৃশক্তি আরাধনার অঙ্গ। এ আরাধনায় পুর�োভাগে রয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর অজস্র গানে ও গাঁথায়, তাঁর শক্তিরূপিণী মাতৃসাধনার প্রতিফলন। এ বছর আমাদের ট�োকিও বাঙ্গালী (Tokyo Bengali ) র পুজ�োয় সেই পরম প্রতিভাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তাঁর সৃ ষ্ট বাগিচার কিছু ফুলে এবারের পুজ�োয় অঞ্জলীর ডালি সাজাই। নজরুল গীতিতে মাকে খুঁজি। দেখি কেমন করে দু র্গতিনাশিনী দশভুজা মা ধরা দিয়েছেন কবি নজরুলের চেতনায়।

নজরুল বিশ্বাস করতেন মাতৃশক্তির আরাধনায় জাতি ধৰ্ম নির্বিশেষে সবার অধিকার, কারণ মা জগৎ জননী। মায়ের পুজ�ো বস্তুতঃ পক্ষে অমেয় মাতৃশক্তিকে কেন্দ্রে রেখে উৎসব; মহাজাগতিক শাশ্বত মাতৃত্ত্বের উৎযাপন। তাই তিনি ইসলাম ধর্মালম্ববী হয়েও সকলকে মায়ের পুজ�োয় সমবেত হতে আহ্বান জানিয়েছেন; দ্বার্থহীন ভাষায় গেয়েছেন, “আয় অশুচি আয় রে পতিত, এবার মায়ের পূ জা হবে। (যেথা) সকল জাতির সকল মানু ষ নির্ভয়ে মা-র চরণ ছ�োঁবে।“ হিন্দু ও মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতা নজরুলকে ব্যাথিত করেছে বারংবার । তিনি অনু ভব করেছিলেন জগৎজননীর সত্যিকার স্বরূপ অনু ধাবনের ব্যর্থতার জন্যে মানু ষে মানু ষে বিভেদ। তাই জানিয়েছেন সবাই এক মায়ের সন্তান। তিনি চেয়েছেন মানু ষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বব�োধের জাগরণ; সকল বিভেদ ও ধর্মীয় অবিশ্বাসের অবসান। “জননীকে দেখেনি, তাই ভাইকে আঘাত হেনেছে ভাই, (আজ) মাকে দেখে বু ঝবি ম�োরা এক মা-র সন্তান সবে। (এবার) ত্রিল�োক জুড়ে পড়বে সাড়া মাতৃমন্ত্রের মাভৈঃ-রবে॥“ নজরুল তাঁর ভক্তি মূ লক গানে বিশেষ করে আগমনী ও বিজয়া গানে বাঙালী মনের সমস্ত সংবেদনশীল অনু ভূতির দ্বারগুল�ো এক এক করে খুলে দিয়েছেন। আবেগে আর বাৎসল্য রসে ভরে আছে তাঁর সৃ ষ্টি। তিনি সেই আনন্দময়ী জগৎ জননী মাকে দেখেছেন নানা ভাবে। তিনি দেখেছেন মাকে কখনও বা শিব স�োহাগী পার্বতী, কালী ও দূর্গা রূপে, কখনও বা বাঙালী ঘরের সাধারণ মেয়ে উমা রূপে। শিব ও পার্বতীর প্রেমের মধ্যে প্ৰত্যক্ষ করেছেন রাধা ও কৃষ্ণের অনন্ত লীলা তাঁর হরপ্রিয়া গীতি গ্রন্থে। সৈন্ধবীর মুখে মহাদেবের সত্য ও সু ন্দর রূপের বর্ণনায় শ্যাম সু ন্দর কেই দেখেছেন নজরুল । “মহাদেবী! সেই কথা এসেছি জানাতে– যে লীলা করেন তব শিব সু ন্দর শ্যামসু ন্দর সাজে, রস-বৃ ন্দাবনে। নওল কিশ�োর রূপ নব ঘনশ্যাম– মেঘ-অনু লিপ্ত যেন তুষার কৈলাস। গলে ফণী-হার নাই দ�োলে বনমালা জটাজূট হইয়াছে চাঁচর চিকুর, শশীলেখা হইয়াছে বাঁকা শিখী-পাখা বিষাণ হয়েছে বাঁশি, বাঘছাল তাঁর হইয়াছে পীতধরা, মুনি-মন�োহর। শুনি সেই চপলের ঘরছাড়া সু র গ�োপিনীরা ধেয়ে আসে পাগলিনি হয়ে।" ঠিক একই ভাবে তাঁর আধ্যাত্মিক চেতনায় মা দু র্গার গ�ৌরী রূপ শ্যামা মায়ের মধ্যে মিশে গিয়েছে। তিনি গেয়ে উঠেছেন, “আমি সাধ করে ম�োর গ�ৌরী মেয়ের নাম রেখেছি কালী। পাছে ল�োকের দৃ ষ্টি লাগে মাখিয়ে দিলাম কালি তার, স�োনার আঙ্গে মাখিয়ে দিলাম কালি॥ হাড়ের মালা গলায় দিয়ে দিয়েছি তার কেশ এলিয়ে, তবু , আনন্দিনী নন্দিনী ম�োর দেয় রে করতালি। আগমনী গানে, শরৎ কালে শ্বশুর বাড়ি কৈলাশ থেকে উমার ঘরে আসতে দেরি দেখে মায়ের মনের অস্থিরতার কথা নজরুল যেভাবে প্রকাশ করেছেন তা যেন যে ক�োন�ো বাঙালী মায়ের মনের কথা। তাই এ গান হয়ে উঠেছে হৃদয় স্পৰ্শী-আবেগে, বাৎসল্য রসে, আর ভক্তিতে ভরপুর। “আমার) আনন্দিনী উমা আজও এল না তার মায়ের কাছে। হে গিরিরাজ দেখে এস�ো কৈলাসে মা কেমন আছে॥“ পুজ�ো পর্বে, বাপের ঘরে দশভুজা মহিষমর্দিনী দু র্গা মূর্তিতে সাধারণ উমার হঠাৎ উত্তরণ মায়ের মনে স্বাভাবিকভাবেই বিস্ময় জাগায়। মা মেয়েকে আদরের উমা হিসাবেই দেখতে অভ্যস্ত। তাই মেয়েকে দেখে মায়ের মন খুঁজে ফেরে রণরঙ্গিণী দূর্গা মূর্তির মধ্যে দু লালি মেয়ে উমাকে, যাকে 26

Anjali

www.batj.org


নজরুলের চেতনায় ম সহজে কাছে টানা যায় ; স্নেহ করা যায়। নজরুল মা ও মেয়ের এ মধু র অনু ভূতির ও সম্পর্কের দিকটা তুলে ধরেছেন তাঁর সাবলীল অনবদ্য ভাষায়। “আমার উমা কই, গিরিরাজ, ক�োথায় আমার নন্দিনী? এ যে দেখি দশভুজা এ ক�োন রণরঙ্গিণী॥ ম�োর লীলাময়ী চঞ্চলারে ফেলে, এ ক�োন দেবীমূর্তি নিয়ে এলে। এ যে মহীয়সী মহামায়া বামা মহিষমর্দিনী॥“ অন্যান্য গীতিকারদের মত�ো কবি নজরুলও তাঁর রচনায় বিশেষ করে আগমনী ও বিজয়া গানে মানু ষের সু খ ও দু ঃখের কথা বর্ণনা করেছেন উমার সঙ্গে কথ�োপকথনের ভিতর দিয়ে আপন মনের মাধু রী মিশিয়ে। স্যাম্যবাদী কবি নজরুল ধনী দরিদ্র ব্যবধান মুক্ত , সকল রকম ভেদাভেদহীন বিশ্বের জন্যে মায়ের কাছে প্রাথর্না জানিয়ে মাকে কৈলাশে না ফিরে যাওয়ার জন্যে মিনতি করেছেন তাঁর লেখা বিজয়া গানে। “এবার নবীন মন্ত্রে হবে জননী ত�োর উদ্‌ব�োধন। নিত্যা হয়ে রইবি ঘরে, হবে না ত�োর বিসর্জন॥ সকল জাতির পুরুষ নারীর প্রাণ সেই হবে ত�োর পূ জা-বেদি মা ত�োর পীঠস্থান। (সেথা) শক্তি দিয়ে ভক্তি দিয়ে পাতব মা ত�োর সিংহাসন॥ (সেথা) রইবে নাক�ো ছ�োঁয়াছু ঁয়ি উচ্চ-নীচের ভেদ, সবাই মিলে উচ্চারিবে মাতৃনামের বেদ। (ম�োর) এক জননীর সন্তান সব, জানি ভাঙব দেয়াল, ভুলব হানাহানি, দীন দরিদ্র রইবে না কেউ, সমান হবে সর্বজন। বিশ্ব হবে মহাভারত নিত্য-প্রেমের বৃ ন্দাবন॥" এমনি করেই তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অনেক গানে তদানীন্তন সামাজিক সমস্যার কথা। তিনি মা দু র্গাতিনাশিনী দু র্গাকে জানিয়েছেন অসহায় দীন দরিদ্র মানু ষের কষ্টের কথা; জানিয়েছেন অসু র ও দানবের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়নি এ ধরা। “(আজও) মরেনি অসু র, মরেনি দানব, ধরণির বু কে নাচে তাণ্ডব, সংহার নাহি করি সে-অসু রে কেন যাস্‌বিজয়ায়॥“ মায়ের প্রতি নজরুলের শ্রদ্ধা ও ভক্তি অপরিসীম। নজরুল তাঁর অনেক ভক্তিগীতিতে মায়ের কাছে সম্পূ র্ণ আত্মসমর্পন করে অন্তরের ভক্তি নিবেদন করেছেন; মায়ের সান্বিধ্য পাওয়ার জন্যে আকুতি জানিয়েছেন। “((আমার) মুক্তি নিয়ে কী হবে মা, আমি ত�োরে চাই। স্বর্গ আমি চাই না মা গ�ো ক�োল যদি ত�োর পাই।“ মায়ের কাছে তাঁর আত্ম নিবেদন মায়ের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা ও বিশ্বাসকে প্রমাণ করে। নজরুলের ভক্তিগীতি বাংলা সাহিত্যে এক অনবদ্য সৃ ষ্টি; তাঁর মাতৃ সাধনার ফসল; তাঁর উদার ধর্মীয় চেতনার প্রতিফলন। আসলে নজরুল ভারতীয় সনাতনী সংস্কৃতির মূ ল সু রকে অনু ভব করেছেন তার আধ্যাত্মিক ভাবনার ভিতর দিয়ে। তিনি দেখেছেন সেই শাশ্বত নিরাকার সত্যের প্রকাশকে সাকাররূপে বিভিন্ন দেব ও দেবীর মধ্যে। এ চেতনাই নজরুলের মাতৃশক্তি আরাধনায় নতুন মাত্রা এনেছে। তাই তাঁর সৃ ষ্ট ভক্তিগীতি হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন আধ্যাত্মিক সাধনার স�োপান। এবারে ট�োকিও বাঙালী (Tokyo Bengali)র শারদউৎসবে নজরুলের আধ্যাত্মিক চেতনার আল�োয় আজ এ শুভ ক্ষণে মায়ের আরতি করি; শাশ্বত জাগতিক মাতৃস্বত্বার প্রতিমূর্তি মা দু র্গার উদ্যেশে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই; মাকে প্রণাম করি। 

www.batj.org

Durga Puja 2020

27


কৌতুকপ্রিয় রবীন্দ

- ভাস্বতী সেনগুপ্ত

বিগুরুর লেখা বই অথবা কবিগুরুর প্রসঙ্গে লেখা গুনীজনের বই আমাকে নিবিষ্ট করে রাখে। যতবারই পড়ি সেইসব বই –ছাড়তে ইচ্ছে করেনা, ছাড়তে কষ্ট হয়। বর্তমান প্রাকৃ্তিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে, যখন সমস্ত পৃ থিবীর মানু ষ বিপর্যস্ত; তখন এই প্রাত্যহিক উদ্বেগ, দু শ্চিন্তা ও সঙ্কটের উর্ধ্বে মনকে কিছু ক্ষনের জন্য হলেও ভারমুক্ত করা ও আনন্দ দেওয়া –এই লেখার প্রেরনা। আমার মত অসংখ্য রবীন্দ্র অনু রাগী ও বাংলা পাঠক-পাঠিকা,সাহিত্যপ্রেমী নিশ্চয়ই এটি অনু ধাবন করতে পারবেন। কবিগুরুর ক�ৌতুক প্রিয়তা সম্বন্ধে সব ঘটনা এখানে লেখা অসম্ভব, তাই সংক্ষেপে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করছি ও আশা রাখি এই লেখা পাঠকদের আমারই মত আনন্দ দেবে। “(অভিজিৎ) সে গুরুদেব-দাদু কে বাইরে দেখেই ছু টে এল, এসেই দাদু র গা ঘেঁষে গিয়ে দাঁড়াল, বললে, জান�ো দাদু , ত�োমার সব কবিতা আমি মুখস্থ করে ফেলেছি, আর একটাও বাকি নেই। গুরুদেব বললেন, সত্যি নাকি? সব শিখে ফেলেছ? - হ্যাঁ দাদু । স---ব। –তা হলে ত�ো ত�োমার জন্য আবার আমার নতুন করে কবিতা লিখতে হবে দেখছি। গুরুদেব ও অভিজিতের কথা জমে উঠল। উচ্ছাসের ধাক্কায় অভিজিৎ ডান হাঁটুটা গুরুদেবের ক�োলের উপর তুলে দিয়ে বলল, জান�ো দাদু , আজ ক�োন কবিতাটা শিখেছি? শ�োন�ো – “পাঠানেরা যবে বাঁধিয়া আনিল বন্দী শিখের দল- সু হিদ্ গঞ্জে রক্তবরন হইল ধরণীতল। কবিতার মধ্যে ‘পাঠা’ আর ‘রক্ত’ এই দু ট�োই বু ঝেছিল সে। তাই বললে, এর মানে কি জান�ো দাদু ? গুরুদেব মাথা নাড়লেন। অভিজিৎ গুরুদেবের মুখের কাছে হাত নেড়ে নেড়ে ব�োঝাতে শুরু করে দিল, এর মানে হল –পাঁঠাগুলিকে বেঁধে নিয়ে এল-কাটল, আর রক্ত-রক্ত- বলার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতখানি যতটা পারল সামনে বাড়িয়ে দিল। দু -চ�োখ বড়�ো বড়�ো হয়ে উঠল। ভাবখানা- যেন অতি বিস্ময়কর একটা ব্যাপার দেখাচ্ছে সে তার গুরুদেব দাদু কে। গুরুদেব প্রান খুলে হেসে উঠলেন ।বললেন, তাই ত�ো গ�ো, এমন মানে ত�ো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও জানে না গ�ো। (গুরুদেব—শ্রীমতি রানী চন্দ, পৃ ষ্ঠা—১৪০, ১৪১) সু রেন্দ্রনাথের দু ই মেয়ে মঞ্জুশ্রী ও জয়শ্রী। জয়শ্রী নির্বাচন করেছিলেন কুলপ্রসাদ সেনকে। অসবর্ণ বিবাহ বলে পারিবারিক প্রথা অনু যায়ী আপত্তি উঠেছিল, ব্রাক্ষণে-অব্রাক্ষণে বিয়েতে মহর্ষির প্রবল আপত্তি ছিল। এই বিবাহে প�ৌর�োহিত্য করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। অসবর্ণ বিয়ে হলেও রেজিস্ট্রি করা হয়নি। আচার্যের কাজ করলেও কবি তখন এই বিয়ে উপলক্ষে ক�োনও কবিতা লেখেননি। এলাহাবাদে জয়শ্রী কবিকে অনু র�োধ জানালেন একটি কবিতা লিখে দিতে। কবিও লিখলেন – ‘ত�োমাদের বিয়ে হল ফাগুনের চ�ৌঠা, অক্ষয় হয়ে থাক সিঁদুরের ক�ৌটা। সাত চড়ে তবু যেন কথা মুখে না ফ�োটে, নাসিকার ডগা ছেড়ে ঘ�োমটাও না ওঠে । শাশুড়ি না বলে যেন,’কী বেহায়া ব�ৌটা’……। (ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল- শ্রীমতী চিত্রা দেব, পৃ ষ্ঠা- ১৬৩ ) এবার আসি অন্য ঘটনায়। কবিগুরু যে মংপু খুব ভালবাসতেন ও মৈত্রেয়ী দেবীর আতিথ্য গ্রহন করেছেন সেটা সর্বজনবিদিত। মংপুর কমলাবনের উৎকৃষ্ট মধু ও শীতকালে কমলালেবু কবির প্রিয় ছিল। লেবু গুলি পাঠভবনের ছেলেদের ডেকে খাওয়াতেন। ১৩ ফাল্গুন ১৩৪৬

উত্তরায়ন শান্তিনিকেতন

পাড়ায় ক�োথাও যদি ক�োন�ো মউচাকে একটুকু মধু বাকি থাকে,

খালি ব�োতলের পানে চেয়ে চেয়ে চিত্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে সকলি অনিত্য। যদি তা পাঠাতে পার�ো ডাকে সম্ভব হয় যদি এ ব�োতলটারে বিলাতী শুগার হতে পাব নিস্তার, পূর্ণতা এনে দিতে পারে প্রাতরাশে মধু রিমা হবে বিস্তার। দূ র হতে ত�োমার আতিথ্য মধু র অভাব যবে অন্তরে বাজে গ�ৌড়ী গদ্য হতে পদ্যময় পদ্য গুড়ং দদাৎ বানী বলে কবিরাজে। দর্শন দিতে পারে সদ্য ।। দায়ে পড়ে তাই ইতি লু চি পাঁউরুটিগুল�ো গুড় দিয়ে খাই,-রবীন্দ্রনাথ বিমর্ষ মুখে বলি গুড়ং দদাৎ সে যেন গদ্যের দেশে আসি পদাৎ।

মৈত্রেয়ী দেবীর কন্যাকে লেখা চিঠি… মিঠু য়া-( মৈত্রেয়ী দেবীর যত্নাধীনে ) মিঠু য়া দাদু রে যে মনে করে লিখেছ এ চিঠি 28

Anjali

শান্তিনিকেতন ১৭/৩/৪০

www.batj.org


কৌতুকপ্রিয় রবীন্দ তাই ভাবি দাদু তেও আছে কিছু মিঠি । সেটা কি অহৈতুকী প্রীতি অথবা চক�োলেটের স্মৃতি ? এ কথাটা সংসারে নয় খুব স�োজা হয়ত�ো বছর কয় যাবে নাক�ো ব�োঝা তবু যদি লিখে রাখি তাতে ক্ষতি নেই সংক্ষেপে এই ভিতরে এনেছ তুমি বিধাতার চিনি আমি সে বাহির হতে বাজারেতে কিনি – দাদু ( শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ) (স্বর্গের কাছাকাছি – শ্রীমতী মৈত্রেয়ী দেবী -- পৃ ষ্ঠা ২৬১,২৬২,২৬৩) আবার আসি শ্রীমতী রানী চন্দে্র কথায়…… “সহজ হৈ চৈ তাঁকে (গুরুদেবকে) বড়�ো আনন্দ দিত। এক বর্ষায় বর্ষামঙ্গলের রিহার্সেল হছে উদয়নের পশ্চিম-বারান্দায়। নাচগানে প্রতি সন্ধ্যা জমে ওঠে সেখানে…… গুরুদেব বললেন, বর্ষামঙ্গলটা হয়ে যাক, তারপরেই আমরা করব ভরসামঙ্গল। পরদিনই ‘ভরসামঙ্গলে’র রিহার্সেল শুরু হয়ে গে্ল। ……আমরাও জড়�ো হই জনকয়েক মিলে মজা দেখতে। গুরুদেবকে এসে পরে বর্ণনা দিই। শুনে গুরুদেবও হাসেন। বলেন, আমিও একটা গান লিখে দেব ওদের জন্য – পরদিন আর�ো দু ট�ো গান লিখলেন – ‘ও ভাই কানাই, কারে জানাই দু ঃসহ ম�োর দু ঃখ, তিনটে-চারটে পাস করেছি, নই নিতান্ত মুকখ।। তুচ্ছ সা-রে-গা-মা’য় আমায় গলদঘর্ম ঘামায়, বু দ্ধি আমার যেমনি হ�োক কান দু ট�ো নয় সূ ক্ষ্ম – এই বড়�ো ম�োর দু ঃখ কানাই রে, এই বড়�ো ম�োর দু ঃখ।। আর…… পায়ে পড়ি শ�োন�ো ভাই গাইয়ে, ম�োদের পাড়ার থ�োড়া দূ র দিয়ে যাইয়ে। ( গুরুদেব – শ্রীমতী রানী চন্দ -– পৃ ষঠা ৬২, ৬৩) তখনকার দিনে দার্জিলিং যাওয়া আজকের মত�ো সহজ ছিলনা। সেইযাত্রার এক চলমান ছবি ইন্দিরা দেবীকে লিখে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই চিঠির কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করছি…… দার্জিলিং , সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ “সারা-ঘাটে স্টিমারে ওঠবার সময় মহা হাঙ্গাঁম। রাত্রি দশটা- জিনিষপত্র সহস্র, কুলি গ�োটাকয়েক, মেয়েমানু ষ পাঁচটা এবং পুরুষমানু ষ একটিমাত্র, নদী পেরিয়ে একটি ছ�োট�ো রেলগাড়ীতে ওঠা গেল—তাতে চারটে করে শয্যা, আমরা ( মাখন-সু দ্ধ ) ছটা মনিষ্যি। মেয়েদের এবং অন্যান্য জিনিষপত্র Ladies Compartment এ ত�োলা গেল—কথাটা শুনতে যত সংক্ষেপ হল কাজে ঠিক তেমনটা হয়নি। ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি ছু ট�োছুটি নিতান্ত অল্প হয়নিতবু নদিদি বললেন আমি কিছু ই করিনি। অর্থাৎ, আমার মত�ো ডাগর পুরুষমানু ষের পক্ষে পাঁচজন মেয়ে নিয়ে এর চেয়ে ঢের বেশি ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি এবং ছু ট�োছুটি করা উচিত ছিল, মাঝে মাঝে যেখানে সেখানে নেবে হিন্দুস্থানি বু লিতে প্ল্যাটফর্ম –ময় দাপিয়ে বেড়ান�ো উচিত ছিল। অর্থাৎ, একখানা আস্তমানু ষ একেবারে আস্ত রকম ক্ষেপলে যে রকমটা হয় সেই প্রকার মূর্তি ধারন করলে ঠিক পুরুষমানু ষের উপযু ক্ত হত। আমার ঠাণ্ডা ভাব দেখে নদিদি নিতান্ত disappointed । কিন্তু এই দু দিনে আমি এত বাক্স খুলেছি এবং বন্ধ করেছি এবং বেঞ্চির নীচে ঠেলে গুঁজেছি এবং উক্ত স্থান থেকে টেনে বের করেছি, এত বাক্স এবং পুঁটুলির পিছনে আমি ফিরেছি এবং এত বাক্স এবং পুঁটুলি আমার পিছনে অভিশাপের মত�ো ফিরেছে, এত হারিয়েছে এবং এত ফের পাওয়া গেছে এবং এত পাওয়া যায়নি এবং পাবার জন্য এত চেষ্টা করা গেছে এবং যাচ্ছে যে, ক�োন�ো ছাব্বিশ বৎসর বয়সের ভদ্র সস্তানের অদৃ ষ্টে এমনটা ঘটেনি। আমার ঠিক বাক্স-phobia হয়েছে, কেবলই বাক্স, ছ�োট�ো বড়�ো মাঝারি, হাল্কা এবং ভারি, কাঠের এবং টিনের এবং পশুচর্মের এবং কাপড়ের—নীচে একটা, উপরে একটা, পাশে একটা, পিছনে একটা—তখন আমার শূ ন্যদৃ ষ্টি শুষ্কমুখ এবং দিনভাব দেখলে নিতান্ত কাপুরুষের মত�ো ব�োধ হয়—অতএব আমার সম্বন্ধে নদিদির যা মত দাঁড়িয়েছে তা ঠিক—আমি বিবিধ-বিচিত্র-মুর্তি বাক্সের মধ্যে পড়ে কী এক রকম হয়ে গিয়েছিলাম। সু রেনকে বলিস আমার এই অবস্থার একটি ছবি আঁকতে । যাক। তার পরে আমি আর-একটা গাড়িতে গিয়ে শুলু ম।” ……সেপ্টেম্বর ১৮৮৭, ছিন্নপত্রাবলী নিজেকে নিয়ে সরস ঠাট্টা –ম�োটেও সহজ নয়।স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কী অবলীলায় তা করতে পারেন, এটা তারই একটা উদাহরণ। ঠাকুরবাড়ির এক ঝাঁক মহিলার সঙ্গে এসকর্ট রুপে চলেছেন ছাব্বিশ বছরের যু বক, রবীন্দ্রনাথ। ভাদ্রের পচা গরম থেকে কিছু কালের জন্য নিষ্কৃতি পাওয়ার আশায় দার্জিলিং যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কবিগুরুকে নিয়ে সারা পৃ থিবীতে গবেষনা ও প্রকাশনা হয় এবং হয়ে চলবে কারন উনি নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। বাংলায় কবিগুরুর মতই বহু মনিষী ও মহামানব জন্মগ্রহন করেছেন এবং যু গের পর যু গ তাঁরা মানু ষকে অনু প্রাণিত করে চলেছেন, বাংলা তথা ভারত তাই গর্বিত ও ধন্য। কবিগুরুকে ও সকল মহামানবকে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানাই। গ্রন্থ ঋণ…… গুরুদেব – শ্রীমতী রানী চন্দ স্বর্গের কাছাকাছি –শ্রীমতী মৈত্রেয়ী দেবী ছিন্নপত্র – শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধ্রুবপদ – বার্ষিক সংকলন –শ্রী সু ধীর চক্রবর্তী া www.batj.org

 Durga Puja 2020

29


বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ র

- পার্থ কুম

যে

ক’জন বাঙালিকে নিয়ে আমাদের গর্ব চিরকালীন, তাঁদের অন্যতম সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী ছিল এই বছর । সত্যজিৎ রায় চিত্রপরিচালক হিসাবে সমাদৃ ত হলেও আমাদের অনেকের কাছে ওনার প্রথম পরিচয় লেখক হিসাবে। যদিও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবে তিনি গ�োল্ডেন লায়ন, গ�োল্ডেন বিয়ার, সিলভার বিয়ার, অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন, ওনার অনেক বড় অবদান বাংলা কিশ�োর সাহিত্যে। শুধু মাত্র লেখক হিসেবেই কি তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনন্য স্থান অধিকার করেন না? গ�োয়েন্দা ফেলু দা থেকে বৈজ্ঞানিক প্রফেসর শঙ্কু কিংবা মজলিশি তারিনীখুড়ো, প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে অভিযান প্রিয় বাঙালির অনু সন্ধিৎসু মননের ঝলক দেখা যায়। সত্যজিতের লেখার ছত্রে ছত্রে সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস আর বিজ্ঞানের সহজপাঠ। খুব সহজ সরল ভাষায় যিনি কিশ�োর পাঠকদের অজানাকে জানার ক�ৌতূ হল জাগিয়েছেন ওনার রচনায় ।

বাঙালি লেখকরা ২০০ বছরেরও বেশি সমৃ দ্ধ সাহিত্য ইতিহাসে বহু গ�োয়েন্দা চরিত্র উপহার দিয়েছেন । কিন্তু, রায়ের সৃ ষ্টি "ফেলু দা" ক�োনও সন্দেহ ছাড়াই তাদের সবার মধ্যে সেরা বলা যেতে পারে। বেশিরভাগ ভারতের পটভূমিতে রচিত এই উপন্যাসগুলি কিশ�োর পড়ুয়াদের সাথে প্রবীণ পাঠকগণ

ফেলুদা বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদপট দ্বারাও সমাদৃ ত। ১৯৬৫ সালে ফেলু দার প্রথম গল্প পত্রিকায় প্রকাশ হতেই তা পাঠক মহলে সমাদৃ ত হয়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ফেলু দা সিরিজের ম�োট ৩৫ টি সম্পূ র্ণ ও চারটি অসম্পূ র্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়। সিরিজের সমস্ত গল্পে ফেলু দাকে দেখা যায় মগজাস্ত্রের উপর ভর করে জটিল থেকে জটিলতর রহস্যের জট খুলে দিতে। কলকাতার ২১ নম্বর রজনী সেন র�োডএর বাসিন্দা শখের গ�োয়েন্দা প্রদ�োষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলু দার বিচরণক্ষেত্র বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সীমা পেরিয়ে মহারাষ্ট্র, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে এবং শেষের দিকে নেপাল, হংকং ও লন্ডন এ পৌঁছয়। তাঁর দু ই সঙ্গী ভাইপ�ো ত�োপসে ও গরপাড় র�োড বাসি লালম�োহন গাঙ্গুলি বা জটায়ু কে নিয়ে যাবতীয় রহস্য সমাধান করে যান। ফেলু দার কথা বললে আর দু ই চরিত্রের নাম না করলে লেখা অসমাপ্ত থেকে যায়। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন সর্দার শঙ্কর র�োডএর বাসিন্দা সিধু জ্যাঠা বা সিদ্ধেশ্বর ব�োস। তিনি একজন বয়স্ক চরিত্র, যিনি নিজেকে শার্লক 30

Anjali

www.batj.org


বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ র হ�োমসের ভাই মাইক্রফ্টের মত�ো বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি একজন চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া, ফট�োগ্রাফিক স্মৃতির অধিকারী ফেলু দার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু । তাঁর বিস্তৃত জ্ঞান ফেলু দার অনু সন্ধানের কাজে প্রায়শই শেষ অবলম্বন। আর একজন হচ্ছেন মগনলাল মেঘরাজ। বেনারসবাসি মগনলাল হলেন এক খলনায়ক চরিত্র যিনি ফেলু দার তিনটি গল্পে আছেন। তিনি একজন সু দের কারবারি তবে তার আসল ব্যবসা দু ষ্প্রাপ্য শিল্পকর্ম চ�োরাচালান, মাদক ব্যবসা আরও অনেক অবৈধ ব্যবসা। সেই চারমিনার হাতে চিন্তাশীল ফেলু দা’তে আজও মজে বাঙালি। ছ�োটবেলায় পড়া আর্থার ক�োনান ডয়েলের শার্লক হ�োমসে প্রভাবিত হয়েই ফেলু দা চরিত্রের সৃ ষ্টি সত্যজিতের। তাই ফেলু দা সিরিজের বিভিন্ন চরিত্রের সাথে অনেক জায়গায় শার্লক হ�োম সিরিজের কিছু চরিত্রের মিল দেখতে পাই। সৃ ষ্টির এতবছর কেটে গিয়েছে, ফেলু দা আজও পাঠকের কাছে সমান সমাদৃ ত।

প্রফেসর শঙ্কু র বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদপট যদিও ফেলু দা ওনার সৃ ষ্টিত চরিত্রগুলির মধ্যে প্রথমস্থান পায় , কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যিক হিসাবে তাঁর সৃ ষ্টি প্রোফেসর শঙ্কু বাংলা এবং ভারতীয় সাহিত্যেও এক অনন্য চরিত্র। তিনি বিজ্ঞানের আগ্রহী পাঠক ছিলেন এবং আর্থার সি ক্লার্কের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রফেসরের সৃ ষ্টি খানিকটা জুলুস ভার্ন, এইচজি ওয়েলস, আইজ্যাক আসিমভ এবং আর্থার সি ক্লার্কের মত�ো অগ্রণীদের কাজ থেকে অনু প্রাণিত বলে মনে করা হয় । সত্যজিৎ রায়ের বহু-মুখী ব্যক্তিত্বের তুলনামূ লকভাবে কম পরিচিত দিকটি প্রোফেসর শঙ্কুকে নিয়ে লেখা ম�োট ৩৮ টি সম্পূ র্ণ ও ২ টি অসম্পূ র্ণ গল্পে শাশ্বত হয়ে আছে। জীবনের ক�োনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি সেই প্রোফেসর শঙ্কু চরিত্রের মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে খুলে দেন কল্পবিজ্ঞানের এক অবাধ জগৎ। গিরিডির বাসিন্দা ও স্কটিশচার্চ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শঙ্কু পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও বিজ্ঞানের সকল শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। তিনি ৬৯ টি ভাষা জানেন, হায়ার�োগ্লিফিক লিপি অবধি পড়তে পারেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশের ভ�ৌগ�োলিক অবস্থান, ধর্ম, সামাজিক রীতিনীতি ও বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে যাঁর অঢেল জ্ঞান। আবার ভারতের সনাতন ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল শঙ্কু একইসঙ্গে শ্রদ্ধা করেন সমগ্র বিশ্বের প্রাচীন সাহিত্য ও শিল্পকর্মকে। প্রোফেসর শঙ্কু ক্রমাগত নতুন উদ্ভাবনএর মাধ্যমে পশ্চিমের উদ্ভাবনগুলিকে সহজেই তার স্বল্প খরচে এবং দেশি পদ্ধতিতে তৈরী যন্ত্রের কাছে হার মানান। পুর�ো সিরিজ জুড়ে প্রোফেসরের ম�োট ৭২ টি আবিষ্কার সম্পর্কে জানা যায়। এই আবিষ্কারের নামকরণের ক্ষেত্রেও সত্যজিৎ রায়ের ক�ৌতুকব�োধের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন, শঙ্কু আবিষ্কৃত র�োবট বিধু শেখর সাধু ও চলিত বাংলায় কথা বলতে পারে; আবার তৃষ্ণানাশক বড়ির নাম ‘তৃষ্ণাশক বড়ি’। শঙ্কু র কয়েকটি উল্লেখয�োগ্য আবিষ্কার হল বটিকা ইন্ডিকা, এয়ারকন্ডিশানিং পিল, লিঙ্গুয়াগ্রাফ, লু মিনিম্যাক্স, সমুনলিন, রিমেম্ব্রেন, মিরাকিউরল,শ্যাঙ্কোপ্লেন এবং ব্রম্হাস্ত্র অ্যানাইহিলিন পিস্তল, যার উল্লেখ অনেকগুলি গল্পে আছে। প্রফেসর শঙ্কু গল্পেরও পটভূমি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তাঁর অভিযান কলকাতার বিভিন্ন স্থান থেকে শুরু করে মার্কিন যু ক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, মিশর, জার্মানি, জাপান, স্পেন, নরওয়ে, সু ইডেন, তিব্বত, সাহারা মরুভূমি থেকে সমুদ্রের www.batj.org

Durga Puja 2020

31


বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ র তলদেশ, অজানা দ্বীপ ছু ঁয়ে যায়। অভিযানে তার সঙ্গী অবিনাশবাবু অথবা জার্মান বৈজ্ঞানিক ক্রল এবং ইংরেজ গবেষক স্যান্ডার্স। আবার কখন�ো জাপানি বৈজ্ঞানিক হামাকুরা ও তানাকার সঙ্গে শঙ্কু ভিন গ্রহের প্রাণীর সন্ধানে সমুদ্রের তলদেশে, কখন�ো মার্কিন বৈজ্ঞানিক ডাম্‌বার্টনের সঙ্গে একটি সদ্য-আবিষ্কৃত প্রাগৈতিহাসিক গুহা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে পঞ্চাশ হাজার বছর বয়সী গুহামানবের মুখ�োমুখি, কখন�ো ইংরেজ প্ৰাণীতত্ত্ববিদ ম্যাসিংহ্যাম ও তার গেরিলা বাহিনীর কব্জায়। এই গল্প গুল�ো ১৯৬১ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সন্দেশ , আনন্দমেলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পূ জাবার্ষিকী আনন্দমেলা আর সন্দেশের অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রফেসর শঙ্কু র নতুন উপন্যাস। পরবর্তীকালে বাংলায় কল্পবিজ্ঞানের অনেক লেখক এলেও মধ্যবিত্ত বাঙালির এডভেঞ্চার এর নেশা আর অনু সন্ধিৎসু মন পরিপূর্ণতা পায় তাঁর সৃ ষ্টি প্রফেসর শঙ্কু র মাধ্যমে।

এক ডজন গপ্পো ও অন্যান্য বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদপট সত্যজিৎ রায় অনেকগুলি ছ�োটগল্প লিখেছেন যেগুল�ো বারটির সংকলনে প্রকাশ করা হয়। ম�োট সাতটি বই প্রকাশ করা হয় ১৯৭০ থেকে ১৯৯১ এর মধ্যে। এই সংকলন গুলিতে এত�ো মণিমুক্তো আছে যা স্বল্প সময়ের মধ্যে বর্ণনা করা সম্ভব নয় । এই ছ�োটগল্পগুল�োতে অনিশ্চিত উৎকণ্ঠা, ভয় ত�ো আছেই আর আছে কল্পবিজ্ঞান, অল�ৌকিক ঘটনা আর কঠিন বাস্তব। ছ�োট গল্পগুলির সবচেয়ে চমকপ্রদ দিকটি হ’ল এগুল�ো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শুরু করে বিস্ময়কর শেষ। একদিকে মধ্যবিত্ত আশা, ক�ৌতুক এবং কল্পনা, অন্যদিকে, দৈনন্দিন বাস্তবতার নিখুঁত সামঞ্জস্যের সহাবস্থান। তাঁর সমস্ত সাহিত্যকর্মের মধ্যে রায় ছিলেন উপেক্ষিত মানু ষের সমর্থক। একটি সাক্ষাত্কারে তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, “আসলে, আমি সব ধরণের গল্প লিখেছি, তবে আমি সাধারণত নিঃসঙ্গ মানু ষ এবং তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি সম্পর্কে লিখতে পছন্দ করি।” এই গল্পগুলির কিছু কিছু চলচিত্র বা টিভি সিরিয়াল হয় পরবর্তী কালে। ওনার অন্যান্য রচনার মধ্যে তারিণী খুড়�ো আর এক অমর চরিত্র। ষাট পের�োন�ো তারিণী খুড়ো যু বক বয়স থেকে নানা ধরনের চাকরি করতে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান�োর বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার গল্প শ�োনান বাচ্চাদের। সেখানে আবার লেখক পাঠকের কাছে উজাড় করে দেন ভূতের ও হাসির গল্পের ঝুলি। যার অধিকাংশ গল্পে দেখা যায় উপস্থিত বু দ্ধি কাজে লাগিয়ে কীভাবে একের পর আসন্ন বিপদকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন তারিণী খুড়ো। ম�োল্লা নাসিরুদ্দিন মধ্যপ্রাচ্যের গল্প হলেও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বেশ জনপ্রিয়। তাকে বাংলা পাঠকমহলের কাছে পরিচিতি দেওয়ার ভার নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। হাস্যরসাত্মক চরিত্র হিসেবে পরিচিত ম�োল্লা নাসিরুদ্দিনকে দেখা যায় একদিকে একজন প্রাজ্ঞ মানু ষ ও দার্শনিক হিসেবে, আবার ক�োনও গল্পে তিনি হদ্দ ব�োকা। সত্যজিৎ রায়ের আরও অনেক রচনার মধ্যে ফটিকচাঁদ, যখন ছ�োট ছিলাম আর একেই বলে শুটিং উল্লেখয�োগ্য । সত্যজিৎ রায়ের নিজের য�ৌবনের কল্পনার প্রভাবগুলি তাঁর গল্পগুলিতে প্রকাশ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ যাদু র প্রতি তাঁর মুগ্ধতা, দু র্দান্ত এবং অতিপ্রাকৃতের প্রতি তাঁর ঝ�োঁক স্পষ্ট। হয়ত�ো তিনি চলচ্চিত্রে যা করা সম্ভব নয়, সেই দিকগুলি তাঁর লেখায় উপভ�োগ করেছিলেন। তবে তাঁর সাহিত্য আরও গভীরভাবে অনু ভব করলে ব�োঝা যায় যে এর সামান্য পটভূমির নীচে একটা গভীর নদী বয়ে চলেছে যেটি তাঁর মানবতাবাদী জ্ঞান এবং সংবেদনশীল মনের প্রতিবিম্ব। জীবনের গভীর পর্যবেক্ষণের সাথে আবেগের দৃ ঢ় লাগাম, সাথে বাস্তববাদী, মানবিক মূ ল্যব�োধের জয়জয়কারে উজ্জ্বল, সরলতা, নৈতিকতা এবং সর্বোপরি ন্যায়বিচারের শিক্ষা তাঁর সাহিত্যসৃ ষ্টি। সত্যজিতের লেখার মূ ল লক্ষ্য ছিল কিশ�োর তরুণ পাঠক বর্গ, যদিও তিনি আবালবৃ দ্ধবনিতার কাছে বড্ড প্রিয়। সাহিত্যিক হিসেবে এরচেয়ে বড় সাফল্য আর কী হতে পারে! আমাদের শৈশবের দীর্ঘ গ্রীষ্মের ছু টির দু পুরগুলিতে তাঁর বই না থাকলে জীবন হয়ত�ো অন্যরকম হত। তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার জন্য কেবল আমারা অজানাকে খুঁজতে বের�োইনি , সত্যকে অনু সন্ধান করতেও তিনি আমাদের অনু প্রাণিত করেছেন । সত্যজিতের অধিকাংশ রচনাই ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং বর্তমানে তাঁর বইগুল�োর দ্বিতীয় প্রজন্মের পাঠকসমাজ গড়ে উঠেছে। আশা করি আগামী প্রজন্মের পাঠকেরা ওনার রচনাকে সমানভাবে সমাদৃ ত করবেন।  তথ্যসূ ত্র:

1. Satyajit Ray: The Inner Eye: The Biography of a Master Film-Maker : Andrew Robinson 2. Satyajit Ray: Interviews (Conversations With Filmmakers Series) : Bert Cardullo

3. সত্যজিৎ রায় রেডিও ইন্টারভিউ - অমিত চক্রবর্তী

https://www.youtube.com/watch?v=GicoRyqcY9c

4. Satyajit Ray interviewed | Pierre Andre Boutang | https://www.youtube.com/watch?v=9H_lX2FRhxw 5. South Bank Show- Satyajit Ray Interview | https://www.youtube.com/watch?v=-aIvizeAHm0&t=1079s

6. Conversation with Satyajit Ray | Gideon Bachmann | https://www.youtube.com/watch?v=sTOpURHaZUg 7. Celebrating 100 years of Satyajit Ray: Satyajit Ray’s best-kept secret: by Gulzar https://www.hindustantimes.com/brunch/ celebrating-100-years-of-satyajit-ray-satyajit-ray-s-best-kept-secret-by-gulzar-part-3/story-reald58fVE8KeOXlGaeLML.html 8. Inventions of Professor Shonku - https://visual.ly/community/Infographics/entertainment/inventions-professor-shonku

32

Anjali

www.batj.org


যে ভক্তি তোমারে লয়ে ধৈর্য নাহি মান

মু হূর্তে বিহ্বল হয় নৃ ত্যগীতগানে   - শুভা কোকুবো চক্রব

রনে গরদের শাড়ী, গলায় ছ�োট রুদ্রাক্ষের মালা, কপালে একটু লম্বা সাদা টিপ। এমন এক ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী, মনে হয় যেন সর্বদা জ্যোতি বিকীর্ণ হচ্ছে।

তিনিই প্রবাদপ্রতিম নৃ ত্যগুরু শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতি অমলা শঙ্কর, আমাদের প্রিয় মাসিমা। পৃ থিবী জ�োড়া খ্যাতি তাঁর। আজকাল google, wikipedia খুঁজলে আমরা অনেকটাই জানতে পারি। তাঁর অবস্থান, তাঁর কীর্তি, তাঁর সৃ ষ্টি ইত্যাদি ইত্যাদি প্রায় সবটাই। আজ লিখতে ইচ্ছে করছে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা। স্মৃতিচারন করতে বসে খেই হারিয়ে ফেলছি। কত যে অভিজ্ঞতা। আমার পরম স�ৌভাগ্য আমি মাসিমার স্নেহাশীর্বাদ পেয়েছি। ছ�োটবেলায় দাদু দিদা, বাবা মায়ের কাছে তাঁদের দেখা শঙ্কর স্কোপ'য়ের গল্প অনেক শুনেছি। তারপর মমতাশঙ্কর ব্যালে ট্রুপে অংশ নেবার পর মাসিমাকে কাছ থেকে দেখেছি। বিভিন্ন ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে আস্তে আস্তে বু ঝেছি বা বলা যেতে পারে ব�োঝার চেষ্টা করেছি উদয়শঙ্কর নৃ ত্যঘরাণার গভীরতা। ক�োলকাতায়, দিল্লীতে একই মঞ্চে মাসিমার তত্ত্বাবধানে 'উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচার সেন্টার'য়ের কলাকুশলীরা আর মমদির (শ্রীমতি মমতাশঙ্কর) তত্ত্বাবধানে আমরা অর্থাৎ মমতাশঙ্কর ব্যালে ট্রুপ। গ্রীনরুমে কত গল্প শুনিয়েছেন স্বামী নৃ ত্যগুরু উদয়শঙ্করের। মুগ্ধ হয়ে শুনেছি, কেবল শুনেছি। আজ এতদিন পর ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয় এমন সব অভিজ্ঞতা। একটি মজার ঘটনা মনে পরছে। আমরা কখনও কখনও ক�োলকাতার বাইরে অনু ষ্ঠান করতে যেতাম বাসে করে। অনু ষ্ঠানের দিন সকালে বাস দাঁড়াত�ো অফিসের সামনে। আমরা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে বাসে উঠতাম। মমদি আগেরদিন রিহার্সাল শেষ করে মায়ের কাছে ছিলেন। তাই আমাদের বাস মাসিমার জয়জয়ন্তী ফ্ল্যাটের নীচে থামলে, মমদি উঠে আসতেন বাসে। আমরা সবাই বাসের জানলা দিয়ে হাত জ�োড় করতাম মাসিমার ১০তলার ঝ�োলান�ো বারান্দার দিকে তাকিয়ে। ওখানে দাঁড়িয়ে কি সু ন্দর সব মুভমেন্ট করতেন আর তারপর আশীর্বাদ করতেন আমাদের। বিয়ের পর প্রথম জুন ক�োলকাতায় গেলে মাসিমা যেতে বললেন। সকালে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন রাশিয়া থেকে আগত কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে ইন্টারভিউ ছিল। তারমধ্যেই সময় বার করেছিলেন আমাদের জন্য। এই ভাগ্য ক'জনের হয়! অনেকক্ষন গল্প হয়েছিল সেদিন, মনে আছে। জাপানের নতুন পরিবেশে আমার দিন কিভাবে কাটছে, আমি নাচ শুরু করেছি কিনা ইত্যাদি সব খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসা করেছিলেন। জুনের সঙ্গেও অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। আমি ছিলাম দ�োভাষীর ভুমিকায়। তখনত�ো ম�োবাইলের যু গ নয়, আর এসব জায়গায় ক্যামেরা বার করতেও ইতস্তত ব�োধ হয়। মাসিমার সম্মতিতেই ২/৩টে ছবি তুলেছিল জুন।

www.batj.org

যতবার গ্রুপ নিয়ে ক�োলকাতায় উদয়শঙ্কর নৃ ত্য উৎসবে অনু ষ্ঠান করেছি, মাসিমা র ব ী ন্দ্র স দ নে র প্রথম সাড়িতে বসে অনু ষ্ঠান দেখেছেন। অনু ষ্ঠানের পর দেখা করেছি ব্যাকস্টেজে ট্রুপ নিয়ে। একটা একটা নাচ ধরে ধরে খুঁটিনাটি বলেছেন। মেয়েদের নাচের প্রশংসা করতেন সবসময়। প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মাসিমার নিজের ফ্ল্যাটে একা থাকাটা মমদির জন্য বেশ চিন্তার কারণ হয়। মমদি নিয়ে এলেন মাকে নিজের কাছে। বয়স ৯০ ক্রস করেছে। তখন মাসিমা আর নাচতেন না। কিন্তু অবচেতন মনে নিজের গ্রুপ, নিজের স্কু ল, নাচ নিয়ে এত ভাবতেন, শুনেছি মাঝেমধ্যেই ঘুম থেকে উঠে বলতেন গাড়ি এসে গেছে? শ�োয়ের ট্রাঙ্ক ঠিকমত উঠেছেত�ো? আবার তখন ব�োঝান�ো হ�োত...এইভাবেই চলছিল। একদম স্পষ্ট কথাবার্তা বলতেন। ক�োলকাতায় মমদির বাড়ি গেলে পাশে বসিয়ে সব জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। গতবছর (২০১৯) ১০০বছর পূর্ণ হ�োল। ২০২০র জুন মাসে ১০১বছর। আর তারপর ২৪শে জুলাই সারা বিশ্ব যখন অসম্ভব অস্থিরতার মধ্যে ধু কতে ধু কতে চলছে সেই সময় ঘুমের মধ্যেই নীরবে চলে গেলেন অনন্তধামে। মহাশ্মশাণে গানস্যালু টের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান�ো হ�োল বিদেহী আত্মার প্রতি। শ�োকস্তব্ধ হ�োল পৃ থিবী। রেখে গেলেন কালজয়ী সব সৃ ষ্টি। সৃ ষ্টির মধ্য দিয়েই চিরজীবন বেঁচে থাকবেন নৃ ত্যগুরু শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতি অমলাশঙ্কর। মাসিমার সঙ্গে ত�োলা আমার একটি ছবি পাঠিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুকে। বন্ধু র মামা সাংবাদিক শ্রী সু মন গুপ্ত। দৈনিক বর্তমান পত্রিকার রবিবারের পাতায় মাসিমার বর্ণময় জীবন নিয়ে দীর্ঘ ধারাবাহিক লিখেছিলেন। আমার পাঠান�ো ছবিটি দেখামাত্র তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে একটি চিঠি কপি করে আমার বন্ধু মারফত আমাকে পড়তে পাঠিয়ে দিলেন। মাসিমার নিজের হাতে লেখা চিঠি পড়লাম বারবার। চিঠির নীচে মাসিমার নিজের নাম সই করা। ভাবছিলাম খুব কাছ থেকে যাঁকে এতটা সময় দেখেছি। মুখ ফুটে কখনও বলতে পারিনি অট�োগ্রাফের কথা। শেষবেলায় মাসিমা'ই ব�োধহয় আমায় আশীর্বাদ্স্বরূপ দিয়ে গেলেন তাঁর অট�োগ্রাফের কপি। আমার সাষ্টাঙ্গ প্রণাম মাসিমা। 

Durga Puja 2020

33


�������������������

ককালে ক�োলকাতার খুব সরু গলিকে বলা হত গলিস্য গলি তস্য গলি। এতে গলি শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ব্যাকরণ মতে দু দু বার ষষ্ঠী তৎপুরুষ ব্যবহৃত হলেও বিদ্যাসাগর মশায়ের ব্যাকরণ ক�ৌমুদীতে এর ক�োন হদিস পাওয়া যাবে না। বাংলায় যে সব সরু রাস্তা দু ধারে বাড়ীর মাঝখান দিয়ে যায় তাকে গলি বলা হয়। ইংরিজিতে এর প্রতিশব্দ হল লেন। আর যে সব গলি আরও সরু হয়ে আরেকটা গলির থেকে বের হয় তাকে বলা হয় বাই-লেন যাকে রসিকতা করে চলতি বাংলায় বলা হয়েছে তস্য গলি। গলি গিয়ে মিশেছে অপেক্ষাকৃত একটু চওড়া রাস্তায় আবার সেই রাস্তা গিয়ে মিশেছে তার থেকেও চওড়া আরেকটা রাস্তায়। এই ভাবে গলি থেকে রাজপথ নিয়ে ক�োলকাতা শহর যা একসময় পরাক্রান্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ভারতের রাজধানী ছিল। পৃ থিবীর সমস্ত শহরের মত কলকাতাও নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য তৈরি করে নিল তার স্থাপত্য, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি দিয়ে। এর সঙ্গে আরেকটা ব্যাপার দিয়ে ক�োলকাতার সাংস্কৃতিক পটভূমি চিহ্নিত করা যায় তা হল শহরটার বিভিন্ন অঞ্চল আর রাস্তা ও ঘাটের নাম দিয়ে। এ প্রসঙ্গে ক�োলকাতা পত্তনের ইতিহাস একটু ঝালিয়ে নিলে বু ঝতে সু বিধে হবে। সেই সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি গঙ্গার পূ বপাড়ে বাগবাজার আর বরানগর ঘিরে যে জনপদ আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে তা ক�োন পরিকল্পনা মাফিক হয় নি। অবস্থানগত হিসেবে ক�োলকাতা হল বিষু বরেখার উত্তরে ২২-১৩ অক্ষাংশে আর গ্রিনু ইচের পূর্বে ৮৮-২৩ দ্রাঘিমাংশে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় একশ মাইল ভিতরে গঙ্গা নদীর পশ্চিম পাড়ে সমুদ্রপৃ ষ্ঠ থেকে গড়ে প্রায় ষ�োল থেকে আঠার�ো ফুট উঁচু এই শহর ক�োলকাতার অবস্থান। এই গঙ্গাকে ব্রিটিশরা বলত হুগলী নদী। স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দারা এই নদীকে পবিত্র জ্ঞানে মা গঙ্গা বা ভাগীরথী বলত গড়ে যার প্রস্থ ছিল প্রায় দেড় মাইল। পত্তনকালে এই শহর গড়ে ওঠে গঙ্গার ধার ধরে চিতপুর থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার মাইল জায়গা নিয়ে। জমির স্বাভাবিক ঢাল ছিল পশ্চিম থেকে পূবে লবণ হ্রদের দিকে। ফলে পরবর্তী সময়ে W. C. Clarke ক�োলকাতার খ�োলা অথবা মাটির তলার নিকাশি ব্যবস্থা তৈরির সময় স্বাভাবিক ঢালের কথা খেয়াল রেখেই করে ছিলেন। বিভিন্ন অঞ্চলের মানু ষ মূ লত ব্যবসায়িক কারণে এখানে বসত্ শুরু করে। ফলে যত্রতত্র বাড়ি ঘরদ�োরের সঙ্গে ড�োবা- পুকুর ইত্যাদি কাটা হতে থাকে। গড়ে ওঠা এই জনপদে না ছিল ক�োন পরিকল্পিত পানীয় জল সরবরাহের পরিষেবা বা নিকাশি ব্যবস্থা, না ছিল যাতায়াত আর মালপত্র এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযু ক্ত ক�োন রাস্তা। এ সময় নতুন গড়ে ওঠা এই জনপদে বসবাসকারী মানু ষজনের জীবনযাত্রা কেমন ছিল অনু মান করা সহজ। এর ফলে সে সময় একটা কলেরা মহামারীতে কয়েকশ মানু ষ প্রাণ হারান যার মধ্যে একটা বড় অংশ ছিল ইংরেজ ও অন্যান্য ইউর�োপীয় মানু ষ যারা ব্যবসা বানিজ্যের কারণে এই অঞ্চলে ডেরা বেঁধে ছিল। ইংরেজ, ওলন্দাজ, ইত্যাদি ইউর�োপীয়রা ছাড়াও পূবে চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমের বদ্যিনাথ ধামের সব রকম মানু ষও দলে দলে এখানে ডেরা বাঁধতে শুরু করেন। ব্যবসা বানিজ্য বা যাতায়াত মূ লত নদী মাত্রিক হওয়ায় গঙ্গা নদীর ধার ঘিরেই শুরু হয় শহরের পত্তন উত্তর থেকে দক্ষিণে। ক্রমশ তা পূ ব দিকে বিস্তার লাভ করে শিয়ালদা থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত। ক�োলকাতা পত্তনের কাহিনী নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসবিদ দিস্তে দিস্তে লিখেছেন কি ভাবে কয়েকটা গ্রাম ঘিরে তৈরি একটা জনপদ ক্রমশ একটা মহানগরীর রূপ পায়। এর পরে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি শুরু হয় ইস্ট ইন্ডিয়া ক�োম্পানির রাজত্ব। ব্যবসা বাণিজ্য বৃ দ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বসতি বাড়তে থাকায় পুর পরিষেবার প্রয়�োজন হলে করপরেশান অফ ক্যালকাটা প্রতিষ্ঠিত হয় ক�োম্পানির আমলে (যার আধু নিক নাম হল ক�োলকাতা মিউনিসিপাল করপরেশান)। রাস্তা তৈরির এবং অন্যান্য নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রয়�োজন হল সম্পত্তির উপর কর নির্ধারণ। প্রবাসী ইতিহাসবিদ স�ৌম্যেন্দ্রনাথ মূ খার্জীর Calcutta: Myths and History (সু বর্ণরেখা ১৯৭৭) থেকে জানা যায় ১৭৮১ সাল নাগাদ রাস্তা ধরে ধরে সম্পত্তি চিহ্নিত করার জন্য জেলা, গ্রাম, ম�ৌজা ও দাগ নম্বরের বদলে প্রতিটি রাস্তার নাম আর তার সঙ্গে হ�োল্ডিং নম্বর দেওয়া শুরু হয়। এই জন্য করপরেশানে তৈরি 34

- তপন কুমার রা

করা হল রাস্তার নামকরণ করার জন্য একটি কমিটি। হ�োল্ডিং নম্বর দেবার জন্য একটা বিশেষ পদ্ধতি অনু সরণ করা হত অনেকটা লন্ডন শহরের অনু করণে। পূ ব-পশ্চিম রাস্তার উত্তর দিকের সম্পত্তি গুল�োর নম্বর শুরু হত পূ ব দিক থেকে বিজ�োড় নম্বর দিয়ে আর পশ্চিম থেকে জ�োড় সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত হত দক্ষিণের সম্পত্তি গুল�ো। আবার উত্তর থেকে দক্ষিণমুখ�ো রাস্তার বেলা পূ ব দিকের সম্পত্তির নম্বর বিজ�োড় সংখ্যা দিয়ে শুরু হত উত্তর দিক থেকে আর পশ্চিমের সম্পত্তিগুল�ো পেত জ�োড় সংখ্যা যা শুরু হত দক্ষিণ দিক থেকে। রাস্তা স�োজাসু জি না গেলে এই প্রথা অবশ্য সব সময় প্রয়�োগ করা সম্ভব হত না। এর ফলে নতুন গড়ে ওঠা এই শহরের সম্পত্তি চিহ্নিত হতে শুরু করল একটি নম্বর ও রাস্তার নাম ধরে। হারিয়ে গেল তাদের গ্রাম, ম�ৌজা দাগ নম্বর দেওয়া পরিচিতি। তবে জমি বাড়ি কেনা-বেচার সময় দলিলে নতুন ঠিকানা থাকলেও সঙ্গে উল্লেখিত থাকত তাঁদের পূর্ব পরিচিতি হিসেবে গ্রাম ইত্যাদির উল্লেখ। এর আগে পর্যন্ত এই গড়ে ওঠা জনপদে বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন নামে চিহ্নিত হত, যেমন প�োস্তা, বড়বাজার, দরজিপাড়া, কুম�োরটুলি, কামারপাড়া, জেলেপাড়া, ভবানীপুর, কালীঘাট, আলিপুর, খিদিরপুর, মেটিয়াবু রুজ ইত্যাদি। রাস্তার নামকরণ আর হ�োল্ডিং নম্বর দেওয়ার পরে প্রতিটি সম্পত্তি পেল নিজস্ব এক একটা ‘ঠিকানা’। এই ঠিকানা দিয়ে সম্পত্তির মালিকের আর্থিক বা সামাজিক অবস্থারও একটা আন্দাজ করা যেত। সেই কারণে স্বয়ং রবি ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত ‘বাঁশি’ কবিতার নায়ক হরিপদ কেরানীর ভাড়া করা বাড়ীর যে কাল্পনিক ঠিকানা দিয়েছিলেন তা ছিল একটা গলিতে যার নামাঙ্কণ করেছিলেন কিনু নামধারী একজন গ�োয়ালার নামে। প্রথম দিকে যে মানু ষের নামে রাস্তার নামকরণ করা হত তাঁর নামের পাশে চতুর্থী বিভক্তির প্রয়�োগ করা হত যা পরবর্তী সময়ে ল�োপ পায়। যেমন মুক্তারাম বাবু -র স্ট্রীট বা রামতনু বসু -র লেন ইত্যাদি। রবি ঠাকুর এই সময়ের মানু ষ না হলে কিনু গ�োয়ালার গলি না লিখে হয়ত লিখতেন কিনু গ�োয়ালা গলি। ক�োম্পানির শাসনকালে বা তার পরবর্তী সময়ে রানীর আদেশনামার পরে যখন ক�োলকাতা ছিল ভারতের রাজধানী, বড় বড় রাস্তার নাম সাধারণ ভাবে বড়লাট বা ছ�োটলাটদের নামে দেওয়া হত। হেস্টিংস থেকে শুরু করে কর্নওয়ালিস, ওয়েলেসলি, মিন্‌ট�ো, আমহারস্ট, ক্যানিং, হ্যারিসন, অকল্যান্ড ইত্যাদি প্রায় প্রত্যেকের নামে শহরের বিভিন্ন রাস্তার নামাঙ্কন করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে ইংরেজ শাসকরা কিন্তু শেক্সপিয়ার বা নিউটনের নামে ক�োন রাস্তার নামকরণ করেন নি।(এর থেকে সে সময়কার ইংরেজ শাসক গ�োষ্ঠীর শিক্ষাগত য�োগ্যতা নিয়ে একটা মন্তব্য করা যেতেই পারে)। এ ছাড়া অনেক রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছিল ভিনদেশীয় পার্শি, আর্মেনিয়ান, ইহুদী মানু ষদের নামে। যেমন হীরাভাই মানেকজি রুস্তমজি, দাউদ এজরা ইত্যাদি। কিছু দেশীয় ধনী মানু ষদের নামে যেমন অনেক রাস্তার নামকরণ করা হয়ে ছিল তেমনি চমরু, করিমবক্স, পাঁচু খানসামা, পাঁচি ধ�োপানী, হর ওস্তাগর বা ছকু খানসামার মত অথবা বু দ্ধু ওস্তাগরের মত অত্যন্ত সাধারণ মানু ষদের নামেও বিভিন্ন গলির নামকরণ করা হত। আবার অদ্ভুত নামের কিছু রাস্তা আছে যেমন ঘুঘুডাঙ্গা র�োড, ক্রুকেড লেন, গুড়িপাড়া র�োড, ধু কুরিয়া বাগান লেন ইত্যাদি। সময়ের সঙ্গে এক একটি রাস্তা অনেকবার নাম পাল্টেছে। যেমন তালতলা অঞ্চলের ডক্টরস লেন যা প্রথমে ছিল Taltola Bazar-ka-Rasta, তারপর হয় হাড়িপাড়া লেন আর ১৮৮২ সালে বর্তমান নামটি পায়। তেমনি হেদু য়া অঞ্চলের ডাফ স্ট্রীটের প্রথম নাম ছিল Duff Sahab-ka-Rasta ১৮৩০ সালে যা পালটান হয়েছিল। (এর থেকে আরেকটা তথ্য উঠে আসে যে শাসক গ�োষ্ঠী স্থানীয় ভাষার থেকে শ্রমিক শ্রেণীর হিন্দি ভাষায় বেশী সড়গড় ছিল।) মজার ব্যাপার হল মানু ষের নাম বাদ দিয়ে পেশাগত নাম দিয়েও বেশ কিছু রাস্তার নাম রাখা হয়েছিল। যেমন, মুচিপাড়া লেন, পটুয়াট�োলা লেন, খালাসিট�োলা লেন, কেরানীবাগান লেন, কুমারটুলি স্ট্রীট, জেলিয়াপাড়া লেন, কামারডাঙ্গা র�োড, গ�োয়ালাপাড়া লেন ইত্যাদি। আবার জাতিগত ভাবে উড়িয়াপাড়া লেন, ব্রাম্ভনপাড়া লেন, বেনিয়াট�োলা লেন, বেনিয়াপুকুর র�োড ইত্যাদি। ব্যবসাগত দিক থেকে রাস্তার নাম রাখা হয় চাউলপট্টি র�োড, ছাতাওয়ালা গলি, চুনাপট্টি লেন, কসাইপাড়া লেন ইত্যাদি। এর থেকে

Anjali

www.batj.org


������������������� আন্দাজ করা যায় যে সে সময় শহরের মানু ষজন জাতি, ধর্ম বা পেশাগত সম্পর্কের সু ত্র ধরে এক একটি অঞ্চলে সংঘবদ্ধ জীবন যাপন করত। গাছ, ফুল, ফল, পুকুর, নালা, সাঁক�ো ইত্যাদির নামেও অনেক রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল। যেমন, বকুলবাগান র�োড, ঝাউতলা র�োড, কেয়াতলা র�োড, কাঁঠালবাগান র�োড, কপিবাগান লেন, চালতাবাগান লেন, কামরাঙ্গাতলা স্ট্রীট, বাঁশতলা স্ট্রীট, ইত্যাদি। পুকুরের নামে ঝামাপুকুর লেন, পদ্মপুকুর র�োড, মন�োহরপুকুর র�োড, আহিরীপুকুর র�োড, ইত্যাদি। পুরন�ো নথি ঘাঁটলে দেখা যাবে ১৯০৯ সালে বাগবাজার অঞ্চলে একটা অনামি রাস্তার নাম রাখা হয় কাঁটাপুকুর বাইলেন সেই রাস্তার নাম ১৯১৫ সালের মার্চ মাসে বদলে করা হয় বিশ্বক�োষ লেন। এই রাস্তায় ৯ নম্বর বাড়িতে নগেন্দ্রনাথ বসু সাতাশ বছরের পরিশ্রমের পর বাংলা ভাষায় ক�োষগ্রন্থ বা বিশ্বক�োষ রচনা করেন। সেই প্রথম ক�োন ভারতীয় ভাষায় ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’ লেখা হয়। ক�োন বইয়ের নামে রাস্তার নামকরণের উদাহরণ অন্য ক�োন শহরে আছে কিনা সন্দেহ। এই ভাবে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সু তানু টি, গ�োবিন্দপুর কালীঘাট গ্রামগুল�ো নিজস্ব সত্ত্বা হারাল আর ক�োলকাতা নামে একটা নতুন শহর মানচিত্রে নিজের জায়গা তৈরি করে নিল। খেয়াল রাখতে হবে যে সে সময় রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়�োজনীয় অর্থের সংস্থান হত লটারি বা র‍্যাফেল বিক্রির থেকে টাকা তুলে। অনেক রাস্তা আবার বিভিন্ন মানু ষের দান থেকেও তৈরি হয়েছিল যেগুল�োর নামকরণ করা হত সেই সব দাতাদের নামে। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায় মানিকতলা অঞ্চলের সু কিয়া স্ট্রীটের নাম যা একজন পার্শি মহিলার দান থেকে তৈরি হয়েছিল। রাস্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং অবস্থান ম�োতাবেক এগুল�ো বাই-লেন, লেন থেকে স্ট্রীট, র�োড ইত্যাদিতে শ্রেণী বিভাগ করা হল। প্রশস্ত এবং দু ধারে বড়বড় গাছ লাগান�ো এভিনিউ তৈরি হয় অনেক পরে প্রায় বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে প্রথম বিশ্ব যু দ্ধের পর সরকারী উদ্যোগে স্থানীয় জমি অধিগ্রহণ করে। লন্ডন শহরে নাকি প্রায় বিরানব্বই রকমের রাস্তার নামকরণ করা হয় তাদের শ্রেণী-চরিত্র চিহ্নিত করার জন্যে। কলকাতায় অত রকম নাম না থাকলেও অনেক রাস্তা আছে যেগুল�ো চিহ্নিত হয়ে ছিল লেন, স্ট্রীট বা র�োড বাদ দিয়েও প্লেস, টেরাস, পার্ক, র�ো, রেঞ্জ, গার্ডেন ইত্যাদি দিয়ে। কারণ স্থানীয় ভাষায় গলি শব্দটি বাদ দিলে ‘রাস্তা’ কথাটার অনেক প্রতিশব্দ, যেমন সড়ক, পথ ইত্যাদি থাকলেও তাতে রাস্তার শ্রেণী বা চরিত্রের ক�োন বিশিষ্টতা প্রকাশ পায় না। প্রথম বিশ্ব যু দ্ধের কিছু পরে Calcutta Improvement Trust (CIT) কলকাতায় পরিকল্পনা মাফিক বেশ কিছু রাস্তা, পার্ক, লেক ইত্যাদি তৈরি করতে শুরু করে। উত্তর থেকে দক্ষিণে তৈরি হয় বেশ কিছু রাস্তা আর তার দু পাশে সার দিয়ে বাসয�োগ্য জমি রাখা হল দৈর্ঘ্য প্রস্থের একটা সমক�ৌণিক সামঞ্জস্য রেখে। এর ফলে আদি বাসিন্দাদের অনেককেই বাস্তুচ্যুত হতে হয়। এভাবে শহরে এল সেন্ট্রাল এভিনিউ, ল্যান্সডাউন র�োড, রাসবিহারী এভিনিউ ও বিভিন্ন এলাকার নামাঙ্কনের আগের পর্যায়ের সিআইটি র�োড। ফলে আদি ক�োলকাতার পাড়াগুল�ো তাদের চরিত্র হারাতে শুরু করল। পাড়ায় পাড়ায় পুজ�ো-জলসা ও অন্যান্য সামাজিক অনু ষ্ঠানের ভেতর দিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে যে বন্ধন গড়ে উঠেছিল তা ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগল। ক�োলকাতার বিভিন্ন অঞ্চল হারাতে লাগল

তাঁদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। পার্ক লেন-পার্ক স্ট্রীট, চ�ৌরঙ্গি-ধর্মতলা, ভবানীপুরকালীঘাট, পার্কসার্কাস-বেকবাগান ইত্যাদি অঞ্চল হারাল তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য। যারা ধরমতলা স্ট্রীটের নাম লেনিন সরণি হওয়ার আগে এই শহরে তাদের বাল্য, কৈশ�োর বা য�ৌবন কাটিয়েছেন তাদের কাছে একটা আফস�োসের কারণ হল যেমন তেমন ভাবে রাস্তার নাম বদল করা। চ�ৌরঙ্গী, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রীট দিয়ে যাতায়াত করে যারা বড় হয়েছে অথবা কলেজ স্ট্রীট, বউবাজার স্ট্রীটের বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা মেরেছে, ভবানীপুর অঞ্চলে মামার বাড়িতে যার সময় কেটেছে তাদের কাছে সেসব অঞ্চলকে নতুন নামে চেনা সত্যিই কষ্টকর। আর তার সঙ্গে মুড়ি মিছরির মত রাস্তার শ্রেণী বিভাগ তুলে দিয়ে লেন, র�োড, স্ট্রীট বা এভিনিউ এর মত সব রাস্তাকে সরণি-কৃত করা হল আরেকটা গর্হিত অপরাধ। ঢাকুরিয়া লেকের গা দিয়ে যে সাদার্ণ ‘এভিনিউ’ ছিল, এই রাস্তাকে মেঘনাদ সাহা ‘সরণি’ নামকরণ করতে গিয়ে রাস্তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা হয়েছে। একই ভাবে বকুল বাগান র�োড তার নাম ও গ�োত্র হারাল রাজশেখর বসু সরণি হয়ে। ঢাকুরিয়া লেকের আশে পাশের লেক র�োড, লেক ভিউ র�োড, লেক টেরাস, লেক প্লেস, লেক টেম্পল র�োড সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গায়কগায়িকার নামে সরণি রূপ ধারণ করেছে। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে বিদেশী শাসকদের নামাঙ্কিত অনেক রাস্তার নাম পাল্টে দেশীয় মনীষীদের নামে নামাঙ্কিত করা হয় রাস্তার শ্রেণী চরিত্র নষ্ট না করে। কিন্তু আশির দশক থেকে সে নিয়মের আর ত�োয়াক্কা করা হচ্ছে না। সংস্কৃত অভিধান থেকে ‘সরণি’ শব্দটি চয়ন করে রাস্তার নামকরণ করে শহরের রাস্তাঘাটের চরিত্র বদলে দেওয়া একেবারেই সমীচীন হয় নি। ঠিক একই ভাবে স্কোয়ার, পার্ক বা গার্ডেনের নতুন নামকরণ করার সময় বাগ বা উদ্যান করা হল ওগুল�োর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে দিয়ে। স্কোয়ার-কে আরেকটি বিদেশী শব্দ ‘বাগ’ দিয়ে অথবা মনু মেন্ট কথাটা পাল্টে আরেকটি বিদেশী শব্দ ‘মিনার’ ব্যবহার করা কতটা বু দ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। ইংরেজ শাসক গ�োষ্ঠীর সঙ্গে মতভেদ যাই থাকুক ওদের ভাষাটা কি দ�োষ করল ব�োঝা মুশকিল। ‘কেপলার-গ্যালিলিও বা নিউটনের বহুপূর্বেই প্রস্তর যু গে বা তারও আগে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন ক�োন হিন্দু, গ্রিক বা আরবি পণ্ডিত’ সেই নিয়ে ইতিহাসবিদদের চর্চা চলতে থাকুক। অথবা সাম্প্রতিক ইতিহাসে হরপ্পা সভ্যতার সময় নগর পরিকল্পনার প্রমাণ নিয়ে পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখা চলতে থাকুক। তবে সাম্প্রতিক কালে গড়ে ওঠা আমাদের এই শহর ক�োলকাতার রাস্তার নাম করণের জন্য অন্যান্য ইয়�োর�োপীয়দের মধ্যে ইংরেজ জাতটার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অসু বিধে ক�োথায়? সিপাহী বিদ্রোহের পরে মধ্য ক�োলকাতার বড়লাটের খাবার জলের জন্য যে জলাশয় খনন করা হয় তার নাম ট্যাঙ্ক স্কোয়ার থেকে ডালহ�ৌসি স্কোয়ার করা হয়। সেটিকে পরবর্তী সময়ে বিনয়-বাদলদিনেশ দের নামাঙ্কিত করার সময় ফারসি বাগ শব্দটির ব্যবহার কি একান্ত প্রয়�োজনীয় ছিল? এটির ইংরাজি বানানে BAG লেখা হচ্ছে সরকারী দলিল থেকে বাস-মিনিবাসের গায়ে। আর স্থানাভাবে তিন বিপ্লবী এখন ব�োধহয় আধু নিক ক�োলকাতার বাসিন্দাদের রুচি দেখে নিজেদের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে তাঁদের নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে ‘বিবাদী’ রূপ পেয়েছে। আধু নিক প্রজন্ম যদি প্রশ্ন রাখে সামান্য ক�োন BAG নিয়ে কে বিবাদ করেছিল তার উত্তরে লজ্জায় মুখ লু ক�োন�ো ছাড়া ক�োন উপায় আছে কিনা জানি না। 

১৫ই জুলাই, ২০১৯ গ্রন্থঋণঃ Calcutta Old and New H.E.A. Cotton কলিকাতা স্ট্রীট ডাইরেক্টরী ১৯১৫ পি এম বাগচি Calcutta Myths and History Dr Soumyendra Nath Mukherjee

www.batj.org

Durga Puja 2020

35


এমন তরণী বাওয়া

ছ�ো

টবেলার অনেকটা জুড়ে ছিল বিনু দি। দাম�োদরের গা ঘেঁষে আমাদের এলান�ো জনপদ। বিনু দি সারাদিন ব্যাস্তগরু মাঠে নিয়ে যাওয়া, ঘুঁটে বেচা, ঘরে চাল ফ�োটান�ো, সবই দ্রুত হাতে সামলায়। ওর ছ�োটভাই দু লু আমার বন্ধু । ওদের বাপ-মা নেই। ক�োনদিন ছিল কিনা দু লু জানেনা, বড়রা জানে। বিনু দিই ওর সব। নদীর ধারে মাটির ঘর ওদের। সেবার বান এসেছিল, সেই ঘর ভেসে গেল। ওরা ইস্কু লবাড়িতে গিয়ে উঠেছিল । বানের জল নামতে বিপিনমাস্টার কিছু টাকা দিয়ে ওদের ঘর বানিয়ে দিয়েছিল। বিপিনবাবু দু লুকে ভালবাসতেন, ওর অঙ্কের মাথা ছিল পাকা। ইস্কুলের পরীক্ষায় আমি বরাবর ফার্স্ট হলেও অঙ্কে দু লুকে হারাতে পারিনি ক�োন�োদিন । তবে দু লুর সঙ্গে আমার ভাব ছিল বেশ। ও আমাদের বাড়ি আসতে চাইত�ো- মায়ের হাতের নারকেল নাড়ু আর চালভাজা ভারী পছন্দ ছিল ওর। বিনু দি লজ্জ্বা পেত, দু লু আসা কমিয়ে দিয়েছিল। বিনু দি সু ন্দরী ছিলনা, কিন্তু কেমন গভীর ছিল, আমাদের গ্রামের শেষে যে তালদিঘি, সেরকম গভীর । বিনু দির বিয়ে হবেনা? মা বলত- তাহলে দু লুকে কে দেখবে? আমিও যেন বু ঝে গিয়েছিলাম বিনু দির কিছু হবার নেই। অনেকেরইত কিছু হয়না, তবে বিনু দির ভাল�ো হলে বেশ হত। দু লু ভাল রেসাল্ট করে এঞ্জিনীয়ার হল- ভাল চাকরীর ডাক এক কথায় লু ফে নিল। ওদের টালির ঘর থেকে দু লু যখন বিনু দির সঙ্গে প্রবাসের পথে, আমি তখন শহরের হস্টেলে – আধু নিক পৃ থিবীর আধু নিক মানু ষের অধিকার নিয়ে ব্যাস্ত। চিঠি মারফৎ জানলাম, সে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত । দু লুর বিয়ের খবরটাও ফ�োনএ জানলাম। চকিতে চমক ভাঙ্গে আমার, ছেলেবেলার ছায়াসঙ্গী দু লু। ছু ট লাগালাম রাঁচির পথে, দু লুর শিল্পনগরীতে । দু লুর স্ত্রী সু রমা ভারি মিশুকে, নিমেষেই আপন করে নেয়। বিনু দির টালির ঘর থেকে আজ এই তিন কামরার সু সজ্জিত ক�োয়ার্টার । খালি হেসে বলে এসেছিস বলে খুব ভাল লাগছে । আমার কথা অস্ফুট থাকতেই ওর চ�োখ ভেসে যায়। বছর খানেক গড়িয়ে চিঠি পাই দু লুর- বিনু দির বিয়ে, দু লুরই উদ্যোগে। পাত্র স্থানীয় ডাক্তার- বিপত্নীক । একটু বাধবাধ লাগলেও দু লুকে জানালাম না । একটু সংশয়ও হ�োল – দু লুদের সংসারে কি মানিয়ে নিতে অসু বিধে হচ্ছে ওর। ব্যাস্ত আছি বলে কাটিয়ে দিলাম, যদিও এমন কিছু কাজ ছিলনা। হয়ত নতুন জীবনের জাঁকে পুরন�ো মুখগুল�ো অস্পষ্ট হয়ে যায় । স্বভাবতই দু লুর সঙ্গে সম্পর্কটা ক্ষীণ হয়ে এল�ো, চিঠিপত্র অনিয়মিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি নিয়ে আমিও দেশান্তরী । তিরিশটা বছর চলে গেছে । পৃ থিবী পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখন অস্তমিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিই আমার গ্রাসাচ্ছাদনের মূ লমন্ত্র – অন্যদের

36

- শঙ্কর ব

মত আমিও আপ�োষই করেছি। লন্ডনের কাছে একটা কনফারেন্সে এসেছি, দিন সাতেকের জন্যে । আগেও একবার এদিকে এসেছিলাম, তখন পয়সার অভাবে খুব একটা এদিকওদিক যাইনি । এবার সময় ও পয়সা দু ট�োই কিছু টা বাহুল্য । ট্রাফালগার স্কোরারে একটা বইয়ের দ�োকানে উঁকিঝুঁকি মারছি, এমন সময়ে কাঁধে হাল্কা একটা ছ�োঁয়া। কেমন আছিস? বিনু দিকে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না, এখানে, এভাবে?? তিরিশটা বছর তালদিঘির জলে অনেক ঢেউ উঠেছে, এক ঝলকেই ব�োঝা যায়, কিন্তু জল এখন�ো টলটলে, সু গভীর । আমার অপ্রতিভ চেহারা ব�োধহয় বিনু দির চ�োখ এড়াল না । অল্প কিছু কথা হল। বিনু দির পুত্র ডাক্তার, এখানেই কর্মরত, বাবার অবর্তমানে মাকে নিয়েই সংসার । একটা ভাল�োলাগার অনু ভুতি মনকে ছু ঁয়ে গেল, আসব একদিন বলে কথা দিলাম। দু দিন পর ঠিকানা খুঁজে বিনু দির বাসায় পৌঁছ�োতে বিশেষ অসু বিধে হলনা। অ্যাপার্টমেন্টটা ছবির মত সু ন্দর, সাজান�ো- সামনে একফালি লন আর ফুলের বাগান। পারিপাট্যের গুণে ভারী কমনীয় পরিবেশ – বিনু দির ফেলে আসা মাঠ, নদী আর গাছগাছালি এখানে সু ন্দর জায়গা করে নিয়েছে। বাগানে বসে ভারি একটা আড্ডা হল, বিনু দির হাতে গড়া নিমকি, মিষ্টি খানিকটা বেশিই হয়ে গেল । উঠব�ো উঠব�ো করছি, এমন সময়ে ভাগ্নের প্রবেশ, শ্রীমান সু মিত- ভারি সপ্রতিভ হয়ে প্রণাম করল�ো এসে । আশীর্বাদ করতে মুখের দিকে তাকাতেই একটু থমকে গেলাম। বিনু দির মুখের দিকে চেয়ে আর বলা হলনা । সু মিত আধঘণ্টা কাটিয়ে ঘড়ি দেখতে লাগল�ো, বু ঝলাম ব্যাস্ত মানু ষ সে। আরও একদিন আসতে হবে মামু, কথা নিয়ে সে হাসপাতালে ছু টল । আমার আত্মস্থ হতে একটু সময় লাগল�ো । মিনিট খানেক চুপচাপ। বিনু দিই প্রথম কথা বলল । জানি সু নীল, তুই ঠিকই বু ঝছিস, সু রমার মুখ ওর শরীরে বসান�ো । আমি বেশ অপ্রস্তুত । দু লুদের বিয়েটা বেশিদিন টিকল�োনা রে, সু মির যখন দু বছর সু রমা আর দু লুর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল । একরত্যি ওই ছেলেকে নিয়ে সেকি টানাটানি । সু রমার প্রেমিক বাচ্ছার দায়িত্ব নেবার ছেলে নয়, আর দু লুও কেমন একর�োখা জেদি বাপ, সেকি দিন গেছে। আমার কর্তা উপায় বাতলালেন, ওকে আমরাই মানু ষ করলাম । ও ব�োধহয় মানু ষই থাকবে, অন্তত আমরা সেভাবেই ওকে বড় করেছি । তবে ভয় হয়, বিয়ের বয়েস হ�োল ... বিনু দি কেমন আনমনা হয়ে যায়। বিনু দির চ�োখে শিশিরবিন্দুর চিকচিক, সন্ধের নিস্তব্ধতায় শ্বাসের ওঠানামার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তিরিশ বছর ধরে নদীর স্রোতে ভেসে এখনও কিনারার দেখা মেলেনা... শুধু দাঁড়ের ছপছপ। তিনদিন পর লন্ডন ছাড়লাম । নতুন ক�োন বিস্ময় নেওয়ার ধৈর্য আর নেই। 

Anjali

www.batj.org


সফর

সা

ধ করে বেড়ান�ো প্রায় অনেকদিনই হয়ে ওঠে না। কিন্তু, সেবার আমরা বেড়াতে বদ্ধপরিকর। ফলে, মাসদু য়েকের মধ্যে সবরকম প্রস্তুতি সেরে এক জুলাইয়ের শেষে গাঁঠরি বেঁধে বেড়িয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য র�োম তারপরে ফ্লোরেন্স। আমাদের উড়ান ছিল হির�োশিমা থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে র�োম। রাতভর আরামের ঘুমের পরে র�োমের মাটিতে পা দিলাম, বাইরে তখন মন ভাল করে দেওয়া ঝকঝকে সকাল। এয়ারপ�োর্ট থেকেই চলে আসা হল সংলগ্ন রেলস্টেশনে, যেতে হবে র�োমশহরের একেবারে কেন্দ্রে, নির্ধারিত হ�োটেলে। শহরের বেশ জমজমাট জায়গায় আমাদের হ�োটেল। চারিদিকের হাবেভাবে পুর�োন�ো আর হাল আমলের আমেজ। চেক-ইনের সময় বিকেল হলেও জিনিসপত্র রাখা এবং স্নানাদি সেরে নিতে অসু বিধে হল না। এখন যাব ভ্যাটিকান সিটি। হ�োটেল থেকে বেরিয়েই সামনের চারমাথার ম�োড়ে এক বড় গ�োল চত্বরে সেদিন বিরাট জনসভা, সেই ভিড় ছাড়িয়ে এগিয়ে চললাম চওড়া সরু নানা ধরনের পাথু রে রাস্তা ধরে। ঘড়িতে মাত্র বেলা এগারটা, অথচ শহর তেতে উঠছে। মিনিট কুড়ি পরে যখন ভ্যাটিক্যান সিটির সামনে এসে দাঁড়ালাম তখন আর তর সইছে না-- চুম্বকের আকর্ষণে প�োপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের মিউজিয়াম যেন টানছে আমাদের! ঝাড়া তিনঘন্টা আমরা বিভ�োর হয়ে রইলাম মাইকেল অ্যাঞ্জেল�ো, বত্তিচেল্লি, পেরুজিন�োর জগতে। সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদের সেই বিখ্যাত “Birth of Adam” আর “Birth of Eve” ছবি দেখে বহুবছরের মনের লালিত সাধ মেটালাম আর মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম প�োপ দ্বিতীয় জুলিয়াসকে, যিনি তাঁর নিজস্ব শিল্পসংগ্রহ দিয়ে এই মিউজিয়ামের সূ চনা করেন। মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে এবার ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি, সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, টাইবার নদীর ধারের ক্যাসেল সেন্ট অ্যাঞ্জেল�ো, স্প্যানিস স্টেপস-- ক্লান্তিহীন ভাবে। ততক্ষণে বেলা বেড়েছে, ত্রিভি ফ�োয়ারার কাছে ভীড় জমতে শুরু করেছে। জেলাত্তোর স্বাদ নিতে নিতে আমরাও দাঁড়াই ত্রিভির সামনে। পরেরদিন সকাল সকাল হাজির হলাম প্যানথিয়নে। পুর�োন�ো র�োমান এই মন্দির পরে “সান্টা মারিয়া র�োট�োন্দা” গির্জা হিসেবেই পরিচিত। আশ্চর্য গড়নের জন্য এই স্থাপত্য র�োমের অন্যতম আকর্ষণ। গির্জার ভিতরেও আছে নানা সু ন্দর

www.batj.org

- শুচিতা দাসগ

দেওয়ালচিত্র আর ভাস্কর্য। এরপর পিয়াজা নাভ�োনায় কিছু ক্ষণের অলস বিচরণের পরে রওনা হওয়া গেল সেরা আকর্ষণ কল�োসিয়ামের পথে। এর ভিতরে চলতে চলতে কেবলই মনে উকি দেয় গ্ল্যাডিয়েটরদের কাহিনি। লম্বা সময়ের শেষে কল�োসিয়াম ছেড়ে এগিয়ে যাই বিস্তীর্ণ র�োমান ফ�োরাম আর প্যালেটাইন হিলস অঞ্চলে। মনও হারিয়ে যায় বিগত শতকগুল�োর অলিগলিতে। বেলা পড়ে আসে-- ফ�োরামের চত্বর ছেড়ে ফেরার পালা। চমৎকার কিছু স্যুভেনির কিনে নিলাম, ফেরার সময়। রাতের খাওয়া সেরে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিই। কন্যে ব্যস্ত তার প্রয়�োজনীয় ফ�োট�োগ্রাফ আর ন�োটস গুছিয়ে নিতে। কারণ, এই বেড়ান�োর অভিজ্ঞতার সাহায্যে সে ইউর�োপীয় রেনেসাঁস পর্বের শিল্পকীর্তির বিষয়ে তার স্কুলের জন্য ছ�োট্ট একটা প্রজেক্ট করতে চায়। পরদিন আল�ো ফ�োটার আগেই রওনা দিলাম ফ্লোরেন্সের পথে এবং বেলা সাড়ে দশটার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ফ্লোরেন্স। এখানে ‘পিয়াজা ডুওম�ো’র (Piazza Duomo) চত্বর থেকে ঢিল ছ�োঁড়া দূ রত্বে আমাদের হ�োটেল। জিনিষপত্র রেখে একটু বেলার দিকেই হাজির হলাম ডুওম�ো চত্বরে। এবার মুগ্ধ করে শিল্পী গিওত্তোর কাজ। বিখ্যাত Santa Croce গির্জা দেখে দেখে যেন আশ মেটে না। এরপর যাত্রা দান্তে মিউজিয়ামে। “Inferno” পাঠরতা কন্যের সবথেকে প্রাচীন পান্ডুলিপিটি দেখা চাই। এই মিউজিয়াম দেখা যেন এক অমূ ল্য অভিজ্ঞতা। পরের সকাল শুরু হয় উফিজি প্রাসাদ ও মিউজিয়ামের অতুলনীয় শিল্পকলার স্পর্শ দিয়ে, সঙ্গে থাকে Logia dei Lanzi র স্থাপত্যসম্ভার। আয়েস করে দেখি উফিজি চত্বরের সমস্ত দ্রষ্টব্য। মাত্র কয়েক হাতের ব্যবধানে এত শিল্পকীর্তির অবস্থান!!! বিস্মিত না হয়ে পারি কি? মধ্যাহ্নভ�োজের পরে চলে যাই অ্যাকাডেমিয়া গ্যালারিতে। বিশ্বখ্যাত ডেভিডের মূর্তি আরও অসংখ্য শিল্পকীর্তির সমার�োহ এখানে। দিনশেষে মধ্যযু গীয় সেতু Ponte Vechhio র ওপারে সূর্যাস্ত হয়। মনে করে সংগ্রহ করি সু দৃশ মুরান�ো গ্লাসের সু ভ্যেনির আর নৈশভ�োজ সারি স্থানীয় তাসকানী খাবার দিয়ে। রাত প�োহালেই এবার বেরিয়ে পড়ব প্যারিসের দিকে-- সে এক নতুন সফর। 

Durga Puja 2020

37


গলি

লির ম�োড়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল�ো ও। গলির মুখে একটা বকুল ফুলের গাছ। গ্রীষ্মের তপ্ত দু পুরের নিদাঘীবেলায় পথচারীকে কিছু ক্ষণের জন্য দাঁড়াতেই হয়। ভূমিতে ছ�োট্ট ছ�োট্ট ফুলগুলি নজরে না এলেও এ ফুলের তিক্তমধু র সু বাস সমস্ত স্থানটিকে মদির করে রাখে। এখন বসন্তকাল, ফুল ফ�োটেনি, তবে বৈশাখ সমাগত, কুঁড়িদের ব�োধহয় স্বপ্ন দেখা শুরু হ�োয়ে গিয়েছে। মানু ষ ত�ো দিনে রাতে কত স্বপ্নই দ্যাখে। স্বপ্ন-ভঙ্গ হবার কথা কেই বা মনে রাখে! ও’ই বা মনে রাখতে যাবে কেন? বেলা তখনও পড়ে আসেনি। শেষ বসন্তের র�োদের ঝাঁঝ বৈশাখের ইঙ্গিতবাহী। খুব বেশিদিন হয়নি যখন এ গলি পথ ধরে স�োজা উপনগরীর প্রধান সড়ক ছেড়ে ওরা দু জনে পাশাপাশি হেঁটে প্রায় প্রত্যেক দিন নদীর ধারে পৌঁছে যেত। জলের ঢেউ ওদের মনেও ভাবনার তরঙ্গ তুলে জ�োয়ার ভাটায় মিশে যেত। পড়াশুন�োর পর্ব মিটলে কত ভবিষ্যতের চিন্তা ওদের মুখর করে রাখত�ো। কথা যেন শেষ হ�োত না অভিষেকের, নীরব শ্রোতা ছিল ও। কখনও হেমন্তের হিম, কখনও শীত শেষের নৈঃশব্দ ওদের মনের কথা বু ঝতে সাহায্য করত�ো। এই সেই গলির শেষ প্রান্ত। ও প্রান্তে নদীর পাড়, মাঝে হেঁটে চলে গেছে ওরা কত দিন, কত সন্ধ্যা, কত বেলা-বাড়ার বকুল-ঝরা পথে। অচেনা থেকে চেনা হ�োল মন, চেনা পথ হ�োল অচেনা। চেনাঅচেনার যু গলবন্দী। নাতিদীর্ঘ পথে যবনিকা পতন। কেন মনে আসেনা এ ত�ো শেষ নয়, সবে শুরু। গলির ম�োড়ে আচমকা থমকে দাঁড়াতেই কে যেন তাড়া দিয়ে বলে, ---“কী হল�ো আবার? চল�ো, দেরী হ�োয়ে যাবে। এখনও সময় হয়নি, পরে আসা যাবে অন্য ক�োনও দিন”। ---“কবে আসবে বলতে পার�ো? র�োজই ত�ো কাজের তাড়ায় থাকি দু জনেই”। ---“যেদিন তুমি আমায় ভুল চিনেছিলে বলে মনে হবে”! ---“কেবল বাজে কথা বলে তুমি আমায় ভ�োলাতে চাও”। মৃ দু অনু য�োগ। ---“ঠিক বলেছ�ো। গত বছর কয়েক ধরে ত�োমার কি মনে হয়নি আমার সঙ্গে ত�োমার অনেক অমিল? আমি ত�োমায় কেবলই ভুলিয়ে নিয়ে চলেছি অন্য পথে”? ---“কী বলি বল�ো ত�ো! তুমি ব�োধহয় সব বু ঝে বসে আছ�ো”। গলির মুখে একটা দমকা হাওয়ায় ওর খ�োলাচুল উড়িয়ে দিল আকাশের দিকে। কার কথা ভাবতে ভাবতে কিসের কথা মনে পড়ছিল। ---“আবার দাঁড়ালে কেন? কী হল�ো ত�োমার আজ? মাটির দিকে চেয়ে কী খুঁজছ�ো”? ---“বকুল ফুলের গন্ধ পাচ্ছো না? ফুল নেই কেন তবে”? ---“বৈশাখ আসু ক, তবে ত�ো ত�োমার চেনা গন্ধ সেই মদির করা বকুল ফুল কুড়�োন�ো গলির এপার থেকে চলে যাবে আকাশ বাতাস ছু ঁয়ে ছু ঁয়ে অনেক দূরের দেশে মরু বালু কণার সমুদ্র সৈকতে”।

- বেবী বসু গু

গলির ম�োড়ে বকুল গাছের ছায়া গাঢ় হয়, ছায়া আর র�োদে লু ক�োচুরি খেলা চলে। কানে কানে ফিস্‌ফিস্‌করে কে কথা বলে যায়! বাতাস তপ্ত, হাওয়ারা ঘুরে ফিরে চলে যায়। ---“আবার কী হল�ো? কী চাও বলবে ত�ো মন খুলে”। ---“কী বলব�ো তাই ভেবে ভেবে ত�ো দিন রাত একাকার। তুমি বলেছিলে এইখানে এই গাছের ছায়ায় সারাজীবন দাঁড়িয়ে ত�োমার সময় কেটে যাবে”। ---“বলেছিলাম, ত�োমায় পাব�ো বলে”। ---“আমাকে চিনতে চেয়েছিলে কী না বল�ো”! ---“বলা বড় কঠিন। তুমি ছেয়ে আছ�ো আকাশের গায়ে, বকুল সু গন্ধে ঘেরা এই সংকীর্ণ গলিপথে। ত�োমায় কী পাওয়া যায় স্বপ্নহারা ক�োনও চেনা সু খে অচেনা সাধের আঙিনায়”? রিং রিং ম�োবাইল ফ�োন বেজে ওঠে। ওপাশ থেকে অভিষেকের কণ্ঠস্বর, ---“পেপারস্‌সব পেয়েছ�ো ত�ো? ফরম্যালিটিগুল�ো সেরে ফেল�ো, স্পাউজ ভিসা পেয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। তাহ�োলে সামনের মাসের প্রথমেই পৌঁছে যাবে আমার কাছে”। ---“সামনের মাস মানে বৈশাখের প্রথমেই”! ---“হঠাৎ বাংলা মাসের হিসেবে চলছে কেন সফট্‌অয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের নবপরিণীতা ব�ৌ”? ও ফিস্‌ফিস্‌করে বলে, ---“বকুল ফুল ফ�োটার আগেই”! ---“কী বলছ�ো শুনতে পাচ্ছি না। এমিরেটসের ই-টিকিট বু ক করে দিয়েছি, মেসেজ পেয়েছ�ো ত�ো”? ---“হুঁ”। ---“প্রিন্ট আউট বের করে নিও, লক্ষ্মীটি। ত�োমাকে ছাড়া ক�োথাও বেড়াতে যাইনি এখনও। তেলের টাকার শহরের চটক ত�োমার কেমন লাগবে জানি না। তুমি এলে আমি স্বস্তি পাব�ো। বাইরের খাবার খেতে আর ভাল লাগছে না”। ---“আমাদের গলির ম�োড়ের বকুল গাছের ফুল ফ�োটার সময়ে আমি থাকব�ো না এখানে”! ---“লাইনটা ডিস্টার্ব করছে, কিছু শুনতে পাচ্ছি না। পরে কথা হবে কেমন? এখন অফিসে রয়েছি। আমি ভাল আছি, তুমি ভেব�ো না। আর ক’দিন বাদেই ত�ো উড়ে এসে আমায় জুড়ে বসবে। ভাল থেক�ো”। এতক্ষণ গলির ম�োড়ে বকুল গাছের তলায় কার সঙ্গে কথা বলছিল ও? আর এইমাত্র ম�োবাইলে ত�ো অভিষেক কথা বলল�ো দু বাই থেকে। গলির ম�োড়, বকুল গাছের ছায়ায় অভিষেক প্রথম যাকে চিনেছিল, তার নাম অন্বেষা, যে শুধু ফুলের মত�ো একা কথা বলে। 

This story has been reproduced as a stand-alone article for independent publication. The story appeared in the self-published book ‘চেনা সু খ, অচেনা বেদনা’ (Chena Sukh Ochena Bedona) by the same author.

38

Anjali

www.batj.org


শতবর্ষে রবীন্দ্র স

কলকাতা বাসীদের কাছে রবীন্দ্র সর�োবর এক বহু শ্রুত একটি জনপ্রিয় জায়গা। ওখানে সকাল বিকেল আশপাশের কলকাতা বাসীরা প্রাণ খুলে হাসেন, বিশুদ্ধ হাওয়া সেবন করেন, সাঁতার কেটে বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে শরীরের কলকব্জা গুল�ো ঠিক রাখেন। আমি দক্ষিণ কলকাতায় থাকি। পিতৃ গৃ হ ও শ্বশুড়ালয় দু ই ই গ�োলপার্ক ঢাকুরিয়া ঘিরে। বাড়ি র কাছে ই ঢাকুরিয়া লেক। ঢাকুরিয়া লেকের বর্তমান নাম রবীন্দ্র সর�োবর। নামের সাথে সাযু জ্য রেখেই অধু না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পূর্ণাবয়ব মুর্তি রাখা হয়েছে। একসময়ে টালিগঞ্জ থেকে সাদার্ন এভিনিউ বা কেওড়াতলা মহাশ্মশানে যাবার একমাত্র সর্টকাট রাস্তা ছিল লেকের মধ্য দিয়েই। লেক তখন পথচারী ও গাড়ী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। আমি এই লেকের উজ্জ্বল সূর্যাল�োকিত সকাল যেমন দেখেছি , তেমনি দেখেছি পূর্ণিমা রাতে লেকের ম�োহময়ী রূপ । আবার উম্পুনের সময় তার অদেখা উত্তাল রূপ TV তে দেখলাম। আমার জন্মের অনেক পূর্ব থেকেই এই লেক টি কলকাতা শহরের ফুসফুস হিসেবে রয়েছে।১৯২০ সালে এটি খনন করা হয় ।১৯২ একর জমির ওপর দু টি ছ�োট ও বড় দ্বীপ , পশ্চিম প্রান্তে একটি প্রাচীন মসজিদ, তিনটি কামান, অনেক গুল�ো ক্লাব ও সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিয়ে সর�োবর টি স্ব মহিমায় কলকাতা কে তিল�োত্তমা করেছে। ঢাকুরিয়া থেকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ব্রিজের মাঝখানে র সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে ডানদিকে বেঙ্গল মিউজিক কলেজের পাশে দিয়ে লেকমুখী হাঁটা পথে চললে এখন প্রথমে দেখা যায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সদ্য প্রয়াত শ্রী প্রণব মুখার্জি র কলকাতার বাসস্থান। তারপরে কলকাতার একমাত্র জাপানি বু দ্ধ মন্দির। জাপানি বু দ্ধ মন্দির---একটু বড় হবার পর জেনেছি ১৯৩৫ সালে মন্দির টি জনৈক নিচিদাতসু ফুসি, ওনার গুরুর আদেশে বু দ্ধের বাণী প্রচার ও সঙরক্ষনের জন্য তৈরি করেন। মন্দির নির্মাণের জন্য জমি টি দান করেন যু গল কিশ�োর বিড়লা। আমরা বিকেল বেলায় লেক বেড়িয়ে ফেরার সময় ক�োন ক�োন দিন সেখানে একটু প্রার্থনায় বসতাম ও নকুল দানা প্রসাদ নিয়ে ফিরতাম। এখানে সকাল-সন্ধ্যা বিশাল এক ড্রাম বাজিয়ে প্রার্থনা হয়। শ্বেত পাথরের বু দ্ধ মূর্তি টি খুব সু ন্দর। বু দ্ধ মন্দির থেকে ৫ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যায় লেকের একদম দক্ষিণে। ওখানে ডানদিকে বিশাল একটি public swimming pool আজ ও আছে। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল একদার শিশু উদ্যান। ওখানে দ�োলনা চড়তে যেতাম। Children's Park এর কাছেই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযু দ্ধে র সময়ের একটি military barrack হাসপাতাল। পার্কে একটা ফ�োয়ারা ছিল।জল প্রায় থাকতে না। এই পথে চলতে চলতে জেনেছি কত গাছ গাছালির নাম। যেমন পিটালি,পাকুড়,হিজল,করন্জ, Spanish Mahogany, জংলী বাদাম আর�ো কত অজানা নাম।খবরের কাগজে পড়লাম উম্পুনের তান্ডবে সেখানে একটি ১০০ বছরের পুর�োন�ো গাছ পড়ে গিয়েছে। লেকের মধ্যে যে বড় সবু জ দ্বীপ টি আছে সেখানে পানক�ৌড়ি আর পরিযায়ী পাখিদের ভীড় দেখা যায়। এই লেকেই দেখেছি rowing competition. লম্বা বড় ন�ৌক�ো , ছয় / চার জনে দাঁড় বাইতেন ও একজন guide করতেন। সেগুল�ো আজ ও দেখা যায়। সেই সময় বাইচ খেলার দিন একজন বিদেশি ভদ্রল�োক সাইকেলে চড়ে মুখে চ�োঙা মাইক নিয়ে competetors দের navigate করতে সাহায্য করতেন। আমরা উৎসাহ নিয়ে দেখতাম। Calcutta Rowing Club ত�ো এই লেকেই National Rowing Championships আয়োজন করে। আমরা এগিয়ে চলতাম Hanging Bridge এর পথে। ওখানে একবার যেতেই হ�োত�ো। তখন লেক গার্ডেন্স গড়ে ওঠেনি। ঝুলন্ত ব্রিজ---এই ব্রিজটিকে Hanging Bridge নামেই জানতাম। আগে এটি কাঠের তৈরি ছিল পরে মার্টিন বার্ন ক�োম্পানি ল�োহার প�োক্ত ব্রিজ বানিয়ে দেয়। আমরা অনেকবার ঐ ব্রিজে উঠেছি।এটি দ�োলে। রেলিঙ ধরে www.batj.org

- মিত্রা মুখার

দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নীচের দিকে তাকালে বিশাল সব মাছ দেখা যায়। এখন বাঙলা TV serial এর পরিচিত outdoor shooting location. এক সময়ে কাছেই একটি Lily Pool ছিল। একটা সাজান�ো বাগানের মাঝে ছিল ছ�োট জলাশয়।তার ওপর একটা ছ�োট সাঁক�ো। আমি পান্থপাদপ ও ফনীমনশা গাছ প্রথম এখানে দেখি। কেয়া গাছ ও ছিল। লেকে কেয়া গাছের গুচ্ছ বিক্রি হত�ো। লেক মসজিদ---- অনেকেই হয়ত�ো জানেন না বা দেখেন নি লেকের পশ্চিম প্রান্তে ই একটি ছ�োট দ্বীপের ওপর এক পুর�োন�ো মসজিদ আছে। ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়। ছ�োট বেলায় কখন�ো যাইনি ওখানে। কয়েক বছর আগে এই মসজিদটি দেখতে গিয়েছিলাম। মহিলাদের ভেতরে যাবার কিছু বিধিনিষেধ আছে। যেটুকু জানতে পেরেছিলাম তা হচ্ছে এটি একটি private mosque.১৮২৪ থেকে ১৮২৫ এর ক�োন সময়ে তৈরি হয়।জনৈক সৈফুদ্দিন আহমেদ এখন এই মসজিদটি র দেখাশ�োনার দায়িত্বে আছেন। ওনার পূর্ব পুরুষ জনৈক শেখ জালাল উদ্দিন আহমেদ এটির প্রতিষ্ঠাতা।অল্প কিছু স্থানীয় ল�োকেরা এখানে নামাজ পাঠ করেন।পশ্চিম দেয়ালে একটি বড় মক্কামুখী Mihrab আছে । রমজান মাসে যথেষ্ঠ ভীড় হয়। Rowing club এর বাড়ীটি একসময়ে ঐ পরিবারের বাসস্থান ছিল। মসজিদ থেকে বেরিয়ে পশ্চিম থেকে দক্ষিণে বজবজ রেল লাইনের পাশ দিয়ে ফেরার পথে আজ ও দেখা যায় সেই তিনটি কামান। দু টি বড় ও একটি ছ�োট। কথিত আছে এগুল�ো নবাব সিরাজউদ্দৌলা র আমলের।লেকটি খনন করার সময় পাওয়া যায়। মনে করা হয় ১৭৫৬-৫৭ ইষ্ট ইন্ডিয়া ক�োম্পানী কলকাতা পুনরায় উদ্ধার করলে ,সিরাজদ�ৌল্লার সৈন্যরা এগুল�ো ফেলে যায়। আমি এদের বিস্তারিত ইতিহাস জানিনা। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যেতাম Anderson Club- এ। অধু না এটি Indian Life Saving Society নামে পরিচিত।এই ক্লাবটি ভারতে অনেক নামকরা সাঁতারু দের উপহার দিয়েছে। এখনও এখানে সাঁতার প্রশিক্ষণ ছাড়াও অনেক সমাজ সেবা মূ লক কাজ হয়। একজন সভ্য হিসেবে আমি এদের নানান cultural function দেখতে যাই। তাছাড়া খাওয়া দাওয়ার উৎসব ত�ো লেগেই থাকে। একসময় এই ক্লাব জল- নাটিকা ' অর্থাৎ Water Ballet দেখিয়ে খুব নাম করেছিল। যেটা না বললেই নয় তা হচ্ছে বিকেলে লেকের মুখ�োর�োচক খাবারের কথা। মনে পড়তেই ছু টে চলে গেলাম আমার ফেলে আসা ছ�োটবেলায়। মনে পড়ছে শিশু উদ্যানের উল্টো দিকে ছিল বিলাসের বিখ্যাত ফুচকা,গরম চিনে বাদাম শুকন�ো ধনেপাতা বাটা নু ন সাথে,ঝালমুড়ি,ঘটিগরম,(এক গুজরাটি বিক্রেতা সাদা কুর্তা পাজামা ও টুপি পরে বিক্রি করতেন। কুলফি(ভাঙের ও পাওয়া যেত) এবংআইসক্রীম ত�ো ছিলই। কিছু না কিছু অনেক সময় খেয়েছি। বর্তমানে কিছু নতুন সংয�োজন হয়েছে। Children's park এর জায়গায় Safari park, নজরুল মঞ্চ, পদ্ম লেক , নতুন সাঁতার ক্লাব ,টাইলস্ বাঁধান�ো চলার পথ আর�ো কত কিছু ।এত�ো হতে থাকবেই। তবে ইদানিং কালে ছট্ পূজ�ো উপলক্ষে লেকের জলকে যে ভাবে ব্যবহার করা হল তা অত্যন্ত নিন্দা জনক ও চিন্তার কারন।।২০১৯ সালে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে , সর�োবরের গেটের তালা ভেঙে কার্যত সরকারি আদেশ অমান্য করে লেকের জল ও পরিবেশ দূষিত করা হয়েছে। আশাকরি ভবিষ্যতে এরকম আর দেখতে হবে না। এখন আর লেকে নিয়মিত বেড়াতে যাবার খুব উৎসাহ ব�োধ করি না। যা দেখা আছে তাই "ভরা থাক স্মৃতি সু ধায়।" ।এই লেখার উৎসাহে ঢাকুরিয়া লেক কে ঘিরে আমার ছ�োট বেলার কিছু স্মৃতি র�োমন্থন হল�ো। দক্ষিণ কলকাতা বেড়াতে এলে অবশ্যই রবীন্দ্র সর�োবরে বেড়াতে যাবেন। ছবি তুলবেন,প্রাণ ভরে অক্সিজেন নেবেন,brisk walking করবেন আর সু ন্দর স্মৃতিগুল�ো মনের মনিক�োঠায় রেখে দেবেন। 

Durga Puja 2020

39


সোনালি স্মৃত

ময়টা ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসের গ�োড়ার দিকে। আমরা সল্টলেকে এসেছি কিছু মাস হবে, চাকরি করছি এক সিএ ফার্মে। দিনটা শনিবার, স্পষ্ট মনে আছে কারণ আমার ছু টি ছিল। আমার স্কুলের বন্ধু মণ্টু হঠাৎ বাড়ি এসে হাজির। বলল�ো ও সল্টলেকে একটা অডিট এসাইনমেন্টে এসেছে। এ ব্যাপারে বলে রাখি যে বছর খানেক হল�ো মন্টু সিএজি অফিসে অডিটর হিসাবে চাকরি পেয়েছে। তা ক�োন অফিসে অডিট করতে যাবি, জিজ্ঞাসা করতে বলল�ো ক�োম্পানির নাম ওয়েবেল সেন কাপাসিটার্স লিমিটেড (ওয়েবেল), ঠিকানা ব্লক বি এন, সেক্টর ফাইভে । পরে জেনেছিলাম এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও সেনর‍্যালে গ�োষ্ঠীর একটি য�ৌথ উদ্যোগ। তা ঠিকানা চিনতে অসু বিধা হবে বলে মন্টু আমায় অনু র�োধ করল�ো ওর সঙ্গে যদি আমি যাই ঐ ক�োম্পানিতে কারণ ও সল্টলেক খুব একটা ভাল�ো চেনে না। ১৯৮৫ সালে সল্টলেক চেনাই বেশ কঠিন আর সেক্টর ফাইভ হলে ত�ো কথাই নেই। দু ট�ো ক�োম্পানি, ম�োটে দু ট�ো ক�োম্পানি তখন ছিল এই সেক্টর ফাইভে। এক ফিলিপ্স আর দু ই এই ওয়েবেল। তখন গাড়ী আর কজনের ছিল । আর ট্যাক্সি সেত�ো সল্টলেকেই আসতে চাইত না, সেক্টর ফাইভ ত�ো অনেক দু রের কথা । তাই যাতায়াতের উপায় করুণাময়ী অবধি এল ১৪ বি বা ৪৬এ তে গিয়ে কপাল ভাল�ো থাকলে অট�ো আর নাহলে আধা ঘন্টার হাঁটা পথ । এল ১৪ সির এক গুমটি ছিল সেক্টর ফাইভে করুণাময়ী থেকে একটু এগিয়ে , কিন্তু সেখান থেকেও মিনিট দশেক হাঁটা পথ। আমাদের কপাল ভাল�ো ছিল, বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা এল ১৪সি বাস পেয়ে যাই, টার্মিনাসে নেমে দশ মিনিট হাঁটার পর পৌঁছে গেলাম ওয়েবেল এর গেটে । চারদিকে ফাঁকা জমি, বড় বড় ঘাস, জনমানবশূ ন্য। দিনেরবেলা একা যেতেও ভয় করবে। গেটে এন্ট্রি করে আমরা চলে গেলাম মেন অফিসে। সেখানে দেখলাম মন্টু র এক সহকর্মী অসীম বসে আছে। আমরা গেলাম ফিনান্স ম্যানেজার সু শ�োভন মুখ�োপাধ্যায়ের কাছে। মন্টু ও অসীম নিজেদের পরিচয় দিল�ো এবং আমায় দেখিয়ে বলল�ো যে আমি ওদের বন্ধু , সিএ পাস এবং এক অডিট ফার্মে চাকরি করছি । অফিস চিনতে অসু বিধা হবে বলে মণ্টুর সাথে এসেছি। কথাটা শেষ হতেই সু শ�োভন বাবু জানালেন যে তারা একজন দু তিন বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক�োয়ালিফায়েড সিএ খুঁজছেন । আমি যদি জয়েন করতে চাই তাহলে উনি ব্যাপারটা দেখবেন। সু শ�োভন বাবু জানালেন যে উনি নিজে কস্ট একাউন্টেন্ট, মাস তিনেক হল�ো জয়েন করেছেন এবং এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন চাকুরিসু ত্রে । এও বললেন যে আমাকে যে প�োস্টের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে সেই প�োস্টে এর আগে দু জন জয়েন করেছিল কিন্তু দু জনেই বেশিদিন এই পান্ডববর্জিত দেশে কাজ করতে চায়নি । কিন্তু আমি যেহেতু সল্টলেকে থাকি, আমার সমস্যা হওয়ার কথা নয়, তাছাড়া পুল কার এর ব্যবস্থা থাকবে। মন্টু ও অসীমের সম্মতি নিলাম, আর আমার ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতা প্রয়�োজন এবং এই কলকাতাতেই, এই ভেবে রাজি হলাম। ইন্টারভিউ হল�ো, সিলেক্টেড হলাম । ডেসিগনেশন একাউন্টস অফিসার। যেখানে কাজ করছিলাম, সেই সিএ ফার্ম থেকে কাজ হ্যান্ডওভার করে ছাড়া পেতে প্রায় দিন কুড়ি লেগে গেল�ো। ১৯৮৫ সালে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জয়েন করলাম ওয়েবেল ক�োম্পানিতে। প্রথম দিকের চাকরি বলে কিনা জানিনা, আমার প্রথম প্রথম দারুন লাগল ক�োম্পানি, তার ল�োকজন এবং পরিবেশ। তাছাড়া বাড়ির খুব কাছে বলে আমার বাড়তি সু বিধা। অফিসের সময় ছিল সকাল ৮.৩০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। একান্ত ক�োন বিশেষ কাজ না থাকলে অফিস ছু টির পর থাকার প্রয়�োজন ছিল না । ক�োম্পানির পুল কার এর ব্যবস্থা ছিল, তাই আমি সকালে ৮-১৫ তে বাড়ি ছাড়তাম পুল কারে আর বিকেলে ছু টির পর ৫-১৫ এর মধ্যে বাড়ি পৌঁছতাম। ওয়েবেলে প্রথমে যে জিনিসটা ভাল�ো লেগেছিল�ো যে এখানে প্রাধান্যপরম্পরা বা hierarchy বলে প্রকাশ্যে কিছু ছিল�োনা। বয়সে বড়�ো হলে দাদা বা দিদি আর ছ�োট হলে নাম ধরে ডাকা তা সে যে প�োস্টের হ�োক না কেন। যেমন সু শ�োভন বাবু আমার চেয়ে বয়সে বড়�ো, তাই আমি ওনাকে সু শ�োভনদা বলে ডাকব�ো আর উনি আমাকে নাম ধরে ডাকবেন । আবার আমার ডিপার্টমেন্টের ব�োসদা লেজার কিপার ছিলেন, কিন্তু ব�োসদা সু শ�োভনদা কে সু শ�োভন বলে সম্বোধন করতেন । hierarchy হীন এই প্রথা আমার খুব ভাল�ো লেগেছিল�ো। 40

- শমিত রায়

ক�োম্পানির কর্মী সংখ্যা প্রায় ২০০ - ৮০ জন ছেলে ও ১২০ জন মেয়ে । বেশির ভাগ ছেলে মেয়ের এটি ছিল প্রথম চাকরি। মেয়েদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ তাদের ক�োমল হাত টিভি পার্টস তৈরির উপয�োগী বলে ম্যানেজমেন্ট এর ধারণা। আমাদের ফিনান্স ডিপার্টমেন্ট আমাকে নিয়ে পাঁচজন। সু শ�োভনদা ও ব�োসদার কথা আগে বলেছি, এছাড়া ছিল কস্ট একাউন্টেন্ট গ�ৌতমদা ও ক্যাশিয়ার কাম সব বিবিধ কাজের জন্য বিখ্যাত তাপস দাস। খুব অল্প দিনের মধ্যে আমার ও তাপসের মধ্যে এক দারুন বন্ধু ত্ব গড়ে উঠল�ো। তাপস আমার সাথে একই বছরে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছিল আর তাই দু জনে দু জনকে নাম ধরে আর তুমি বলে সম্বোধন করতাম। তাপসের বাড়ি রানিগঞ্জে এবং ও কলকাতায় বাসা ভাড়া করে থাকত�ো। সপ্তাহান্তে বাড়ি যেত বলে শনিবার একটু আগে অফিস থেকে বের হত�ো ও স�োমবারে একটু দেরিতে আসত�ো কিন্তু এ নিয়ে কেউ কখন�ো ক�োন�ো আপত্তি করেনি। ক�োন�ো শনিবারে দেরি হয়ে গেলে তাপস আমাদের বাড়িতে থেকে যেত এবং রবিবার দিন ভ�োরে ব্ল্যাক ডায়মন্ড ধরত�ো। ভ�োরবেলায় আমি ওকে এস১৮ বাস ধরিয়ে দিতাম হাওড়া যাওয়ার জন্য । এত অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে একসঙ্গে থাকা তাই তাদের মধ্যে আলাপ পরিচয়ের চেষ্টা হওয়াটা স্বাভাবিক। তখন স্যালারি পেমেন্ট হত�ো ক্যাশ টাকা খামে ভরে। অনলাইন পেমেন্ট ত�ো নয়ই, এমনকি চেকও সিনিয়ার ম্যানেজার ছাড়া সবার ক্ষেত্রে ছিলনা। তা তাপস একদিন আমায় বলল�ো কয়েকটি মেয়ের নাম যেমন চামেলী, শ্যামলী, শুভ্রা ইত্যাদি, মানে তাপসের চ�োখে যারা সু ন্দরী সেই ক্রমানু যায়ী । তাপসের দু ঃখ যে ও এই কিছু মেয়েদের ভাল�ো কড়কড়ে ন�োট দেয় পে প্যাকেটে, কিন্তু এরা ধন্যবাদ ত�ো দূরে থাক, তাপস কে পাত্তাও দেয় না । তাপসের দু ঃখের কারণ জেনে ওকে ওষু ধ বাৎলালাম। বললাম যে ভাল�ো ন�োট দিয়ে যখন কাজ হচ্ছে না, তাহলে এদের ছেড়া ফাটা ন�োট দিয়ে দেখতে পার�ো যে কি হয়। বাস যেমন কথা তেমন কাজ। তাপস ব�োধহয় অপেক্ষা করেছিল স্যালারি পেমেন্ট এর জন্য । ব্যাঙ্ক এ সাধারণত পিয়ন টাকা তুলতে যেত, কিন্তু সে মাসে কি এক বিশেষ কাজ আছে বলে তাপস ব্যাংকে গেল�ো । কিছু ক্ষন বাদে ব্যাঙ্ক থেকে ম্যানেজার এর ফ�োন, বলছেন যে কি ব্যাপার বলু ন ত�ো, তাপস বাবু বলছেন এক বান্ডিল ছেড়া ন�োট দিতে, তা এত ছেড়া ন�োট ত�ো নেই । আর ছেড়া ন�োট যে কেউ যেচে নেয় তাও জানা নেই। আমি ম্যানেজারকে রিক�োয়েস্ট করলাম যে তাপস যা বলে দিয়ে দিন, আমি বরং পরে আপনাকে ছেড়া ন�োটগুল�ো ফেরত পাঠিয়ে দেব। সল্টলেকে তখন খুব কম ব্যবসা আর আমাদের একটু হলেও বড়�ো একাউন্ট এবং সেই হেতু ব্যাঙ্ক স্টাফদের সঙ্গে আমাদের খুব মধু র সম্পর্ক ছিল। মাসের সাত তারিখে স্যালারি পেমেন্ট হয়ে গেল�ো। যদিও তাপস আমায় কিছু বলেনি, আমার বু ঝতে বাকি রইল�ো না যে ও কিছু মেয়ের স্যালারি প্যাকেটে ছেড়া ন�োট দিয়েছে। আট তারিখে সকালে চা খেয়ে একটু কাজে বসব দেখি জনা পাঁচেক মেয়ে তাপসের খ�োঁজে হাজির। বু ঝতে পারলাম তাপসের ছেড়া ন�োটের পরবর্তী অধ্যায় । তাপসের টেবিল আমার খুব কাছে ছিল । আমার চ�োখ খাতায় থাকলেও কান ছিল তাপস ও মেয়েদের কথা বার্তায়। কয়েকজনকে অল্প কথায় সরিয়ে দিল�ো টাকা চেঞ্জ করে, কিন্তু ওর সেই চামেলী, শ্যামলী ও শুভ্রার জন্য বেশি সময় দিল�ো। বেশ ভাল�ো আলাপ জমাল�ো এবং চা খাইয়ে তাদের রাগ ভাঙিয়ে বন্ধুত্বের এক মধু র সূ ত্রপাত গড়ল। আমি একসময় এক কৃত্রিম গাম্ভির্য নিয়ে তাপসকে জিজ্ঞাসা করলাম সমস্যার কথা। তাপস জানাল�ো যে ব্যাঙ্ক থেকে কিছু ছেড়া ন�োট দিয়েছে যেগুল�ো এই মেয়েদের স্যালারি খামে ভুলক্রমে চলে গেছে এবং ও ছেড়া ন�োট বদলিয়ে দিচ্ছে। আমি অভিনয় করে তাপসকে বললাম ব্যাপারটা নিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার এর সাথে কথা বলতে। যাক এর পর তাপস এবং ওই মেয়েদের বেশ বন্ধু ত্ব ও হাসিঠাট্টার সম্পর্ক চলছিল। তারপর একদিন ব�োসদা দিল�ো কিছু টা ঘেঁটে। দিনটা ছিল স�োমবার , অর্থাৎ তাপস রানিগঞ্জ থেকে আসে বলে অফিসে আসতে একটু দেরি হয়। চামেলী এসে গ�ৌতমদাকে তাপসের কথা জিজ্ঞাসা করতে গ�ৌতমদা বলল�ো যে তাপস একটু দেরিতে আসবে । চামেলী চলেই যাচ্ছিল�ো, হঠাৎ সু শ�োভনদার ঘর থেকে ব�োসদা বেরিয়ে এসে একটু দূরে দাড়ান�ো চামেলীকে বলেছিল�ো মাসিমা একটু নিচে গিয়ে কাউকে দিয়ে গতকালের প্রোডাকশন শিটটা পাঠিয়ে দেবেন। বাস, বেশ ব�োঝা গেল�ো যে চামেলী মাসিমা সম্বোধনে বিরক্ত হয়ে ক�োন কথা না বলে হন হন করে

Anjali

www.batj.org


নিচে চলে যায় । তাপস অনেক কষ্টে ব্যাপারটা ম্যানেজ করেছিল কিন্তু বেশ কিছু দিন ব�োসদা ও তাপসের মধ্যে কথা বন্ধ ছিল। আচ্ছা একটা ল�োকের দু পুরের ভাত খেতে কতক্ষন লাগতে পারে। পনের�ো মিনিট, দশ মিনিট, আট মিনিট। কিন্তু এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে দু পুরের খাওয়ার কথা কেউ শুনেছেন? আমি দেখেছি। একদিন লাঞ্চ খেতে বসব , আমার উল্টো দিকে ডিরেক্টর পার্থবাবু বসলেন। আমি খাবার আনতে যাব�ো কাউন্টার থেকে ত�ো সু শ�োভনদা ক্যান্টিনের দরজায় ডেকে বলল�ো একটা বিশেষ কাজে বেরিয়ে যাচ্ছে এবং একটা রিপ�োর্ট আমাকে পাঠিয়ে দিতে বলল�ো। বড়জ�োর দেড় মিনিট কথা বলে টেবিলে ফিরে দেখি পার্থবাবু খেয়ে বেরিয়ে গেছেন। আমি ত�ো অবাক। পরবর্তী সময়ে দেখেছি ভদ্রল�োক ভাত , ডাল , তরকারি, মাছ, চাটনি ইত্যাদি একসঙ্গে ঘেটে নিয়ে পাঁচ চামচে লাঞ্চ শেষ, সময় এক থেকে দেড় মিনিট। কিছু ল�োক থাকেনা , যারা কারণে অকারণে ঘ্যান ঘ্যান করেই যায়, ক�োন�ো সময়ে হাসিমুখে দেখা যায় না। আমাদের মেইনটেনেন্স কন্ট্রাক্টর মদনবাবু ছিল এইরকম এক ব্যক্তি। মাসের কুড়ি তারিখ থেকে তাগাদা দিতে থাকত�ো, যদিও পেমেন্ট মাস শেষ হলেই হবে তা তিনি ভাল�ো করেই জানতেন। তা এহেন মদনবাবু র ক�োম্পানির পেমেন্ট চেক তাপস আমার কাছে নিয়ে এল�ো। চেকে ক�োন�ো ডেট নেই। তাপস কে একথা বলতে, তাপস আমায় কিছু কথা বলল�ো এ ব্যাপারে যা একটু পরে বলছি। যাক সে মাসে ব�োধহয় একটু তাড়াতাড়ি তাপস মদনবাবু কে চেক দিয়ে দিল�ো। এর দিন পাঁচেক পর মদনবাবু কে অফিসে দেখা গেল�ো। তাপস মদনবাবু কে কুশল জিজ্ঞাসা করে একটানে জিজ্ঞাসা করল�ো যে চেকের টাকা পেয়েছে কি না। মদনবাবু জানালেন যে ব্যাঙ্ক চেক রিটার্ন করেছে আর ওনাকে

বলেছে দশ বছর বাদে চেক জমা দিতে। আগ্রহবশতঃ চেকটা দেখতে চাইলাম। দেখি দিন মাস এক রেখে তাপস বছরটাকে ১৯৮৫ এর জায়গায় ১৯৯৫ করে দিয়েছে আর ব্যাংকের স্টাফ মদনবাবু কে রসিকতা করে দশ বছর বাদে চেক প্রেসেন্ট করতে বলেছে। যাক এবার তাপস ওই চেকের বদলে একটা কারেন্ট তারিখের চেক সই করিয়ে দিয়ে দিল�ো যাতে প্রব্লেম আর বেশি দূ র না গড়ায়। আগেও বলেছি, আবারও বলছি যে সে সময় সেক্টর ফাইভ একটা দু র্গম জায়গা ছিল। যাতায়াতের অসু বিধার জন্য সেলস ট্যাক্স, পিএফ, ইত্যাদির ইন্সপেক্টররা আসত�োই না, ইন্সপেকশন ত�ো দূরের কথা। তবে একবার পুজ�োর কিছু দিন আগে এক ই এস আই ইন্সপেক্টর এসে হাজির। বেশ বু ঝতে পারলাম ভদ্রল�োক পুজ�োর আগে কিছু উপরির আশায় এসেছে । তাপস এসে জানাল�ো যে ওর রেকর্ড কিপিং এ অনেক ব্যাকলগ। আমি ওকে বললাম যেভাবে হ�োক ম্যানেজ করতে। তা তাপস ভদ্রল�োককে চা বিস্কুট খাইয়ে গল্প শুরু করল�ো আমাদের পিয়ন বাহাদু রকে আগেই শিখিয়ে রেখেছিল�ো জানলাগুল�ো একটু বাদে খুলে দিতে। ১৯৮৫ সালে সেক্টর ফাইভের বিকেল, কিছু ক্ষনের মধ্যে ঘর ভর্তি মশা, প�োকা মিলে একসার। ইন্সপেক্টর ভদ্রল�োক পালাতে পারলে বাঁচে। তাপস তাকে তাড়াতাড়ি মিষ্টি খাওয়ার কিছু টাকা দিয়ে , ক�োম্পানির গাড়ি করে করুণাময়ী অবধি পৌঁছ�োবার ব্যবস্থা করে দেয়। ভদ্রল�োক বলে যান আবার আসবেন, কিন্তু আর ক�োনদিন তার দেখা পাওয়া যায়নি। এরকম আরও নানা মজার ঘটনা চাকরিজীবনে ঘটেছে। আজ এখানেই রাখছি, পরে না হয় আরও কিছু ঘটনা জানাব�ো । 

লঙ্কা ক �������������������

উর�োপ, অ্যামেরিকা, বা অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ঘ�োরার পর রাজস্থানের পুস্করে এসে মনে হ�োল�ো যে এর মত�ো জায়গা পাওয়া দু ষ্কর! ‘রাজস্থান’ নামটা শুনলে (মায় ‘ভারতবর্ষ’ নামটাও!), আমি আমার মানসচক্ষে যা দেখতে পাই তা হ�োল একটা ‘রত্ন-ভাণ্ডার’ বা প্রকারান্তরে একটা ‘জুয়েলারি-বক্স’; তবে বেশ ন�োংরা, এই যা! তা জুয়েলারি-বক্সেও ধু ল�ো পড়ে বৈ কি! রাজস্থানের আনাচ-কানাচ বা সর্বত্রই যেন মনি-মুক্ত খচিত। এই প্রাসাদ, ত�ো সেই কেল্লা; এই মন্দির, ত�ো সেই সমাধি; এই হ্রদ, ত�ো সেই দীঘি – সর্বত্র ছড়ান�ো। আর আছে হরেক রকম সংস্কৃতি, যা বদলে যায় থেকে থেকেই, কয়েক কিল�োমিটার অন্তর অন্তর। আর এইসবের কিছু ই যদি পছন্দ না হয়, তাহলে শুধু যেতে হবে পুব থেকে পশ্চিমে, আর দেখা যাবে সবু জের সমারহ কেমন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে রুক্ষ মরুভূমিতে। এ হেন রাজস্থানেই আবার পাওয়া যায় আর একটা জিনিস - ‘লংকার-তরকারি’। লংকা ত�ো আমরা ভারতীয়-উপমহাদেশের ল�োকেরা কম-বেশী সকলেই খাই; এই ফ�োড়নে বা সেই তরকারিতে, এই ঝ�োলে না হয় সেই ঝালে। কিন্তু তাই বলে তরকারির পুর�োটাই শুধু ই লংকা? তেমনটা আগে কখন�ো শুনিনি। তবে তা খাওয়ার সু য�োগ হয়েছিল�ো আমার এক বন্ধু র সাথে। সত্যি কথা বলতে কি বন্ধু র সাথে বন্ধু ত্বটাই হয়েছে এই লংকার-তরকারিকে কেন্দ্র করে! বিকানির থেকে ফিরছিলাম ট্রেনে। উদ্দেশ্য দিল্লী, আর সেখান থেকে উত্তর ভারত। ট্রেনে রাত্তির হবার বেশ আগেই ক্যাটারারদের একজন রাতের খাবারের অর্ডার নিতে এল। আমি যথারীতি এড়িয়ে গেলাম, খাবারের ‘হাইজিন’কে প্রশ্ন করে। আমার উল্টোদিকে বসা একজন জিগ্যেস করলেন যে কি ব্যাপার, খাব কি? ওর সাথে পরিচয় হ�োল, জানালাম যে ও বিকানিরের ছেলে, দিল্লী আই.আই.টি তে পড়ে, ছু টি কাটিয়ে বাড়ি থেকে ফেরত যাচ্ছে। জানালাম যে আমার কি হাল! বেশ কয়েকবার নিজের দেশে এসে নিজের পছন্দের খাবার খেয়েই www.batj.org

উল্টেছি, তাই মনে ভয়! একা একা ঘুরি, ক�োথাও উল্টে গেলে? তাই এদিক-ওদিক খাওয়া বাদ। ও প্রস্তাব দিল যে আমি নির্ভয়ে ওর সাথে আনা খাবার খেতে পারি। খাবার স্বয়ং ওর নিজের মায়ের হাতের তৈরি, ওদের বিকানিরের বাড়িতে; তবে খাবারে যে মাছি বসেনি তার একশ�ো ভাগ নিশ্চয়তা ও দিতে পারবে না! সাহস করে রাজী হয়ে গেলাম। বদলে ওর আবদার এই যে ওকে আমার পাসপ�োর্টটা একবার দেখতে দিতে হবে, ও একটু দেখতে চায় যে বিভিন্ন দেশের ভিসা-স্ট্যাম্পগুল�ো কেমন দেখতে হয়! ও যে নিরামিষাশী তা আগেই জানিয়েছিল, তবে প�োঁটলা থেকে যে খাবার ও বার করল�ো তার জন্য আমি আদ�ৌ প্রস্তুত ছিলাম না। রুটিটা দেখে ঠিকঠাকই মনে হ�োল, তবে তা খেতে হবে যা দিয়ে তা দেখেই অবাক হয়ে গেলাম – এক খাবলা কাঁচা লংকা, তবে তা রীতিমত রান্না করা! রান্নার সময় তাতে ব�োধহয় শুধু মাত্র দেওয়া হয়েছে নু ন আর জিরের গুড়�ো! অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। ভাবলাম যে এ কি বিড়ম্বনা, এতে মাছি না বসে থাকলেও এত লংকা খেলে ত�ো নির্ঘাত উল্টে যাব; আজ রাত্তিরে না হ�োক, কাল সকালে ত�ো বটেই! দেখলাম যে ও দিব্যি চেটে-পুটে খাচ্ছে। জিগ্যেস করলাম যে ওর ঝাল লাগে না? ও বলল যে খেয়েই দেখ না। সাহস করে একটু মুখে দিতেই আমার গলা-বু ক একেবারে জ্বলে গেল�ো। আর খেতে পারলাম না। আমাদের বন্ধু ত্ব আজও অটুট, ফেসবু কে কথা হয় মাঝে-সাঝেই। ওর থেকে আমি শিখি হিন্দি, আর ও আমার থেকে ইংরিজি। পরে একবার দিল্লী গিয়ে ওর সাথে দেখাও করে এসেছি, সাথে দিল্লী আই.আই.টির ক্যাম্পাসও। আজ ওর সাথে ফেসবু কে কথা হবার পরেই ভাবলাম যে ঐ লংকার তরকারি বানালে কেমন হয়? একটু রয়ে-সয়ে লংকার বদলে ব্যাবহার করলাম ক্যাপ্সিকাম (বেল-পেপার), আর নু নজিরের সাথে অন্য কিছু মশলাও। মন্দ হয়নি। 

Durga Puja 2020

41


দেবীপক্ষের সূচ

বারে ফাল্গুনে একটিই মাত্র বিবাহের লগ্ন, তবে ফাল্গুনের প্রতি গ�োধূলিই চার হাত এক করার উত্তম সময়। আজ তেমনি এক গ�োধূলি, দেবাঙ্গি আর অংশু’র শুভদৃ ষ্টি, মালাবদল সম্পন্ন হবে। তবে ঠাকুরমশাই বার বার বলে দিয়েছেন সন্ধ্যা ৫ টা ১০ এর গ�োধূলি লগ্ন অবশ্যই ধরতে, সু খী দাম্পত্যের চাবিকাঠিগুলির মধ্যে সঠিক সময় নাকি অন্যতম। তাই ভ�োর থেকেই দেবাঙ্গির বাড়িতে ভীষণ তৎপরতা। দেবাঙ্গি এই বছরই ইতিহাসে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। দেবাঙ্গি আর অংশুর প্রেমের বিয়ে। স্বভাবতই দেবাঙ্গি ভীষণ খুশি। আগের দিন রাত থেকে ওর সকল ভাইব�োন, ওর বন্ধু রা মিলে খুব মজা, খুব হইচই করেছে। দেবাঙ্গি আজ মনের মত করে সাজবে, ওকে সাজাতে ওর মধ্যবিত্ত বাবা ক�োনও কার্পণ্য করেনি। ওর দু হাত ভর্তি মেহেন্দি, মেহেন্দির মধ্যে লেখা হয়েছে অংশুর নাম, আর ওর মনে বাসা বেঁধেছে এক সু খী গৃ হক�োণের স্বপ্ন। সেই গৃ হক�োণে বু নেছে এক স্বপ্নের রাজ্য, যে রাজ্যে শুধু ই ভালবাসা আর ভালবাসা, না বর স�োহাগের কথা বলছি না, সে ত�ো আছেই, তার পাশাপাশি মা এর ভালবাসা, বাবার স্নেহ, ব�োনের খুনসু টি সব আছে। অংশুর বাড়িতে ওর মা বাবা আর একটি ব�োন আছে। ব�োন মিলি প্রায় দেবাঙ্গির বয়সী। দেবাঙ্গি মা বাবার একমাত্র মেয়ে , ওর ক�োনও ভাই ব�োন নেই। দেবাঙ্গির ঝুলিতে বাবা মার ভালবাসার ক�োনও কমতি ছিল না, মা মানেই স্নেহময়ী, আর বাবা মানেই নিশ্চু প এক ভালবাসার খনি। এই ছিল দেবাঙ্গির ধারনা! অংশুর বাবা মাকেও ঠিক এমনি করে ভালবাসার সম্পর্কে বাঁধার সদিচ্ছা ওর মনে আগলে রেখেছে। ভাই ব�োন নেই বলে যে একটু দু ঃখ আছে সেইটা পূ রণ করবে ও ওর নতুন সংসারে। দেবাঙ্গির মনে এখন এরমই সাতরঙা স্বপ্নরা জাল বু নেছে। অংশুও বানিজ্য বিভাগে ক�োন�োরকমে গ্রাজুয়েশনটা শেষ করেই বাবার ব্যবসা দেখাশ�োনার কাজে মন দিয়েছিল। ওর দায়িত্বে ব্যবসার বেশ বাড়বাড়ন্ত হচ্ছিল। দেবাঙ্গির বা অংশু কারুর বাড়িতেই বড়�ো বেশি আপত্তি কেউ করেনি। ওদের প্রেমের রথ চারটি বসন্ত অতিক্রম করার পর, পঞ্চম বসন্তে ওরা এক হয়ে সংসারী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সকালে দিনের প্রথম সূর্য কিরণের মত�ো স্নিগ্ধ কমলা রঙের শাড়ী পরে গায়েহলু দ, তারপর গ�োধূলিতে লাল বেনারসিতে রানীর সাজে বিবাহ মণ্ডপের পাশে আরও কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা। ওদিকে যথা সময়ে রাজার বেশে ট�োপর মাথায় দিয়ে ফুল সাজান�ো গাড়িতে অংশুও হাজির হল। এরপর আর কি! “যদিদং হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম”। বৈদিক মন্ত্র ত�ো নিতান্তই সামাজিক নিয়ম পালনের জন্য, ওই মন্ত্রের বহুদিন আগেই ঋষি প্রজাপতির ইচ্ছায় ওদের একে অপরের হৃদয় বিনিময় হয়ে গিয়েছিল। সব রূপকথার গল্প এখানেই শেষ, “তারপর তারা সু খে শান্তিতে বসবাস করল” ম�োটামুটি এই রকমই হয় রূপকথা (বা প্রেমের ) গল্প। তাই আজকের গল্প ওই শেষের পরের অংশ নিয়ে। লাল টুকটুকে শাড়ী পরে আলতারাঙা পায়ের ছাপ ফেলে দেবাঙ্গি তার নতুন সংসারে প্রবেশ করল। বধূ বরনের সময়ই সকলের উৎসু ক দৃ ষ্টি যে দেবাঙ্গির দিকে, তবে তা দেবাঙ্গির স�ৌন্দর্যের জন্য নাকি তার অলঙ্কার পরখের জন্য তা তারাই জানেন! স্ত্রী আচার পালনের সময়ই ওর খুড়তত�ো ননদ বলল , “হাত টা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, বলি কিছু স�োনার জলে গিলটি করা চুড়ি বা একটা মানতাসাও ত�ো পরতে পারতে”। ও কথার বিশেষ অর্থ যদিও দেবাঙ্গি বু ঝল না, ও সরল ভাবেই বলল, “কেন দিদি , হাতে ত�ো চুর , শাঁখা বাধান�ো আর পলা বাধান�ো আছে, খালি নেই ত�ো”। দেবাঙ্গির উত্তরে ননদ যদিও মুখ বাঁকিয়ে বলেছিল, “উম্ম, কই , হাত এখনও খালি, আর ভাই কি আমার ফেলনা ওর হারটাও বড়�ো সরু”। আর একটু মুখ আড়াল করে বলেছিল, “মেয়ের মুখ খুব গ�ো, মুখে মুখে এখন থাকতেই খুব কথা ফুটেছে দেখছি”। এই অবধি শুনে হয়ত ভাবছেন এবার শ্বাশুড়ী ব�ৌমার সেই চিরাচরিত গপ্পো। আপনারা খুব খারাপ যে কিছু ভেবেছেন তা নয় তবে এই চিরাচরিত গপ্পো গুল�ো ক�োনও দেবাঙ্গির জীবনেই পুরান�ো হয়না। তাই এই দেবাঙ্গির কিছু কথা নাহয় আর একবার শুনলেন। বিয়ের পরের ঐদিনের ব্যবহার সংসার অনভিজ্ঞ দেবাঙ্গি বু ঝতে না 42

- আগমনী পাঠক

পারলেও আজ ব�োঝে দেবাঙ্গি। ওটা ওকে তাচ্ছিল্য করার প্রচেষ্টা হলেও ওটা আসলেই সমাজের বিষ যা প্রতিটা মেয়ের মধ্যে আছে আর সেই বিষের জ্বালায় যু গ যু গ ধরে জ্বলছে। তবে শিক্ষার আল�ো ধরে আধু নিক সমাজে সেই বিষের যন্ত্রণা আগের তুলনায় একটু ম্রিয়মান হয়েছে বইকি। তবে যন্ত্রণা যে সয় তার কাছে কি সেটা ম্রিয়মান হয়? তার কাছে সেটাই তখন চরম সত্য! দেবাঙ্গির প্রেমের বিবাহ তাই ওর স্বামীর ভালবাসার প্রতি বড়�ো বেশি অভিয�োগ ছিল না, কিন্তু সংসারের জটিল পাকে পড়ে ভালবাসার সাতপাক মাঝে মাঝে অল্প বিস্তর আলগাও হত। ওর ননদকে বেশ আধু নিকা করেই মানু ষ করেছে ঠিক দেবাঙ্গিকে যেমন ওর বাবা মা করেছে । বিয়ের সপ্তাহ দু য়েক পর দেবী মানে দেবাঙ্গি যখন শাড়ী ছেড়ে একটু ঢিলেঢালা সাল�োয়ার কামিজ পরতে গিয়েছিল, ওর শ্বাশুড়ী মা ওকে নিষেধ করে হাতে লাল পাড় সু তির কাপড়টা দিয়ে গিয়েছিল। সু তির কাপড়টিকে যদিও ধু য়ে শুকিয়ে নিয়ে মাড় নষ্ট করে নরম করেই হাতে তুলে দিয়েছিল দেবাঙ্গির শ্বাশুড়ী মা, কিন্তু সে শাড়ী পরে দেবী যখন বেরিয়ে দেখেছিল ওর থেকে মাত্র দু বছরের ছ�োট মিলিকে ওই একই মহিলা শাড়ী না পড়িয়ে জিন্স আর টপ পরিয়ে কলেজের অনু ষ্ঠানে পাঠালেন, তখন দেবী মন থেকে নিজের মাকে খুব মিস করেছিল। ওই মনখারাপের ভিড়ে একটুখানী যে ভালবাসা ছিল সেটা আর দেখা হল না দেবীর। বাড়ির মেয়ে যা করতে পারে বাড়ির বউ সেগুল�ো করতে পারে না, সেগুল�ো করতে গেলেই লাগে অনেকের পারমিশন! ব্যাপারটা সেই বনের পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রেখে বাড়ির শ�োভা বাড়ান�ো হল তারপর আবার তাকে খুব যত্ন করে খাইয়ে বদ্ধ ঘরের মধ্যে উড়তে দিয়ে পশুপ্রেমী সাজার মতই পুলক দায়ক। যাইহ�োক এই ভাবেই এগ�োচ্ছিল দেবাঙ্গির দিন। দেবী সবকিছু কে এরমই হয় ভেবে মেনে নেওয়ার বা বানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরকম চেষ্টা আমি আপনারা এমনকি দেবাঙ্গির মা বা শ্বাশুড়ী মা সবাই চালিয়েছে নিজের জীবনে আর ভেবেছে, এ কষ্ট সে তার আপন মেয়েকে পেতে দেবে না, কিন্তু সেই ভাবনার ভিড়ে একবারও ভাবা হয়নি যে এ কষ্ট আপন বউমাকে আর পেতে দেব না। দেবাঙ্গির মনটা কদিন ধরেই একটু খারাপ যদিও মাস খানেক আগে দেবী একবার গিয়েছিল ওর মায়ের কাছে তবু ও মায়ের শরীরটা ঠিক ভাল নেই শুনে মন বড়�ো উতলা হয়েছে। বাড়িতে ওর আজন্ম পরিচিত জন্মভিটে তে যাওয়ার পারমিশন চাইল কিন্তু সেটি না মঞ্জুর হল। দেবী অংশুর কাছে আর্জি জানাল, কিন্তু সামনেই পুজ�ো তাই সেই পুজ�োর জামা কাপড় নিয়ে একবারে কয়েকদিন পরই যেতে বলল অংশু। আজ দেবাঙ্গির নিজেকে বড়�ো অসহায় লাগল�ো, জন্মদাত্রী মাকেও দেখতে যেতে পারছে না! অথচ ও অংশুকে সব সময় খুব উতলা হতে দেখে যখনই ওর শ্বাশুড়ী মার কিছু সমস্যা হয়, কিন্তু দেবীর কষ্টটা, ওর উদ্বিগ্নতাটা কেউই বু ঝল না। এসবের মাঝে পড়ে দেবী মাঝে মাঝেই নিজের ধৈর্য হারায়, তখনই এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে দেবীর গায়ে ‘মুখরা বউ’ এর তকমাটা লেগে যায়। দেখতে দেখতে মহালয়া এসে গেল, আজ দেবী খুব খুশি, আজ ও ওর মাকে দেখতে যেতে পারবে যে! সবাই ভ�োরে উঠে পড়েছে, মহালয়াও শ�োনা হয়ে গেছে, শ্বাশুড়ী মার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে দেবী ম�োটামুটি সংসারের সব কাজ শেষ করে আলমারি থেকে ঢাকাই শাড়ীটা বের করে রেখে স্নানে গেল। স্নান সেরে এসে শাড়ীটা পরতে পরতে অংশু ঘরে ঢুকল , ঢুকে অংশু বলল, “আজ খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কাজ এসে গেছে আজই আমাদের ডেলিভারি দিতে হবে, লক্ষ্মীটি আজ যেতে পারব না, একেবারে সপ্তমীর দিন যাব�ো কেমন”। এই বলে দেবীর একটু কাছে এসে দেবীর কপালে একটা স্নেহ চুম্বন এঁকেদিয়ে দেবীর উত্তরের অপেক্ষা না করেই ঘর থেকেই বেরিয়ে গেল। দেবী চুপ করে, বিছানার উপরে থপ করে বসে পড়ল। ম�োবাইলটা হাতে নিল মা কে ফ�োন করে জানাবে যে, আজ যাবে না ওরা। হাতে নিতেই একটু আগে আসা হ�োয়াটস্যাপ মেসেজের উপর চ�োখ গেল, তাতে লেখা আছে, “আজ দেবীপক্ষের সূ চনা, সাথে সূ চনা হ�োক নারীশক্তির ও”। ওই শব্দ গুল�ো যেন দেবীর মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তন আনল। দেবী আবারও ওর ঢাকাইটা ভাল ভাবে পরে নিল, সব কেনা নতুন জামা কাপড় গুল�োও ব্যাগের মধ্যে নিল আর অংশুকে একবার ডেকে নিয়ে এল ঘরের মধ্যে।

Anjali

www.batj.org


“বিয়ের আগে ত�োমার সাথে দেখা করতে আমি একাই যেতাম , একাই গঙ্গা পেরিয়ে প্রিন্সেপ ঘাটেও পৌঁছেছিলাম। আজ ত�োমাদের বাড়ির বউ হলেও বিশ্বাস কর�ো আমার জন্মভিটের রাস্তা আমি ভুলে যাইনি। তাই একাই আমি যেতে পারব। চাইলে তুমি আমাকে বাস স্টপ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসতে পার�ো। আর জানত�ো মা দু র্গা একাই আসেন মহাদেবকে সঙ্গে নেননা কিন্তু!” এই বলে ব্যাগ নিয়ে দেবী বেরিয়ে এসে ওর শ্বাশুড়ী মা কে প্রনাম করে বলল, “মা কদিন আমি একটু আমার মায়ের কাছে থেকে আসি”। দেবী বেশ খানিকটা হেঁটে এগিয়ে গেছে তখন দেবীর সামনে অংশু বাইক নিয়ে এসে দাঁড়াল, বলল “উঠে এস�ো, আজ ত�োমার মহাদেব নয় বাহন হিসাবেই ত�োমার আর এক বাড়িতে দিয়ে আসি চল�ো” দেবীও চ�োখের ক�োনের হালকা জলের রেখাকে আর বইতে না দিয়ে প্রসন্ন চিত্তে অংশুর বাহনের চড়ে বসল। “মা দু র্গা কিন্তু আবার মহাদেবের কাছে ফিরে আসে, দেখ�ো তুমিও ফিরে এস�ো কিন্তু”

“ধ্যাত, শুধু ইয়ারকি না! তা আমার এই বাহনটি গেলেই আবার তাতে চড়ে ফিরে আসব” এই কথা বলেই ওরা দু জন হাঁসতে লাগল, আর অংশুর বাইক হওয়া চিরে এগিয়ে গেল। এইভাবে মনের মাঝে কষ্ট জমিয়ে রাখলে সেই কষ্ট গুল�ো ক্রোধাগ্নি রূপে যদি বেরিয়ে সামনের সম্পর্কগুল�োকে জ্বালিয়ে দেয়, তার থেকে ভাল, সেগুল�োকে বাড়তে না দেওয়া, নিজের অধিকার অন্যের হাতে তুলে দিয়ে নয় অন্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন থাকার মাধম্যেই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হ�োক। দেবীপক্ষের সূ চনাতে বৃ হৎ কিছু না, এইরকম নিজের ছ�োট ছ�োট ইচ্ছে গুল�ো পূ রণের অধিকার সব দেবীরাই যেন নিজের কাছে রাখতে পারে! দেবীপক্ষে নয় শুধু , সব পক্ষে দেবীরা ভাল থাকুক আর ভাল রাখুক সকলকে, কেননা ভাল রাখার দায়িত্বত�ো দেবীদেরই দিয়েছেন পরম প্রেমময় ঈশ্বর । 

ঈশ্বর, তোমার কুঞ্

- হেমন্ত কুমার সর

ঈশ্বর, ত�োমার কুঞ্জবনে সবাই রাজা,

সবাই প্রজা ।

ঈশ্বর, ত�োমার কুঞ্জবনে পাখী আছে

গান আছে

আল�ো আছে

বাতাস আছে

লতা আছে

ফুল আছে

নদী আছে

আকাশ আছে

বসন্ত আছে

শরৎ আছে

গ্রীষ্ম আছে

শীতও আছে

তবু ঈশ্বর, ত�োমার কুঞ্জবনে প্রশ্ন কেন করতে হয় ? ভালবাসা কেন খুঁজতে হয় ? ভুখা কেন মরতে হয় ? সাদা কাল�োয় ভেদ কেন ? ঈশ্বর, ত�োমার কুঞ্জবনে খুঁজলে কী শান্তি পাওয়া যায় নাকি ? www.batj.org

Durga Puja 2020

43


বিনিময়

- দুহিতা সেনগ

সামান্য কিছু লিখে মুছে ফেললেও অনেক খানি লিখতে চাওয়া উধাও হয়ে যায়। ভাবনা আসে আর কি হবে, কে কখন ক�োথায় কবে দেখবে এসব? কার সময়ে সময় আছে? হাত বলবে,- 'আমার কাছে কলম ছিল' চ�োখ বলবে,- 'আসেনি ঘুম, নিদ্রাহীনে মন ভ�োলাবার সু য�োগ নিল।' মন বলবে - 'আমি ত�ো র�োজ ভুলে যাওয়ার নেশায় ভরা, যদি আজ কিছু ক্ষণ এর মনে পড়া 'মুঠ�োয় আছে'-র আশ্বাসে ফের দূরের করা ফিরে আসতে চায়-।' .. যদি তার ইচ্ছে করে, ভাবনা গুল�োয় শব্দ ঝরে, না বলারা জলের দরে, চ�োখের হয়ে যায়। এমনি ক�োন�ো দু পুর শেষে, অন্য ক�োন�ো ছদ্মবেশে, হয়ত�ো ভুল করেই এসে, চ�োখ পড়ল কার�ো। বুঝল�ো সে এক গ�োপন রাগ -এ বাদীর অভাব ভীষণ ভাবে, বুঝল�ো সে ওই আলগা তার -এ টান -এর বড় টান। বুঝেও সে ওই পাতার ভাঁজে, হাজার ধু ল�োর সু ক্ষ কাজে, হাত রেখে এক আলত�ো খাঁজে, ঢাকল�ো অভিমান। মন জানল�ো, এটাই পাওয়ার, উর্দ্ধে যাওয়া অনেক চাওয়ার, অন্য মনের, অন্য হাওয়ার, খানিক পাওয়া স্বাদ। .. তাই ত�ো আঙ্গুল কলম রাখে, তাই জানিনা কিসের ডাকে , লিখতে গেলেই কেবল ঢাকে আমার অবসাদ.... 44

Anjali

www.batj.org


শরৎ ও ব্রাত্

- সু ব্রত বন

শরৎ হাসে নীল আকাশে যেন হীরে-চুনী-পান্না। মা দু গ্গা আসেন জড়�োয়া সাজে, আড়ালে থাকে যে কান্না। আগমনীর গানে ধরার বুকে শিউলি ছড়ায় ঘ্রাণ, কাশের বুকে লাগে যে দ�োলা, আনন্দে যে মাতে প্রাণ। পুত্র-কন্যা সহ আসেন মা খুশী ঝরায় রবি-শশী, শুধু দু খে ভরে ওঠে ওদের মন, যায় মিলায়ে মুখের হাসি। যতদিন ছিল শধু ই বাধা বাঁশ দ�োল খেয়ে যেত ওরা, যেদিন মা এলেন ধরায়, শুধু ই ওরা পালিয়ে বেড়ায়, আর পাইনে তাদের সাড়া। চারিদিকে আল�ো ঝলমল শুধু ই খুশীর দিন, শুধু ওদের মুখ আজ রয়েছে যে মলিন করেছে দু খের কাছে ঋণ। কেউত�ো দেয় না বাড়ায়ে হাত দু টি যাদের আছে ত�ো অনেক, মা কে নিয়ে মাত�োয়ারা সকলে, চাহে নাত�ো ফিরে বারেক। মা কেমনে থাকেন খুশী জড়�োয়ারই সাজে, যখন অভুক্ত শরীর লু কায় মুখ মলিন বসন লাজে। ধনীর ঘরে শরৎ হাসে গরিব কেঁদে মরে, মা কেন আসেন বছর বছর যখন ওদের অশ্রু ঝরে।

www.batj.org

Durga Puja 2020

45


পৃ থিবীর প্রতিশ�োধ - ক�ৌশিক ভট্টাচার্য্য পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা মেনে নিতে পারে নি সে। তাই নিজের জন্য বানিয়ে নিয়েছিল�ো অন্য এক বাসয�োগ্য পৃথিবী। প্রতিদ্বন্দিতার স্পর্ধা সহ্য করল�ো না পুর�োন�ো পৃথিবী। তার জায়গা নির্দিষ্ট হল�ো দশফুট বাই দশফুট শ্যাওলাভরা স্যাঁতস্যাঁতে এক ঘরে। উঁচু পাঁচিল-অলা যে বাড়িতে ঘরটা তার বাইরে বড় বড় করে সাইনব�োর্ডে লেখা পাগলা গারদ।

আত্মকথা

- বিশ্বনাথ প

গলায় রয়েছে জ�োর হাতে বা একটু কম বুদ্ধি নয় প্রখর তবু বুকেতে আছে দম চলতে চাইছি স�োজা লক্ষ্যতে চ�োখ রেখে হাজার�ো কাজের ব�োঝা দৃ ষ্টি যাচ্ছে ঢেকে লক্ষ্য হারিয়ে যায় এটা ? নাকি ওটা ? জীবনযু দ্ধে হায় লক্ষ্যবিহীন ছ�োটা বাঁকা পথের কথা অনেকেই ত�ো বলে খাটাতে হবে মাথা কিভাবে ক�ৌশলে তবু চেষ্টা অবিরত মনকে রাখতে সাদা 46

মধ্যবয়সটা ত�ো বরই গ�োল�োক ধাঁধা Anjali

www.batj.org


প্রকৃতি ও প

- সু প্রীতি গুড়িয়া ( ভূঁই

হে প্রকৃতি, তুমি ত�ো ইশ্বর, তুমি ত�ো নারী, ত�োমার অসীম ক্ষমতার দানে এ ধরিত্রী হয়ে উঠেছে শস্যশ্যামলা, এ বসু ন্ধরাকে এত�ো ম�োহময় করে বাসয�োগ্য করেছ সেই তুমি, ত�োমার ঐ মায়াবিনী ক�োলে বিশুদ্ধ প্রাণবায়ু র আঘ্রাণেই এ ধরা পেয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, তবুও…… আশ মেটেনি এ ধরার প্রাণীকুলের, বারবার আঘাত করেছে ত�োমায়, দীর্ণবিদীর্ণ করেছে ত�োমার হৃদয়, ছিন্ন ভিন্ন করেছে ত�োমায় কুঠারাঘাতে তুমি নির্বিকার থেকেছ�ো, ক্ষমা করেছ�ো, ত�োমার অব�োধ সন্তানদের… তাই তারা হয়েছে বেপর�োয়া থামতে শেখেনি তারা তারা শুধু পেতেই চেয়েছে ত�োমার কাছে, দু হাত ভরে শুধু ই নিয়েছে অকাতরে দেওয়া ত�োমার দান… কিছু ই শেখেনি ফিরিয়ে দিতে, তুমি যে মা, জননী, নারীসহ্য ত�ো ত�োমায় করতেই হবে! তুমি সর্বংসহা।। কিন্তু, জানি, আজ ত�োমার সহ্যের সীমা অতিক্রান্ত, আজ তুমি সর্বংসহা নারী নয়, আজ তুমি শিক্ষয়িত্রী, ত�োমার নির্বোধ সন্তানরা তাই আজ দেখছে ত�োমার প্রলয়ঙ্করী রূপ। আজ তুমি অবতীর্ণ হয়েছ মানু ষরূপী অসু র বিনাশী মাতৃ রূপে – ক্ষমাদাত্রী রূপে নয়।।

www.batj.org

Durga Puja 2020

47


Lord Buddha and His Parables   - Swami Medhasananda Let us start the article with a quotation from Lord Buddha’s last teachings: ‘My disciples the teachings I have given you are never to be forgotten or abandoned. These are always to be treasured. They are to be thought about, they are to be practiced. If you follow these teachings you will always be happy. The point of the teachings is to control your own mind. Keep your mind from greed and you will keep your behaviour right, your mind pure, and your words faithful. By always thinking about the transiency of your life you will be able to resist greed and anger, and will be able to avoid all evils. If you find your mind tempted and so entangled in greed, you must suppress and control the temptation. Be the master of your own mind. A man’s mind may make him a Buddha or it may make him a beast. Misled by error one becomes a demon. Enlightened, one becomes a Buddha. Therefore, control your mind and do not let it deviate from the right path. You should respect each other, follow my teachings, and refrain from disputes. You should not, like water and oil, repel each other, but should, like milk and water, mingle together, study together, learn together, practice my teachings together. Do not waste your mind and time in idleness and quarrelling.

Enjoy the blossoms of enlightenment in their season and harvest the fruit of the right path. The teachings I have given you I gained by following the path myself. You should follow these teachings and conform to their spirit on every occasion. If you neglect them, it means you have never really met me. It means you are far from me, even if you are actually with me. But if you accept and practice my teachings, then you are very near to me, even though you are far away.’

Lord Buddha’s Birth According to the Indian Lunar Calendar, Lord Buddha’s birthday was on May 6th this year. It was on the day of the full moon of Vaisakha (mid-April), the first lunar calendar month, and according to this same calendar, Lord Buddha (Buddha Deva) was born, got His enlightenment (Nirvana), and also passed away (Mahaparinirvana), all on the same full moon day (Pūrṇimā) of the first Indian month of Vaisākha. Hence, Buddha Purnima, is observed in India as a thrice blessed day. This is indeed very unusual, and I do not know of any other prophet anywhere to have been born, get enlightenment, and pass away on the same day of the year. Buddha Deva was born in 480 B.C., or about two thousand five hundred years ago, and He passed away at the age of eighty. He lived a rather long, fruitful and meaningful life. He was born into an aristocratic family of the Shakya clan, He was of a royal lineage, as His father and his father before him were all kings of a small kingdom. He later renounced this family and took up life as a mendicant monk, practiced spiritual austerities, and reached enlightenment. As a monk He would beg for His food on some occasions, and once He visited His birthplace at Kapilavastu where He begged for food. His father, King Suddhodana, learned that his son was there and sent a message objecting to His begging, 48

explaining that it was not the custom of one born of royal linage to beg for one’s food. Buddha’s answer to this was very significant. He told the messenger to inform the king that ‘Buddha’ was born in a different lineage, the lineage of Buddha, and according to this Buddha lineage, He was obliged to beg for His food. Did Buddha Deva, born so long ago, really die? Did Jesus Christ die with His crucifixion? Did Sri Ramakrishna die of cancer? The answer to all these is, ’Actually, no!’ Not only do they live through their teachings and followers, inspiring and guiding millions of people, they live on in a subtle plane guiding and inspiring aspirants. They still appear before those devotees who sincerely aspire and prepare to have their vision. In Bengali there is a couplet sang that says ‘The divine play of Sri Chaitanya continues even now; only the fortunate can witness it.’ The same may be said of the play of Sri Krishna, Lord Buddha, Jesus Christ, and Sri Ramakrishna as well. Once Swami Saradanandaji, a direct disciple of Sri Ramakrishna, was asked, “Maharaj, do you still have communion with Sri Ramakrishna?” Saradanandaji answered, “When I want to communicate with Sri Ramakrishna, I have to raise my mind to a higher level where I can have communion with Him, as they live in a very subtle and high plane.” Why did Buddha renounce family and worldly life? When He was born, an astrologer made a prophesy to His father, King Suddhodana, that if this new-born baby, Siddhartha, continues to live life as a prince, he will conquer the whole world as a great emperor. However, if he gives up the world, He will be a saviour of all humanity. Of course, the king did not want his son to renounce the world, but instead to become his successor to the throne. So the king made special arrangements for the prince to live in a garden of pleasure full of all types of merriment, music and dance. All opportunities to observe suffering of any kind were eliminated from the palace grounds. Even when the prince went out to enjoy charioting around the city, all aged, sick and otherwise distraught persons along the pathway of the chariot and His entourage, were to be removed from sight. Siddhartha Learns of Old Age, Disease and Death Prince Siddhartha, also known as Gautama, was married to a beautiful girl and passed his days in enjoyments and great affluence. Siddhartha’s destiny, however, was to be the saviour of humanity, and all the king’s careful arrangements and diversions could not redirect His destiny. One day while out riding in his chariot, Siddhartha happened upon a man who was quite clearly suffering, and not the figure of health and happiness. He asked his loyal charioteer, Chhandaka, about it, as it was his first encounter with such a scene. He asked, “Chhandaka, what happened to that man, why is he suffering like that?” Chhandaka answered, “Because he is suffering from a serious disease.” “Is this suffering from disease something quite exceptional?” the prince then asked.

Anjali

www.batj.org


Lord Buddha and His Parables “No, my Prince! It is quite common,” Chhandaka answered. “Can it happen to me?” he asked. “Yes!”

“My Prince, he is a mendicant monk” said the charioteer. “He has given up his family and a worldly life in search of eternal peace and joy.”

“Can it happen to my wife, Yaśodharā? “Yes, sir.” Siddhartha was shocked upon hearing this … On another ride into the city, Siddhartha spotted a man with thinning white hair apparently having trouble walking upright, as he needed the support of a stick and gasped for air. Again, Siddhartha asked Chhandaka, “What has happened to this man? Why is this man so thin and needs to support himself with a stick just to walk? Is this unusual?” He asked this because all of the staff and servants and guests of the palace were young and beautiful. No elderly men or women were allowed on the palace grounds and Siddhartha had never witnessed an aged person. The charioteer then explained that such a condition is common to all, as all are born and grow old with time. “Will I experience old age like this man?” he asked. “Will I suffer this as well? Will it happen to my wife, Yaśodharā?” Chhandaka answered to all these, “Yes, my Prince, it is the natural state of human beings.” On the third chariot ride the prince saw that someone was lying on a stretcher borne by four people, while several other people surrounding the stretcher were crying and lamenting. Again, Siddhartha asked his charioteer what had happened to the person on the stretcher, why was he being carried like that, and why were all the people around him crying. Chhandaka explained that the person lying on the stretcher had died and that they were carrying the corpse to the funeral pyre to be burnt. Again, Siddhartha asked the charioteer if this was something unusual, to which Chhandaka explained that people are born, they grow up, they grow old and then they die. “Will I have to die?” “Yes!” “Will my dear wife, Yaśodharā, also die? “Yes, sir, everyone without exception dies.” This shocked Siddhartha terribly.

The Prince Renounces the World Seeing these three; the sick, the old, and the dead, made Siddhartha very pensive and thoughtful. Gradually a distaste for the atmosphere of enjoyment of life in the palace began to grow in him, but the new experiences he had in travelling www.batj.org

by chariot did not end there. On another occasion he saw a man dressed in an unusual colour of cloth with a shaved head, looking bright, joyful and peaceful. Yet, this man was obviously begging. Siddhartha asked his charioteer who this person dressed so unusually and appearing so peaceful might be, “I have never encountered such a person,” He said.

This answer sparked a glimmer of hope in Siddhartha’s mind, while he constantly pondered the truths of life. His conclusion was as Chhandaka had already pointed out, that suffering is universal, and that old age, disease and death befall everyone. He wondered if there was any way to rid people of this suffering, since it was universal. How could one help humanity and stop this suffering? How, in spite of these sufferings, could one get peace and joy? He was constantly deliberating on this. Finally, he concluded that the remedy to this problem would be impossible to find living in the palace the life of a prince. A son had already been born to him, but he decided to give up his family, his wife and son, and his kingdom, to find a solution to suffering for all of humanity. His renunciation was not a quest for personal freedom or even realization of God, but a devoted search for a way to remove the suffering of humanity as a whole, and to bring peace and joy to all. This shows the heart of Buddha, His tremendous compassion for all. It is for this reason He gave up a worldly life and embraced a life of a renunciate. Then began his long, hard term of spiritual practices; His practice of austerity and concentration in search of an answer to universal sufferings. Finally, after years of hard struggle He did find the way when He attained Enlightenment in a place called Buddhagaya, near the famous place of Hindu pilgrimage, Gaya.

Four Noble Truths Buddha found the sources for our sufferings revealed in the ‘Four Noble Truths’ and how our sufferings can be remitted by following the ‘Noble Eightfold Path’ found in the Fourth Noble Truths. Realizing these truths through great effort and several years, He began His career as a teacher of others. I have observed in this country that many believe Buddhism is a completely independent religion absolutely separate from Hinduism, and Lord Buddha’s teachings are all original ideas. Actually, this is not so. Buddha had a sharp intellect along with many other excellent qualities, and it is quite natural that He had studied Hindu scripture, including the Upanishads, deeply. In this sense it is not at all unusual that His many great teachings are influenced by Upanishadic teachings. As in the case of Jesus, who of course, was brought up with Jewish traditions, knew Hebrew scripture, though He had His own way of understanding God, and teaching this to His disciples. Buddha, too, though influenced by Hindu philosophical thought, had His own ideas and a unique way of presenting that philosophy, which was well organised, precise and practical. Not only that, some of the Hindu practices of Buddha’s day were abominable, such as the slaughter of animals in the name of pleasing the Lord. Such abhorrent practices in Hinduism were subject to criticism by the compassionate Buddha, who advocated for the elimination of such cruel practices altogether. If we look at the present state of Buddhism in many countries, we find lots of interpretations of Buddha’s teachings, some diluted and some distorted as well. It is difficult

Durga Puja 2020

49


Lord Buddha and His Parables to know, by studying some popularized teachings of presentday Buddhism, what Lord Buddha actually taught; hence, we need to go to original sources of such teachings. There are books that contain Buddha’s actual teachings, such as The Teachings of the Buddha, that we (Vedanta Society) use for our weekly Sunday reading. One of the benefits of using The Teachings of the Buddha is that it contains many stories and parables that He used to teach. This is the usual practice of many great spiritual teachers. In the Upanishads as well, we find examples and stories. Jesus taught with lots of parables, too. Sri Ramakrishna, as well, used examples and parables. Why? Because the highest spiritual truths are so subtle, that unless they are explained in this way, the people cannot understand them. These words are so different from ordinary, secular teachings, because of their uncommon-ness and subtlety, teachers enlist the help of stories and parables so that truth can be more easily understood by aspirants. This will help them in their spiritual practice as well.

Simple Tales / Subtle Content. Let us quote now some examples that the Buddha used followed by commentary: • “Thousands of candles can be lighted from a single candle, and the life of the candle will not be shortened. Happiness never decreases by being shared.”

just think how difficult it is to earn money–how much striving is necessary–or if one wants to excel in sports and games and win an Olympic medal, or to become an accomplished musician, or a great scholar. Everyone understands that by a mere wish we cannot achieve such goals, success requires long and hard striving. It is truly a great irony that in spiritual matters everyone wants control of the mind and to enjoy peace of mind overnight! Such people do a little practice, and what they do is mostly in a casual way, and then approach the spiritual teacher saying they have done this and that practice, and ask why they have not yet realized God: “Why doesn’t Sri Ramakrishna appear before me?” “Why can I still not control my passions and emotions?” “Why can I still not control my mind?” After doing only a little practice we expect great results, like the foolish man who wanted just the 3rd storey. Just the success without undergoing the preparation of hard practice. If we practice sincerely with faith on our part, some progress will surely come, but the grace of God is also necessary, and if we do not strive, we can be certain God’s grace will not come. In fact, a desire to strive for the highest, is in itself by God’s grace. More grace will not come unless we utilize the grace God has already given to us. Parables and Fables

Our experience is that if we have money and share it with others our money supply is decreased, so we are afraid of sharing. If we share food with others, our supply of food is decreased. This is the reason we are afraid of sharing with others, because we will have less and less to enjoy for ourselves. There are certain things, however, that are increased in sharing. One is learning–the more you share learning, the more learning increases. Happiness, too, is never decreased by being shared. If you show a smiling face to others, there is little danger you will lose your smile to others. In fact, showing a smile to others increases your smile. A beautiful example of this is candlelight–from one candle thousands of candles can be lit and that same candle is not extinguished. • “Those who seek Enlightenment must be careful of each of their steps. No matter how high one’s aspiration may be, it must be attained step by step. The steps of the path to Enlightenment must be taken in our everyday life.” He then gives an example of a very foolish rich man. This man happens to see a three storey building and the 3rd storey was especially beautiful and magnificent. He thought, ‘I, too, am a rich man, and I want such a beautiful 3rd storey for myself.” So, he asks a carpenter if he can build him a 3rd storey as fine as that one. The carpenter answered that indeed he could, and soon the foundation was in and work on the ground floor began. Seeing this the rich man became angry and asked why the carpenter was wasting time on a foundation and ground floor when all he wanted was the 3rd storey! Is it possible to build a 3rd storey alone without a foundation, a ground floor and a 1st floor? Are our spiritual desires not like this foolish rich man’s? We want the result without preparing and paying the price for it. With regard to secular matters, everyone understands that any great achievement is not possible overnight. If one wants to be rich, 50

Here is an abbreviated parable: • On a mountain in the Himalayas lived a parrot with other animals. Then lightning ignited a great fire and the parrot thought, ‘This forest and its trees have given me refuge, so I must do something to extinguish the fire to save these trees.’ With this in mind the parrot dipped itself into a pond and flew to the flames shaking droplets of water onto the flames again and again. He repeated this act diligently with a heart of compassion and out of gratitude to the trees. A great god of the mountains witnessed the act of the parrot and was very impressed. The god then appeared before the parrot and asked, ‘What are you doing? Your wings carry such a small quantity of water, how can you hope to extinguish the fire?’ The parrot answered, ‘Never you mind, I shall continue even unto my next life!’ The god was so impressed with this dedication, that he joined the parrot and used his great powers to help, and together they extinguished the flames. We see in this parable how the striving and the show of compassion of the little bird so impressed a god, that he appeared before the bird and helped it extinguish the forest fire. This is an example of how God’s grace helps the spiritual aspirant, provided we strive like that bird. Lord Buddha also taught from ancient fables, and I am sure each of you will enjoy this one. I am also inserting a quiz into this fable, and I don’t think the answer will come very easily for most. There is a great teaching behind this story of a country where it was the peculiar and inhuman custom for their aged people to be abandoned in a remote and inaccessible mountainous area. Where, obviously, for lack of food and shelter, they would die in the most miserable condition. When the father of a minister of that kingdom became old, the time

Anjali

www.batj.org


Lord Buddha and His Parables drew near for the minister to abandon his father too. The minister, however, struggled with the idea of leaving his father to die in such a state. So instead, he secretly hid his father and cared for him. • One day a powerful god appeared before the king of that country and posed a puzzling problem, saying that if the king could not solve the problem satisfactorily, the kingdom would be destroyed. “Here are two serpents (snakes),” the god continued, “tell me the sex of each.” Knowing little about snakes, neither the king nor anyone in the palace could solve the problem, so the king offered a great reward to anyone in the kingdom who could answer the question. Hearing this, the minister went to visit his wise father he had hidden and asked him the answer to the problem. ‘It is an easy solution,’ the old man exclaimed. ‘Place the two serpents on a soft carpet and the one that moves around is the male, and the other that keeps quiet is the female.’ The minister then brought that answer to king and that problem was solved. • With this answer the god asked another question: Who is the one being asleep is called the Awakened One, and being awake is called the Sleeping One? Again, the correct answer came from the minister’s old father: ‘It is the one who is under training for Enlightenment, for he is awake compared to those who are not at all interested in Enlightenment. Again, he is also asleep compared to those who have already attained Enlightenment.’ What is the meaning of Buddha in English? - The Awakened One. He is Eternally Awakened, and we are the Eternally Sleeping! Sleeping in this instance is ignorance, and being awakened is knowledge! What is night to one (the ignorant) is day to another (the Enlightened) and what is day to one (the ignorant) is night to another (the Enlightened). Ordinary people have full interest in all manner of secular matters and little or no interest in spiritual matters at all. So, in secular matters most people are quite awake, but in spiritual matters they are fast asleep. Souls like Sri Ramakrishna are just the opposite! He is completely awakened in spiritual matters and asleep regarding secular matters. In this context I quote one relevant verse from the Bhagavad Gita: yā niśhā sarva-bhūtānāṁ tasyāṁ jāgarti sanyamī yasyāṁ jāgrati bhūtāni sā niśhā paśhyato muneḥ What is night to all ignorant beings, to that Atman-Consciousness the selfcontrolled sage is awake; and the sensate life to which all ignorant beings are awake, that is like night to this illumined sage. For instance, the best time for meditation is from about 4am to 6am, and is called Brahma-muhurtha (two hours before sunrise). Spiritual aspirants who take up spiritual life seriously meditate during these hours. In modern times many people find the hours of 4am to 6am most suitable for deep sleep, as they stay awake and go to bed quite late.

• The god then asked the king the meaning of another riddle: “When is a cupful of water more than the water of an ocean” The minister’s father also answered this saying, “A cupful of water given in a pure and compassionate spirit to one’s parents or to a sick person has an eternal merit, but the water of an ocean will someday come to an end.” This next story teaches how one side of the coin comes with the other. • “Once a beautiful and well-dressed woman visited a house. The master of the house asked her who she was; and she replied that she was the goddess of wealth (Lakshmi). The master of the house was delighted and so welcomed her into his house and treated her nicely. “Soon after another woman appeared who was ugly looking and poorly dressed. The master asked who she was and the woman replied that she was the goddess of poverty. The master was frightened and tried to drive her out of the house, but the woman refused to depart, saying, ‘The goddess of wealth is my sister. There is an agreement between us that we are never to live separately; if you chase me out, she is to go with me.’ Sure enough, as soon as the ugly woman went out, the other woman disappeared.” Is there anyone among us who desires suffering? Surely, none. OK, now is there anyone here who does not want pleasure and enjoyment? Surely, none. So, it is evident that we want to avoid suffering and only want pleasure. There is a Bengali couplet that translates as: ‘Pleasure and pain are twins, if one falls in love with one of these, the other will surely follow.’ You need not invite the other–it will come by itself! It is just like the other story of the goddess of wealth and the goddess of poverty. Obviously, we are puzzled and wonder what our ideal course of action should be in such a situation. Our answer regarding the ideal course to be adopted by us involves two attitudes. One attitude is to see both happiness and suffering as nothing special. Meaning I want neither pleasure nor pain, but whatever comes, I will see it as a witness, both as it appears and as it disappears. Come what may, I will not be perturbed and will always remain in peace. In Chapter 13 of the Bhagavad Gita, Sri Krishna says that both pleasure and pain are the consequence of the Three Gunas. So, it will come and it will go, appear and disappear, both will pass. Let me just be the witness and observe the play of the three gunas in me, and not be affected by either of them. This is the attitude of jnanis, which one can practice and thus transcend both pleasure and pain and experience an abiding peace. The other attitude is that of the bhakta, that both pleasure and pain come from God. In that way they bear with them calmly, without being overwhelmed by them, and focus on God. Hence, the devotees should pray thus, ‘God, I seek neither pleasure nor avoid pain, I only want You and You alone.’ We should choose either of the above mentioned two paths according to our ability and aptitude to gain everlasting peace and joy and highest wisdom which Lord Buddha had wanted the humanity to seek for and attain. 

[This article is based on a talk given at Vedanta Society of Japan on 21st June, 2020]

www.batj.org

Durga Puja 2020

51


Conversations with Swami Nityasuddhananda Shloka 16, Chapter II, Bhagavad Gita

- Suneel Bakhshi I lived in Tokyo during 2012 and 2013. It was a busy time for me at work and in my personal life but in June 2012, Swami Nityasuddhananda of the Ramakrishna Mission in Haridwar, India, accepted my request to start to teach me the Bhagavad Gita. Since then I have had the great good fortune of studying many texts with SwamiJi. Having now reflected further on the essence of the Bhagavad Gita, I would like to describe Shloka 16 of the second chapter to the readers of Anjali. The Shlokas from 12 until 30 in this chapter describe the very essence of the Bhagavad Gita.

Within these, I found Shloka 16 to be one of the most pivotal, a source of the wisdom of the Upanishads and perhaps also of several other great Eastern and also Western philosophies. It has the deepest meaning, which I will do my best to explain in a few words. According to SwamiJi, Adi Shankaracharya is believed to have said that “for people who truly come to understand this Shloka 16, it is as though their very conscience has been animated”. SwamiJi also said that that those who have fully understood this Shloka can be said to have attained Viveka, or true discernment, and those among us who go on to experience bliss or Ananda in contemplating on it, epitomise Vivek-Ananda.

Shloka 16, Chapter II, Bhagavad Gita

nāsato vidyate bhāvo nābhāvo vidyate sataḥ

नासतो विद्यते भावो नाभावो विद्यते सत: |

ubhayorapi dṛiṣhṭo ’nta stvanayos tattva-darśhibhiḥ

उभयोरपि दृष्टोऽन्तस्त्वनयोस्तत्त्वदर्शिभि: || 16||

na—no; asataḥ—of the temporary; vidyate—there is; bhāvaḥ—is; na—no; abhāvaḥ—cessation; vidyate—is; sataḥ—of the eternal; ubhayoḥ—of the two; api—also; dṛiṣhṭaḥ—observed; antaḥ— conclusion; tu—verily; anayoḥ—of these; tattva—of the truth; darśhibhiḥ—by the seers The Unreal ( ASAT ) never is. The Real ( SAT ) never is not. Seers, possessed of the knowledge of the Truth know the very essence of both these. It is important to anchor our understanding of the words, Asat and Sat, which in a purely philosophical context mean the Unreal, and the Real. The Shloka above says that seers ( tatvadarshibhih, or knowers of the Truth ) understood the falsehood of the falsehood, and the truth of the Truth, and indeed the very ends ( antah ) of both of these ( anyoh, ubhayoh ). The Shloka directs our thinking to what the Real or Truth is, by making us first understand what it’s opposite, UnTruth, or UnReal is. It reminds us that everything in the material world has a finite existence, and is part of an ongoing series of cause and effect, ALL of which on reflection are equally, fundamentally of a finite nature. This awareness allows us to learn, first by reflection and then by practice, that the greatest attractions cannot and will not give us constant happiness and peace. Equally, the worst of physical, emotional, and external stresses and shocks can also be better countered by the awareness that these too are necessarily finite. In this philosophical sense, such things which are not part of a fundamental unit of eternity can be at best only “partially true”, and therefore Asat, or UnReal. By contrast with Asat, then is the Real or Sat. You may know of the word SatChitAnanda. This combination of words, Sat, Chit, Ananda or Truth, Consciousness, Bliss, is another expression of Brahma, the Ultimate Reality which in our Upanishads is the source of the Absolute Truth, the Real. In the Bhagavad Gita, the Real or Sat is described beautifully and in the most subtle of ways between Shloka 12 and Shloka 30 in Chapter II, all of which surround and provide deep context for Shloka 16. Our very consciousness can be felt, during moments of quiet contemplation, to include our steady and quiet awareness of this world of senses, of the ceaseless change in this Asat, and is a component of That which is other than Asat. This spark of unchanging divinity within each of us is SAT, while the world of whirlwind change as perceived through our physical senses is simply a “partially true” manifestation. The realisation of this Absolute, of our true, eternal Self, by definition beyond the finite world of cause and effect, is our quest in life. With this logic the Shloka guides us to a measured detachment from Asat, or the UnReal, and a turn, even a slight turn to start with, towards the Real, where we can rest our thoughts IF we can understand THAT to be the true destination and so, to be True. SwamiJi notes that Lord Krishna, observing the grief of Arjuna, recited this Shloka so Arjuna could start to learn forbearance. Why is it necessary ? Because Asat will cause Dukha, as long as one doesn’t recognise the Unreal for what it always is, and 52

Anjali

www.batj.org


Conversations with Swami Nityasuddhananda place one’s mind and concentration fully on the Sat, the Real while FULLY engaging in the effort and the work in the very Asat that is the material world we are in. So Lord Krishna said to Arjuna : understand this phenomenal world for what it is, and learn to bear it, else your mental equipoise WILL be destroyed by it. How, then does one do so, I once asked SwamiJi. His answer : learn, while actively participating in the world to be a witness to the phenomenal world, as in the light of a Diya life is lived but the Diya itself is never tainted. Why, even if we relate to this Truth, do we find it so difficult to embed it in our daily lives, I then asked. His answer : “ we all suffer from three weaknesses (1) fickleness of mind (2) inertness of mind (3) an Avaran or a curtain over the mind which screens the Truth by Maya. Once at least two of these three weaknesses are removed for an aspirant, typically after sincere dialogue with a Teacher, the individual CAN advance through a lifetime of committed effort on this path. “ I have come to believe that for a person whose inertness of mind has been eliminated, and who has firm conviction, the Unreal begins to fade in its vice-like hold over the mind, and that the Real begins to manifest more and more. The famous analogy in the commentaries is that of a rope mistaken in the darkness for a snake, but as soon as the light of the Diya is switched on, the false snake disappears and the true rope appears. By personal experience, and maybe paradoxically on a first reading, I have come to believe that this approach to life, far from being negative, adds instead to joy, even exhilaration, in this God given life. I find this Shloka to have a vitality that makes it one of the most powerful of the Shlokas in the Bhagavad Gita. I said so to Swami Nityasuddhananda, and he then told me about Swami Turiyananda, who was a direct monastic disciple of Ramakrishna Paramhansa, a brother disciple of Swami Vivekananda, and a monk of the Ramakrishna Mission. SwamiJi told me that Swami Turiyananda used to meditate on this Shloka alone, sometimes for three to four days at one time. I attach here a photograph of this Swami. With best wishes to readers of Anjali to find the time to reflect on the infinite wisdom of this Shloka.

www.batj.org

Durga Puja 2020

Swami Turiyananda

53


Vietnamese Lacquer Art   - Gunjan Verma Being part of the Indian Foregin Service, establishing friendships with various culture across many lines has become integral to my life. Painting in many mediums and styles of different countries has been interesting and very therapeutic for me.

When I lived in Hanoi, Vietnam, agriculture formed the backbone of the culture demonstrated in paintings and famous Vietnamese water puppet shows. In my very first lacquer paintings, I chose to highlight Vietnamese cotton pickers, their attire and tools. As lacquer paints come in only two colors (black and brown), the cotton was created by first chiseling layers of lacquer, applying lacquer paint, pressing 5 mm pieces of concave washed and dried eggshells, then sanding down with cement blocks and eventually applying more coats of lacquer to even out the painting as well ensure the mixed media art’s longevity. To make the colors vibrant, I used silver leaf as the first layer, and the pigments mixed with liquid lacquer. The basket and fabric detail has been done with gold leaf.

Cotton Picking-1 by Gunjan Verma This painting shows the weave of the basket which was done by applying thin lines of lacquer, sanded down and then silver and gold leaf paper was applied. The baskets were then covered in a thin layer of lacquer to tone down the brightness of gold. 

Cotton Picking-2 by Gunjan Verma

54

Anjali

www.batj.org


Sach Khand: The Great Mystery   - Harjas Sahni

S

ach Khand also known as the realm of truth is the ultimate spiritual destination for Sikhs. In contrast to Abrahamic religions that believe in heaven, Sach Khand is not a heaven. It is not a geographic location somewhere in this universe, but it is where an individual soul unites with God, the formless one. In short, it is the highest level in the evolution of human consciousness. It is important to remember that in Sikhism God is formless, genderless and omnipresent. The realm of truth consists of formlessness, and this formlessness surrounds and penetrates the entire creation of God. This is almost impossible to imagine and conceptualize as we live in a world of forms. Sach Khand is where God resides and looks upon its creation with great attention. The formless one, watches over numerous continents, galaxies and universes simultaneously and rejoices. Guru Nanak Devji has written a great detail about it and says that “to describe this is as hard as steel.” It may be futile to describe it, as formlessness cannot be described in forms. However, the entire concept is fascinating and quite different from the ultimate destination mentioned in other religions. To put this entire concept in picture, Sikhism often uses this metaphor of an ocean. Imagine God and Sach Khand as the ocean, and we as the little droplets that have been separated from this ocean. Our ultimate goal in life is to go back to this ocean and be in one with God. Nevertheless, like Abrahamic religions there are many restrictions to entering Sach Khand. First, we must annihilate the five thieves in Sikhism: ego, lust, anger, attachment and greed. Secondly, we must remember and praise God through prayers, and do selfless service. Lastly, we must be in the company of enlightened beings and learn from their wisdom. Only a truly pure soul can be liberated from this interminable cycle of life and death, and enter Sach Khand. Humanity has made great advancements in science and technology. We have even found proof for reincarnation, and can to a certain extent grasp what happens after death through the extensive research on near-death experiences (people who escaped death). However, no matter how advanced science gets, we will never be able to fully comprehend Sach Khand. Such is its greatness. It will always remain a great mystery. 

www.batj.org

Durga Puja 2020

55


Economic Opportunities

for Indian Community in Japan   - Mona Khandhar

T

he history of moder n Indian settlement in Japan goes back more than a century. In 1873, a few Indian businessmen and their families, primarily Parsis and Sindhis, had settled in Yokohama as well as Okinawa. In 1891, Tata, then a small trading firm, established a branch in Kobe. Local statistics of the Hyōgo Prefecture Gover nment showed 59 Indians living in the prefecture in 1905. After the destruction wreaked on Yokohama in the 1923 Great Kantō earthquake, the Indian traders there also migrated to Kobe; from then on, Kobe b e c a m e t h e c e n t re o f g r a v i t y o f J a p a n ' s I n d i a n community. By 1939, on the eve of World War II, the number of Indians in Hyōgo Prefecture had reached 632. However, due to British sanctions against Japan and the 1941 halt of shipping between Japan and their homeland, many closed their shops and left; by 1942, there were only 114 remaining. Prior to 1990, the Indian community in Japan remained centred on the Kobe area. However, after 1990, the numbers in Tokyo began to increase. Migrants who arrived in the 1990s included industrial trainees brought by Japanese car manufacturers which had set up factories in India. IT professionals and their families also came to Tokyo, settling primarily in Setagaya and Minato wards. As o f 2 0 0 0 , t h e re w e re a l s o a ro u n d 8 0 0 Indians working in the IT industry in Japan, up from 120 in 1993. Kenichi Yoshida, a director of the Softbridge Solutions Japan Co., stated in late 2009 that the Indian engineers are becoming the backbone of Japan's IT industry and that "it is important for Japanese industry to work together with the India." In recent years “IT,” like “curry,” has become synonymous with India. Another 870 Indians were employed as cooks. Others are engaged in trading, importing the Indian handicrafts, garments, precious stones, and marine products, and exporting J a p a n e s e e l e c t ro n i c g o o d s , t e x t i l e s , a u t o m o t i v e parts, and jewelry. There are Indians also in teaching profession and involved in scientific research. Unlike in past years, Indians today migrate not just as laborers but also as professionals. H o w e v e r, m a n y I n d i a n w o m e n i n J a p a n immigrate to Japan because they are married to an Indian man who has been given the opportunity to work here, or one already residing in Japan. Either way, they are registered by Japanese immigration as a dependent of their husbands. Many of them are well educated and with work experience. Despite of these, they struggle to get the job in their preferred career. According to official statistics, the number of Indians in Japan has risen from 7,478 in 1997 to 24,524 in December 2014. The Indian population in Japan is skewed significantly toward men, with 56

f e m a l e s c o m p r i s i n g o n l y 3 0 p e rc e n t o f t h e t o t a l community of around 32,000 recently. While this increase might appear substantial, it is small compared to the influx seen in nations such as the U.K., U.S., Singapore and Malaysia, to name a few. Generally, Indians aspire to further migrate to the US and the UK. However, it is pertinent to note that economic opportunities and acceptability of Indian migrants are getting limited in the US. On the other hand, the economic opportunities, living conditions and acceptability for Indian migrants are improving in Japan. Japan continues to be a global leader in quality manufacturing and precision equipment. On account o f a g i n g s o c i e t y, J a p a n h a s b e c o m e m o re o p e n t o w a rd s m i g r a n t s , i n c l u d i n g I n d i a n s . J a p a n a l s o h a s a h u g e M S M E s b a s e . J a p a n e s e M S M E s a re quite efficient and well supported by Gover nment of Japan. They face a major challenge of succession. A good opportunity is getting created here as well to help them expand market in India and transfer their technology as well. Over past several years, the ties between India and Japan are growing and India has been following “Look East” policy as integral to her Inter national E c o n o m i c P o l i c i e s . H o w e v e r, r o o t s o f I n d i a n community are still not as deep in Japan as in the above countries. Japan offers several professional opportunities. Our bilateral cooperation is likely to enhance especially in sectors like Infrastructure, E l e c t ro n i c s , A u t o m o b i l e s , M e d i c a l D e v i c e s o n a c c o u n t o f i n c e n t i v e s o ff e re d b y G o v e r n m e n t o f India and Japan’s inherent strength in these sectors. Innovation, professional services and Research and Development in general also offer a good opportunity. Nonetheless, the Indian community in Japan does not seem to be availing of these opportunities enough. The language is a major challenge for many Indian migrants in Japan. Good professional career options in Japan presupposes good knowledge of their native language. The Indian migrants though pick up speaking and understanding of Japanese language, it’s difficult for them to pick up reading and writing skills in Japanese. Many a times they are themselves not inclined much to pick up reading and writing skills in Japanese. As a result, education of children poses another challenge for Indian parents. Good inter national schools are not easily affordable, while Indian schools are limited in terms of their l o c a t i o n a n d o t h e r f a c t o r s . I n d i a n p a re n t s r a re l y send their children to standard Japanese schools. Therefore, their children also do not pick up reading & writing proficiency in Japanese and mostly aspire to further migrate to the US and the UK.

Anjali

Unlike Indian migrants in countries like the www.batj.org


Economic Opportunities U S , w h e re I n d i a n m i g r a n t s g o t w e l l i n t e g r a t e d into the economic systems of the country, holding good positions in American multinationals, leading positions in educational and research institutions, businesses, thereby becoming good links between the two countries, Indian community in Japan need to explore these options fully in Japan.

increasing. Therefore, the Indian professionals and students coming to Japan with fair knowledge of Japanese language is less likely to face the language barrier. Crossing language and cultural barrier is very important for Indian migrants to avail of the economic opportunities in Japan.

Despite these challenges, Indians in general like Japan, particularly the Japanese values of p u n c t u a l i t y, p a t i e n c e , h a rd w o r k , d i s c i p l i n e c i v i c and social responsibility. These are qualities most Indians wish to inculcate. Japanese women also have a special liking for Indian grooms.

S o m e a re u n d e r t h e i m p re s s i o n t h a t I n d i a , unlike Japan, is loud and lively. Festivals and parties add a further flavor to Indian life — a life suffused with color, music, prayer, food and, most of all, fun. Celebrating an Indian festival in Japan with the same gusto is a challenge. However, a peep in Japanese lifestyle will change this perception. The way Japanese have developed tourism, adopted life style, getting more options of fruits & vegetables available and becoming open in past several years, it seems getting more comfortable for Indian migrants.

I n t h i s re g a rd , t h e a p p ro a c h o f J a p a n e s e business community is a good indication. Japan has several home-grown multinationals that have subsidiaries and business establishment in many other countries despite of their unique culture and language barrier. Even in India, the Souther n region and cities like Ahmedabad have seen substantial rise in Japanese expatriates. They are also building Japanese Industrial Townships. Of late, Japan is encouraging educational and professional tie ups and training program for Indian students and professionals under TITP. In India, the number of Language Centers teaching Japanese is

The past decade has seen a steady increase in migrants from China, Nepal and India who prefer to live around Tokyo. The megalopolis makes it easier for them to find jobs, meet fellow countrymen and m a i n t a i n t h e i r w a y s o f l i f e . T h e s h a re f o r I n d i a n re s i d e n t s l i v i n g i n g re a t e r To k y o w a s 6 4 % . W i t h these positive trends, we hope to support and see economic opportunities more forthcoming for Indian migrant community in Japan. 

Reference: For data and some facts used in this write up, some articles and media reports have been referred to. [Mona Khandhar IAS is Minister Economic & Commerce, Embassy of India, Tokyo]

www.batj.org

Durga Puja 2020

57


Modernization drive on Indian Railways   - Ravindra Verma

I

ndian Railways (IR) is among the world’s largest rail network. IR route length network is spread over 1,23,542kms, with 13,523 passenger trains and 9,146 freight trains plying 23 million passengers and 3 million tonnes (MT) of freight daily from 7,349 stations. India's railway network is recognized as one of the largest railway systems in the world under single management. The railway network is also ideal for long-distance travel and movement of bulk commodities, apart from being an energy efficient and economic mode of conveyance and transport. Government of India has focused on investing in railway infrastructure and has enabled FDI to improve infrastructure for freight, passenger and high-speed trains. Some of the recent steps regarding modernization of IR are highlighted below: 1. Indian Railways to become Green Railways by 2030

IR has committed to become a ‘net zero’ carbon emission organization by 2030 and is taking a multi-pronged approach towards this goal. IR has undertaken several initiatives towards decarbonization such as the complete electrification of the traction network (by 2023), improvement in energy efficiency and meeting of the power demand through Renewable Energy. This is in line with the International Paris Agreement on Climate change, 2015, where India has pledged a reduction of 33-35% in emission intensity by 2030 from 2005 level.

Ministry of Railways (MoR) has decided to provide solar power plants on vacant unused Railway land on mega scale. A pilot project of 1.7 MW capacity with direct connectivity to 25 KV traction system has been successfully operationalized in Bina. Solar plant of 3 MW capacity has also been commissioned at Modern Coach Factory (MCF), Raebareli for non-traction application. Further, 2 more projects at Diwana (2 MW) and at Bhilai (50 MW) are in progress. IR has developed a plan for installing solar plants of 20 GW capacity by utilizing its vacant land (~51000Ha) by 2030. IR has solarized more than 960 stations till date and 198 MW solar rooftop capacity is under creation for 550 stations.

2. Railway Station Redevelopment

MoR is engaged in development and modernization of Railway Stations across India through Public-Private Partnership. Indian Railway Stations Development Corporation Limited (IRSDC) is a special purpose company approved as main project development agency by the Union Cabinet. As a part of this endeavor, it has decided to undertake redevelopment and operation/ maintenance of Railway Stations. IRSDC is carrying out the bidding process for the Project, including provision of development plans – master plan, architectural drawings, consult with urban local bodies/other statutory authorities while approving the plans, so that the development is harmonious with surrounding development, generally following National Transit Oriented Development Policy. Details of ongoing bidding (RFQ and EOI) can be seen at https://irsdc.in/ Recently, Rail Land Development Authority (RLDA) has invited online bids from private players to redevelop New Delhi Railway Station and IRSDC for CSMT Mumbai into an integrated commercial, retail and hospitality hub. The objective of this ambitious project is to position the Railway Stations as a multi-model hub through upgradation of the infrastructure and provision of state-of-the-art amenities such as multi-level car parking, an elevated concourse with segregation of arriving and departing passengers, refurbished platforms with easy access from the concourse level, mezzanine level exclusively for passenger facilities such as lounges, food courts and restrooms, an elevated road network with multiple entry and exit points with optimum use of natural ventilation and lighting. The project would also include a significant commercial component entailing a mix of retail, office, and hospitality developments such as 5-star hotels, budget hotels and serviced apartments. RLDA is currently working on 62 railway stations in a phased manner while its subsidiary, IRSDC has taken up another 61 stations.

58

Anjali

www.batj.org


Modernization drive on Indian Railways

3. Dedicated Freight Corridor

Dedicated Freight Corridors (DFC) is one of the largest rail infrastructure projects a (total length of 3360 route km) undertaken by the Government of India. DFCCIL has been set up as a special purpose vehicle to undertake planning, development, mobilization of financial resources, construction, maintenance and operation. JICA funded 1504 km long Western DFC from Jawaharlal Nehru Port Terminal (JNPT) to Dadri connects major cities in the states of Maharashtra, Gujarat, Rajasthan and Haryana. 500Km section has already been commissioned on DFC. The tunnel caving work has been completed for the one km long tunnel through the Aravallis in the state of Haryana. This will be the first electrified railway tunnel in the world, which would be able to run double stack containers. 4. High Speed Rail (HSR) Development

To revolutionize the transport sector in India through speed, safety and service, the first HSR corridor is being implemented from Mumbai to Ahmedabad, with technical and financial assistance from Government of Japan. The project comprises ‘Make in India’ as well as training component to enable Indian workforce to acquire skill relevant for HSR Technology. It is creating large scale employment and economic development. National High-Speed Rail Corporation Ltd (NHSRCL), a specially created SPV, is implementing the project. A state-ofthe-art High-Speed Rail Training Institute is being set up in the campus of National Academy of Indian Railways (NAIR) at Vadodara. NHSRCL has been entrusted to prepare Detailed Project Reports (DPR) for new HSR corridors namely DelhiVaranasi, Mumbai-Nagpur, Delhi-Ahmedabad, Chennai-Mysore, Delhi-Amritsar and Mumbai-Hyderabad. 5. Maintenance Projects of critical importance

The back-end warriors of IR have fully availed the opportunity provided by suspension of passenger services due to pandemic of COVID19 to successfully execute more than 200 long pending maintenance works including yard remodeling, repair and regirdering of old bridges, doubling and electrification of rail lines and renewal of scissor crossovers. Pending for several years, these unfinished projects often confronted as bottlenecks. Apart from ensuring supply chains all essential commodities running through parcel trains and freight trains, IR executed these long pending maintenance works during this period which otherwise require traffic blocks of long duration. These works taken up for removal of bottlenecks and enhance safety include 82 rebuilding/rehabilitation of bridge, 48 limited height subway/road under bridge in lieu of level crossing gate, 16 construction/ strengthening of foot over bridge, 14 dismantling of old foot over bridge, 7 launching of road over bridge, 5 yard remodeling, 1 commissioning of doubling & electrification and 26 other projects. 6. Covid Isolation Coaches

In order to augment the capability against COVID19, Indian Railways has converted 5231 non air-conditioned coaches into isolation coaches, at the level of COVID Care Center as per the ‘Guidance Document on Appropriate Management of Suspect/Confirmed cases of COVID19’ circulated by Ministry of Health & Family Welfare. These facilities are part of the integrated plan developed by MoHFW and NITI Ayog and are normally used when state facilities are overwhelmed. IR production unit Rail Coach Factory at Kapurthala, has developed a Post-COVID Coach. This coach has design improvements in it like handsfree amenities, copper-coated handrails and latches, plasma air purification and titanium dioxide coating. 7. Double stack container operation

IR creates a new world benchmark by commissioning 1st high rise Over Head Equipment, which has contact wire height of 7.57m and successfully run double stack containers in electrified territory on Western Railway. With this remarkable development, IR has become the first Railway to run Double Stack Container train with high reach pantograph, the Operations of which successfully commenced in June, 2020. www.batj.org

Durga Puja 2020

59


Modernization drive on Indian Railways 8. Satellite Tracking of Trains: Around 6500 locos (electric & diesel) are already equipped with GPS, about 6000 locos to be equipped by Dec 2021. The Centre for Railway Information System (CRIS), the information technology arm of the Ministry of Railways had collaborated with ISRO to implement Real-time Train Information System (RTIS) project in trains. IR has installed a GPS aided geo-augmented navigation system (GAGAN) based devices on locomotives to acquire train movement data in realtime and to have improved efficiency in train operations. Container movement can also be tracked with information available on mobile apps. 9. Digital India, Digital Rail Initiatives: All Key processes of IR including freight operations, passenger operation & ticketing service, fixed asset management, human resource management, E-Office, E-Training have been digitized & fast tracked. Rolling Stock Asset Management and wayside infrastructure is being digitized. Locos/Freight Wagons/Coaches/Coaching maintenance/ Yards are being managed with the use of IT based apps. Digital maintenance technologies are also being adopted viz. Condition monitoring along with the use of AI & IoT. 10. IR has operationalized its first 12000 HP electric locomotive, with this, India has become the sixth country to have manufactured an electric locomotive with such horsepower locally. The IGBT based locomotive, manufactured by Madhepura Electric Loco Factory is a joint venture between Alstom and IR. The factory will manufacture 800 such locomotives in the next 11 years. The locomotive can be tracked through GPS, it has air-conditioned driver cabs on either side and is equipped with regenerative braking system which provides substantial energy savings during operations. It is capable of hauling loads up to 6,000 tonnes at a top speed of 120kmph. 

60

Anjali

www.batj.org


Save Twilight “This road nobody’s travelling it save twilight.”

- Utso Bose

~ Basho

The places we leave behind come back to us. Maybe suddenly, often without remorse, they catch us in moments of stillness, off guard, and we are flung back, ceaselessly, into the past. I left Japan in 2009. I've been ambivalent about the experience ever since, and, every year, when the prospect of writing for Anjali arrives, I promise myself I will write something different. But it is in moments like these that my other homeland comes back to me, all too quickly and much, much too strong; a flash of almost blinding light. And I find myself there, in Yokohama, a boy of nine, learning to unlearn, making sense of a universe written in invisible ink. We used to live in a place called Kamadai. Towards its earnest nape, a small road ran uphill. The walk uphill was tiring, but houses lined every rung, and our building was right at the top. Like every person living in a flat, it was existed for me only for as long as I lived in it. Once I left, it never occurred to me what could have happened to it. Back home in Calcutta, we soon moved into our old flat like shifting into an old sweater. But as it often happens with old sweaters, it didn't fit like it used to. Nevertheless, I remained there, in Calcutta, quietly choosing to forget about the life I left behind, up, until one day, when I was told that we would be travelling back to Japan for a week or so, in 2016. Are returns harder than departures? There was once a crack on the edge of the pavement outside our building. Puddles would often collect there, blessings from the Kanto monsoon, and, during winters, specks of snow covered it, so it would look like a secret. As we neared Kamadai, passing the wispy streets of Sakuragicho, I felt a strange distance. A reckoning perhaps, or even a recognition, that the places you come back to are never the places you

www.batj.org

left behind. The bus stopped at the crossing, and we got off. Kamadai is a locality of whispers. A few kilometres away is the heart of the beating city, but here, everything is slower. The sunlight slants, quivers, rests. The first thing I noticed was the difference and the sameness. Most of the old shops were there, but were now manned by different personnel. The book shop had closed down. "It's all Amazon's fault!", One of my friends said to me later. The old Ramen-ya was there too, and, on recognising me, shared a rare moment of sober excitement, so rare indeed, among people here. We turned to walk that same walk uphill, now, seven years later. It was the same walk, the same houses were still there, each standing as milestones, announcing the sight of that one building right at the top. I expected a kind of alienation to arrive, imagining that thr sight I would be greeted by would be of a house I wouldn't recognise. But when we did reach the top, the building was there. It was still there, that same building, flecked with green, it didn't even look old. Older. I walked up to the entrance and was about to ring the doorbell of our old flat when I saw a group of people sitting inside. A family of three, in that same room, where, seven years ago, I had received news of my homecoming. And I felt a strange distance for the second time; not a sad, dejected distance, but a distance of realisation, that change is often a small thing. And in its minuteness, in its almostinvisibility, it assumes a subtlety that often goes overlooked. I looked around and noticed that the crack was no longer there. It had been filled. I suppose that's how life is lived; in absentia, in silence, in overlooked changes, in moments of stillness, cracks waiting to be filled. 

Durga Puja 2020

61


Asuras in Hindu Mythology (Proto-Materialist metaphysics of Ancient India)

- Viswa Ghosh

H

uman kind has had to instinctively understand the world, the reality in which it had to survive. At some point in human kind’s history we started to address the question: How to understand reality and nature?

Sometime during our ancient past, this question became a major source of controversy and debates. In philosophy, this emerged as the famous debate between Materialism vs Idealism. Philosophical Idealism regards mind and consciousness to be first-order realities to which matter is subject and material interactions are secondary. In other words, matter or reality is what our mind makes it out to be.

Philosophical Materialism, in contrast, holds matter to be the fundamental substance in nature, and that all things, including mental states and consciousness, are results of our interaction with matter or reality. In other words, matter and reality exist irrespective of whether our mind perceives them or not.

In this essay, I am not going to argue in favour of or against either Materialism or Idealism. Instead, my focus in this essay is to bring out the how this debate has been played out in Hindu philosophy. In Hindu mythology it is commonly understood that Asura represents EVIL, as juxtaposed against the Devas (or Devatas) who have been regarded as forces of GOOD. Says Rajagopalachari, historian, statesman and India’s last Governor General, “On the whole, Asuras and Rakshasas were those who rejoiced in doing wicked deeds.” He further conjectures, “The Devas were generally upholders of dharma and took on themselves the task of putting down the Rakshasas… some of whom had attained great power through tapas.”1 Victory of GOOD over EVIL has been the most common theme in Hindu mythology, notably in the two epics Ramayana and Mahabharata. Hindu mythology has always represented Asura as fierce, prone to committing violence and crimes, engaged in eating, drinking, merry making and bacchanalia. Perhaps, hidden behind these entertaining and easily palatable tales of victory of Devas victory over Asuras, there lurks a much more serious debate. Critical study of the epics and Hindu scriptures show that the vilification of Asuras is linked to the victory of Idealism over Materialism in Hindu philosophy.

I. Charvaka and Lokayata Metaphysics

While I started this essay with Asuras, out of necessity, I have introduced two more terms, Lokayata and Charvaka. Over the next few paragraphs, I will connect all three – Asura, Lokayata and Charvaka – to show that all three philosophical traditions were steadfastly rooted in Materialism, or rather, proto-Materialism2 and were once thriving metaphysical systems in ancient India. Many ancient writings hint at the existence of Lokayata Sastra, but no such ancient text has yet been found. Candrakirti’s Prajna Sastra quotes Lokayata Sastra. Aryadeva’s Satasastra contained an actual quotation that is attributed to Sage Brihaspati, as this Materialist metaphysics or Barhaspatya, was considered to have been originated by Brihaspati.3 As happens all too often in history, victors4 – in this case, Idealism and its proponents, the Idealists – not only nearly wiped out the original versions of proto-Materialism but also distorted the proto-Materialist worldview. Therefore, we have no recourse other than to seek out the kernel of proto-Materialism from the words of its opponents. Opponents, who often misunderstood, misrepresented and offered caricatures of Materialist metaphysics. Madhavacharya, a well-known 14th century proponent of Idealism says about fundamental assertion of Charvaka metaphysics, also referred to as Lokayata: 5 1 Ramayana retold by C. Rajagopalachari edited by Jay Mazo of American Gita Society, p. 19. 2 In his Lokayata: A Study in Ancient Indian Materialism, Debiprasad Chattopadhyaya refers to it as proto-Materialism. It was as yet in its original and crude beginnings when it was pushed out of the mainstream into oblivion. Rise of city-states further hastened this process. 3 Ibid. pp. 6-7. 4 It must be noted that the clash of ideas is rarely a free and fair contest. Specific historical conditions have laid waste to the best of philosophical traditions while the same powerful social and political forces championed the worst of thoughts. We must also recognize that these were times when humankind lacked sophisticated scientific theories and tools to explain natural phenomena. 5 In Sarva-Darsana-Samgraha by Madhavacharya mentions, “Hence, another name for that school is Lokayata.” p. 12. In 1331 AD, Madhavacharya was the Head at the monastery of Sringeri, which had been founded by the 8th century Vedantist teacher Sankaracharya.

62

Anjali

www.batj.org


Asuras in Hindu Mythology

“While life is yours, live joyously; None can escape Death’s searching eye: When once this frame of ours they burn, How shall it ever again return?” If Madhavacharya is correct, clearly these lines point to a denial of life after death by Charvaka / Lokayata metaphysics. As proto-materialist metaphysics, Charvaka / Lokayata held that the inebriating power of intelligence emerges from the coming together of four elements – earth, water, fire and air. “Springing forth from these elements, itself solid knowledge, it [intelligence] is destroyed when they are destroyed, – after death no intelligence remains.”6 In passing, we may note that the epic, Mahabharata (Santiparva), records that a Charvaka was killed by the assembled Brahmans who had gathered to bless the Pandavas when they returned victorious from the Kurukshetra war. This Charvaka was the lone dissenting voice, who addressed Yudhishthira, saying: Thou art a wicked king! Thou art a slayer of kinsmen! What shalt thou gain, O son of Kunti, by having thus exterminated thy race? Having slain also thy superiors and preceptor, it is proper for thee to cast away thy life!7 The assembled Brahamanas, having overcome the shock of hearing a dissenting voice, united to slay the Charvaka after disparaging him as “…Rakshasa Charvaka, the friend of Duryodhana!”8 We realize that contempt for both Lokayata & Charvaka is clearly expressed by those who defended the Idealist worldview. This contempt becomes glaring when we turn our gaze to understand the presence of Asura in Hinduism. Referring to the epic Mahabharata, Radhakrishnan (philosopher, academic, and the 2nd President of India) acknowledges that, “The Epic often stigmatizes heretical opinion as demoniacal (asura).” Being a staunch Vedanta philosopher himself, he further explains, “…the views can be called Lokayata or a heterodox philosophy of the mundane, and are opposed to the orthodox adhyatma-vada or philosophy of the spirit… they certainly deny immortality of the self and, as a corollary, the law of karman and rebirth.”9 From these brief accounts, we are sanguine that Charvaka / Lokayata were proto-Materialist metaphysical doctrines. Also, etymologically and Lokayata (lokesu, among people + ayatah, prevalent) meant it was prevalent among people, which is also admitted by Madhavacharya in Sarva-Darsana-Samgraha.

II. Asura Metaphysics

In brief, “Self” for Asuras is identified with the body. That there is no “Self” over and beyond the body. That there is no life after death. This is clearly a Materialist interpretation. Devas, on the other hand, pursue the Idealist view of the “Self”, which believes that the true “Self” is the atman and should not be confused with the body, which is merely a container. Hence, for Idealism “identification of the body with the pure Atman is the root cause for human sufferings and miseries and for births and deaths.”10 What further evidence(s) do we have to demonstrate that the Asura world view stood for Materialist metaphysics? We find such evidence in Chandogya Upanishad, which explains that one of the key questions on which Asuras and Devas deviated was on the philosophy of ‘Self’. Chandogya Upanishad relates a story regarding the search for “self” by both Asuras and Devas. Let us follow this story in some detail.11 To seek answers on what is “self”, both Indra from the Devas and Virocana from the Asuras approached Sage Prajapati. Both spent time as students under Prajapati and after 32 years Prajapati asked them: Prajapati: “Desiring what have you dwelt here?” Virocana & Indra: “They report a saying of yours, Sir, to the effect that – that Self which is free from evil, free from decrepitude, free from death, free from sorrow, free from hunger and thirst, with true desires and true volitions, should be sought after, should be sought to be understood, and he attains all regions and all desires who has sought to know the Self and understands it – it is desiring this that we have dwelt here.” 6 Ibid., p. 13 7 Mahabharata of Krishna-Dwaipayana Vyasa, Vol. VIII, Santi Parva (Part I), translation by Pratap Chandra Roy (between 1883 and 1896), p. 86. 8 Ibid. p. 87. 9 History of Philosophy: Eastern and Western, Vol. 1, S. Radhakrishnan, p. 88. 10 Brahma Sutras (translated by Sri Swami Sivananda of Divine Life Society), p. 4. 11 The Chandogyopanishad with Bhasya by Shankara (translated by Dr. Sir. Ganganath Jha). Chandogya Upanishad addresses many philosophical questions – such as, Philosophy of Being, Philosophy of Inner Akasha, etc., including the “Philosophy of Self.” pp. 449-456.

www.batj.org

Durga Puja 2020

63


Asuras in Hindu Mythology

Prajapati: “The person that is seen in the eye – that is the Self that I spoke of; this is the immortal, the fearless, Brahman.” Virocana & Indra: “Sir, he that is perceived in water, and he that is perceived in the mirror, – which of these is that?” Prajapati: “It is he himself – is perceived in all insides… Look at yourselves in a cup of water, and then what you do not understand of the Self, – tell me?” They looked at themselves in a cup of water. Prajapati: “What do you see?” Virocana & Indra: “Sir, we see ourselves entirely as we are, even to the hairs and nails, – a perfect replica.” Prajapati: “Having become well-adorned, well-dressed, well-groomed, look into the water cup.” Becoming well-adorned, well-dressed, well-groomed, they looked into the water cup. Prajapati: “What do you see?” Virocana & Indra: “Just as we are ourselves – well-adorned, well-dressed, and well-groomed, – so are these also well-adorned, well-dressed, and well-groomed. Prajapati: “That is the Self, – the Immortal, the Fearless, that is Brahman.” They both went away with their hearts satisfied. And Prajapati, looking after them, – said, “without having perceived and without having understood this Self, they are going away; now, whoever of the two, Devas or Asuras, will accept this doctrine will be landed in trouble.” Now, Virochana, with a satisfied heart, went out to the Asuras and preached to them this doctrine – viz.: “The Self alone is to be worshipped, the Self alone is to be attended upon; and it is only by worshipping the Self and attending upon the Self that one secures both regions, – this as well as that other.”12 Chandogya Upanishad concludes: For this reason, even to this day – if one does not give, has no faith, and does not perform sacrifices, – they say of him, 'oh! he is Asura (demoniacal)’; as such is the doctrine of the Asuras.” A couple of clarifications need to be made on what Chandogya Upanishad cites regarding the Asura doctrine of the “Self”:

1. One, this is a view of Asura doctrine of the “Self” as viewed from the eyes of its opponents. Hence, there are distortions – some obvious and some not so obvious. For instance, if life after death is denied by the Asuras, surely “secures both regions” cannot be consistent with the doctrine. (Further discussions on such distortions are beyond the scope of this essay and will be a major digression from the main theme.) 2. Two, Asura doctrine of the “Self” is not to be understood as a doctrine of narcissism. Rather, it must be understood as a microcosm of nature. In other words, understanding the “Self” will also address other mysteries of nature. And, one can imagine the mysteries of nature that our ancestors confronted in our remote past!

III. Conclusion

“Asura View” needs to be part and parcel of any serious study of Indian philosophy. As we stand in the 21st century and prepare to face the challenges of global integration, racial and religious mixing and tolerance, we should not avoid unearthing the vast wealth of Materialist metaphysics (the Asura / Charvaka / Lokayata), that were once associated with the very origin of our South Asian civilization. Especially, in this age of scientific and technological advancement, Materialist metaphysics is capable of providing us valuable insights for rationality, logic, ethics and theology. During the next and all future Durga Mahotsav, let us recall the real Asuras in Indian civilization and not the fictional ones that have been foisted upon us. At the same time, do not ignore the real Durga that lies embedded in the clay 12 To be sure, we need to be clear about what “region” means. Life on earth is as one such “region” and life after death as another “region”.

64

Anjali

www.batj.org


Asuras in Hindu Mythology

pot (purna ghot) with the picture of a human baby in vermillion, and that holds water inside, covered with leaves, rice grains, and with a green coconut placed on top. The clay pot is placed on a lump of clay which is sprinkled with five varieties of seeds (panchya sasya). For this real Durga may well be part of our Lokayata metaphysics and tradition that always dreamt of bountiful harvests for its people.

It is all the more important to recognize the real Asuras in our ancient past because serious attempts are being made today to distort history of Indian civilization disregarding evidence and material basis. Our critical understanding of our own past is vital to how much distortion we will allow.

Sri Sathya Sai Baba - His Life – A Summary - Write

up coordinated by Saideepa Yuri Hira

Sri Sathya Sai Baba was born in Puttaparthi on Nov 23, 1926 - an auspicious Monday in the lunar month of Kartika, when Lord Shiva is especially adored. He was given the name Sathyanarayana Raju. What intrigued His mother Easwaramma, most was the unbounded compassion her little Sathya had particularly for the poor and downtrodden. Even as a toddler, He insisted that the beggar at the door be served well in spite of their own limited means and would often give His own share to the needy. When He began school, His playmates were inspired by His ability to lead them to be socially responsible, spiritually aware, endowed with individual and national character. His friends were often fascinated by His extraordinary powers of creating things out of thin air, knowing the future, deep understanding of scriptural wisdom and so on. The inexplicability of His actions greatly disturbed His father Sri Ratnakaram Pedda Venkama Raju, and on May 23, 1940, he angrily accosted Sathya to reveal His true identity. Sathya just took a few flowers and flung them down which arranged themselves to read “I am Sai Baba.” Later that year, on the morning of Oct 20, halfway through the school day, Baba suddenly returned home, cast aside His books and dramatically declared, “I am no longer your Sathya... I am Sai. I have my work, I cannot wait any longer.” Thus, that day forward Sathyanarayana Raju became Sathya Sai Baba. From that epochal moment on, kings to commoners started thronging to His presence seeking solace and succour as Baba cancelled an incurable disease of one, sorted out familial problems of another, and likewise. His growing fame, accompanied by rising ridicule from envious quarters, rattled His elder brother Seshama Raju, who wrote a letter cautioning Him of His activities. In His reply, dated May 25, 1947, Baba emphatically stated that He has a 'Task' to 'foster all mankind with bliss', a 'Vow' to 'lead all onto the path of righteousness', and a 'Work' of 'removing the suffering of the distressed', also assuring that He would never give up on those who attach themselves to Him. Towards this end, in the 1960s Baba germinated the Sri Sathya Sai Seva Organisations in India, through which people across religions, class and caste, could collectively engage in selfless service and foster the eternal values of Truth, Righteousness, Peace, Love and Non-violence, for their own spiritual uplift. In no time the movement grew global to more than 126 countries with Prasanthi Nilayam being its epicentre. While millions of inspired individuals took to practising selfless love, to create working models for them to emulate, Baba founded the Sri Sathya Sai Central Trust in 1972. Since then this umbrella institution is engaged in the implementation of trailblazing projects like free primary to tertiary-care hospitals, free education from primary schooling to doctoral research, free drinking water to remote villages, free housing rehabilitation initiatives, etc., demonstrating to the world new paradigms to raise society's quality of life inspired by love, service and universal brotherhood. Baba, Himself exemplified this higher life incessantly for 86 years where the power of pure love was in glorious action. On His 83rd and 85th Birthdays in Nov 2008 and 2010, on His devotees' request, Baba rode on a golden chariot. Only later did everyone realise, those were indeed symbolic of the golden culminating moments of Baba's earthly sojourn. Baba discarded His bodily vesture on April 24, 2011. The devotees miss His physical form, nevertheless, they continue to experience His guidance and grace, as enigmatically as ever. The Universal Consciousness that is Sri Sathya Sai eternally lives on.

www.batj.org

Durga Puja 2020

65


Dooars – A Distant Dream   - Joyita Basu Dutta

M

y earliest memories of the Dooars region of North Bengal are of driving through the lush green countryside on our way to Jalpaiguri, my parent’s hometown. The drive was scenic - virgin green country-scapes, long stretches of neatly pruned, undulating tea shrubs as far as one could see into the horizon. Serene tea estates alternated with patches of thick impenetrable forests, that would rhythmically screech with the now familiar distinct shrill of the cicadas crying out in unison. The dense greenery would eventually relent into comforting fragmented rice fields and pineapple farms that would bask in the golden hue of the setting sun, as we approached Jalpaiguri. In the back seat of our glistening black Ambassador, which my father would meticulously polish himself before any trip, my heart would pound as we would approach the forest stretches. I would imagine tigers and elephants leaping out of the thicket. But there was an even greater fear, which paled in comparison, the fear of notorious dacoits ambushing us. I could sense a similar tension in the air as my father would accelerate harder to get through the forest stretches and veer us to safety as fast as he could. North Bengal then was pristine and untampered. And Dooars was an exclusive world existing by itself, nurturing the then thriving tea industry of Bengal. Baba started his journey as a tea planter in the gardens of Assam, where Ma joined him as a bride. My sister spent her formative years in the tea estates there. After a satisfying and productive stint in Assam, Baba moved on to Dooars and was posted in Radharani, a garden at the very edge of the Indo-Bhutan border, where I spent my first decade. I remember as a child, during the dry winter months, instead of taking the highway, we would take a shorter but extremely bumpy ride in our Willys Jeep over the river bed for a quick trip to Phuentsholing, a small border town in Bhutan. Small towns close by such as Kalchini or Hamiltongunj did not quite measure up to Phuentsholing. Siliguri was a good 3.5 hours away and yet to catch up. In the early ‘80s, Phuentsholing had a shopping arcade that housed a bookstore, where I bought my first Enid Blyton, shaping the bookworm in me. It really was more than a luxury as one rarely had access to books in the hinterlands. The town also had a quiet Buddhist monastery tucked behind a hill overlooking the valley, very similar to the Buddhist temples of Japan. It was a favorite place to visit and to take family members and guests who were visiting us. There was also a movie theatre showing the latest Hindi movies. The best treat in Phuentsholing was the Druk hotel. We looked forward to our annual lunch at Druk with tremendous excitement. My sister and I even wore Bakhus, the traditional Bhutanese dress, and it was my favorite outfit, such was the influence of our neighboring country on us young girls.

fashion, weeds were meticulously plucked out and shade trees whitewashed up to the same height as far as the eyes could see in the distant horizon, creating a uniform geometric pattern. Neatly fenced with barbed wires twisted around painted white poles, the sea of green tea bushes within, soothed my eyes and the aroma of the fermenting leaves from the factory still wafts around me to this day as I close my eyes and take a deep breath. Within our bungalow compound fenced off with vibrant bougainvillea, was a lush green front lawn that was tended to with care and attention by experienced and knowledgeable “malis” under the supervision of my mother, as well as a kitchen garden. The grass lawns were well mowed, the driveway lined by lilies and hydrangeas, the tough and hardy gerberas brought happy cheer when all the other flowers had disappeared, the roses in their different shades had bees buzzing and hovering over them. The garden phlox were my favorite. The gulmohar tree spread out its umbrella-like canopy flamboyantly at the entrance to the driveway and painted a welcoming picture to our home. The burra bungalow we stayed in was built during the British Raj, complete with chimneys and fireplaces, a creaky wooden staircase, well ventilated yet cozy rooms, each fitted with incredulous bells connecting with the kitchen. Huge ‘jali kamra’s (wire meshed spacious front verandahs) were my favorite space to occupy. Life seemed like a permanent staycation.

The nights were serene yet pulsating with the rhythms of the Adivasi folk songs accompanied by percussions, the screeching of the insects, the alternating croaking of the toads and frogs. This was just the façade though. Lurking in the jungles at the edges of the plantation were wild animals. Oftentimes, in the dead of night we were woken up by the screams from the labor quarters, the siren from the factory and the bursting of firecrackers used to frighten away the animals that had ventured in. Finally, when the cacophony would die down, we were reassured that the animal was done for the night and had retreated. But not always were we so lucky. If it happened to be a herd of elephants, the poor elephants would run amok confused with all the racket raised. This led to damage of property and the management having their hands full. Sometimes the Burra Bungalow would have visitors too. I remember a particular night, when momentarily, all the usual sounds prevalent during the nighttime had receded and there was an uncomfortable silence. It seemed something in nature was amiss. The cicadas were cautious and had quietened down and everything seemed unusually still. Unsuspectingly, I left by bed to peep out my window. Confronted within the darkness of the night was an even darker shadow reaching right up to me I grew up in the lap of nature, leading a life intrinsically on my second-floor bedroom window. A huge unnerving gentle woven around it. As a tea planter, Baba’s mood always seemed curve marked out the two-separate darkness’s. Perplexed, to be tied with the weather pattern. Elated and chirpy during I peered harder only to be confronted with the gentle sway the rains, restless during the dry spells, and despondent when of a trunk and the unmistakable flapping of a huge pair of a freak hailstorm would destroy the crop and all the hard work ears. Reckoning that I was face to face with an elephant, I that went behind it. Glorious sunrises and spectacular sunsets, somehow managed to maintained my calm as I withdrew from sky spangled with countless stars, uncertainty of confronting the window and with even more composure went over to my wild animals, such as tigers or elephants, solitude and calm parents’ room to alert them. Baba, after weighing his options, of the countryside were all part and parcel of life. One would activated the factory siren that wailed loudly. Immediately imagine an element of untamed wildness ascribed to nature, the factory chowkidaars and garden laborers arrived at the but on a tea plantation everything was immaculate. The tea bungalow. The usual ruckus was raised by the laborers, excited bushes that rolled along acres and acres of undulating land cacophony and many firecrackers later the mighty elephant left were trimmed and pruned to the same level in an orderly our compound and eventually the estate, without much loss to 66 www.batj.org Anjali


Dooars – A Distant Dream life and property. Such sightings were routine and luckily, they couldn’t cause much damage to the colonial bungalows with their sturdy thick column like pillars. Dooars was after all the Buxa region of north Bengal, famous for its tiger reserves. Dacoits took advantage of the thick foliage. So, trips to towns were only occasional. Though availability of eggs, milk and poultry were plentiful on the plantation, we depended on the garden postman for other daily needs. The ‘Dakwalas’ job was to visit the closest post office to the tea garden, to send out the official mails and reports to the head office, which was located in Kolkata. And also collect all official mail for the estate, including personal letters addressed to the staff. We would make use of the opportunity of the Dakwala stepping out of the garden, and Ma would make a list of essentials she required for the Dakwala to fetch, the previous evening itself. With the advent of the VCR in the mid-eighties those lists went on to include names of the latest Hindi movies. The confusion on the ‘Dakwala’s’ face as he tried to pronounce the names, which my sister made him practice before he set out, made us giggle like giddy girls. Evening refreshments were still a problem though. The Dakwala couldn’t really get us what we fancied and we had to be self-dependent, so Ma, after a short siesta in the afternoon, would with us by her side to help, prepare ice-cream for hot summer evenings, varieties of cakes and cookies fresh out of the oven, which we savored and relished. Without access to the internet it is still a mystery how my mother taught herself the art of making swiss rolls and souffles. She clung on to her recipe books and taught herself everything there was to baking without access to internet or cookery shows. She still collects recipes and sends them to me here in Tokyo, while I wallow in 4G/5G, watching my favorite food vlogger on YouTube. Life on the estate could get extremely quiet and dull, had it not been for the club that catered to a cluster of gardens in a region. The club was indeed the center of social life for the tea planter’s families. Saturday evenings were designated for activities at the club. Planters from various estates across the region met and discussed matters about their gardens over drinks. Families would get a much-desired opportunity to interact and socialize. Ladies got to showcase their skills at the annual flower shows that vied to outdo the other clubs at interclub competitions. Sporting events in badminton, tennis, soccer and golf nurtured talent and fulfilled the aspirations of many. The Christmas party still holds a place in the hearts of all

the “chai ka baby and baba logs”. Santa would come on a red tractor, not a sleigh, clanging his bell and we’d run after him in excitement. We would patiently wait for Santa to give us our presents, that were wrapped neatly and placed by our parents under the Christmas tree the previous evening. The ladies would decorate the club with bright hollies, candy canes, poinsettias and a pine tree would be adorned for the year end. Special treats of Christmas cake, tarts and jellies placed in baskets made skillfully from orange peels are etched in my memory and showcased the skills of the bungalow cooks who held on to their secret tricks and recipes, passed down from their British predecessors. It was indeed a different era, when our own religion was still very personal and practiced privately. Colonial hangover still ruled the lives of a predominantly cosmopolitan crowd. The thriving club was a reflection of the thriving tea industry back in the day. It was bolstered with the contributions from member estates. So, in later years the dilapidated clubs were only acting as tell-tale signs of what was actually a malaise set to befall the entire industry. Growing up in the tea gardens, I endured a sense of rootlessness, which I was relieved to discover was a common feeling among many of the tea children I grew up with - nobody could identify the far flung place I came from. They were unfamiliar with the names and places I uttered; a very different lifestyle made it even more complex. We would often quote the nearest relatively well-known town as our hometown though we had no association with the town and made no mention about the lives that we led for fear of coming across as unrelatable. Decades later when we were confronted with the ‘hometown’ field on Facebook, we mostly left it blank! We belong to the far flung, inaccessible estates, unknown to the rest, a way of life unfamiliar to most. Always the Chai Ka Babies and Babalog as we were referred to by the indulgent and endearing caretakers of the tea estates. A dream so distant yet precious. A way of life has eroded over the passing years, faded with the lure of city life, the manipulation of greedy businessmen more interested in wrenching out every last rupee for the annual report and no vision for the future, and government policies that ignored the industry. Alas, the tea industry in Bengal is fighting for survival today and I’m left with nothing but evergreen memories of my childhood and these words that my child may be familiar with my roots. My unshakeable roots in the Dooars, which may not be grasped by all, but roots that I’ve grown to be comfortable in and embrace with my whole being. 

67


India – A Perennial Idea   - Varun Tomar In January earlier this year, Saif Ali Khan in an interview claimed that there was no concept of India until the British came. There was a huge furor regarding this statement of his, and the ever outspoken Tarek Fateh countered “Yeah right. French East India Company was about China & Vasco d'Gama went to Fiji.” This incident led me to question the very idea of India. What is India? When was the idea of India born? When did it come into existence? Is the concept of India perennial or modern? It should be noted that when we talk about the idea or concept of India, one must separate it from the Indian state. Khan, it seems was clearly confused between the two. Many scholars, like Ashish Nandy, Partha Chatterjee, Sunil Khilnani support Anderson’s argument made in Imagined Communities that the construct of India is a product of modernity, and India was born in the wake of British invasion of India. However, it must be noted that while the modernist argument might be true in case of the modern Indian state, it cannot be applied to the concept of Aryavarta or Bharatvarsha. The idea of India, or Indica, predates modernity. From Megasthenes in the early third century BC, via Alberuni, the Portuguese missionaries, Schlegel and the Romantics, Schopenhauer, and on to the theosophists, Kipling, E. M. Forster, Paul Scott, the Beatles, and Goa Trance, other cultures have recurrently used India as a foil to define their own historical moments. Jawaharlal Nehru, who was educated in West and saw things as a Westerner would do, also claimed that his understanding of India was flawed, and the concept of India is not a product of modernity. Nehru claimed, “India was in my blood … And yet I approached her almost as an alien critic, full of dislike for the present as well as for many of the relics of the past that I saw. To some extent I came to her via the West and looked at her as a friendly westerner might have done. I was eager and anxious to change her outlook and appearance and give her the garb of modernity. And yet doubts rose within me.” Long before the concept of modernity came by, another Westerner, John Strachey, in 1888 claimed that "the first and most important thing to learn about India is that there is not and never has been India." Yet, India had a centralized empire under the Mauryas, covering a major part of the subcontinent, expanding from Iran to Bengal, at least a century before the Qin united only part of Han China. Alexander Cunningham, the British archaeologist who served in colonial India said that learned men described India to Alexander of Macedon as a ‘single land.’ These men attested that the land known as India is a rhomboid or roughly quadrilateral in shape, with the Indus to the West, the Himalayas and Hindu Kush to the North and oceans skirting the East and the South. Cunningham goes on to write: The close agreement of these dimensions, given by Alexander's informants, with the actual size of the country is very remarkable and shows that the Indians, even at that early date in their history, had a very accurate knowledge of the form and extent of their native land. Many millennia before the Greeks described the geographical construct of India, Sanjaya, the narrator in the ancient epic Mahabharata, described the vision of entire cosmos for King Dhritarashtra. He referred to the cosmos as 68

a massive circle of seven concentric oceans that separated six varshas or regions, each possessing its own mountains and river systems. In the middle of this cosmos lies Jambudvipa, which is described as a four-petalled lotus floating in the ocean, with Bharatvarsha or India, defined by the southern petal. It has the Himalayas and the mighty rivers and seas surrounding its triangular shape. It must be noted that seed of idea of India was sown in the ancient Indian texts like the Vedas, Puranas, Ramayana and Mahabharata. The Puranas describe the features of Jambudvipa while discussing the geographical features of the earth. We find that Brahmapurana depicts the boundaries of this vast stretch of land, which is bounded on the southern side by the ocean and on the northern side by the Himalayas. Brahmapurana goes on to claim that the people, who are born on this soil and therefore, who are indeed the children of soil, are called Bharati.

उत्तरे ण समुद्रस्य हिमाद्रै श्चैव दक्षिणे। वर्षं तद्भारतं नाम भारती यत्र सन्ततिः।। It claims that the vast land is out-stretched to nine thousand yojanas. The rivers like Ganga, Brahmaputra, Sarasvati, Sindhu, Yamuna, Gomati, Chardabhaga, Narmada, Tapi, Kaveri, Godavri etc. adorn this land. These rivers are treated as sacred and most beneficial by the people of India because of these descriptions afforded by the seer author of the puranas. Thus, the narrow barriers of language, region, caste or creed submerge into a Pan-Indian nationalism because of the firm belief imprinted on the minds of Indians about the holiness of all the rivers of India. The Vishnupurana also presents the accounts of geographical features of India as well as the sociological conditions of Bharatvarsha.it says that the vast land situated on the northern side of the ocean and on the southern side of great Himalayas is called Bharata, and the sons of this soil are known as Bharati. Similarly, Makarandeyapurana and Agnipurana also narrate the glory of Bharatvarsha, with precise descriptions of mountains, rivers, geographical configurations, races and inhabitants who dwelled the land. Here also, Bharatvarsha is described as the land situated on the north of ocean and south of Himalayas. It further adds that the land is encircled by seas. The two great epics by Valmiki and Vyasa reflect the cultural unity and indivisibility of the vast country known as Bharatvarsha. In Ramayana, Lord Rama fought for establishing the rule of law in the land of Bharatvarsha, not only Ayodhaya. He fought to reassert the right of Indian people to live in peace and tranquility, and for defending the motherland from the onslaughts of barbaric forces coming from abroad. Coming from the northern kingdom of Ayodhaya, Rama spent a major part of his fourteen years of exile in the forest of Chitrakoota, in Madhya Pradesh. From there, he travelled south through Kishkindha (Karnataka) and Rameshwaram (Tamil Nadu) to put an end to the atrocities of Ravana, the tyrannical king. The plot of Ramayana reveals a pan-Indian outlook amongst the political elite of India, and Rama undertakes an arduous journey to the south to ameliorate the millions of people who are suffering, highlighting the concept of ‘one country, one people.’ Similarly in Mahabharata, Lord Krishna formulated a plan for establishing the rule of law, or Dharmarajya, in the extensive land called Bharatvarsha. This was aimed at emancipating the

Anjali

www.batj.org


India – A Perennial Idea people of the entire country from the clutches of despotic and arrogant rulers, who took delight in discarding ethical values and principles of good governance as enunciated in the Dharmashastra. Mahabharata mentions the participation of the Shakas (Scynthians), Paradas (Parthians), Balhikas (Balkhs), Kambojas (Central Asians) and other clans from all over India, elucidating the expanse of Bharatvarsha and the concept of ‘one country, one people.’ The sage-poet Vedavyasa is said to have incorporated into the compass of this mega epic all details and theoretical speculations of India, so it is also called ‘Bharata Samhita.’ In the Adiparva of Mahabharata, sage Vaishampayana says that what is there in the Mahabharata, may be found in some other books, but what is not in it cannot be found in any other book in India.

धर्मे चार्थे च कामे च मोक्षे च भारतर्षभ। यदिहास्ति नदन्यत्र न तत् क्वचित्।। The battle of Kurukshetra is described as the most destructive war of ancient India and in order to avoid it, Krishna tried his level best to restore human values peacefully. This momentous war was fought between all the kings of then India, who participated on either side. Even though the erstwhile India was divided into numerous states, the people of India were mentally and culturally united with common bond in form of eternal values of life. In order to strengthen this bond, Arjuna travelled throughout the north-east India during his exile. Though the people of India were living in different states from administrative point of view, nevertheless, human and cultural values united them socially, economically, religiously, philosophically and culturally. The thought of India as ‘one land, one people’ dominated the thoughts of intellectual elite right from the Vedic period, and this pan-Indian outlook became stronger during the later ages, when people began to consider entire Bharatvarsha as one country and adore the land as a mother deity. It is not only the ancient texts which confirm the existence of perenniality of the idea of India, but several other sources confirm the same. Since times immemorial, India has been a center of learning, philosophy, wealth and resources. Fascinated by the land, numerous traders, conquerors, nomads, adventurers and hermits travelled thousands of miles to reach India and were welcomed by it. Ptolemy, a Roman citizen of Egypt, in his book Geography of India, says that the true shape of India is the acute angle formed by the meeting of the two coasts of the peninsula in a single coastline running almost straight from the mouth of the Indus to the mouth of the Ganga River. Faxian, a fourth century Chinese traveller wrote

www.batj.org

in his diary that “India is very productive and the people are flourishing and happy beyond compare. When men of other nations come, care is taken of all of them and they are provided with what they require”. Xuanzang (Hsuan-tsang), a famous Chinese Buddhist monk and traveller, describes the shape of India to a half moon with the diameter or broad side to the north and the narrow end to the south. Mark Twain, the American humorist, in 1896, wrote in his diary that: "India is the cradle of the human race, the birthplace of human speech, the mother of history, the grandmother of legend, and the great grandmother of tradition. Our most valuable and most astrictive materials in the history of man are treasured up in India only!" When travellers like I-tsing, Al Beruni, Marco Polo, Ibn Batuta and Thomas Roe travelled to India, they described the land in their memoirs as ‘India’ and not the princely state they landed in. When Alexander, Turks, Arabs, Mongols, Mughals and Europeans attacked India, they came with the intention of plundering the wealth of vast fertile lands that lay beyond banks of river Indus, and not a single princely state. India sat in the middle of silk-route right up till the middle of 17th century, when Europeans invaded and overthrew the Mughals. The spice trade between India and Europe was one of the main reasons behind Europe’s colonization of India. The land route to India was dominated by Arabs who were hostile and the European traders were frequently looted or murdered. Thus, in order to by-pass the Arabs and to find a less time consuming route to India, the Europeans set out to discover the sea-route to India. The search for Indian wealth and prosperity led to the accidental discovery of America in 1492 by Columbus. A few years later, in 1498, Vasco da Gama became the first European to reach India by ship, by circumnavigating the Cape of Good Hope in Africa. Even after thousand years of slavery and subjugation, the customs, culture and value system of people inhabiting the land north of the ocean and south oh Himalayas has not changed, indicating that the idea of India is primordial and not modern. However, over the past few generations the presumption that a single shared sense of India – a unifying idea and concept – has lost its credibility. This has been due partly to the direct challenges made to the Indian nation state by those who find reasons to dispute its authority, and partly it has arisen through the efforts of a new generation of historians who have introduced a host of novel subjects and concerns that attribute nation as a modern phenomenon. But, it must be noted that even though the Indian state might be a product of modernity, India as a concept is not. 

Durga Puja 2020

69


A Tale of Two Cities   - Amit Roy ‘Ladies & Gentlemen, we are about to land and the local time is half past four in the afternoon’- the heavily accented announcement disrupted my slumber and I managed to peep outside to be welcomed by dark clouds and a light drizzle. Exhausted and weary eyed from the long journey, I stepped out of the aircraft to be greeted by an eerie silence all around, a sense of discipline and calmness and an enticing clinical cleanliness. I could feel the fresh air of invitation in the Arrival Hall with those stoic faces trying to be cordial and helpful in muffled voices. For a fleeting moment, I realized that this is not the airport I am used to with its characteristic cacophony and chaos, booming voices and loud laughter and the nonfunctional air conditioning. My reverie broke when I found myself outside the airport, ready to leave, in less than half an hour - unusual by my expectation where I used to consider myself lucky if this could have been done within a couple of hours. As I came out, the cold breeze on my face brought me back to my senses and I realized that I had reached a new destination, my new home and workplace – far away from the dusty, sultry weather I was used to. Sitting inside the almost sound proof limousine bus on my way to the Hotel, I was transported to a different world with all the glittering lights, the bright neon signs enough to make Las Vegas hang its head in defeat, the disciplined traffic and the incredible sights of the Sakura trees along the highway-a stark contrast to what was still fresh in my mind- the honking, the adrenalin rush to beat the traffic light, continuous lane changing, sudden emergence of the Okada (motor bike) from nowhere and the constant fear of being stopped and harassed by the lurking traffic official around the corner. It took me a couple of days to overcome the jolt to my system and orientation as I had to get down to the business end of things. The first task was obviously the house huntingthe most critical element in settling down in a foreign land. I had done some initial homework and thus the task was less arduous- nevertheless what amazed me was the efficiency and clockwork precision- the agent waiting at the right time at the right place, quick tour of the available options, completing innumerable forms and formalities in a week- very unlike the month long house hunting I was used to, checking all the basics including back up power supply, security provisions, water treatment plant, amenities and the rent negotiation. However, there was disappointment in store- the house I moved into seemed to end where it started- not the spacious apartment I had just moved out from with the high ceilings, multiple baths- big enough to complete your daily quota of morning walk, painful enough to attend to someone at the door. And then my first trip to my new place of work- stranded amidst a sea of ‘Men and Women in Black’, all with a serious look, queued up for the next train, patiently letting people disembark and then the gentle shoving to get inside the packed compartment – I was overwhelmed and confused and stepped aside, mesmerized by the discipline in the madness. I was missing the comfort of my 4 Wheel Drive with enough space to stretch out at the end of a busy day, catching a nap in the traffic, knowing that my chauffeur would gently remind me that we have reached home. The next day, I decided to catch

70

an earlier train to work only to find that I had missed it by a couple of seconds- it is then that I realized that the definition of punctuality can be so diverse- I was used to people telling me ‘I am almost there’ which actually could also mean that I ‘have just left home.’ I distinctly remember the first trip to the neighbourhood supermarket in my new city- it was a Herculean task to locate what I was looking for and figure out the names of the product. There were desperate attempts from both sides- the store attendant and yours truly- to understand and empathize with one another- it is then that I complimented myself on my Dumb Charades skills to get hold of some basic toiletries. I was sorely missing my Man Friday chauffeur, my house help- my lifelines who took care of all necessities so long as the shopping list was legible and there was a handsome weekend tip in the offing. This is a tale of 2 megacities- Tokyo and Lagos- sitting on the two ends of a continuum- distinctively different, contrasting infrastructure, facilities and urbanization- the list is endless, but each has its own charm and personality. Tokyo, the epitome of etiquette and discipline, holds a tremendous amount of fascination with the latest technological advancements, a reputation of uniqueness, modern boldness merged with tradition and where everything has a buzz to it though in measured proportions. It is one of the safest cities where you can leave your mobile phone while you go to the counter to collect your coffee, can get lost and move around even past midnight without the fear of being harmed. Lagos, the largest city in Africa, famous for its frantic and fast-paced life, vibrant and colourful despite all the negatives around snatch and grab, extortion, fraud, traffic congestion, lawlessness, security. It is a pot pourri of different cultures, tribes, languages; a city of bizarre contradictions- where 5 star International Hotel chains co-exist with the neighbouring shanties, a city with one of the highest consumption of Champagne in the world and where poverty stares into your face along the roadside. However, there is one thing in common- despite the contrasting physique, cultural and societal norms, people are helpful to the ‘Gaijin’ and ‘Oyinbo’- terms used to describe foreigners; though the balance between Honne and Tatemae are very different – for a Lagosian, there is no distinction between the inner feeling and the façade. Last but not the least, there is a vibrant Indian community in both the cities- the huge Indian diaspora in Lagos, engaged across occupations cutting across all strata, fun loving, outgoing though a shade different from their Tokyo counterparts who are culturally more enriched and a bit more sedate. The two cities have an indomitable spirit and I consider myself lucky to have lived in both- it teaches you how to be adaptable, resilient, street smart and embrace challenges. I have come a full circle- starting with the first stint in Lagos for more than a decade, followed by a 3 year sojourn in Tokyo and now back in my second home since the beginning of this yearallured by the suya and pepe sauce, carrying all the warmth and affection of friends and well-wishers- Sayonara Tokyo. 

Anjali

www.batj.org


One never forgets their first time..   - Jyotsna Bhatti (nee Chandrani) I could scarcely believe my ears when my father said “ok” in a relatively calm voice. Did I hear right? Every year, Maa would visit Kolkata (hopefully her favourite destination) for 10 days - it was the most anticipated annual visit. We would spring clean, get new clothes, build marquees, organise the “Para” pandals, practice our performances run up to her arrival. Beautiful and majestic, Maa was ageless - always so bold and beautiful. Each time an innovative avatar, each Para claiming their reincarnation to be the best. The universe had conspired and the planets had aligned, my boarding school holidays fell during Pujo! Wow...Maa had her mysterious ways to ensure when your time comes, you will see her. My paternal grandparents resided in a lovely building society in Ballygunge and each year, the society had its own Devi and Pujo. This year, I was going to be there too! On the day of Shasthi, all of us, the children, the middle aged, the elderly and the in-betweens, gave an ecstatic welcome to Maa and adoringly adorned her to take the place of pride for the remaining days of the Pujo. Every para or building Pujo has a Dada - the universal leader, the masterful logistics expert & problem solver, the culture zeitgeist. Our building was blessed with one too. He recruited his army of enthusiastic young residents of the building and gave us our tasks. I found myself doing Bhog duties - serving delicious Pujo treats and it is not Pujo Bhog, unless you serve from aluminum buckets. Our Dada was particular about authenticity! Mothers gave up looking for their children or yelling them to come back home - the pull of Maa and the festivities were no match for domestic routine and expectations. Saptami, Ashtami, Navami were a blur of music, aarti, dances, eating, golpo, playing dress up. And of course, the food (and the clear up post that). The haze from the Dhunuchi nach to the beat of the Dhaak was intoxicating and we entered into a trance-like state, as the intensity of the beat and the footwork built to a crescendo.

www.batj.org

Vijaya Dashami saw our mothers and other married ladies dress in their finery and partake in sindoor khela to their hearts’ content, fervent in their silent prayers for a blissful marital life, blessed by Maa. This was not new to me. It was familiar and comforting. What followed next was the new and unexpected experience. The climatic Visarjan! The building Pujo committee would organise for a truck to allow us to accompany Maa to the Hoogly for the royal send off every year. And yes! This was the year my sister and I were allowed to travel as her entourage! Oh! the excitement to climb into a packed open-air truck bed, all singing, with the Dhak playing, the chants wafting from the horizons - I was giddy. The bumpy roads of Kolkata, with its inimitable traffic jams, all making it so atmospheric and memorable. Volley of friendly conversations flew across parallel trucks, as they slowed down at the lights or caused traffic jams in their enthusiasm. Somewhere in the melee of familiar neighbours were my parents, but for the duration of the ride, we were free agents, enjoying the wind in our hair, shrieking at the lurches, giggling inappropriately. Our hearts soared as our truck made its way to the river bank, thanking Maa for casting her magic for those ten days, when neighbours came together, generation gaps melted, families reunited, friends found time and giving your time to the community became a matter of pride. When we bade Maa farewell, our little hearts felt a little sad at the promise of the return of normalcy. As the waves gently lapped and took Maa in their embrace, we plodded back to the truck, rather quietly. And someone very wise from our building society, years ago had created a wonderful custom to overcome this sense of loss - one household would sponsor ice creams for everyone on the truck for the return journey home. And to mark our maiden Visarjan, my parents generously offered the balm of ice creams to soothe our achy hearts. That was the year 1999. Twenty-one years later, I remember the smells, sounds and the sensation of that day with electrifying clarity. Like I said, one never forgets their first time. 

Durga Puja 2020

71


Tokyo Olympics Our Ability to Deal with Uncertainty   - Arnab Gupta Last year, I had the unique privilege of watching over the construction of the brand-new stadium for the 2020 Tokyo Olympics. We were using a rental space, on the 4th floor of a building right across the street, to conduct workshops. With this superb view, we saw the structure transform into its final form.

Then, earlier this year, the world changed. Had the coronavirus pandemic not occurred, we would have just finished celebrating a once-in-a-lifetime experience. Today, many are questioning whether the Tokyo Olympics should take place within the next year. Or, for that matter, ever. --We, in the Agile world, tend to talk about uncertainty in a matter-of-fact way. But the truth is that many unforeseen events are hard to swallow. Especially when they hit close to home. Japan was in a state of hopelessness in the aftermath of the massive earthquake and tsunami that struck its northern Tohoku region in March 2011. The economy had already been stagnant for nearly two decades when the disaster struck. Many felt that the resulting nuclear fallout in Fukushima prefecture made the bid to host the Olympics far-fetched. Then, in September 2013, to everyone's surprise, it was declared that Tokyo would host the 2020 Games. The collective joy that welled up was like much-awaited rain after a long drought. I remember fighting tears when I heard the news. The party had started. It was Japan's turn to shine once again. 72 www.batj.org Anjali


Tokyo Olympics It was so transformative, there was a visible rise in people's optimism in the following years. The Japanese government had been facing backlash in its reconstruction and restructuring efforts after the disasters. The Olympics provided a healthy outlet for the pent-up energy amongst the people. The remainder of the 2010s saw new infrastructure pop up across the city and surrounding areas. The main rail artery of Tokyo, JR’s Yamanote line, opened its first new station in 49 years. As a result of trends like this, the nation’s economy enjoyed a 71-month growth streak until the beginning of this year. --Today we are in the middle of a pandemic that has been shaking global economies and livelihoods. In Japan, the figure for new COVID cases per day continues to rise, even after so many months have passed since the first cases were recorded. With the exceptions of stalwart countries, like Taiwan, the pandemic is far from being controlled globally. As government emergency funds dry out, the economic fallout, which is the topmost concern for most, continues to snowball. So it is fair to say that most people in Japan cannot give a damn about the start date of the Olympics. Of late, many are breaking taboos by speaking up and expressing the growing sentiment that the Tokyo Olympics should be canceled.

You don’t need to stretch your imagination far to understand why. First of all, as of this date there is no end in sight for the pandemic, nor the hope that a vaccine or other remedy could emerge in time. Meanwhile, countries are already late in the process of selecting athletes to send to the Games, while athletes themselves remain unable to practice and keep themselves in top shape. A full-scale Olympics would entail opening up the country’s borders to the rest of the world, in a massive way. Even if COVID-19 were largely stamped out by then, an event at the scale of the Olympics would carry a risk most locals could find unacceptable. The Japanese organizing committee’s chairman announced that he did not desire to have the games held in a shortened or simplified manner. This has added further fuel to the sentiment that the government cares only to satisfy large business interests. Of course, looming atop these arguments is the reality that companies uninsured against calamities like these stands to lose the huge business they were expecting. Finally, the International Olympic Committee has made it clear that there will be no extension beyond next summer. --The more you face the facts, the more you realize the sheer difficulty of holding the Olympics one year from now according to the original plan. You notice just how big of a pipe dream it is. Admitting this is hard, as it feels like turning against the cultural icon that is the Olympics, along with the individual hopes and dreams that come attached to it. After all, the Olympics was the source of a great deal of excitement and energy for Japan, for the past many years. At times like these, we tend to take the cold stance of a rational observer. We leave behind the people who are still excited, while nonchalantly preparing for the realistic scenario. www.batj.org

Durga Puja 2020

73


Tokyo Olympics By doing this, however, we deprive ourselves of the opportunity for imagining the best way to conduct the Olympics, in the new disruptive era we have entered. We continue to pretend that things can be scheduled far into the future, that traditional norms must remain untouched, and that all voices and interests can be satisfied. We continue to pretend that the world is a static place, despite the last many months being the starkest testimony of how that no longer is the case. Now is the time to learn how to be comfortable with uncertainty. Only by being comfortable with uncertainty, can an intractable situation like the 2020 Olympic's future be tackled. What happens in the next few months will depend a lot on how well the key stakeholders display this trait. To better understand what this entails, consider the following questions: Can they focus on direction, instead of the destination? Can they distill the real meaning and value of the Olympics, one that spans individual interests? Can they build a shared vision of how this can be upheld in a way that is most appropriate for the current situation? Can they test ideas and learn quickly from them? Can they test various types of solutions for viability? Can they do so without stirring up a public frenzy? Are they comfortable with the solution being an emergent one? Can they let go of accumulated “baggage” if and when a great solution shows up in front of them? Can they make decisions in speeds that are unthinkable? These are just a handful of considerations that will determine the outcome of the next few months. It will test how agile the stakeholders can be at times in which uncertainty is the “new normal”. —The world-famous Japanese animation film “Akira” chillingly prophesied the current situation: a Tokyo Olympics near cancellation. [VIDEO] The Impact of Akira: The Film that Changed Everything This was in 1988. The film shocked audiences around the world through its visual realism and complex plot lines. It was a reimagination of a medium that traditionally targeted a less mature audience. It kicked off a new genre of sophisticated Japanese anime, which lasts to this day. "Akira" takes place in a futuristic "Neo Tokyo". Since then, the city has held an image that is dark, elusive, yet astonishingly functional and modern - a “city from the future”, if you may. Much in the way that "Neo Tokyo" did, it’s time for the real Tokyo to inspire the rest of the world. This time, by reimagining the 2020 Olympics.


Impermanence   - Twisha Dasgupta When I was twelve years old, I was sitting at a desk in my geography class after I had finished a test, distractedly staring outside the window until my teacher handed me a book on Japan to keep me occupied. I started idly skimming through the pages until I landed on one about cherry blossoms, otherwise known as sakura. As a young girl, I proudly claimed that pink was my favorite color, so seeing the copious amounts of delicate pink flowers on these cherry blossom trees standing

out against the blue sky had me aching to go see them in person. If Japan was a country where I could see these beautiful flowers, I wanted to be there! Just a few years later, I was standing in the international terminal in Frankfurt Airport with my family with several suitcases stuffed to the brim. Moving to Japan was something new and exciting for me, but also bittersweet, as I was leaving some friends behind. However, I still longed to see those cherry blossoms in the springtime and to live the fantasy I had as a daydreaming middle schooler. In just a few months' time, the cherry blossom season had arrived. It was better than the pictures, than my daydreams, than anything I could have imagined. The cherry blossom trees were in full bloom, and I could see rows of them every time I went outside. Soon enough, my phone’s camera roll was filled with pictures of sakura, I was visiting all the parks I could find to view the flowers and having picnics under the trees became an almost daily occurrence for me. However, just in a meager two weeks' time, more and more of the sakura were falling to the ground. Of course, I knew that the cherry blossoms wouldn’t stay forever, but this felt tragically short. What I didn’t expect was how beautiful this change would be. I could probably say that the last few days of the cherry blossom season were surprisingly my favorite. Fallen light pink flowers lined the streets and I could occasionally catch glimpses of the flowers on certain trees. Sometimes a gust of strong wind

www.batj.org

would blow the petals around the streets and through the sky. Eventually, the cherry blossoms were gone and replaced with bright green leaves, starting the cyclical process once again. The feeling I had at the end of the cherry blossom season was much like the one I felt standing in the airport with my family. It was dichotomous; I was excited to create new experiences but sad to leave what I knew behind. I’ve considered myself to be an adaptable person, but it’s human nature to want to hang on to the things we know. To crave a sense of security and stability. What the cherry blossoms taught me was that change can be beautiful. We can appreciate the wonderful things we’ve seen, but if we refuse to embrace change, we can’t fully appreciate what’s to come. While studying a piece of Japanese literature at school, I came across the phrase ‘mono no aware’, which can be loosely translated to ‘an empathy of things’. This phrase embraces the idea of impermanence. Nothing lasts forever and everything is transient, but this is something we can both be saddened by and appreciative of. It explains that bittersweet feeling that we get when we move on to a new phase in our lives. While the cherry blossom season seemed entirely too short, it taught me to embrace the idea of impermanence. I might not see cherry blossoms again for a while, but I can scroll through the multitude of pictures I have in my phone or simply reflect on the elation I felt sitting on a crinkly plastic mat under the trees with my family and eating convenience store food. Our time in Tokyo was perhaps entirely too short, but that’s precisely what made it so magical. I’ll never forget the feelings I got when I first came here; bumping into things because I was too busy craning my head up to see the large skyscrapers, looking with wonder at the beautiful shrines I came across on the streets and eating the most incredible food. Most importantly, I’ll never forget the friends we’ve made here. When one moves around a lot, it can be difficult to find communities to fit into. However, in the BATJ community, we have met some of the most welcoming, kind and friendly people and have felt such warmth and love. We’ve had so many conversations with like-minded people and made some lifelong friends. I would say the phrase ‘mono no aware’ does a good job of expressing how we are feeling. It’s bittersweet to leave behind the community and the people we’ve met here, but we will always treasure the memories that we’ve made and the experiences that we’ve had. While we knew our time in Tokyo was not going to last forever, in some ways, it does feel like it’s ended too soon. But Japan has taught us to embrace the beauty of impermanence, and we will forever remember the incredible times that we’ve had here. 

Durga Puja 2020

75


The Trunks   - Piali Bose

T

here trunks lay side by side under the four-poster bed in the ancestral home. One belonged to the mother in law, one belonged to my hostel days and one gifted by my mother during my marriage—their colour fading in increasing order of age. Their contents almost forgotten, the urge to look into them once in a while was short lived thinking of the dust and mites that might follow suit. So, they lay there as testimony to decades of nostalgia filled memories. The visits to the home became far and infrequent but the lingering urge to open the trunks kept niggling somewhere in the back of the mind. It was as if something beckoned, something unfinished or some deep longing to look back onto the past without really wanting to. So, one day the task was taken upon and the journey back to the old home was solely made to bring back at least one of them to our new house. The intention was more with the aim of mottainai, upcycling old things into my new home and bring in a corner of nostalgia in the décor. The oldest of the three, belonging to my mother in law had rusted all over it and strangely was devoid of any contents (when did we empty it all or was it emptied by her long back?). Without wanting to delve onto the reasons and the rest, I wanted to get over with the entire cleaning and salvaging ritual-fast, real fast when suddenly something in the blackness of the box touched my hand. A tattered diary with its yellowing pages lay there, sad and forgotten inside its emptiness. Curiosity won over my initial hesitation of reading someone’s diary whom I had never known in her physical self and her existence in my life was through photographs and reminiscence. She had passed away when she was still young. She was mentioned as a wife, mother and a widow who did her best with three children in a joint family until death snatched her away too soon. The diary was hers. It had no name to claim her ownership but for the handwriting. The ink had faded but the words were legible. Initial pages were filled with Tagore songs (she was a gifted singer, I had heard) and then there were grocery lists, lists of valuables, reminders to herself, a feeble attempt at penning a daily dairy and finally some post cards and inland letters folded in between the pages. Letters to her husband, living in a faraway town. The inland letter had its space divided between her and the children. In most of them, she updates about all the children and elders in the joint household, the neighbourhood news, the political situation of the 70s, and her daily unsung ritualistic life. In that one single blue page, I saw her universe unfolding in crisp short sentences. The other two pages were reserved for the children to update their father about their activities, almost an extension of what she had already written and somewhere it was understood to be a directive for a discipline. Amidst all this, that one sentence seemed to float in her writings tumi kobe ashbe? Ekhane pujor akash. When are you coming home? The autumn sky is ready to welcome the Pujas! That one sentence of longing was intimate enough to convey her eagerness, her longing, her emptiness and her love for her husband. The economy of words, the economy of emotions ability to have her own despite restrictions, the perseverance -all reflected Gaman (enduring the unbearable with patience and dignity) in that one blue page. They were seemingly ordinary and mundane but they spoke volumes about 76

the time and the people, who had the ability to take the family, the neighbourhood and the society with them. I redefined the idea of Ma in my life in the Japanese context- she is the emptiness that fills spaces whereas she is also the embodiment of omnipresence. The second oldest trunk had its lock broken (a talismanic reminder to my university hostel days) when I had lost my keys and had it broken to access the contents. The trunk filled with my study notes (frayed but neatly organized) letters from home (father in his imitable tongue and cheek humour whilst from mother, epistles of her empty nest akin to the loss of a friend and letters of ambition from the elder brother. More letters from the new love, heart breaks, promises poetry and songs and of greeting cards, new friendships and so on. It was like a box of personalities unfolding before me. It was rediscovering those persons including myself lost in those pages of handwritten notes. The reflected self seemed to be whispering, jake rakho, sei rakhe (what you house, houses you). Locked inside the trunk, but you carry the essence of Nemawashi within. The knowledge gathered, the relationship forged, the lesson learnt, the love retained and the experience gathered, life goes on. The third and the youngest trunk, a memento of my marriage when ma had filled with brass utensils and other knick knacks she thought would come handy. Out popped a fan shaped handmade Totwo-suchi (a list of the gift articles given during a Bengali wedding) reflecting a day 23 years back and when the wedding entourage visited with each a tray in hand full of gifts and savouries. The trunk still shiny and proud of its youth seemed to be humming that same shehnai tunes or the baul songs that filled the air with the frenzied activity during a wedding. The loud laughter, the tingling sounds of bangles, the whish wash of the sarees overpowering the sniffles of the bride to be and the mother at times. How the anticipation of a new joy sounds like oubaitori (the idea that people like flowers bloom in their own time), that which is more than balances the doubts of a new life. It brought about a smile and the grey hair that fell onto my countenance, startled me back from my reverie. A decision was made; the youngest of the lot would be filled with the nostalgia from the other two and carried back to the new home, coated and polished to give a makeover and stand in the corner as testimony of time. I thought I had established the perfect wabi sabi statement piece, it looked perfect, but soon it started resembling the fate of the ones we left behind. This time, right before my eyes, decorated to be forgotten in a corner until THE PANDEMIC hit us. Mono no aware, means the beauty that comes from sensitivity, awareness and impermanence of things. Ichio ichi e means taking each moment as it comes, relish them, slow down.

Shibui means, the muted coolness of simplicity of minimalism Post script: Any upheaval in the rhythm of life has multifarious consequences. The pandemic that hit the world has led to

Anjali

www.batj.org


unprecedented lifestyle changes not to mention reigniting the spiritual questions in mankind-the transience of life, the importance of the present, the fragility of the future, the futility of materialism and embracing the truth of fear and death. In these questions, deprived of material comforts, there has been a shift towards internalizing things. Taking it slow, creating joy with minimalistic ideas, gratitude for food, having the family together

and most importantly appreciation of what we have. I saw this as nature’s way of bringing us together and joining the fragmented world that we had become. The trunk had finally reached home.

Still Alive   - Udita Ghosh

If I lose my anger Declare me dead to the world. Know that I am no more, If I can walk through this jagged world, Full of mounds of pain piled high Confronting ravines of cold entitlement, Sharp thrilling flights of joy, And rain-drenched regret and shame, Without feeling each story Like blood on my tongue Holding each tale in my chest Like grainy smoke I inhaled; Sparing a sensation in my mind In wonder at this disparate world, And remembering tearfully With agonizing awareness That we can be better— That we need not live So inextricably entwined In vicious collective butchery. www.batj.org

Durga Puja 2020

77


Tribute to Sushant Singh Rajput   - Arjyama Choudhury Unable to get you out of my mind You are not the first one to go this way But this time the pain did not subside Neither were I your fan Nor were you my inspiration Why am I then feeling this now Isn't this a strange connection? Probably because your going away like this Has revealed the YOU I was ignorant of I now realized that a soul of your calibre Only HE could take care of! I have never thought of you But now you are always on my mind The mind has been stabbed so deep Very rare of its kind! The innocence in your eyes The soul so witty and wise I am wondering day and night Why did you make that choice? For my friends out here Nothing is bigger than life The pain and miseries are short lived As long as you survive! Never ever give up on living Its too precious to lose It doesn't let you walk again Even if they find back your shoes!

78

Anjali

www.batj.org


Reminiscence – The awakening of spirits   -

Soumitra Talukder

There comes a time, When the horizons are the fathoms of being free! The deliverance of soul in what you want to be, While you try to nurture the whimsies of your spirits, The sweat of success in the measure of triumph, The zest of grit in thee. There comes a time, When you can smile on the recall of a rustic era, And be proud of the heritage you bear to nurture life, When a few faces look to you in benevolence, For the pursue of the esse in virtue. You look back to your roots in memoirs of a reverie, And realize if at all there were ever any extent, For the motives of your smile... It may not be hard to believe, That the Camelot you cherish and deserve, Lies in the realm of your wishes. Fall autumn as the aroma of fallen jasmine, Creates the onset of festive in the stupor of a time, The crimson sky gleams again in the seasons of reminiscence. A light in message rise from the land of melange in unity, And flies beyond the seas to the Avalon of the rising sun, As the celebration of peace warms the hearts in abundance, The unison of hearts far & near glows in marvels of deference.

www.batj.org

Durga Puja 2020

79


The Broken Clock   - Somik Ghosh When the CLOCK lost all its hand to TIME, it stopped! It lost its pride after years of running a marathon Now it’s his time to hang his boots….. And now Time shall go un-noticed! They say the wrecker-in-chief is a tiny virus What a havoc has it created, Oh! Jesus! When days reduced to mere numbers Seasonal changes were noticed Just on your window pane While holding the online shopping cart You not brave enough to go to real mart No Cherry blossoms, no summer BBQ, no fall colors Since going out of home is an act of valor. You stay cocooned in your own world Amongst your closest family perhaps, Devoid of other worldly disturbances. When you lead your life online, And you keep consoling your mind Thinking “One day everything will be fine” When going out of your home becomes an adventure Proving the old proverb wrong That “Humans are social creatures” TIME my friend you have lost your luster Putting all our plans on HOLD. “TIME and Tide waits for none” But I see you have stopped With the broken CLOCK Waiting endlessly for the world to recover Wondering if this place will be the same ever!? We are now living a timeless age Not quite sure about coming days Festivals, socializing, traveling Have become virtual and lost its craze Sure my TIME has stopped for ever it seems And my mind can travel only backwards in my dreams Now please spare me from your “TIME” shock Rest in peace my BROKEN CLOCK. 80

Anjali

www.batj.org


マントラ オームの歌 - 佐藤 洋子 時も知らない 無始のころより 続いてる響き 神聖なオーム 秘められた力 浄らかな波動 遠い遠い源を 思い続ける

ヒマラヤの 高嶺より来る音 永遠から 溢れ出でたる それは流れている いつも 人の 中にこそ オーム オーム オーム オーム オーム 真理の 顕れ その形 光 輝き満ちるそのもの それを 今繰り返す

最初は乾いた 気持ちで 唱えても 最後は溢れ出るだろう 歓喜の涙 弱さも不安も 恐れも何もかも 全て消えはて 真の私になる

オーム 蘇生させることば 霊感 与える引きがね 苦しみに 迷い悶えてるとき 心に オーム オームを

オーム オーム オーム オーム オーム それが わたし

オーム オーム オーム オーム オーム わたしは それと一つ 全ては それと一つ

www.batj.org

Durga Puja 2020

81


タゴールと渋沢栄一 - 佐々木 理香

97年前の1923年(大正12)9月1日正午前、関東大震災により、東京を中心に隣接する 関東の広い範囲に甚大な被害がもたらされた。その翌年1924年(大正13)6/7〜 インドの詩聖でアジア初のノーベル文学賞受賞者のラビンドラナート・タゴール は、まだ震災の傷跡が残る日本・東京を訪れた。タゴールを歓迎したのは「日本資 本主義の父」であり「新1万円札の顔」となる実業家の渋沢栄一だった。栄一の了 解を得た日印協会は三井・正金・郵船・三菱の四大会社から寄附金を募り歓迎有志 会を結成した。6/11日本工業倶楽部で歓迎会が開かれ、タゴールは"International Relations(国際関係)"について講演した。その中で前年の関東大震災に触れ「日本 人が復興に努力して止まぬのは頼もしい。自然災害は防ぐことは出来ないが、人為 の被害は自然災害より良くない。日本人は内心憤慨していると想像するが、外見は 至って静穏で堂々として自制心を持っているのは実に頼もしい。国際関係も、お互 いに相制して一国のみが我がままを出来ぬようにしておけば、平和は進み、精神的 文化も開けて参るでしょう」という趣旨のメッセージを送った。1924年当時の国際 情勢は、旧ソ連ではスターリンが権力の座に就き、イタリアではファシストが過半 数を握り、米国では移民法の設立で排日運動が本格化していた。 翌日6/12栄一の飛鳥山邸での茶話会には大隈重信・団琢磨など約40名の政・財界 人が集まった。そこでタゴールは自身の「教育の理念」について講演した。6/13 は歌舞伎見物にも招待された。栄一は本歓迎会の残金に追加で自らも寄付し、日 印協会を通じてタゴールの経営する大学(Visva-Bharati)に寄贈した。「論語と算 盤」 つまり道徳と経済は合致すべきと提唱する栄一にとって、タゴールとの出会 いは 印象的で、その後1929年に再会した際も互いに敬意を表し、交流を深めたと いう。 

82

Anjali

www.batj.org


私と「自国」の文化 - アナンニミシャ インドで生まれ、日本で育ち、インターナショナル学校に通った私は、常に「自国」という言葉 に葛藤を抱いていました。母国語のタミル語以上に日本語や英語が話せたり、キリスト教の学校に 通い、無信心の友達を持ち、ヒンドゥー教の家族を持っていたりと、日本でもインドでも居場所が ないように感じてしまい、「自国の文化」は今でも名付けづらいです。 しかし、長い間弱点だと思っていた「自国」に対する曖昧さは、自分の強みでもあると思うよう になりました。「自国」であるインドとは違う環境で育ったため、異なる文化と自分の文化の重な りに気づき、こういう根本的なところは似ているんだ!と、新しい視点で多文化を理解することが できました。類似点に気づくのはもちろん、それ以上に大事なのは、自国の文化と異なる価値観を 持つ人と出会っても、違いを尊重し、認めることだと気づけました。「やっぱりインド料理が一番 落ち着く」が口癖の父と異なる食文化から、無信心である友達と異なる死生観まで、みんな別々の 価値観を持ち、どっちも間違っていないんだな、と少しずつ思えるようになってきました。 また、当たり前のようで、当たり前ではない、インドに戻ると見れる、道路で売られてる甘~い マンゴーや、風通りの良い三輪タクシーの良さや、日本に帰ってきた後の、24時間営業のコンビニ や、天ぷらそばの価値を、人一倍に感じられる事もありがたく思っています(笑)。 たまに葛藤と感じる私のアイデンティティでも、おかげで常に自分の価値観が揺さぶられ、自国 の文化」を当たり前に受け入れるのではなく、自分は何を大切にしたいのか、を何回も考えて、考 え直せるようになれたと思います。与えられた感性を強みとして活かし、より多文化や多様性を尊 重し、育むような人になれたらな、と思ってます!  “Culture means giving up one’s bad conduct, bad behaviors, bad deeds and cultivating good thinking, fostering good sentiments that lead to good actions.” - Sathya Sai Baba (文化とは自分の悪い行動、悪い振る舞い、悪い行いを捨て、良い行いに繋がる良い思考を育み、 良い気持ちを大事にすることです。)

www.batj.org

Durga Puja 2020

83


Yoga Common Protocol/CYP〜ヨーガ共通手順〜 - Chiaki Hanari 1. ヨーガの共通手順(CYP)とは何か? 2014 年からインド政府主導になり、ヨーガの基準化、標準化の動きが 始まる。AYUSH省国立ヨーガ研究所がインド国内のヨーガのエキスパートを 集めて作ったのが「ヨーガの共通手順(Comon Yoga Protocol /以下CYP) 」。CYPは、最初2015年から始まった、国際ヨーガの日(International Yoga Day)に合わせて、大衆向けのヨーガ普及活動に「ヨーガの共通手順」「ビデ オクリップ」が作られた。 国立ヨーガ研究所のビジョンは、人々へ古典的なヨーガに基づいた、ヨ ーガ哲学と実践のより深い理解を促進。全ての人々の健康、調和、幸福。 インドでは、学校教育機関でのCYPの普及活動、各種教育機関や教員 向けのCYPの1日講座、自衛隊、警察官への普及活動、オンラインでの普 及活動なども行われている。広く一般の方が実践できるヨーガとして国際ヨ ーガの日だけでなく、徐々に知られて、実習されるようになってきている。

2. ヨーガ共通手順(CYP)の実習構成 パタンジャリのアシュターンガ・ヨーガ(八階梯のヨーガ)とハタ・ヨーガの 技法が基となっている。 1 祈り 2 チャーラナ・クリヤ(関節の緊張を緩める運動) 3 アーサナ(姿勢)立位、座位、腹臥位、仰臥位 4 カパーラバッティ(呼吸を使った浄化法/クリヤーの一種) 5 プラーナーヤーマ(呼吸法) ナーディ・ショーダナ/アヌローマ・ヴィローマ、シータリープラーナヤーマ、 ラーマリー・プラーナーヤーマ 6 ディヤーナ(瞑想)ダーラナー→ディヤーナ→サマーディ 7 サンカルパ(決意) 8シャンティ・パーダ(平和の祈り) 加えて・適度な食生活(ユクタ・アハーラ)・適切な活動(ユクタ・カルマ)/ヤマ、ニヤマ・マントラの読経など 『International Day of Yoga 2019 | Common Yoga Protocol | ENGLISH | FULL HD』 https://youtu.be/K-GJh9GeOxE 『CYP/Textbook』 http://nidan.co.in/files/CYPEnglishLeaflet.pdf 3. Covid-19によりステイ・ホームでヨーガ推進 今年の国際ヨーガの日(2020年6月21日)はオンライン化され、毎日モーラルジ・デーサイ・国立ヨーガ研究所よりオンラインデモ ンストレーションが行われている。 “健康のためのヨーガ〜家でヨーガ”を推進。 https://www.facebook.com/watch/live/?v=715072612647800&ref=watch_permalink ヨーガは今、全世界で一般的な存在になっています。年々、健康への意識は高まっているが、今年のCovid-19により、より自己 免疫を高めること、健康を維持/向上させること、ライフスタイルの変化、意識の変容についての関心は確実に増していると言える。ヨ ーガはホリスティックなアプローチで健康、調和、幸福に貢献できるでしょう。さあ、みんなでヨーガをしましょう! Chiaki Hanari(東京ヨーガセンター/QCIレベル1資格保持)

1 What is the Yoga Common Protocol (CYP)?

Since 2014, the government of India has taken the initiative to start the standardization and standardization of yoga. The National Yoga Institute of AYUSH gathered the yoga experts in India to create the “Common Yoga Protocol (Common Yoga Protocol/CYP)”. CYP has created "Yoga Common Procedures" and "Video Clips" to promote yoga for the masses in line with International Yoga Day, which started in 2015. 84

Anjali

www.batj.org


Yoga Common Protocol/CYP〜ヨーガ共通手順〜 The National Yoga Institute Vision promotes a deeper understanding of yoga philosophy and practice based on the classic yoga, health, harmony and happiness for all.In India, CYP dissemination activities at school educational institutions, one-day CYP courses for various educational institutions and teachers, self-defense forces, dissemination activities to police officers, and online dissemination activities are also conducted. As a yoga that can be practiced widely by the general public, it is gradually becoming known and practiced not only on International Yoga Day. 2 CYP training configuration

It is based on the techniques of Ashtanga Yoga in Patanjali and Yoga in Hatha Yoga. 1 Prayer 2 Chalana Kriyas (movement to loosen joint tension) 3 Asana (posture) standing, sitting, prone, supine 4 Kapalabhati (cleansing method using breath/a type of clear) 5 Pranayama (breathing method) Nadhi Shodhana/Anuloma Viloma, Sitali Pranayama , Bhramary Pranayama 6 Dhyana (meditation) Dhyana → Dharana → Samadhi 7 Sankalpa (Determination) 8 Shanti Pada (Prayer of Peace)

「In addition」・Moderate eating habits (Yuktahara) ・Appropriate activities (Yuktakarma)/Yama, Niyama・Mantra reading

etc.

●『International Day of Yoga 2019 | Common Yoga Protocol | ENGLISH | FULL HD』 https://youtu.be/K-GJh9GeOxE ●『CYP/Textbook』 http://nidan.co.in/files/CYPEnglishLeaflet.pdf 3 Promote Yoga at Stay Home by Covid-19

This year's International Yoga Day (June 21, 20202) is online, with daily online demonstrations from the National Institute of Yoga at Morarji Desai National Institute of Yoga (MDNIY) . Promoting "yoga for health ~ yoga at home". 『https://www.facebook.com/watch/live/?v=715072612647800&ref=watch_permalink』 Yoga is now a global presence. Although awareness of health is increasing year by year, this year's Covid-19 will surely increase interest in increasing autoimmunity, maintaining/improving health, changing lifestyles, and changing consciousness. Yoga can contribute to health, harmony and happiness with a holistic approach. Let's do yoga together!  Chiaki Hanari (Tokyo Yoga Center/QCI Level 1 qualification holder) https://tokyo-yogacenter.com

www.batj.org

Durga Puja 2020

85


距離 - ロイ れい子 「ずいぶん遠いんですね。」 中田さんが言いました。その声と顔の表情からその距離はとても越えられない感じがはっきりしました。まる でその距離は遠すぎて信じがたい、そして、あまり信用できないと言うかのようです。ダスさんが、何のことで すか、と聞き終わらないうちに、ダスさんが一番聞きたくなかったことが中田さんの口から出てしまいました。 「ね、遠―いんですよね、お国は。」 これで何回目だろうこの質問は、とダスさんは自分がいらいらするのを感じました。いや、質問でもない、す でに信じていることが口から出ただけだろう。でもその気持ちを見せないように、顔に微笑みと声に甘みを交 えて「まあ、それほどでも。」とダスさんは丁寧に答え始めました。しかし中田さんにはそれを聞く気がありませ ん。ダスさんの説明の途中で全然違う話題に移りました。 帰りがてらダスさんは考え込んでしまいました。こちらに来てからいろんなところでたくさんの人に自分の国 のことを大変遠いといつも言われてきました。最初はおもしろ半分で聞き流していたものの、最近ではなぜか いらついてしまうのでした。なぜなんだろう。物理的に距離が遠い国であっても近くに感じたり、一方であまり 距離の遠くない国でもすごく遠くに感じたりするのは、精神的な理由があるんじゃないだろうか。文化的に親 しく感じているか、あるいは親しくなりたいと思う国のことは近くに感じる。その反対だと遠くに感じる。ふん、 知りたくない人は一生知らなくて結構だ。なのにそれでも聞くんだ。それが嫌になる。まあ、そんなの気にし ないことだ。気にしなくてもいいことなんだから。ダスさんは自分自身を慰めていました。前はこんなにいやで はなく、いつも丁寧に教えようとしていました。説明を聞いてくれた人は何人いたのでしょう。ほとんどの人は 自分の思い込んでいることを言葉にしただけなのでしょう。悪気なんてさらさらないのです。 それが分かっているのに、なぜこのごろ〈遠い〉と〈自分の国〉、この二つの言葉が一緒になるとここまでに 気になってしまうのでしょう。あの国はここからそう遠くはない、と国を出る前に父が言っていました。そのとき 初めて自分の国を出ようとしていたダスさんは、ああ、遠くまで行くんだな、と不安に思っていました。父には おそらくその気持ちが伝わっていて、息子に勇気を与えようとしたのかもしれません。そう遠くないから毎年 帰って来られるんでしょう?と弟が期待しながら加えました。小さいころから母親のいなかった兄弟二人はと ても仲よしでした。ダスさんはとても弟思いでした。弟はその兄と離ればなれになるのが当然寂しかったので しょう。ダスさんはさびしくなって最初の年は二回も帰省しました。それから何年かはちゃんと毎年一度は国 に帰っていました。そのうち弟は仕事の都合で家だけでなく、町を離れました。ダスさんも新しい国にだんだ ん慣れてきて、仕事も忙しくなり、年に一回から二年に一回、三年に一回というふうにして帰省する頻度は減 っていきました。父は元気で、頭もしっかりしていて、子どもに迷惑をかけまいと弱み一つ言いませんでした。 その父が急に亡くなって以来、ダスさんはなんだか帰る気もしませんでした。友人たちはみんな町を出て国 中におり、親しい親戚ももう町にはあまり残っていませんでした。ダスさんは国に帰りたいという思いをすっか り失ってしまい、最近では何年も帰っていませんでした。やっぱり遠いんだ、あの国は。すごく遠い。急に胸 の中で何かが苦しくなり、息がしにくくなりました。今までいらいらしていた理由が分かるような気がしてきまし た。ダスさんから祖国がだんだんと遠ざかっていきました。 

86

Anjali

www.batj.org


नवरात्र : एक स - राजेश्वर वश हम डगमगा रहे थे तूफान में घिरे जहाज़ की तरह न किनारा था और न सूरज की कोई किरण बस गहन अंधकार था मानो अंजनी-सुत ने लील लिया हो हमारा सूर्य माँ, तुम स्वप्न की तरह आई हमारी नींद में पूरी मानवता को भय-मुक्त करने कितना भव्य था तुम्हारा आगमन नौ रात्रियों में जनजीवन को पल्लवित, पुष्पित और अवलोकित करता हुआ! शैलपुत्री प्रथम रात्रि में तुम दर्शन देती हो, माँ हेमावती, शैलपुत्री, भवानी और पार्वती के दिव्य रूप में बैल पर आरूढ़, एक हाथ में त्रिशूल और दूसरे हाथ में कमल-पुष्प लिए हुए विराजमान हो हिमालय पर्वत की हिमाच्छादित चोटी पर तुम देती हो अभयदान समूचे विश्व को तुम्हारी शक्ति से स्फूर्त हैं, ब्रह्मा, विष्णु और महेश तुम्हारे चरणों में किसी बालक की तरह बैठे हैं हम! ब्रह्मचारिणी पूजा के दूसरे दिन तुम हो साक्षात ब्रह्मचारिणी के रूप में तुम्हारे तेज से दैदीप्यमान है पूरा ब्रह्मांड तुम हमारी आत्मा को दीप्त कर देती हो अपूर्व शक्तियों से तुम्हारा प्रसाद हैं खुशियाँ, शांति, समृद्धि और सौहार्द जिसे तुम भर देती हो हमारी झोली में तुम्हारी साधना हम पापियों के लिए भी खोल सकती है मोक्ष का द्वार तुम्हारे द्वार पर याचक की तरह खड़े हैं हम! चंद्रघंटा आज तीसरे दिन तुम चंद्रघंटा के रूप में हो माँ तुम्हारे माथे पर झूल रहा है अर्ध चंद्र किसी मंदिर के घंटे की तरह स्वर्ण जैसा दमक रहा है तुम्हारा शरीर और मुख मंडल तेजोमय हैं तुम्हारे तीन नेत्र दसों हाथों में सज्जित हैं अमोघ शस्त्र तुम सिंह वाहिनी धरती से समूल नाश करती हो राक्षसों का अपनी अदम्य शक्ति और पराक्रम के बल पर तुमसे हम जीवन में माँगते हैं शांति, सहअस्तित्व और समृद्धि तुम्हारे इस अद्भुत रूप को देख कर हम सम्मोहित हैं माँ! कु ष्मांडा हे समस्त ब्रह्मांड की सृष्टिकर्ता माँ कु ष्मांडा, आज पूजा के चौथे दिन हम तुम्हारा पारायण करते हैं www.batj.org

तुमने ही सूर्य की रचना कर अंधकार का नाश किया धरती को प्रकाश और ऊष्मा दी जिससे हुआ समस्त प्राणियों का उद्भव सिंह वाहिनी तुम्हारे हाथों में शस्त्रों के साथ टिमटिमाता तारामंडल और पुष्प भी हैं तुम्हारे इस जननी रूप को देख कर हम अभिभूत हैं माँ! स्कं दमाता पाँचवें दिन हम आल्हादित हैं तुम्हारे आगमन से हे, स्कं दमाता तुम्हारी गोद में हैं शिशु कार्तिके य जिन्हें दानवों के साथ युद्ध में देवताओं द्वारा बनाया गया था सेनापति माँ, तुम त्रिनेत्रा हो, गौरवर्णा हो तुम्हारे दो हाथों में सज्जित हैं कमल पुष्प और दो हाथों से पुत्र को संभाले तुम विराजमान हो सिंह पर तुम्हारे इस अलौकिक रूप को देखकर हम प्रफु ल्लित हैं माँ! कात्यायनी ढाक, घडियाल और घंटे बज उठे हैं माँ पूजा के इस छठे दिवस के आगमन पर संत तपस्वी कत के घर जन्म लेती हैं माँ दुर्गा एक नए अवतार में कात्यायनी बन करतुम कन्याओं को देती हो सफल वैवाहिक जीवन वे जाप करती हैं तुम्हारे इस सिद्ध मंत्र का कात्यायनि महामाये महायोगिन्यधीश्वरि । नन्द गोपसुतं देविपतिं मे कु रु ते नमः ॥ तुम्हारे इस दात्री रूप को देखकर हम हुलस गए हैं माँ! कालरात्रि सातवाँ दिन, तुम्हारे इस नारी रूप को देखकर भयाच्छादित होती है सारी सृष्टि खुले लहराते के श, श्यामवर्ण, आँखों से धधकती ज्वाला, त्रिनेत्रा, शिव की तांडवी मुद्रा में, खड्ग उठाए दुष्ट संहारक रूप लिए , गधे को स्वीकारती वाहन रूप में तुम आती हो हमारे शुभ की रक्षा के लिए, कल्याण के लिए अभय का हाथ उठाए --- मां शुभंकरी तुम्हारे इस कालरात्रि रूप को देखकर हम रोमांचित गए हैं माँ! महागौरी अष्टमी है, और तुम्हारा आगमन हुआ है महा-गौरी तुम्हारी कृ पा से नष्ट होते हैं भूत, वर्तमान और भविष्य के पाप आराधक हो जाते हैं गंगा जल से पवित्र शिव को वर रूप में पाने की ज़िद के कारण हिमालय में तपस्या का ताप बना देता है तुम्हें श्याम-वर्णा स्वयं शिव कराते हैं तुम्हें गंगा जल से स्नान और तुम बन जाती हो कन्या रूप महा गौरी Durga Puja 2020

87


नवरात्र : एक स अप्रतिम सौंदर्य की प्रतिमूर्ति तुम धारण करती हो श्वेत वस्त्र तुम्हारे चार हाथों में सुशोभित हैं, त्रिशूल, डमरू, अभय तथा वरदान की आश्वस्ति बैल पर सवार माते, तुम हमें देती हो धन, सम्पत्ति और श्री वृद्धि तुम्हारे इस महागौरी रूप को देखकर हम आत्म-मुग्ध हो गए हैं माँ! सिद्धिदात्री सिद्धिदायिनी माँ दुर्गे, नवरात्र के नवम दिन तुम्हारी पूजा- अर्चना करते हैं – सिद्ध, गंधर्व, यक्ष, असुर और देव अपने हर कार्य में सफलता पाने के लिए तुम्हारे पास असाधारण शक्ति है पुनर्नवा बना देने की सिंह वाहिनी इस सौम्य रूप में तुम हम सबकी स्नेहमयी माँ हो शिव ने स्वयं की थी तुम्हारी पूजा समस्त सिद्धियों के निहितार्थ तुम्हारे ही वरदान से शिव बने थे अर्धनारीश्वर और उनके वामाँग से उत्पन्न हुई थी देवी शक्ति, तुम्हारा ही एक प्रतिरूप तुम्हारे इस सिद्धिदात्री रूप को देखकर हम कृ त- कृ त्य हो गए हैं माँ! क्षमा प्रार्थना माँ तुम मुझ तक आती हो कितने ही रूपों में कभी खेलती हो छोटी बालिका की तरह, आँसू पौंछती हो स्नेहशील माँ की तरह नाराज़ होती मित्र-प्रेयसी की तरह मर्दन करती हो मुझ में निहित किसी महिषासुर का अभिमान और मैं सद्गति पाकर बार बार बैठ जाता हूँ तुम्हारे चरणों में किसी आराधक की तरह बच्चों के अपराध क्षमा करती रहना माँ! माँ, फिर आना अगले नवरात्र में मन की शुद्धि के लिए, थोड़ा विवेक देने के लिए विश्व के कल्याण के लिए!

88

शाम्भवी शाम्भवी पुलकित है मन और तन तुम्हारे श्री चरणों में मानों ठहर गयी हो कोई रजत वसना झील मलयानिल के झोंकों से अभिभूत और निश्शब्द। तुम्हारा आगमन सृष्टि के सृजन और विध्वंस के नियमन में कितने ही नामों और रूपों के साथ हुआ है सहस्र बार। गुंजरित हो रहे हैं शिवपुराण के श्लोक तुम जन्म लेती हो काशीपुरी में शिव के वामांग से भास्वित होता है हज़ार सूर्यों का तेज। स्वर्ग से निष्कासित देव करते हैं प्रार्थना महिषासुर से त्राण पाने की। देवि! दसों हाथों में लेकर शस्त्रास्त्र तुम अपने त्रिशूल से वध करती हो महिषासुर का। पृथ्वी के जीव पाते हैं जीवन की नई संभावनाएं विष्णु और ब्रह्मा की तरह ही तुम पालन करती हो सबका संतान की तरह। न जाने कितने युग बीते हम करते हैं प्रतीक्षा तुम्हारे आगमन की हर वर्ष कितने ही महिषासुर जन्मते हैं हमारे मनों में हमारे समाज में उनके निस्तारण के लिए हर वर्ष उत्सव की गरिमा में करते हैं तुम्हारी भक्ति। माँ, देखता हूँ तुम्हारा स्वरूप तो बरबस बरस पड़ते हैं नयन तुम आती हो कभी शारदा बन कर महामाया बन कर, शाम्भवी बन कर तो कभी कात्यायिनी बन कर कविताएँ लेती हैं जन्म तुम्हारी स्मित मुस्कान से तुम्हारा आगमन शांति और सुरक्षा के साथ कलाओं की श्रीवृद्धि हेतु भी निहित है। नमस्तस्यै, नमस्तस्यै, नमस्तस्यै नमो नमः।

Anjali

www.batj.org


सबसे खतरनाक होता है, हमारे सपनो का मर जाना - मनमोहन सिंह साहनी अवतार सिंह पाश पंजाबी के एक क्रांतिकारी कवि थे I उनका जन्म १९५० में पंजाब के एक गांव तलबंडी सलेम जिला जालंधर मे हुआ वो एक जाट घराने मे पैदा हुऐ पर उनका दिल हमेशां से कामगारों, मजदूरों और समाज के शोषित वर्ग के लिए धडकता रहता था I उन्होने अपनी छोटी सी जिंदगी मे पुलिस, जमींदारों, और आतंकवादीयो के जुल्म के बिरुद्ध पंजाबी मे कई कवितायें लिखी जो के वल पंजाब मे ही नहीं देश के अन्य राज्यों मे प्रसिद्ध हुई I जो स्थान क्रांतिकारियों में भगत सिंह का है वही स्थान कवियों में पाश का है I उन्होने जो क्रांति की मशाल को जलाया आज भी लोग उनको याद करते है और उनकी कविताओं से प्रेरणा लेकर संघर्ष करते है I उनका पहला काव्य संग्रह १८ साल की आयु मे प्रकाशित हुआ लौहकथा जिसमे उन्होने जमींदारों की लूट के बारे मे लिखा उसके आलावा उड़ते बाजों के मगर, हमारे समय में, हम लड़ेंगे साथी, बिखरे हुये पन्ने भी प्रकाशित हुईI हम लड़ेंगे साथी में उन्होंने मजदूरों को अपने हक के लिए लड़ने को कहा और ये बताया बिना लड़े कोई भी जंग नहीं जीती जा सकती I उस समय पंजाब आतंकवाद के दौर से भी गुजर रहा था I पुलिस के नकली एनकाउं टर का भी दौर था I पाश हर उस जुल्म के खिलाफ वेखौफ़ लिखते थे और अपनी रचना लोगो को सुनाते थे I अंत में २३ मार्च १९८८ को वे अपने गांव के एक कु ए के पास अपने मित्र हंसराज के साथ बात कर रहे थे, तभी उन दोनों का आतंकवादिओं के द्वारा क़त्ल कर दिया गया I पाश का ३८ वर्ष की छोटी सी आयु में निधन हो गया I वो अपने पीछे एक चिंगारी छोड़ गए जो आज भी नौजवानो को उत्साहित करती हैI उनकी आखरी कविता सबसे खतरनाक थी जो एक बहुत उत्तम रचना है और उनकी क्रन्तिकारी विचार धारा की सोच और हमे कु छ कर गुजरने के लिये प्रोत्साहित करती हैI

सबसे खतरनाक कविता के अनुवादक - श्री चमन लाल मेहनत की लूट सबसे खतरनाक नहीं होती पुलिस की मार सबसे खतरनाक नहीं होती गद्दारी और लोभ की मुट्ठी सबसे खतरनाक नहीं होती बैठे-बिठाए पकड़े जाना, बुरा तो है सहमी-सी चुप में जकड़े जाना, बुरा तो है पर सबसे खतरनाक नहीं होता कपट के शोर में सही होते हुए भी दब जाना, बुरा तो है जुगनुओं की लौ में पढ़ना, बुरा तो है मुट्ठियां भींचकर बस वक्त निकाल लेना, बुरा तो है सबसे खतरनाक नहीं होता ` सबसे खतरनाक होता है मुर्दा शांति से भर जाना तड़प का न होना सब सहन कर जाना घर से निकलना काम पर और काम से लौटकर घर जाना सबसे खतरनाक होता है हमारे सपनों का मर जाना सबसे खतरनाक वो घड़ी होती है आपकी कलाई पर चलती हुई भी जो आपकी नजर में रुकी होती है सबसे खतरनाक वो आंख होती है जो सबकु छ देखती हुई जमी बर्फ होती है जिसकी नजर दुनिया को मोहब्बत से चूमना भूल जाती है जो चीजों से उठती अंधेपन की भाप पर ढु लक जाती है जो रोजमर्रा के क्रम को पीती हुई एक लक्ष्यहीन दोहराव के उलटफे र में खो जाती है

www.batj.org

सबसे खतरनाक वो चांद होता है जो हर क़त्ल, हर कांड के बाद वीरान हुए आंगन में चढ़ता है लेकिन आपकी आंखों में मिर्चों की तरह नहीं गड़ता है सबसे खतरनाक वो गीत होता है आपके कानों तक पहुंचने के लिए जो मरसिए पढ़ता है आतंकित लोगों के दरवाजों पर जो गुंडों की तरह अकड़ता है सबसे खतरनाक वह रात होती है जो ज़िंदा रूह के आसमानों पर ढलती है जिसमें सिर्फ उल्लू बोलते और हुआं हुआं करते गीदड़ हमेशा के अंधेरे बंद दरवाजों-चौखटों पर चिपक जाते हैं सबसे खतरनाक वो दिशा होती है जिसमें आत्मा का सूरज डू ब जाए और जिसकी मुर्दा धूप का कोई टु कड़ा आपके जिस्म के पूरब में चुभ जाए मेहनत की लूट सबसे खतरनाक नहीं होती पुलिस की मार सबसे खतरनाक नहीं होती गद्दारी और लोभ की मुट्ठी सबसे खतरनाक नहीं होती सबसे खतरनाक होता है, हमारे सपनो का मर जाना

Durga Puja 2020

89


महामारी और त्या - पुर्निमा शा

स महामारी में हमें जो ये एक दूसरे से दूर रहने का आदेश मिला है, वह एक तरह से हमारे सिर्फ शारीरिक लाभ के लिए ही नहीं, बल्कि एक मौका है, जिससे हम त्याग और वैराग्य कि ओर भी चल सके ।

हमारी इन्द्रियों का काम है हमेशा बाहर कि दुनियां में मस्त रहना। जब हम उठते हैं सुबह, तब से हमें कु छ ना कु छ देखना , सूंघना, छू ना, सुनना और चखना, यह सब में दिलचस्पी लगी रहती है। परन्तु, हमारे इन्द्रियों कि क्षमता सिमित है। हमें भोग करने की प्रेरणा हमारा मन देता है, पर हमारे इन्द्रियों को यह सब ग्रहण करना एक सिमित स्तर पर होता है। अगर हमें गुलाब जामुन पसंद है तो क्या हम इतने सारे खा पाएंगे जो हमारा मन चाहता है? हम किसी भी भोग का आनंद तब उठा सकते है जब हमारी भोग कि वस्तु उपलब्ध हो, जब हमारे भोग करने की भावना सही हो, और हमारी इन्द्रियां थकी हुई नहीं हो। यह महामारी में कितनी वस्तुएं ऐसी होगी जो हमें उपलब्ध नहीं होगी। हमारी कितनी कोशिशों के बाद भी हमें प्राप्त नहीं होती। तब हमें क्या करना चाहिए? यहां पर हमें त्याग और वैराग्य काम में आता है । यह त्याग और वैराग्य कि भावना एक ऐसे मन में कै से जाग सकती है, जो मुश्किलों से घिरा हुआ है। यहां पर हमें ‘ध्यान’ काम आता है। हम भागते भागते जब अचानक ठहर जाते हैं, तब हम ध्यान की गहराई में जा सकते हैं। एक विचलित मन में शांति और स्थिरता, ध्यान ही ला सकता है। जब हमें बहुत खुशी होती है, हमें शान्त और चुप रहना अच्छा लगता है, और जब हमें बहुत ही तिव्र इच्छा होती हैं कु छ हसिल करने की, तब हमें सिर्फ विश्वास और श्रद्धा कि ही ज़रूरत होती है। यह करने से अपना काम ठीक तरह से होता है। त्याग और वैराग्य से ही हमें यह शान्ति और विश्वास कि प्राप्ति होती है पर यह वैराग्य हम अपने में कै से और किस तरह जगा सकते हैं? जब हम यह जान लेते है कि हर एक भावना, इच्छा, वस्तु, जिव का कभी ना कभी अंत होता ही है तब यह त्याग कि भावना का जन्म होता है। यह हम जीते जीते समझ ले तो हम ज़िन्दगी बहुत ही शांति के साथ जी सकते है। मान लीजिए कि हमारे पास सबकु छ हाज़िर है और हम जो चाहे वो हमें मिल सकता है, तो कै सी होगी हमारे मन कि स्थिति? हमें थोड़े समय के लिये तो बहुत ही अच्छा लगेगा पर क्योंकि हमारी इन्द्रियों कि क्षमता सिमित है, हम कोई भी भोग ज्यादा देर तक नहीं झेल पायेंगे, चाहे वह सुख हो या दुख। इन्द्रियों की भी एक सीमा होती है जब वे थक जाती है तो सिर्फ नींद ही ज़रुरी नही है, पर एक ऐसी नींद जो होशपूर्वक हो और इसी होशपूर्वक नींद को हम ‘ध्यान’ कहते हैं। हमें इस नींद में पता होता है कि हम सुन रहें हैं, हम बैठे है इत्यादि। यह होशपूर्वक नींद हमें हमारे आत्मा से मिलन करा देती है। ध्यान, मन को पकड़ के बैठना नहीं है। बल्कि मन अपने पकड़ में कभी नहीं आता। जब हम अपने मन को खुला छोड़ देते हैं, उसे जहां विचरना है वहां जाने देंते है, तब हम उसे ध्यान कहते हैं । जितना ज़्यादा हम मन को पकड़ते हैं उतना ही जल्दी वो भाग जाता है पर जब हम अपने मन को पूरी आजादी देते है वो अपने आप ही हमारे पास आके चुपचाप बैठ जाता हैं। इस अवस्था को हम ध्यान कहते है। ध्यान करने से ही हम में वैराग्य और त्याग का अनुभव होने लगता है, हमारे आत्मा का स्वरूप है शांति, प्यार और त्याग। और जब हम हमारे आत्मा को ध्यान से छु पाते है तब यह सब भावनाऐं हममें जागृत होती है फिर हम यह सब छोटी भावनाऐं जैसे राग और द्वेष, बहुत ही छोटी और मामूली लगने लगती है। जिन चीज़ों के पीछे हम भागते थे वह अपने आप ही हमें उपलब्ध होने लगते है क्यूंकि हम में वो ज्वर शान्त होने लगता है, जब ज्वर शान्त होता है तो हमें मन कि शांति का अनुभव होने लगता है । फिर कोई चीज अगर ना भी मिले तो हमें गुस्सा नहीं आता। और इसी को हम बैराग्य और त्याग कहते हैं। निष्काम, वैराग्य और समाधि यह तीन हमें अंदरुनी शक्ति, आराम और सौंदर्य देता है। यह सब हमें के वल ध्यान से ही प्राप्त होता है। श्री श्री रविशंकर जी कहते हैं कि वैराग्य से सब सुख आसानी से मिल जाता है। वैराग्य का आना स्वाभाविक है । कोई चीज़ छिन जाने से या उम्र के बढ़ने से भी हममें वैराग्य जाग्रत होता है। राग और द्वेष को प्रेम में परिवर्तित करना ही वैराग्य है। शंकराचार्य जी ने भी कहा है कि संसार में ऐसा कोई भी सुख नहीं है जो वैराग्य से प्राप्त नहीं होता। वैराग्य में आनंद और प्रसन्नता है । जैसे कमल का फू ल पानी में रहकर भी पानी में नहीं रहता है, वैसे ही संसार में रहते हुए भी उससे मुक्त या निर्लिप्त रहना वैराग्य है।

90

Anjali

www.batj.org


महामारी और त्या

ज्ञान के चार स्तंभ होते हैं1. विवेक : मतलब हमें यह जानना है कि सब कु छ बदल रहा है। हमारा शरीर बदल रहा है, हमारे विचार बदल रहे हैं। यह दुनिया हर पल बदल रही है। जो हम कल थे वह हम आज नहीं है। हम हमेशा सुखी या दुखी नहीं हो सकते हैं। पर ऐसा कु छ है जो नहीं बदल रहा है हम में। जब हम यह जान लेते हैं उसे हम विवेक कहते हैं। जब हम देखते हैं कि सब कु छ बदल रहा है और यह देखने वाला आत्मा है। जब हम उसके परिचय में आ जाते हैं तब हमें विवेक की प्राप्ति होती है। 2. वैराग्य : हमें हमेशा यही लगता है कि वैराग्य मतलब सब कु छ छोड़ देना। उसका अर्थ यह नहीं है। वैराग्य मतलब जीवन के प्रति विशाल दृष्टि रखना है। वैराग्य मतलब हमें ज्वर से मुक्ति मिलना है। 3. तीसरे स्तंभ में शट्ट संपत्ति है १. क्षमा: मतलब हमें मन कि पूर्ण शांति होना। जब हमें कोई ग़लत बात करता है या गलत तरीके से व्यवहार करता है तो हम स्वाभाविक उस व्यक्ति पर गुस्सा करें गे। पर अगर हम यह समझ ले के हमारे गुस्सा करने से वो नहीं बदलेगा तब हमें यह संपत्ति कि प्राप्ति होती हैं। २. दम्मा: दूसरी संपत्ति है दम्मा। दम्मा मतलब हमें अपने इन्द्रियों पर काबू होना । जब हम अपने खाने ,सोने, देखने, सोचने, और सुनने पर नियमित रुप से काबु हो जाता है तब हम उसे दम्मा कहते हैं। ३. तितिक्शा : मतलब सहनशीलता। जब हमें वो सब सहन करने कि शक्ति हो जो हमें अच्छा नहीं लगता उसे तितिक्शा कहते हैं। अगर हम एक बीज बोते हैं और उससे हमें बार बार खोद के देखेंगे तो क्या वह पनप पायेगा? हमें तितिकशा होनी चाहिये और उसी से हमें अच्छे फल मिलते हैं। ४. श्रद्धा : मतलब किसी ऐसी चीज या वस्तु पे विश्वास और प्यार जिसे हमने अभी देखा नहीं। जैसे कि भगवान। हमने भगवान को कभी देखा नहीं पर हमें यह पता है कि वह हमारे है। श्रृद्धा के बिना जीवन नीरस है। जब हम बिमार होते हैं तो हममें डाक्टर पर श्रृद्धा होती है कि वह हममें ठिक कर देंगे। ५. उपरति : मतलब कि हम जो भी करते हैं उसमें हमें पुरी तरह मज़ा आ रहा हो । कोई भी काम बडा या छोटा हो पर जब हम उसमें पुरी दिलचस्पी लेते हैं उससे हम उपरत्ती कहते हैं। ६. समाधान : मतलब संतुष्ट रहना। यह एक सचमुच कि सम्पत्ति है । एक भगवान से दिया हुआ वरदान सन्तुष्टि से ही स्रजन होता है। सन्तुष्टि से ही हमें जीवन में सफलता और खुशी मिलती है यह है छै सम्पत्ति : १) क्षम २) दम्म ३) तितिक्शा ४) उपरत्ती ५) श्रद्धा ६) समाधान 4. मुमुक्षत्व: चौथा स्तम्भ है मुमुक्षत्व जिसका अर्थ है मुक्ती। घर की चाबियां हाथ में ही रखना उसे मुमुक्षत्व नहीं कहते। जब हम जीवन कि मुक्ति के बारे में सोचते हैं तो यह छोटी चीजों से हम बन्ध जाते हैं। ध्यान और वैराग्य से हि हमें यह सब स्तम्भ और समपत्तियं मिलती है। जब हमें जीवन के विशालता के बारे में सोचने कि इच्छा हो जाती है तब हमें इस बन्धनो से मुक्ति प्राप्त करते हैं। 

www.batj.org

Durga Puja 2020

91


वर्षा की सीख........ - नीलम मलकानिया उतरी धरा पर वर्षा रानी।

हम है शक्ति, हम ही भक्ति।

लिए कलश में निर्मल पानी।।

मनुष्य की रिक्त झोली भरना।

गजरा लगाए इं द्रधनुष का।

मान गईं फिर वर्षा रानी।

सतरं गी चोली, चूनर धानी।।

मुस्काती चली रचने नई कहानी।।

कारे -बादल का काजल बनाए।

मेघों ने स्वयं गाए मलहार।

मुस्काते अधर, मीठी बानी।।

झूमी मंद-मंद पुष्प क्यार।।

पहुँची खेत खलिहान इठलाती।

सूखे पोखर ताल भर डाले।

बूँदे बरसा दीं देख फसल लहलहाती।।

बचाए खेत ना अँधड़ चलाए।।

रौंद डाली गेँहू की सारी बाली।

ओलों ने गर्मी मार भगाई।

किसान की आँखों से बरसा पानी।।

रोकी बाढ़ ना तबाही लाई।।

कहीं बाट जोहे मरीचिका का बालक।

झम झम झड़ी बस मधुर लगाई।

सूखे से तड़पता पुकारता जल-जल।।

झूम-झूम मोर ने रागिनी गाई।।

जाने क्यों हुई क्रोधित ये देवी।

ना तूफ़ान ना चक्रवात आया।

बाढ़ बढ़ाई सब बाँध तोड़ती।।

बादल को भी फटने से बचाया।।

त्राही-त्राही करे जीवन देखो ।

अपनी सखी बिजली को समझाया।

बस्ती बह गई मदद माँगती।।

घनप्रिया ने ना कोहराम मचाया।।

सबने प्रार्थना में तब हाथ उठाए।

भोली है बरखा पर रुष्ट भी होती।

दंभित मानव ने सर अपने झुकाए।।

बहुत सारी सीख ये हमको देती।।

करो क्षमा हमें हे दया-दायिनी

जो देंगें हम जग में सबको।

जल रक्षक, भक्षक बन ना जाए।।

वही तो वापिस मिलेगा हमको।।

क्षमाशील हो वरुण देवता।

संग प्रीत से जो हम रहेंगे।

वर्षा को फिर मनाने आए।।

सबके सुख-दुख अपने कहेंगे ।।

करो ना गड़बड़ रानी ऐसे।

तब ही प्रकृ ति प्यार करे गी।

पालनहार फिर बनेंगे कै से।।

वो भी हमारा ध्यान रखेगी।।

सबका हमको ध्यान है रखना। धरती को ख़ुशहाल है करना।।

92

Anjali

www.batj.org


कविताओं का संग् - प्रभा मि प्रसून! बगिया के मुकुलित प्रसून, परहित खिलना मुरझाना। सुबह समीरण में घुलकर, सुरभि जग में फै लाना। सूचिका में बिंधकर पुनः, धागे में बन्धन पाना। आत्म समर्पण भाव लिए, देवों के मस्तक चढ़ जाना। साधन प्रभु पूजन का बन, साधक को पुण्य दिलाना। जीवन देकर नित्य कु सुम, शान्त मन से कु चले जाना। सम्मानित यदि कर दे जग, तनिक न हृदय में हर्षाना। पीड़ा गर मिलती जग से, न दुःख के आँसू बरसाना। जी लेना निरासक्त भाव से, सुमन मुझे भी सिखलाना। आभारी रहूँगी मैं तेरी प्रसून, निज सामर्थ्य स्रोत दिखलाना।।

कु छ देर चुप रह कर फिर बोली'कसूर उसका नहीं है, बेटी ! मेरे ही भाग्य की है ये ठठोली। नसीब मुझे यहाँ ले आया, प्रारब्ध अपना ही भोग रही हूँ।' मैं निःशब्द निस्तब्ध सी खड़ी उसके इस कथन पर हैरान थीजो माँ बीमारी में बच्चे को अपनी छाती पर सुलाती है, बुढ़ापे में बीमार हुई वही माँ अछू त कै से बन जाती है....। क्यों अछू त बन जाती है....!!

विधि का लेखा मन तू उठ चल ! धीरज धर, अधिकार नहीं तेरा जिस पर क्यों फिर तड़पन इतनी उस पर, विधि ने दिया जो,ले ले हँस कर , क्यों रोता है पगले नर होकर।

नसीब

मन में रखकर विश्वास अटल , दूर हटा दे पथ का पत्थर, अन्य किसी से आशा मत कर अपना मन पहले अपना कर, अधिकार जता फिर औरों पर।

ठीकरा लिए हाथ में एक स्त्री कब से गंगा किनारे बैठी है बरस बीत गए कितने ही, जाड़ा गर्मी बरसात या हो बेमौसम की मार, सिर पर सब सहती है।

उठ, मिटने के मत कारज कर, आँधी-तूफानों से घबराकर क्यों बैठ गया है साहस खोकर, जो बदा है भाग्य में तेरे,वो तो निश्चय ही,पाएगा आगे बढ़कर।

न ठाँव है न छाँव है, बच्चे-बड़े सब छेड़-छेड़ हँसते हैं पर किसी से कु छ नहीं कहती बेज़ुबान सी चुप रहती है जो भिक्षा में मिल जाए खाकर भूख मिटा लेती है।

नहीं मिला संतोष कभी भी किसी और पर दृष्टि गड़ाकर। तेरा - मेरा करते-करते ही मिट जाएगा जीवन नश्वर। ढू ँढ सके तो ढू ँढ,मिल जाएगा पारस मणि तेरे ही अन्दर।

मैं देखा करती थी रोज उसे, देख-देखकर दुःख पाती थी, घाट पे उसका टाट-बिछौना, चने - मुरमुरे उसका भोजन, गंगा जल से वो प्यास बुझाकर कै से बेसुध होकर सो रहती है।

तेरा सुख है तेरे ही कर्मों पर निर्भर, दूजे के कन्धों पर चढ़कर,क्या देख सका कोई जग सत्वर। अरे ! मंजिल तक पहुँचेगा राही अपने ही पैरों से चलकर।

एक दिन मैंने पूछ ही लियामाँ जी घर क्यों नहीं जाती हो ?-कातर सी मुश्किल से वो कह पाई, 'बीमार हूँ संक्रमण के डर से बेटे ने घर से निकाल दिया है, बदनामी के डर से बाहर किसी से कु छ भी कहने को मना किया है।' www.batj.org

हाँ..ये ही सच है ...... मंजिल तक पहुँचेगा राही अपने ही पैरों से चलकर।।

Durga Puja 2020

93


आँख मिचोली महोब्बत के सं - सेजल मेहता महोब्बत है कहाँ? आओ दूर वादियों में चलें ... पूछें बहती बहारों से, हर फ़िज़ा से, हर पत्ते से, हर झरने से .... ईश्क, जू़नून, दीवानगी- कहो, तुम बसी हो कहाँ? हम मुंतज़िर बैठे है यहाँ, तुम छु पी हो कहाँ? आओ चलें , तराशें, महसूस करें महोब्बत को....... ये तो छु पी है .... हर अन्दाज़ में, हर ख़्वाब में, हर तन्हाई में, हर सन्नाटे में, हर सवाल में, हर ख़लिश में, हर धूप में, और हर छांव में

किसी की हसीं में, तो किसी की मस्ती में, किसी की ख़ामोशी में, तो किसी के लफ्ज़ों में, किसी की आँखो में, तो किसी के इशारो में, किसी की गुफ़्तगू में, तो किसी की मौसिकी में, किसी के भीतर में, तो किसी के दिखावे में, किसी के इन्तजार में, तो किसी के दीदार में, किसी की धड़कन में, तो किसी के ख़यालों में, कहीं दूर माँ के आँचल में, और कभी पिता के साये में, हर रिश्ते की नज़ाकत में पिरोई हुई है महोब्बत.

महोब्बत तो वो शदीद एहसास है, जो मौजू़द है, इसी जहाँ में, रब की इबादत में.... किसी की बंदगी में, किसी के तहाफ़्फ़ु ज में, और किसी के ऐतमाद में, हर कहीं जहाँ ईश्वर का बसेरा है, महोब्बत का वहीं आशियाना है, महोब्बत यहीं तो है, बाकायदा इसी कायनात में... आओ इस महोब्बत के आगोश में लिपटकर हम गुम जाएँ, लुट जाएँ, मुकम्मल हो जाएँ, और फिर...फ़ना हो जाएँ…

94

Anjali

www.batj.org


पद्मश्री इरफान खान साहब को श्र - रिमझिम मोहंती

बड़ी बड़ी उन आँखों में जैसे भावनाओं का सैलाब सा था निःशब्द से दृश्यों में भी तो अमीक़[deep] दर्द बयां करता था चलचित्र पर उभरा जीवन सामान चरित्र, मोहित दर्शक दंग तटस्थ था याद है तीन घंटों में हमने बिल्लू , मक़बूल और रणविजय सिंह को जिआ था पान सिंह तोमर बन, राज बत्रा aka मोंटी ने ऐसा छलांग लगया था पाई के लाइफ (Life of Pie) में घुसकर अशोक गांगुली जूरासिक पार्क (Jurassic Park) में नज़र आया था चंद्रकांता का बद्रीनाथ गैंगस्टर इं द्रजीत प्रताप को छोड़ पता नहीं कब स्पाइडरमैन (Spider -Man) के लाइफ में भी तो यूँ ही घुस गया था सुना है हिन्दी मिडियम (Hindi Medium) में पढ़ने वाला यह पठान लन्चबौक्स (Lunchbox) में 'शाकाहारी खाना' लाया करता था मानो या न मानो NSD का यह पद्मश्री कु छ तो अलग ही था एक सचोट, सुध, समर्पित कलाकार स्वर्ग लोक का सितारा, जीवन रं गमंच में उतर आया था तभी तो आयु रे खा असमय खंडित, पता नहीं शायद माँ सरस्वती का ही सुपुत्र था राजस्थान का वह पश्तून [Pathan] कलाकारों को कलाकारी सिखाने आया था मर के भी अमर होने आया था इरफ़ान खान तू दर्शकों के दिलों में, मोहब्बत का इन्फरनो (Inferno) फोड़ने ही तो आया था नोट - यहां इरफान खान साहब के फिल्मी नामों का उपयोग किया गया है - जैसे रणविजय सिंह (हासिल), राज बत्रा (हिन्दी मीडियम), मोन्टी (लाइफ इन अ मैट्रो), अशोक गांगुली, इं द्रजीत प्रताप (साहब, बीबी और गैंगस्टर)

www.batj.org

Durga Puja 2020

95


ज्योत

ज्योत

- शारं ग शब्दावली का देखो कमाल, बेसुध दौड़े सांसों का जंजाल, बांधे धड़कन सोच से धागा, प्यासा ना रहे प्यार अभागा, हाथों ने खोया आज हींसा का साथ, अखियाँ रोवे जैसे कोई मासूम अनाथ, पैर थे जैसे ज़मीन में गड़ गए, जिगर बचे थे आज फिर युं अढ़ गए, अंधेरे से किया सवाल, सुरज कहाँ है? दे फिर मुझे उजाल! सीने ने ना ज़िद को छोड़ा, प्यार करें गे चल मिल जा बोला, रास्ते फिर युं थे मुड़ गए, अपनों से बिन कहे ही दिल थे जुड़ गए, आशियाना सा लगता जो कभी था विरान, प्यार ने दे दी है एक नई रफ्तार, एक ही है अब मेरी मांग, संहित संचिता का रखुं ख्याल।

अमन बिक गया है - सुनील शर्मा आज क्या हो गया है इं सानियत को । क्यूँ फिर से बेहाल अमन बिक गया है।। क्यूँ तोड़ा गया है उन खड़ी दीवारों को । पीछे जिनके तूफ़ानी सैलाब रुक गया है।। कोरोना वाइरस की तैयार कर के कब्र । अब कौन ख़ूनी तराना लिख कर गया है।। वक्त की भेंट कर के यह घिनोना कर्म । तारीख़ का कौन सा बहाना दिख गया है।। ग्लोबलाइज़ेशन का नाम लेते लेते । क्यूँ अलग अलग इं सान हो गया है ।। यह क्या हो गया है इं सानियत को । क्यूँ फिर से बेहाल विश्व हो गया है ।। चंद लोगों के हाथ अपने मतलब के लिए । आज फिर से बहाल अमन बिक गाया है।

96

Anjali

www.batj.org


Travel to City of Peace - Tosani Ghosh, Grade III In 2020 summer, I with my family travelled to a place to visit the tragic history. It was very tough to choose to travel during pandemic COVID-19. The Japanese bullet train (Shinkansen) took 3 hours 30 min to reach that history place. The journey between Tokyo and our destination was so comfortable that I could not realize running 300 kmph. The most sound less destruction happened here, Yes, you are right we reached HIROSHIMA. After we checked in hotel, we decided to visit the Hiroshima Peace Museum. The world first Atomic bomb was exploded at 8:15am August 6 1945 just above 200m from Peace Museum Park. The Atomic bomb Dome is the only building that still exists today and only structure that survived complete destruction. More than 100000 people impacted by soundless bomb. The Hibakusha (survivors) Stories - In peace museum one can know about the painful stories from A-bomb victims. The undelivered letter, the lunch box from school children, are some of the items visible in the museum. Disease like cancer remained very common in Hiroshima residents for a very long time. One can feel the inner peace & pray for spirits of A-bomb victims if spend some time in Hiroshima Peace Park. This travel taught me the impacts of A-bomb & the world must unite against A-bomb. Our beautiful planet must pledge against any use Atomic Weapon. THE CITY OF DEATH BECOMES THE CITY OF PEACE. Here is small Travel Blog, please do watch: YouTube Link: https://www.youtube.com/watch?v=Mnr1uhGrmDk



HIROSHIMA ATOMIC BOMB DOME

www.batj.org

Durga Puja 2020

97


Trip to ISKCON, Mayapur - Abheek Dutta, Grade VI Last winter, when my parents and I went to India to meet my grandparents, my grandparents wanted to go to Mayapur to pray in the extremely famous ISKCON temple. A plan was made to spend the New Year’s Day in ISKCON, which stands for International Society for Krishna Consciousness. My father and my grandfather found the fastest route to ISKCON using google maps. The route that my father and my grandfather found was 4 hours and 29 minutes long if we were not caught up in traffic (though whether we were or not is debatable). In my opinion, manual paper maps are very good as once all of the roads and geographical details are printed on the map, then the information you started with will never change (unless the paper gets burnt, ripped up, erased, etc.). However, now that we have smartphones and Navi and all, everything is so much clearer. In comparison, virtual maps tell you different routes you could take, which one is the fastest, how long will the other routes take, where the other routes go, phew! But there is one slight snag with these virtual maps, sometimes they take you on extremely round-about routes where you plunge into deserted tunnels, venture into dark alleyways where (God forbid!) you open your window for some fresh air and a horde of bobcats fly into your car and, well, let’s not go there. Anyways, on 31st December 2019, we set off to ISKCON in my grandfathers’ car. We decided that my grandfather would drive in the busy part of Kolkata since that’s where he always drives. And then when we come to an almost deserted highway where we meet at the most one or two passersby’s, my father would then switch with my grandfather and drive the rest of the way. This was because my father has not driven in India for a really long time and does not fancy a brawl with India’s crazy traffic. The entire time we were looking at the roadsides for a restaurant for some food or a drink. We packed just some snacks and soon got hungry. Finally, we found one restaurant, not too shabby looking (thank you very much!) and got a coke over there. After I came back from India and told my friends that I had gone to ISKCON, Mayapur, they immediately asked me how the journey was. I told them that if you wish for a 4 hour long full deluxe body massage (maybe painful, maybe not) then go at your own risk. If you want more details then check out my Yelp review, hmmmm, let us see, I do not think I rated it anymore than 0 stars, did I? The journey was extremely monotonous and painfully bumpy as I may have mentioned before. My parents, grandparents and I (5 people in total) had nothing to survive on except for some packets of chips and 2 bottles of coke. Well not that there wasn’t any food, but they were way too healthy for me. When we finally reached Mayapur, I was so pleased that there would not be much traffic in a deserted place like this, but boy was I wrong! I would wager that we waited in a line of cars for about half an hour to go 1 kilometer. After our treacherous journey to go 1 kilometer ahead of where we started, we finally got to the security check. Well, it was not exactly a security check, it was just 2 guards who checked our car’s trunk and asked for our guest house reservation sheets (which my grandfather handed over, happily or annoyed, I do not know). We had reservations for two guest houses which were called Conch and Gada. My grandfather and I checked the quality of both guest houses and in the end, we chose Conch as the room was a lot bigger and because we wanted to stay together, possibly in the same room if we could. Also, my grandmother said that Conch was just beside the main temple and we could enter the temple as and when we wished. I was 98

surprised to find a lot of international crowd all over the temple premises. Not only were they guests, but they also seemed to be devotees. It helped that the Govinda’s restaurant was also close to the guest house. For me the Govinda’s restaurant was very tempting and which, compliments to the chef, had great food, such as noodles, dosas, puri aloo (my favorite). The new Sri Mayapur Chandroday temple project was just across our guest house. The new temple is currently under construction and the construction is expected to finish in 2022. In the evening that day we finally went to the ISKCON temple and prayed. I wasn’t really that excited about the praying part, I just wanted to see how the inside of the temple looked, and it looked amazing. For a while, a band was playing tablas and sitars. The music was divine, I felt as though I was slowly entering a world where I had absolutely no worry in the world (at the time, I had a lot of homework left to do). The temple was completely made out of polished white marble except for some plates of gold on the ceiling and domes. At one end of the large hall was an intricate altar where idols of Lord Krishna and Radha were surrounded by idols of Gopis. This was the Sri Sri Radha Madhav temple. It was the most magnificent sight that I had ever seen. All of the fancy clothes and jewels on the idols reminded me of princes and royalty. In the center of the temple was the idol of Lord Nrisimhadeva. The half lion incarnation of Lord Vishnu (thanks Amar Chitra Katha!). After spending some time admiring the main halls, we went to a gallery where a lot of holy men were depicted in paintings (in chronological order). The life story of Chaitanya Mahaprabhu

was told there. When we exited the gallery, there was the option of gift shops or to see other parts of the temple. Thankfully, we headed over to see more parts of the temple which (from the looks of it) was a lot more interesting than the gift shops. After we passed the arch that separated the main hall that we had just visited, I spotted five 10-foot-tall (each) golden statues of Chaitanya Mahaprabhu and his four companions. Some woodwind (probably flute) music was playing in the distance

Anjali

www.batj.org


which gave it a particularly misty tone (Hariprasad Chaurasia?). This triggered my thoughts a lot and sent me deeper into the other world which I mentioned earlier (probably the world where I told my teacher that I didn’t do my summer homework/the world where I would most likely cease to exist). After we finished marveling at the temples, we went to the Govinda’s restaurant and then back to Conch for a goodnight’s rest. The day after was the 1st of January 2020. My grandmother and mother went early in the wee hours of the morning to the temple for prayers. While my grandfather, my dad and I relaxed. I got a good shouting from my mom for going to the temple late (welcome to my world!). After breakfast at Govindas’, we visited the Goshala by auto. All of the cow’s names were the names of gods like, Indra, Vishnu, Narayan, Brahma, Shiva and all of the other Shakti’s. Some of the cows allowed us to pat them and some were quite traumatized that more petty humans were approaching when they had already finished their shift. If you are allergic to cow manure (is that a thing?) and four trillion gallons of methane, then I would recommend that you stay away or come in a hazmat suit. The

ride back in the auto would’ve been perfect for a Sharukh Khan movie scene as we were riding while the sun was setting and with the wind whipping up our hair. Before leaving, we went to pray one last time for a good life and a safe journey (hmmmm, Air India should probably make that their tagline, only way they’ll keep their company afloat). Then we departed from Mayapur to go back to Kolkata. The road back was as bumpy as earlier. This time though, I was shocked to see lots of trucks with large loudspeakers blasting music. I asked my grandparents if it was even allowed and was it legal, as I’ve never seen anything like it in Japan? I was surprised to learn that this is quite a common way to celebrate New Years in India. Did I mention that we stopped over for Chola Bhatura at Haldirams once we reached Kolkata? Perfect ending to the trip for me. Now I have been to three well known places in West Bengal (other than Kolkata) the Ganges Raichuk, Sunderbans and Mayapur, ISKCON with my grandparents. This summer I could not visit India, but I hope that the next time we go to India I can visit another interesting place which I can fill you in on. 

Spring - Shonayaa Verma, Grade III

www.batj.org

Durga Puja 2020

99


My Little Dove - Ashmita (Tias) Paul, Grade VIII

F

rom the middle of June, my school summer vacation started, so we stopped having online classes. The one thing that occupied me the most during Corona break were my online classes, so for two more months, I have to wait till my school opens. I still have some online tuitions, play board games at home, and go outside a bit to occupy myself in the summer vacation, but there was something special that kept me occupied too…

The babies were completely green, but had a small black beak, and had some black splotches on their wings. It was just when I woke up to say “Good morning!” to them, when I saw their heads stuck out and moving their cute little heads around. That was the first time I ever saw a baby dove. My parents used to take care of pigeons and other birds in India when they were young, so they have experience. This day was Sunday, August 2nd.

From the mid of July, I saw a nest made in my bedroom window, with an egg. I quickly called my parents to come see it. As soon as we saw it, we became quite sure what it was.

One thing surprised me. There were two babies under the mother! Two! When I saw the nest, I only saw one egg. I figured out that maybe the mother dove laid another egg and we did not notice it, because we could not see the eggs under. Maybe one was younger than the other.

It was an egg laid by a dove! Doves are a pigeon species, but it has many colors like white, light brown and dark brown. They have small heads, short legs, and a cooing voice. Doves are a bit smaller and more delicate than pigeons. Many doves can be found in Japan, like in gardens or parks. The egg was completely white, and it was in the center of the nest. The nest was completely round, and I had no idea that they would make it here. It was made out of twigs, and they made it very beautifully. This happened to me last year in May. When we came back from Vietnam during Golden Week, our neighbor observed the dove bird laying and egg in my parents’ bedroom window, on top of a pot with a dead plant. It sat there all day long. I was very excited to see her, and I was waiting till the egg will hatch and the babies will come out. Unfortunately, the bird left, without me being able to see the babies. I still did not have a clue whether it hatched or not, but I am sure that it must have hatched and the mother took it somewhere else. Some birds do that. After several minutes, I saw the mother resting there, covering the egg. Whenever I opened the curtain, it used to swell its neck to scare me. I soon got used to it, and I can understand, since it is a mother, it might have some insecurities. I sometimes waved at her, and she swells her neck. I realized that if I made any sudden movements with my hand, she tries to scare me. Sometimes the dad would come and nest here too. The difference between the dad and the mom is that the mom is a bit smaller and thinner, whilst the dad is larger and broader. Me and my parents looked after them, to make sure that they are completely fine. They still keep swelling their neck to scare us, but after 1 week, they just stood still. They did not swell their necks as much as they used to. When the parents are there, I can hear their soothing cooing voice in the morning. After one more week, they hatched!!

The babies usually stayed under the parent to avoid the scorching summer heat. I could only see them well in the morning, but later when it becomes very hot, they stay under. I could not see them very well in the night either. That time, I could not open the window, because they react when I move my hands a bit, and I did not want to frighten them. After around a week, they looked like this:

They got larger, and they started walking around the nest. I really enjoy it when they call out and when they start to flap their wings. They still had some green feathers around their body, but their beaks became way longer. One was bigger than the other. For a couple of days, I could not see their parents. I could not hear their cooing nor wings flapping. I looked at them and saw that they became less energetic. The babies only sat and kept their heads down. They still swell their necks when they see us through the window. It turned out that their parents were not coming to feed them, and they could not eat for two days. Poor babies. After those two miserable days, a storm occurred here. A thunderstorm. I was worried sick if my little dovies were okay. My parents went to look at them, and they were scared to death. They kept their heads very down and they were clumped together. We together decided to feed them by ourselves. I found out that sometimes the parents can abandon their babies. I have not the foggiest clue why. Maybe it is because they think that they were sufficient enough to take care. My father quickly bought the formula food for baby birds. It is like milk, but it is brownish. We have to feed them with a syringe,

100

Anjali

www.batj.org


My Little Doves or else they would not open their mouth. We picked them up from the nest and kept them in a cardboard box with tissue paper on the bottom. They were kept in the living room. I tried whistling to keep them calm and relaxed. While I waited for my dad to come, the bigger dove walked around and pecked the box to try to get out. One time, it jumped to the top left edge of the box and flapped its wings. It tried to fly away, but it couldn’t. My mom kept a hand in front of the dove and kept it down. After that, it sat down, and kept its head down again.

The next morning, I surprisingly woke up at 6:30 am. I heard the cooing voice of the parent doves again, and I hear the baby noise and the pecking noise. I checked on them and they were walking around the next, and moving their heads like a pigeon. After that, I slept again. My parents then came inside my room and looked at the babies. They told me that they saw the mother feeding the babies. Turns out that they didn’t abandon them. It was the evening of August 17th when I took this picture:

My dad finally came with the formula food. There was the food powder inside. It had to mixed with hot water of around 45°C. If the food is not warm, they will not eat it. We poured the powder in a small bowl, and mixed the hot water inside. We then brought the food to the babies. I first said that I do not want to feed the bigger one, because then it might start biting me. We started to feed the small one first. My dad picked it up from the cardboard box and kept it on his lap with a towel on it. My mom had the syringe with the food inside. She tried to make it open its mouth by pushing the syringe into it. I was very doubtful about it, whether it would eat, because it was already weak, but then it opened its mouth, and my mom pushed the top of the syringe, which pushed the food inside. The baby then closed its mouth, and started to eat it. My dad tried to feed it, but accidentally spilled a lot of the food on its body. We quickly wiped it with a tissue paper. I then asked my mom if I could try feeding it. She filled the syringe with food and gave it to me. I tried showing it to pull its neck up and to open its mouth by gesturing it. I slowly brought the syringe to its mouth, and it opened and I pushed it. It ate joyfully. I continued to feed it, until it got energy, and walked on my dad’s forearm! My mom was taking videos on my phone of me feeding the babies. When it had enough, my dad put it back in the cardboard box and pulled the bigger one out.

The small dove was on top of the pot filled with moss. It looked ready. Ready for some reason. When my mom went to close the window, it flapped its wings, jumped and took flight. I was flabbergasted to see that and my jaw dropped. I asked my mom, “Did it really leave?” My mom replied that it left. It flew flawlessly, and I did not know that it could fly so well. The bigger one was still sitting on the nest, feeling alone. I felt really bad for him.

I did not want to feed it, but I thought of giving it a try. I brought the syringe to its beak, and it opened its mouth very widely, and I quickly pushed the food inside. Its intentional reason of opening its beak was to bite me. I had trouble feeding it, because it was closing its beak too quickly. Some of the food went into the nostrils, so when I fed it, it spit some food out. It continued to do that, until it opened its mouth properly for the food to go inside.

The next morning, he flew away, before I woke up. My mom opened the window, and it stinks really bad because of the droppings on the nest. I looked at it, almost tearful. I kept my head down for the rest of the day. My mom told me, “You should be happy that they became strong enough to fly.” I agreed with her, but couldn’t help myself.

After feeding them, we kept them on the window, and it started to walk again, and kept its heads up. I felt very relieved after feeding them. My honest opinion was that it was easier to feed the bigger one than the smaller one. The smaller one became more energetic. We added a little more protection. We kept cardboard on the sides, and kept a basket with tissue paper for them if they want to sit on it.

www.batj.org

I really miss them, still miss them now. But I am proud of them, proud of the parents too for raising them properly. I was proud of myself and my parents too. I could see them from egg to flight. I could see them grow up. I really hope that I could never forget this story, and I hope that they won’t forget it either. Who knows, maybe when they become adults, they will come and lay eggs here too. I look forward to them having a full life. 

Durga Puja 2020

101


End of a Nightmare - Arnab Karmokar, Grade VIII "Hey Nick, where's our car? Why is our car missing?" fellow FBI consultant Jack Thorne asked me. "What are you talking about?" I said and looked up from my phone. I couldn't believe my own eyes. I dropped my briefcase in shock; our car was missing from the parking lot. "Isn't this where we parked the car?" Jack asked. I looked at the parking spot number and nodded yes. We stopped for less than 10 minutes at a coffee shop, and by that time, our car had disappeared. What made this situation a lot worse was the fact that our car contained Jack’s briefcase, which had documents covering our field investigations on a serious criminal case. We were going to pass those documents onto our research team at our FBI Branch. This was one of our first major jobs to do ever since joining the FBI, and things weren’t looking good for us now. "I'm calling the FBI Branch," I told Jack, and started to pick up the phone to dial the number. "Wait, don't call them," Jack said. "Why not? We need help right now." "Because if the bureau finds out that we lost documents on such a serious criminal case while stopping over to get coffee, they will fire us and take our jobs away. Especially because this is our first ever job." I looked up at Jack and sighed in disbelief. He was right. "Well then, what do we do?" I asked Jack. I was hopeless at that moment. I had my worst fear come to life, and that was to get fired from the FBI. I started to panic. "Wait, wasn't there some sort of GPS connected to the car?” Jack asked. “If we run our car's number plate through our computer, we might be able to find where that car is." I totally forgot that I had put in a GPS in our car that would tell me exactly where the vehicle was in real-time. "You're a genius man," I exclaimed. I cooled down as I opened up my briefcase, got out my computer. I typed in the car plate number for our car into the software. The software whirred for results. After a minute or two, it showed that the car was moving on a highway headed towards Los Angeles. "The car's headed towards LA," Jack noticed as he pointed to the map. "Shouldn’t we try to follow them?," I said. "Wait up, what time is it right now?" Jack asked. now."

I looked at the time on my computer. "It's 6 PM right

"We shouldn't do anything now. It's going to get dark soon, and the people who stole our car would likely stop over for the night, because moving in the night will attract police officers." Jack said. "Wasn't it you who said that we have to get those documents ASAP? Wasn't it you who said that if we didn't get the documents and submit it by today, we'd be fired? We need to get closer to our car and get those documents back before the documents get transferred to a 3rd party source." Jack and I started to argue about what to do. At the climax of the argument, Jack's phone started to ring. Jack opened his phone, and his face went blue. He mouthed 'boss' to me. He picked up the phone and put speaker mode on. "Agents Jack Thorne and Nick Smith, good evening." 102

"Good evening, sir." We replied. "Our FBI branch is closing soon, and I'm still expecting the documents from you two today. Where is it? "Sir, we've gotten stuck in a lot of traffic, so we are a little behind schedule." Jack lied to our Boss. We heard him get frustrated, but then sighed in disbelief." "OK. I need those documents by tomorrow. If not, you both will be asked to leave the bureau. Understood?" "Yes, sir. We will get the documents to you." Jack said and cut the phone. I looked over at Jack. "We're stuck in traffic? If he looks at the traffic records of today, he'll know we lied, and we'll be fired for sure! Why'd you have to come up with that bad of a lie?!" I started yelling at Jack. "What better option did you have then? Come on, spill!" Jack yelled back, and I stepped back. I didn't have one. "Exactly," Jack said. "Don't worry. I promise we won't get busted." I looked back at Jack and sighed. Fighting won't solve matters right now. We started looking for a hotel. We found a Ritz-Carlton 5 minutes away from us. After 5 minutes of walking, we reached the hotel. We checked in and immediately met back in a meeting room, which we rented out. I opened up my computer to look for any other hidden clues we could find from the GPS software to track the car and document. The car was running the streets of Los Angeles. I noticed an option which was named 'listen.' I was confused, so I turned to Jack. "What does this option do?" I asked Jack. "I don't know, click on it and see what happens," Jack replied. I looked up at the ceiling, ensuring there were no security cameras in the meeting room. After I made sure, I clicked on the option. The screen changed to audio footage from inside of our car. Jack looked at me, shocked. We listened to what was going on inside of our car. "Any calls from Boss?" We heard one guy in a thick Spanish accent, talk. "Yeah, there was. We're gonna have to move to Mexico," Another guy, with an Italian accent, started to talk. "Boss said to come to the Los Angeles US-Mexico Border by 3 PM tomorrow. Apparently, that is when the Border Patrol switch shifts with each other. We're going to have to find a gap and smuggle the car across the border. After that, Boss said to dump the car, and bring the documents over to Mexico City, the capital." Suddenly, the connection to the audio device cut. I looked over at the GPS map and found out that the missing car had gone into a parking garage. I looked over at Jack, speechless. The bad guys were planning to give valuable documents over to someone in Mexico City, Mexico. I closed my computer and turned to Jack. Jack also looked speechless. "We're going to have to let the border patrol and the police know." Jack blurted out. "What if they tell the FBI? We'll lose our jobs! We don't even know who the bad guys are!" I panicked. "Letting them get away with the documents will get us sacked for sure. At least this way, we can show the country our duties before we get fired. And also, it doesn't matter if we know the bad guys, because we're going to catch them with

Anjali

www.batj.org


End of a Nightmare the help from border patrol and the local police." Ever since I was a little boy, I wanted to be an FBI agent to fight for justice. Jack looked at me in such pride that I became convinced with his plan. We both agreed that we would let border patrol and the local police know about our private investigation and catch the bad guys. After a sleepless night, the next morning arrived. I got up exceptionally early and double-checked the location of the car. The car was still in the parking garage from yesterday. Jack knocked on the door, and we went downstairs. Once we checked out, I pulled out my phone to grab a taxi to the border. 5 minutes later, a cab arrived. The taxi driver introduced himself to us. "Hurry, sir!" Jack told the driver. We told him who we were, and where we were headed.The driver understood that this was an emergency, and pressed hard on the accelerator pedal. I looked up at the dashboard, and it read 70 miles per hour. We didn't care that he was going over the speed limit by 20 miles. We zoomed ahead. About 2 hours and 15 minutes later, we reached the border. We paid the taxi driver, prayed to get reimbursed by the FBI, and went out of the car. We reached the border patrol's headquarters. "Excuse me, sir, we are the FBI, and we need to be on the lookout for a vehicle that will pass through here around 3 PM," Jack said, and flashed his FBI badge. I did the same. Showing the other party our FBI badges was standard protocol. The border patrol officers let us in, and we explained the whole situation to them. "So, they planned on going through when we will switch shifts?" One of the officers asked. "Yes, that is their plan. We need to make sure that the shifts do not switch at 3 PM." "We can do that. We will switch shifts after we take the bad guys into custody." They alerted the local police, and we set up a track-down base, to track down where the missing car was running. The whole set-up was set at around 1 PM, so we headed out for a quick lunch. Around 2 PM, we returned to the base and waited patiently for the bad guys to arrive, while looking at the GPS. They were on the way to the US/Mexico border. At around 3 PM, we saw an alert come from the GPS, and it said that the car was 200 yards away from the border and was in line C. We were ready to arrest them. The car pulled up. There were two people inside the vehicle. "Where is the paperwork for this car?" I asked the two. "Do we need to show it to you?" The bad guy in the driver’s seat blurted out. "Yes," Jack replied to them. The two looked at each other and then started to look for the paperwork, but they couldn’t find the paperwork.. "It might be in the special compartment," Jack said. The bad guys opened the compartment and showed it to us.

"Where are your passports? We need authentication right now." Jack urged them. They couldn’t show their passports. “Drive now!” The guy in the passenger seat yelled. The car drove through the stopper, and dashed ahead. “Follow that car, right now!” I yelled from my lungs. Jack and I jumped on to a police car nearby, and we rushed ahead. Eventually the other officers caught up to us with either motorbikes or police cars. The car jumped onto the roads of Tijuana, Mexico, and we started to panic. We couldn’t have anyone get hurt. “Stop right now! You are under arrest!” Jack yelled at the car, which was about 25 yards away from us. “Not a chance!” The bad guys laughed it off, and looked up front. The police in Mexico received a message from the Border Patrol, and 5 Mexican police cars had locked down the road. There were no other places to go; they were stuck. "Hands up! You have nowhere else to go!” Jack yelled at the bad guys and aimed our gun at the car, just in case they retaliate. The bad guys opened their doors and put their hands up. We slowly got closer to them. "We are agents Nick Smith and Jack Thorne of the Federal Bureau Investigation. You are under arrest for stealing our car, as well as attempting to transfer vital documents." I said. We escorted them out of the car, and handcuffed them. We handed them over to the border patrol, US police, and the Mexico police. We took back our car, and got inside of it. "Are the documents in the car?" I asked Jack. Jack started to look for the documents and then picked them up. Thank God, I thought to myself. We drove off towards our FBI branch to turn in the documents. We reached FBI headquarters in about 45 minutes. Once we went inside the office, we noticed everyone started to applaud us. Jack and I locked eyes, thinking why is everyone clapping for us. "Agents Jack Thorne and Nick Smith, come with me," We saw our Boss from across the room call us to his private office. Jack and I were both terrified. I started to think of the worst. As soon as we entered the room, I gave the documents over, and apologized for the delay. Our boss looked very angry, but bursted out laughing. Jack and I looked at each other in confusion. "Congratulations on catching two notorious criminals who were on the Wanted list! You two have done a brilliant job." Our boss exclaimed. Apparently, the two bad guys we arrested were notorious criminals. Our Boss stood up and turned on the TV. Every news network was praising us for arresting the two bad guys at the border patrol. He said that we were getting a raise, and we were being upgraded to a better position. Jack and I both walked out of the room. We were confused, but were pretty satisfied as well. This was our first task as FBI agents, and instead of blowing it, we were able to nail it, and were able to catch 2 notorious criminals. We looked at each other and knew that this was just the start. This was an end of a nightmare, and a beginning of a wonderful career. 

"Do you own this car?" I asked them. "Uhh, yes!" They said. I looked over at Jack.

www.batj.org

Durga Puja 2020

103


Perks of being an introvert - Akanksha Mukherjee, Grade X In my life, I have had the freedom to do many things. I could go out for a walk, to a mall, a restaurant, parties, on vacation, etc. I could be around people and socialize. I could hang out with friends whenever I wanted to. These are privileges which I took for granted. I never had to think twice before leaving my home. I never had to consider whether it was safe or not. I never imagined a world where even to breathe fresh air, without wearing a mask, would be a luxury. Covid 19 has profoundly impacted our world in many ways. The idea of a “normal lifestyle” has completely changed. It fascinates me how, in just a few months, our lives can be turned upside down. Due to Covid-19, we are forced to be isolated and locked in our homes. Most people I know complain about how miserable it is to be separated from their friends. In my case, however, I don’t mind staying at home all day. I always had a shy and introverted nature, making it difficult for me to make friends and socialize. I am usually by myself whilst other people are with their group of friends. Being at home, spending time with my family has felt nice rather than boring. I haven’t missed going to school, since there was nothing to miss. When you feel lonely and left out on the inside, being isolated from people doesn’t make much of a difference.

On the contrary, it feels better to be by yourself. There is no pressure to speak and socialize with people. Being on your own is a wonderful way to explore your own thoughts and emotions. You can do things you like and whatever makes you happy. There are two kinds of happiness- the happiness which people have within themselves, and the happiness which people derive from external sources. Being an introvert, I have never depended on huge groups of friends or validation from others to be fulfilled. Simple things such as watching a movie or eating good food provides me happiness. Don’t get me wrong, I do enjoy the company of others and being around people at parties and get-togethers, but I also enjoy solitude. Staying at home during Covid 19 has not been a punishment for me, unlike others who strive for companionship. I used to think that my shyness and lack of conviviality was a weakness, because it was the reason for my alienation. Living through this pandemic has taught me that what I always considered to be a weakness can also be a strength. I don’t have to depend on other people’s approval to feel satisfied. If I can find happiness within myself, then I know that I can get through this traumatic period of my life. 

Vivekananda Teachings: 1. The power of concentration is the only key to the treasure-house of knowledge. 2. A brave, frank, clean-hearted, courageous and aspiring youth is the only foundation on which the future nation can be built. 3. Youth is the best time. The way in which you utilize this period will decide the nature of coming years that lie ahead of you. 4. Arise, awake and stop not until the goal is reached. 5. The greatest sin is to think yourself weak.

104

Anjali

www.batj.org


The Fulfillment - Kshitij Singh, Grade XII On a bright night did he undergo a somber journey. The journey home was one of great pain But of a beautiful one, One of liberation that allowed him to step into the light. He thought, "Without suffering has love ever been felt?" The journey had been going on for years And he found that what he had been seeking his whole life had been in him. He kept running for years, Searching, looking, seeking but never finding. He thought in his pain,“I have been seeking life without, but I must now find it within.” He could bring himself to say no more, for silence had taken over And his heart had become overwhelmed at this joy. Gently did he place his feet on the earth, The earth that had become his life. He felt no pain, no joy but a confluence of both. They both had become one, like the stream that joins its friend, And together they formed him, an ocean of bliss. Beneath the trees where he had played, By the river that had loved him forever, he was filled again. The cup of longing had been filled. His heart was silent, but it danced peacefully in love, for he had come home. Between the lonely night and the lively day did he sit by the river and forget himself. He thought in his soul,“ Now I have returned. Now I have found my place on earth. Where else can I go?” He gazed at the beautiful river that had called him for days. For years it had been wild with longing, but now it was calm. It wished no more than a listener, for it seemed silent But spoke to him in utter happiness. “Where have you been my friend?, I have been seeking you for a lifetime.” He could hear. He could listen. He could feel. There was a drop in his eye, And slowly it trickled down his cheeks and flowed into a river. Nothing but a boundless drop in an incomplete ocean. Now, it was complete, the longing had disappeared and it was set alight with joy. As lovers they had met, as lovers they had been separated for years, but now they were together. They were whole again. www.batj.org

Durga Puja 2020

105


My Mother’s House - Kavya Sharma Everything came to a sudden stop. Silence spread like sunshine at dawn, Slowly, then all at once. I tried to move but something stopped me: it was the right side of my body. I could feel pain -- pain that was painless yet so painful, that when I tried to escape It stung my body like a thousand bees. I heard someone call my name. I faintly saw someone move the weight off my body, All a nightmare? And wake up, Drive to my mother’s house. I am attached to life support. My mother awaits. It’s the dreams you have that sometimes make you realize how short life really is. I woke up one morning terrified that something had happened to me. Only to find myself sniping out of a nightmare. But, when you really try to understand your nightmares, you learn your deepest fears. Fears that are small and fears that are big. But our mind has a weird way of understanding them in the same way, *** Death is inevitable but how you spend those livings hours describes you in the end. Spending years hating or worrying about something that doesn’t deserve your attention, ages a person worse than time ever will. *** Live days that bring you happiness and peace. Live days dreaming about love and calmness. Love in such a way that the last few minutes of your life, for whenever they are, are filled with no sorrow.

106

Anjali

www.batj.org


Bird Nest by Meghnasri Sarbarikarthik, 4 Yrs

Autumn Leaves by Gursher Bhatti, 4 Yrs

Paper Flower Painting by Ritisha Verma, K-5

Bhowken Mountain by Kenta Bhowmik (Koto Gakkou), Class-3


Dugga Dugga by Shreyansh Kar, 4 Yrs

Little Durga by Aarohi Kundu, 5 Yrs

Yoga Mudra by Alok Misra, Grade I


My Family by Sasha, 5 years

My Dream Village by Suvechha Bhunia, Grade I

Stay Safe and Stay Healthy by Aditi Misra, Grade II

Durga Puja 2020

109


School Mid-Day Meal by Zinnia Dhar, Grade V

Tricolor Rangoli by Sneha Pal, Grade XI

Goodbye by Aakarsh Ryo Kundu, 8 Yrs

Anjali

www.batj.org


Hope by Advika Ghosh, Grade III

Walking in the Rain by Auyona Gupta, Grade VI

111


Shades of Lee Ji-eun (IU) by Pramiti Hebbar Grade VIII

Rabindra nath Tagore by Souhardya Kar 12 Yrs

www.batj.org


Reyansh, son of Ipsita Biswas & Neelesh Arvind Pimprikar

Anjali Editorial Team

www.batj.org

Durga Puja 2020

113


y

ph

a

gr

o

t

o

Ph

Portrait of Mochi by Sanjib Chanda

Autumn Tranquility Sudeb Chattopadhyay


s t r

A

With Love and Gratitude by Rumpa Pal

Portrait by Arabinda Kundu


Floral Mystic Painting by Juhi Verma

The Focus (Acrylic on canvas) by Shravasti Gupta

Anjali


Sunset Silhouette (Acrylic on Canvas) by Sanchita Ghosh

Glorious Autumn by Mimi Banerjee www.batj.org


Rhododendron by Debkanya Sengupta

Peace by Meeta Chanda

118

Anjali

www.batj.org


শ্রদ্ধাঞ্জলি

কল্যাণ দাশগুপ্ত (প্রয়াণ – ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯) কল্যাণ দাশগুপ্ত দক্ষিণ কলকাতার সেন্ট লরেন্স স্কু ল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারীং কলেজ থেকে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারীং পাশ করে প্রথম চাকরী শুরু করেন লার্সেন ট্যুবর�োতে। লার্সেন ট্যুবর�োর কাজ তাঁকে একেবারেই আকৃষ্ট করতে পারেনি। কারণ আনু ষ্ঠানিক শিক্ষা দীক্ষা ইঞ্জিনিয়ারিং এ হলেও ভাষাতত্ত্ব ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সম্পুর্ণ নিজের চেষ্টায় প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। সেই সব ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল জাপানি ভাষা। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে গবেষনা করার যখন সু য�োগ খুঁজছিলেন সেই সময় হঠাৎই জাতীয় অধ্যাপক সু নীতি চট্টোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করার সু য�োগ আসে। কল্যাণদার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সু নীতি চ্যাটার্জী অনতিবিলম্বে য�োগায�োগ করেন প্রশান্ত মহলানবীশের সাথে। প্রশান্ত মহলানবীশ কল্যাণদাকে অনু র�োধ করেন ইণ্ডিয়ান স্টাটিস্টিকাল ইনস্টিট্যুটের অন্তর্ভুক্ত Statistical Publishing Society তে য�োগদান করার জন্য। মাস তিনেকের মধ্যে লার্সেন ট্যুবর�োর কাজে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন ইণ্ডিয়ান স্টাটিস্টিকাল ইনস্টিট্যুটে। কলকাতা শহর তখন নকশাল আন্দোলনে বিধ্বস্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও বিপর্যস্ত। কাজের পরিবেশ একেবারেই অনু কূল নয়। ইত�োমধ্যে জাপানি বন্ধুদের সহয�োগিতায় সু য�োগ এসে যায় জাপান ভ্রমণের। ব্যবস্থা হয়ে যায় জাপানে প্রযু ক্তি প্রশিক্ষণের। তিনমাসের মধ্যে স্কলারশিপ নিয়ে সপরিবারে চলে যান জাপানে। জাপানি ভাষায় অগাধ পাণ্ডিত্য থাকা সত্তেও আনু ষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব অনু ভব করে প্রশিক্ষণ শেষে ভর্তি হয়ে যান ট�োকিও ইয়ু নিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজ এ জাপানি ভাষার M.A ক�োর্সে। জাপানে থাকার সময় অধ্যাপনা, এবং অনু বাদ ছিল তাঁর মূ খ্য পেশা। এছাড়াও তিনি রেডিও জাপানের সাথে জড়িত ছিলেন দীর্ঘকাল । প্রায় দু দশক জাপান বাসের পর সু য�োগ পেয়ে যান শিক্ষাদীক্ষার পীঠস্থান আমেরিকাতে অধ্যাপনা করার। শান্ত পরিবেশে অধ্যাপনা করেন অবসর গ্রহণের আগে পর্যন্ত। 

www.batj.org

Durga Puja 2020

119


কল্যাণদা   কাঁধে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে বাড়ী ফিরছিল ছেলেটা। হঠাৎ রাস্তায় চ�োখ পড়ে এক টুকর�ো কাগজের উপর যাতে সম্পুর্ণ অচেনা ক�োন�ো ভাষায় কিছু লেখা আছে। অসম্ভব উৎসাহে কুড়িয়ে নেয় সেই কাগজের টুকর�োটা। সযত্নে ভাঁজ করে রাখে ব্যাগের ভিতর। বাড়ি ফিরে পড়াশ�োনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার খুলে দেখে। মর্মোদ্ধার ত�ো দূরের কথা, ক�োন ভাষায় লেখা তারও ক�োনও হদিশ মেলেনা। জানার আকাঙ্খা উত্তর�োত্তর বৃ দ্ধি পেতে থাকে। বাড়ির বড়দের কাছে সেই কাগজের টুকর�োটা দেখিয়ে জানতে চায়, এটা ক�োন ভাষা। শুধু ই যে সঠিক উত্তর মেলেনা তাই নয়, প্রকারান্তরে তাঁরা এসব অহেতুক জিনিষ নিয়ে চর্চা করার ব্যপারে নিরুৎসাহিত করেন। কিশ�োরটির উৎসাহ তাতে বিন্দুমাত্র কমে না। অবশেষে একজনের কাছ থেকে জানতে পারে যে এটা সম্ভবত চীনা বা জাপানি ভাষায় লেখা। তার কাছ থেকে এও সন্ধান পায় যে দক্ষিণ কলকাতায় একটি ব�ৌদ্ধ মন্দির আছে। সেখানকার পুর�োহিত জাপানি। কাগজটা তাঁকে দেখালে, তিনি হয়ত�ো কিছু সাহায্য করতে পারেন। গুরুজনদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিশ�োরটি একদিন পৌঁছে যায় সেই ব�ৌদ্ধ পুর�োহিতের কাছে এবং জানতে পারে যে কাগজটিতে যে অক্ষরগুলি লেখা আছে, সেটি হ�োল�ো জাপানি। প্রচণ্ড ক�ৌতূ হল নিয়ে বাড়ি ফেরে এবং মনস্থির করে ফেলে এই ভাষাটি তাকে রপ্ত করতেই হবে। সেই যু গে নানান কারণে বিদেশি ভাষা হিসাবে জাপানি ভাষা শেখার ক�োনও বিশেষ আগ্রহ ছিল�োনা ভারতবর্ষে। তাই তার জাপানি ভাষার উপর অদম্য উৎসাহ গুরুজনদের কাছে অহেতুক বলে মনে হয়েছে। সেই সময়ে জাপানি ভাষা শেখার তেমন ক�োনও ব্যবস্থাও ছিল�োনা কলকাতায়। তাই স্কুলের লেখাপড়ার সাথে সাথে সম্পূ র্ণ নিজের প্রয়াসে শিখতে শুরু করে দেয় জাপানি ভাষা। এইভাবেই কল্যাণ দাশগুপ্তর (ওরফে বাবলু দার)জাপানি ভাষা এবং ভাষাতত্ত্বের উপর গভীর প্রেমের সূ ত্রপাত হয় সেই কৈশ�োর থেকেই। স্কুলের গণ্ডি পার করে ভর্তি হন শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে। ছেলেরা বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার হবে, সেই ছিল ঐ যু গের অভিভাবকদের প্রথাগত চিন্তাধারা। ততদিনে কল্যাণদার মধ্যে যে ব্যতিক্রমী ধারার বীজ বপন হয়ে গেছে, তা ধীরে ধীরে চারা গাছে পরিণত হতে শুরু করেছে। কলেজ জীবনেই তিনি অর্জন করে ফেলেন জাপানি ভাষায় ব্যুৎপত্তি। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় তার কাছ থেকে শ�োনা তার কলেজ জীবনের একটা মজার ঘটনার কথা। কলেজে পড়ার সময়ে একবার ক�োন�ো কারণে জাপানি প্রতিনিধিদের একটি দল বি.ই কলেজ সফরে আসেন। সফররত জাপানিদের সাথে কথ�োপকথনের জন্য তাঁকে ডাকা হয় দ�োভাষী হিসাবে কাজ করতে। তাঁকে জাপানিদের সাথে অনর্গল জাপানি ভাষায় কথা বলতে দেখে কিছু ছাত্রের ধারণা হয়েছিল তিনিও জাপানি। একটি ছাত্র তার বন্ধুদের কাছে মন্তব্য করে “দেখ দেখ, এই জাপানিটা কিরকম বাঙ্গালীদের মত দেখতে”। ভাষাপ্রেম ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয় এবং ইত�োমধ্যে সম্পূ র্ণ নিজের চেষ্টায় পারদর্শিতা অর্জন করে ফেলেন আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি ভাষায়। বিদেশি ভাষার জ্ঞানের পরিধি ক্রমশই বাড়তে থাকে। তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে দেখেছি বিদেশি ভাষার লিঙ্গুয়াফ�োনের অঢেল সংগ্রহ। বিবিধ ভাষার জ্ঞান তাকে অনু প্রাণিত করে ভাষাতত্বের উপর জ্ঞানার্জনে। প্রাথমিক ভাবে বহুভাষাবিদ হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেও আসল প্রতিভার উন্মেষ হয় ভাষাতত্ববিদ হিসাবে। সে প্রসঙ্গে আবার যথাস্থানে আল�োচনা হবে, তবে তার আগে দেখা যাক তার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের রূপরেখা। ইঞ্জিনিয়ারীং পাশ করার পর শুরু হল কর্মজীবন। মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিগ্রী নিয়ে স্বাভাবিক নিয়ম অনু যায়ী কর্মজীবন শুরু হল লার্সেন ট্যুবর�ো নামে এক ইঞ্জিনিয়ারীং প্রতিষ্ঠানে । কিন্তু অচিরেই তাঁর ব�োধগম্য হল পেশাগত চাহিদা এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছায় বিস্তর ফারাক। অন্নসংস্থানের তাগিদ আর পাণ্ডিত্য অর্জনের অদম্য উৎসাহ – চলতে থাকে এই দু ই-এর টানাপ�োড়েন। কর্মজীবনের এই প্রথম অধ্যায় কাটে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই শহরে। কর্মক্ষেত্র তেমন উপভ�োগ না করলেও বন্ধু বৎসল, মজলিসী এবং রসিক মানু ষ হিসাবে অল্পদিনের মধ্যেই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন বেশ কিছু উপকারী বন্ধু বান্ধবদের সাথে এবং তাঁদের সান্নিধ্যে সময়টা ভাল�োই কাটে। চেন্নাই এর প্রবাস জীবনে সঞ্চয় করেছিলেন অনেক মজার অভিজ্ঞতা যা পরবর্তী কালে বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডার আসরে প্রচুর 120

- রঞ্জন (গৌতম) গ

আনন্দের য�োগান দিয়েছে। এর পর অল্প কিছু দিনের জন্য কর্মসূত্রে বদলী হন খানস্‌বহালে। নিজের নেশাকে যখন পেশায় রূপান্তরিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় হাতে আসে এক অভাবনীয় সু য�োগ। জাতীয় অধ্যাপক সু নীতি চট্টোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করার সু য�োগ মেলে। জাতীয়

অধ্যাপকের কাছে নিজের জ্ঞানপিপাসার কথা নিবেদন করার জন্য পৌঁছে যান তাঁর বাড়িতে। সবিনয়ে নিজের পরিচয় দেন। জাতীয় অধ্যাপকের কাছ থেকে প্রথমেই প্রশ্ন আসে – আমার বাড়ির প্রবেশ পথ থেকে এই ঘর পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় একটি শব্দ লেখা আছে। তুমি কি বলতে পার�ো সেই শব্দটি কি এবং যেসব ভাষা তুমি জান�ো, সেইসব ভাষাতে কি তুমি পড়তে পার�ো শব্দটি? এক মুহূর্ত লাগে না জবাব দিতে। অনায়াসে বলে দেন শব্দটি কি এবং বিভিন্ন ভাষায় তার উচ্চারণ কি। প্রথম পরিচয়েই মুগ্ধ হন সু নীতি চট্টোপাধ্যায়। ঘটনাটা ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকের। সেই সময়ে কলকাতার আরেকজন সর্বজনবিদিত দিকপাল ছিলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ। সু নীতিবাবু র কাছ থেকে ফ�োন আসে তাঁর কাছে। সু নীতিবাবু ফ�োনে বলেন, তুমি ত�ো বিভিন্ন জায়গা থেকে মণি-মুক্তো সংগ্রহ কর। আমার কাছে তেমনি একটি রত্ন আছে। ত�োমার প্রয়�োজন থাকলে জানিও। কথাটা শ�োনামাত্রই মহলানবিশ জানান, ছেলেটিকে তাড়াতাড়ি আমার সাথে দেখা করতে বল। অল্পদিনের মধ্যে কল্যাণ দাশগুপ্ত লার্সেন ট্যুবর�োর কাজে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন বরানগরের ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে। ঘুরে যায় জীবনের গতিপথ। সেইসময় ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে অনেক জাপানি বিজ্ঞানীর যাতায়াত ছিল। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁদের সাথে পরিচয় হয়। এছাড়াও আলাপ হয় অধ্যাপক নারা ৎসু য়�োশির সাথে যিনি পরবর্তী কালে ইণ্ডোলজিস্ট হিসাবে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। এঁদের সকলের পরামর্শ ও সহায়তায় জাপানি ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কল্যাণ দাশগুপ্ত ১৯৭৩ সালে জাপানে চলে আসেন। এরপর ত�োকিয়�ো বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাপানি ভাষায় স্নাতক�োত্তর ডিগ্রী লাভ করে, সম্পুর্ণভাবে লেগে পড়েন সেই কাজে যার নেশায় পাগল হয়েছিলেন কৈশ�োর থেকে। অর্থোপার্জনের জন্য বিভিন্ন কাজের মধ্যে একটি ছিল অনু বাদের কাজ। অনু বাদের দক্ষতা ছিল অসাধারণ। ১৯৮৩ সালে আমরা যখন

Anjali

www.batj.org


কল্যাণদা জাপানে আসি, তখন দেখেছি অনেক সময় জাপানি স্ক্রিপ্ট নিয়ে নিমেষের মধ্যে এবং অনায়াসে তার ইংরেজী অনু বাদ করে চলেছেন মুখে মুখে। তাই বলে অনু বাদের মান কখনও এতটুকু ক্ষু ণ্ণ হতে দেন নি। ২০১০ সালের অঞ্জলিতে, তাঁর লেখা “রবীন্দ্রসাহিত্যের জাপানি অনু বাদ প্রসঙ্গে কিছু স্মৃতি”তে তেমনই একটি ঘটনার উল্লেখ পাই। ত�োকিও বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে একটি বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হত। ১৯৭৫ সালে সেই প্রশিক্ষণটি ছিল বাংলা ভাষার উপর। অধ্যাপক নারা ৎসু য়�োশির অনু র�োধে সেই বছর কল্যাণদা ছাত্রদের সাহায্য করেন বাংলা বই-এর জাপানি অনু বাদ করায়। বেছে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের “ক্ষুধিত পাষাণ”। এই প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছেন, “আমার ধারণা বাংলা থেকে অন্য ক�োনও ভাষায় অনু বাদ করা যে কতখানি দু রূহ তা এ কাজে হাত না দিলে অনু ধাবন করা সম্ভব নয়। ............ অনু বাদে একটি শব্দে হ�োঁচট খেতে হয়েছিল। শব্দটি জাপানিতে না থাকায় অনু বাদকেরা মূ ল ফরাসি থেকে ইংরিজিতে আমদানি এ শব্দটির কাতাকানায় লিপ্যন্তরিত জাপানি প্রতিশব্দটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। আমি এতে আপত্তি জানিয়েছিলাম, আমার ইচ্ছা ছিল ক্ষুধিত পাষানের জাপানি অনু বাদে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ জাপানি ভাষার নিজস্ব শব্দভাণ্ডার থেকে চয়িত হবে। শেষ অবধি শব্দটি সৃ ষ্টি করতে হয়েছিল জাপানিতে”। সেই সময় বেংগারু বু নগাকু দ�োকুশ�োকাই অথবা বঙ্গসাহিত্য পাঠচক্রের আয়�োজন করা হয়। এর সাথে বেশ কিছু দিন সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন কল্যাণদা। বাংলা ভাষার ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহে ভারতীয় সাহিত্যের অনু বাদ করার উদ্দেশ্যে একটি অতি উচ্চমানের সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনা শুরু হয়, অধ্যাপক নারা যার নামকরণ করেন “কল্যাণী”। মূ ল বাংলা ভাষা থেকে যারা জাপানিতে অনু বাদ করেছেন তাঁরা অনেকেই কল্যাণদাকে স্মরণ করেন তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য। ভাষাতত্ত্বের জটিল বিষয়গুলির মধ্যে থেকে আমাদের মত সাধারণ মানু ষকেও আকৃষ্ট করবে এমন অনেক উদাহরণ ওনার মুখ থেকে শুনেছি। যেমন মজা করে বলতেন “নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ” করার মত বাংলার প্রকাশভঙ্গী আর ক�োনও ভাষায় সম্ভবতঃ পাওয়া যাবেনা, কারণ বাঙালি ছাড়া অন্য ক�োনও সমাজে এই ধারণার কথা ল�োকে হয়ত�ো জানেওনা। বলতেন “নান চাত্তে বা দ�োওশিতে ম�ো” ইত্যাদি জাপানী প্রকাশভঙ্গীর অনু রূপ প্রকাশভঙ্গীও বাংলায় পাওয়া যাবে না। জাপানিতে কিছু কিছু খাবারের স্বাদ ব�োঝান�োর জন্য “সাপ্পারি আজি” শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বাঙালি খাদ্যতালিকায় সু স্বাদু খাবারের সংখ্যা একেবারেই কম নয় কিন্তু তার মধ্যে ক�োনটা ঠিক সাপ্পারি আজি তা বলা শক্ত। ওনার কাছ থেকে শিখেছি জাপানি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ খ�োঁজার সময় উভয় দেশের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দৃ ষ্টিভঙ্গীর দিকে নজর রাখার প্রয়�োজনীয়তা। জাপানি সংস্কৃতি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই বলতেন, যে দেশে দৃ ষ্টিনন্দন ব্যপারটির উপর এত গুরুত্ব দেওয়া হয় সেই দেশে দৃ ষ্টিহীনরা কিভাবে সেই স�ৌন্দর্য্য উপভ�োগ করবে? এই চিন্তার সূ ত্র ধরেই হয়ত�ো বা কল্যাণদা আগ্রহী হয়ে পড়েন কানতেনজি অথবা ব্রেইলের মাধ্যমে চীনা অক্ষর লিখন পদ্ধতিতে। কানতেনজির অন্যতম পথিকৃত সাদাও হাসেগাওয়ার প্রবর্তিত কানতেনজির পদ্ধতির উপর গবেষণা শুরু করেন। সেই গবেষণার ভিত্তিতে ১৯৮৯ সালে Japan Times পত্রিকায় “Kanji it’s the feeling that counts” শির�োনামে একটি রচনা প্রকাশ করেন। তারপর ২০০২ সালে The Journal of Visual Impairment and Blindness পত্রিকায় “Around the world: Brailed Kanji: The Hasegawa Approach” শির�োনামে হাসেগাওয়ার পদ্ধতির উপর তাঁর আরও একটি গবেষণামূ লক রচনা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালের গবেষকরা অনেকেই তাঁর গবেষণাপত্রের উল্লেখ করেন নিজেদের রচনায়। কল্যাণদা যখন কানতেনজি নিয়ে গবেষণা করছেন সেই সময় তাঁর পরিচয় হয় অসাধারণ এক ব্যক্তির সাথে। আমরাও একই পরিবারের সদস্য হিসেবে সেই ব্যক্তির সাথে পরিচিত হওয়ার দু র্লভ সু য�োগ পাই। তাঁর নাম সাত�োশি ফুকুশিমা। বর্তমানে তিনি ত�োকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। খুব অল্প বয়েসে তিনি প্রথমে দৃ ষ্টিশক্তি এবং অনতিকাল পরে শ্রবণশক্তিও হারান। প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই-এ হার স্বীকার না করে অধ্যাপক ফুকুশিমার মা ছেলেকে এক অভিনব প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ছেলের আঙ্গুলের উপর আঙ্গুল বু লিয়ে অনেক কথা বু ঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। একদিন অধ্যাপক ফুকুশিমা আমাদের বাড়িতে আসেন। সেই দিনের কথা আমার আজও মনে আছে। অধ্যাপকের সাথে এসেছিলেন একজন দ�োভাষী। তিনি অধ্যাপকের পাশে বসে তাঁর আঙ্গুলের উপর নিজের আঙ্গুল বু লিয়ে যাচ্ছিলেন। আর তারই মাধ্যমে চলছিল কথ�োপকথন। একবারও মনে হয় নি প্রতিবন্ধকতার জন্য কথ�োপকথনে ক�োনও বিঘ্ন ঘটেছে। শুনেছি নিজের বর্ণনা দিতে গিয়ে অধ্যাপক ফুকুশিমা www.batj.org

কখনও বলেছেন “যেন মনে হয় গভীর জলে মাথা ডুবিয়ে আছি”। মনে পড়ে যায় হেলেন কেলারের কথা। বিপুল পাণ্ডিত্য এবং বহুমুখী প্রতিভা থাকা সত্তেও নিজেকে প্রকাশ করার ক�োনও চেষ্টা কল্যাণদা ক�োনওদিন করেননি। তাঁর জ্ঞানের পরিধি এবং গভীরতার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর রচিত “জাপানি হাইকু” বইটিতে। ২০০৬ সালের অঞ্জলিতে “হাইকুর অন্দরমহল” শির�োনামে তাঁর বইটির

একটি গ্রন্থ পরিচয় আছে। তার শুরুর অংশটা এখানে উদ্ধৃত করছি। পুর�োন�ো পুকুর ব্যাঙের লাফ জলের শব্দ রবীন্দ্রনাথের অনু বাদে এ হাইকু এক সেতুবন্ধন বাঙলা ও জাপানি কবি মানসের। সেই কাল থেকে আজকের সময়ের এই দীর্ঘপথ শুধু বিস্তৃতই নয়, বিচ্ছিন্ন। সেই ব্যক্তিগত ছেঁড়া ছেঁড়া প্রচেষ্টা অবশেষে এক দিশা পায় শ্রী কল্যাণ দাশগুপ্তের “জাপানি হাইকু”তে এসে। অতি স্বল্প আলাপেও কল্যাণদার সূ ক্ষ্ম রসব�োধের পরিচয় পায়নি এমন ল�োক কম। ২০০৮ এবং ২০১০ এর অঞ্জলিতে কল্যাণদার দু টি হাস্যরসের কবিতা (প্রৌঢ়প্রলাপ) পাঠকদের অনেক আনন্দ দিয়েছে। জাপানে তখন ভারতীয় তথা বাঙ্গালিদের সংখ্যা বেশ কম। তাই সাংগঠনিক ভাবে জাপানিদের সাথে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের রেওয়াজ সেভাবে গড়ে ওঠে নি। কিন্তু কল্যাণদার সাথে বহু বিদগ্ধ জাপানির ঘনিষ্ঠ য�োগায�োগ ছিল এবং কল্যাণদার জাপানের বাড়িতে ছিল তাঁদের নিয়মিত আসাযাওয়া। আমাদের পরম স�ৌভাগ্য যে সেই সময় আমরা কল্যাণদা/ শিউলিদির সাথে একই বাড়িতে ছিলাম এবং সেই সূত্রে বহু বু দ্ধিজীবি জাপানিদের খুব কাছ থেকে দেখার সু য�োগ লাভ করেছি। সেই সব সান্ধ্য অনু ষ্ঠানে কল্যাণদা ছিলেন মধ্যমণি। দেখেছি কি অগাধ পাণ্ডিত্যের সাথে জাপানিদের সমৃ দ্ধ করেছেন ভারতীয় সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদিতে। অবশ্যই কথ�োপকথনের মাধ্যম ছিল জাপানি ভাষা। এইরকম সমাবেশে যে আনন্দ উপভ�োগ করতাম তা যেন আজকাল দু ষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। আল�োচনার বিষয়বস্তু ছিল�ো অত্যন্ত জটিল। কিন্তু রসিকতার গুণে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে উঠত সেইসব সান্ধ্যবৈঠক। ১৯৯২ সালের মার্চমাসে জীবনের ম�োড় আরেকবার ঘ�োরে। সু য�োগ এসে যায় আমেরিকার কলেজে অধ্যপনা করার। বহু স্বপ্নের দেশ জাপান ছেড়ে চলে যান মার্কিন যু ক্তরাষ্ট্রের ক্লীভল্যাণ্ড শহরে। পূর্ণমিলন ঘটে পেশার সাথে নিজের নেশার। সম্পূ র্ণভাবে নিজেকে নিয়�োজিত করেন পড়ান�ো এবং পড়াশ�োনার কাজে। শিক্ষাদীক্ষার পীঠস্থান মার্কিন যু ক্তরাষ্ট্রে পেয়ে যান জ্ঞান অর্জনের অফুরন্ত সু য�োগও। কল্যাণদার ভাষায়, অন্নসংস্থানের জন্য ক্ষু ণ্ণবৃ ত্তির প্রয়�োজন মিটে যায়। নতুন জীবনে খুঁজে পান প্রভূত আনন্দ। আমেরিকান ছাত্রছাত্রীদের জাপানি ভাষা শেখান�োর সাথে সাথে পরিচয় করিয়ে দেন জাপানের সংস্কৃতির সাথে। এছাড়াও আমেরিকায় বড় হওয়া বাঙালি ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখান�োর জন্য ক্লীভল্যাণ্ডে শুরু করেন বাংলা স্কু ল। স্বামী-স্ত্রীর উদ্যোগে এবং অন্যান্য বাঙ্গালিদের পৃ ষ্ঠপ�োষকতায় সেই স্কুলের মাধ্যমে স্থানীয় বাঙালি পরিবারের ছেলেমেয়েদের একটি নতুন সু য�োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

Durga Puja 2020

121


কল্যাণদা

আমার স্ত্রী রুমার কথা

“ভাল�ো করে পড়াশ�োনা না করলে ভবিষ্যৎ একেবারে অন্ধকার” এই আপ্তবাক্য ছ�োটবেলা থেকে শুনে শুনে বড় হয়েছি। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার উদ্দেশ্যে তথাকথিত ভাল�ো করে পড়াশ�োনা করার দৃ ষ্টান্তও দেখার সু য�োগ আশে পাশে অনেক হয়েছে। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের নির্মল আনন্দ লাভ করার জন্য পড়াশ�োনা করার দৃ ষ্টান্ত, শুনে থাকলেও খুব কাছ থেকে দেখার সু য�োগ আগে মেলেনি। ১৯৮৩ সালে আমরা জাপানে আসার পর আমার ননদ শিউলি দাশগুপ্তর পরিবারের সাথে একসাথে ছিলাম। সেইখানে খুব কাছে থেকে দেখার সু য�োগ হয়েছে আমার ননদাই বাবলু দাকে, যার মধ্যে সত্যিকারের জ্ঞানপিপাসা কাকে বলে তার পরিচয় পাই। তাঁর ব্যক্তিগত বই-এর সংগ্রহটি ছিল বিশাল আর বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য আমাকে বিস্মিত করত। মনে মনে ভাবতাম এত বই এবং এত ধরণের বই একটা মানু ষ কি করে পড়ে ফেলতে পারে! কিন্তু ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেছি ওঁর মত মানু ষের পক্ষেই সেই কাজ করা সম্ভব। কতখানি একাগ্রচিত্ত হলে গল্পগুজব আড্ডার মধ্যে বসেও একজন বই পড়ে যেতে পারে তা ওনাকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার শিউলিদির সমস্ত গয়না হারিয়ে যায়, তাতে বাবলু দা যতটুকু দু ঃখ পেয়েছিলেন, তার তুলনায় অনেক অনেক বেশি দু ঃখ পেতেন বই হারালে। তাঁর জ্ঞানের আল�ো সর্বদাই বিচ্ছুরিত হত তাঁর কথাবার্তায়। অনেক ভাষা জানতেন বলেই কি না জানি না, তাঁর কথাবার্তায় বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় ছিল। একটি ভাষায় কথা বলার সময় পারতপক্ষে অন্য ভাষা ব্যবহার করতেন না। যখন বাংলায় কথা বলতেন, তখন তার মধ্যে ইংরেজি বা জাপানি ভাষা মেশাতেন না। তেমনি ইংরেজি বা জাপানিতে বলার সময়ও একই নিয়ম মেনে চলতেন। দ্বিতীয় অসাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল শব্দচয়ন। প্রতিদিনের ব্যবহারিক কথাবার্তাতেও অত্যন্ত সু ন্দর শব্দ ব্যবহার করতেন স্বাভাবিকতাকে বজায় রেখে। ওনাকে বলতে শুনেছি বাংলা ভাষাকে সত্যিই ভাল�োবাসলে আমরা প্রতিদিনের কথ�োপকথনে অনেক সু ন্দর শব্দ ব্যবহার করতে পারি। আমার দীর্ঘদিনের রেডিও জাপানের অনু বাদের হাতেখড়ি হয় বাবলু দার কাছে। রেডিও জাপানের কাজটা আমি পেয়েছি বাবলু দার সাহায্যে। সেইসময় তিনি কলেজে অধ্যাপনা, অনু বাদের কাজ ছাড়াও রেডিও জাপানের সাথে যু ক্ত ছিলেন। অনু বাদের মানের সাথে আপ�োষ না করতে উনিই আমাকে শিখিয়েছেন। অনু বাদের গুণগত মান বাড়ান�োর জন্য ওনাকে দেখেছি এক একটি বাক্যের পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে। বেশ কিছু বছর রেডিও জাপানের গল্পের অনু ষ্ঠানের জন্য মূ ল জাপানি ভাষা থেকে গল্প বাংলায় অনু বাদ করতেন। গল্পের ভাল�ো অনু বাদের বৈশিষ্ট্য এই যে গল্পটি পড়ার সময় পাঠকের মনে হয় সে মূ ল ভাষাতেই গল্পটা পাঠ করছে। বাবলু দার অনু বাদে সর্বদাই সেই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছি। ওনার অনু বাদ ছিল খুব উৎকৃষ্ট মানের আবার একইসাথে খুব সাবলীলও। সেই অনু বাদে অনেক কঠিন জিনিসও সহজব�োধ্য হয়ে উঠত যা কেবল খুব দক্ষ একজন অনু বাদকই করতে পারেন। বাবলু দার লেখা কেন আমাকে সবসময় এত আকৃষ্ট করত তার কারণ ব�োধহয় তাঁর শব্দসম্ভার, সু ক্ষ্ম রসব�োধ, পরিশীলতা, গতিময়তা আর লেখার সহজ সাবলীল স্টাইল। আমার দু ঃখ হয় সেই সময়কার পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ করে রাখিনি। ভাবতে বসলে বাবলু দার অনেক কথা মনে পড়ে যায়। ওনার কাছ থেকে সর্বদাই পেয়েছি ছ�োটব�োনের প্রতি দাদার অপার স্নেহ। তাঁর শিশুসু লভ সারল্যের কথা সর্বজনবিদিত। আমরা ছিলাম তার নিত্যসাক্ষী। মনে হ�োত জীবনের কাছ থেকে ওনার তিনটে মাত্র চাহিদা – খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, আর সর্বোপরি বই এর জগতে ডুবে থাকা। শেষ জীবন পর্যন্ত বাবলু দাকে ক�োনওদিন অর্থ, খ্যাতি, ইত্যাদির পিছনে ছু টতে দেখিনি। সারাজীবন নিজের আনন্দের রসদ নিজেই খুঁজে নিয়েছেন জ্ঞানার্জনের মধ্যে দিয়ে।

আমার ভাতৃবধূ দেবযানীর কথা

১৯৮২ সালে বাবলু দাকে প্রথম দেখি অসম্ভব হাসি খুশি এবং মজলিশি একজন মানু ষ। অগাধ পান্ডিত্য সত্বেও নিরহঙ্কার এবং অমায়িক যার ফলে

122

সকলের কাছেই তিনি ছিলেন প্রিয়। আসর জমান�ো মানু ষ হিসাবে বাবলু দা ছিলেন অদ্বিতীয়। অসংখ্য বৈচিত্র্যময় গল্পের সম্ভার ছিল তাঁর ভান্ডারে, যার টানে ছ�োটবড় সকলেই আকর্ষিত হত তাঁর দিকে। বাবলু দার বহুমুখী প্রতিভার আরেকটি দিক হল ছড়া লেখা, হাইকু অনু বাদ এবং কার্টুন আঁকা। আত্মীয় স্বজনের মধ্যে খুব কম মানু ষই আছেন যারা বিয়েতে বাবলু দার ছড়া সম্বলিত অ্যালবাম উপহার পাননি। খুবই ভ�োজনরসিক ছিলেন বাবলু দা। বিভিন্ন দেশীয় খাবার খেতে পছন্দ করতেন। তবে সবচেয়ে উপভ�োগ করতেন বাঙালি রান্না এবং বাঙলার মিষ্টি। কলকাতা ছিল বাবলু দার প্রাণের শহর। কলকাতার জীবনযাত্রা তিনি ভাল�োবাসতেন। কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে স্বস্তি ব�োধ করতেন। বহু বছরের প্রবাসী জীবনও তাঁর সেই বাঙলীয়ানাকে কেড়ে নিতে পারেনি। কলকাতার আত্মীয় বন্ধু মহল তাঁকে সদাহাস্যময় অজাতশত্রু একজন মজলিশি মানু ষ হিসাবেই চিরকাল মনে রাখবে। জাপানে গিয়ে দেখেছি, বাবলু দা হৈ চৈ আড্ডায় অংশ গ্রহণ করেও তাঁর নিজের কাজ অর্থাৎ দু রুহ তর্জমা করে যেতেন। ভাষার ওপর প্রচন্ড দখল না থাকলে কাজটি করা আদ�ৌ সম্ভব নয় বলে মনে করি। অনেক জাপানিকে বলতে শুনেছি, কল্যাণসান আমাদের থেকেও ভাল জাপানি বলতে ও লিখতে পারেন। কথাটি কত সত্যি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অধ্যাপক নারা বাবলু দার গুণগ্রাহী ছিলেন। বাবলু দার জাপান যাওয়ার পিছনে নারা সেনসেই-এর অবদান অনস্বীকার্য। বাবলু দার আরেকটি গুণের কথা উল্লেখ না করলেই নয় তা হ�োল, অত বড় মাপের মানু ষ হয়েও উনি ছ�োটদের সাথে সমান আড্ডা দিতে পারতেন। গল্পের ছলে উনি বাচ্চাদের অনেক কিছু শেখাতেন। শিক্ষার প্রসারেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিতেন। বাবলু দা কলকাতায় এলে বেহালার ব্লাইন্ড স্কুলে যেতেন। যতদূ র জানি, উনি বই ও টাকা দিয়ে ওদের সাহায্য করতেন।

Tribute from my son Ronnie

I remember seeing him since I was just four and half years old. The impression that got imprinted deep inside me about him since my early childhood was his worldviews, scholarly and off course his lovable nature. As I started growing, I came across with many brilliant people, yet my imagination of the embodiment of scholarship is synonymous to Pishai as I used to call him. I think myself so fortunate to see him closely for many years and for getting enlightened in various subjects. Over the years, I always wished to have long, engaging conversations about various topics with him. Unfortunately, he left before that could happen. I solemnly pray for his eternal peace. I love you Pishai.

উপসংহার

কল্যাণদার খুব ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করার সু য�োগে অনেক সময় মনে হয়েছে কল্যাণদার যে পাণ্ডিত্য তার পরিচয় অনেকেই পান নি, এবং তার জন্য কল্যাণদাকে দিয়ে আরও কিছু করান�োর প্রয়�োজন। সেই উদ্দেশ্যে মাঝেমাঝেই ওনাকে বিরক্ত করতাম যাতে ওঁর প্রাপ্য খ্যাতি অর্জনের জন্য কিছু প্রচেষ্টা চালান�ো যায়। কিন্তু প্রচারবিমুখ মানু ষটি নিজের জ্ঞানার্জনের আনন্দে বিভ�োর হয়ে থাকতে ভাল�োবাসতেন। মুখে বলতেন না তবে মনে হত বলতে চাইছেন “আমায় থাকতে দে না আপনমনে.........” কল্যাণদাকে ঘিরে আমাদের মত স্নেহধন্য আত্মীয় পরিজনদের অনেকের মনেই ওনার স্মৃতি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

Anjali

www.batj.org


A “Genuine” Person - Rita Kar At an IB (International Baccalaureate) workshop, I was attending, a question had been raised as to how to help children decipher between fake and genuine. It started from books, news, etc. but at one point, the discussion had shifted to "who is a genuine person"? Reference was made to an article by Travis Bradberry, published in Forbes, March 2016. Bradberry talks about the 12 habits of genuine people. I don't want to go into the details of all the twelve habits as that is not my purpose, but I will just choose a few in context. 1. Genuine people speak their minds but are not judgemental 2. They forge their own paths 3. They aren't motivated by material things and at the same time generous 4. They treat everyone with respect With these points in mind, I pay my tribute to a person whom I have always respected and considered to be a "Genuine Person". Soon after we had arrived in Japan we were invited to a Bengali home. We were total strangers - the host and the guest. On our arrival, the heartfelt welcome "esho esho" from our host is just what has stayed with us forever. His tone of greeting made us feel so at home - and I gathered - this is how we make strangers friends and then become more like an extended family in a foreign land. And thus, began our first acquaintance with the Dasgupta and Gupta family, and the Bengali community of Tokyo. Over the coming months, we got to know the family and our bond grew stronger and we got to know even better our beloved and respected Kalyan da to whom I can attribute all the traits of a Genuine, loveable, and respected person. Speaking his mind

Kalyan da had his own perspectives and opinions and always shared them with others yet never imposing them on others. At the same time, he showed true interest in the

www.batj.org

other person's questions and views in a very pleasant manner thus making everyday conversations meaningful. Forging his own path

Kalyan da graduated as an engineer but forged an entirely new path guided by his passion for linguistics. He did not adhere to the conventional and safe path to be successful but chose the road that enriched his commitment. Not motivated by material things

For Kalyan da, like any genuine person, showing off was not his nature. His feel-good came from his generosity, his friends, his family, his passion, and a sense of purpose. Treat everyone with respect

Whether interacting with adults or children, scholars or layman, Kalyan da knew how to interact at every level - his respect for others made him approachable and available to all. So, this was Kalyan da - finding joy and happiness in everything and sharing and spreading this joy amongst all. I started with the IB Conference and I will conclude here with a reference to IB education, as that is what many of the International Schools in Japan follow. IB teaches students to be naturally curious, thinkers, openminded, risk-takers, communicators, empathetic, and principled – all these traits were embodied in Kalyan da. In conclusion, for those who don’t know Kalyan da, Kalyan Dasgupta was one of the earliest of Bengalis to come and settle down in Japan. From1973 – 1992 he along with his wife Seuli, inspired and helped many Indians who were new to Japan. Kalyan da loved Kolkata – and all that came with that city and perhaps fate took him to Kolkata from America to spend his last days in his beloved city. 

Durga Puja 2020

123


কেমন হল গো? – কল্যাণদার স্মৃতি ��������������������������� কল্যাণদাকে প্রথমে দেখেছি ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে, ট�োকিও গাইক�োকুগ�ো দাইগাকু ওরফে ট�োকিও বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার ক্লাসে য�োগ দিয়ে। ওঁর মুখে অনর্গল জাপানি শুনে মনে করলাম উনি নিশ্চয়ই বহুদিন জাপানে বসবাস করছেন। পরে যখন জানতে পারলাম যে উনি মাত্র দু বছর আগে এখানে এসেছিলেন, তখন রীতিমত অবাক হলাম, সেইসঙ্গে ক�োন�ো বিদেশি ভাষা রপ্ত করতে আগ্রহী একজন শিক্ষার্থী হিসাবে আমার মন ভরে ওঠে কল্যাণদার প্রতি শ্রদ্ধায়। সেই সময় আমি খুব বাংলা শিখতে চেয়েছিলাম। ট�োকিওর এক সিনেমা হলে সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজি দেখে সেই ইচ্ছার জন্ম হয়। কিন্তু তখন জাপানে বাংলা শিখতে চাইলেও তার ক�োন�ো সু বিধা ছিল না। এমন কি বিদেশি ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে জাপানের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে বিবেচিত ট�োকিও বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলার ক�োন�ো নিয়মিত ক্লাস বসত না। আমি তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বছরের ছাত্র। হিন্দি শিখছিলাম। হিন্দি বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাইলে হিন্দির পাশাপাশি সংস্কৃত ও মারাঠি শিখতে পারত। তবে বাংলা নিয়ে পড়াশ�োনার ক�োন�ো সু বিধা ছিল না সেই সময়। পাঠকদের মধ্যে হয়ত কেউ কেউ বলবেন, আরে, কেমন করে হয় এটা? নারা সেনসেই ত�ো ছিলেন ট�োকিও বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে? হ্যাঁ, ঠিক তাই। প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ ও জাপানে বাংলা ভাষা গবেষণায় অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ডঃ ৎসু য়�োশি নারা তখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন ও এ-এ কেন নামে পরিচিত এশিয়া-আফ্রিকা গবেষণা ইন্‌স্টিটুট (The Research Institute for Languages and Cultures of Asia and Africa )-এর অধ্যাপক; সেখানে নারা সেনসেই-এর কাজ মূ লত গবেষণামূ লক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষার ক্লাসের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবে এ-এ কেনের বার্ষিক প্রকল্পের এক অংশ হিসাবে নারা সেনসেই-এর উদ্যোগে সে বছর বাংলা ভাষার ‘দ্রুত প্রশিক্ষণ ক�োর্স’ (আমার বিশ্বাস কল্যাণদা এই নাম দিয়েছেন)-এর আয়�োজন করা হয়। উদ্দেশ্য, বাংলা ভাষাকে কার্যকরভাবে শেখান�োর উপায় নিয়ে পরীক্ষা চালান�ো। অর্থাৎ আমি সহ ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিলাম গিনি পিগ। তবে গিনি পিগ হতে হলে ক্ষতি কী? বাংলা শেখার সু য�োগ পেয়ে আমি মহা খুশি। দিনে ৬ ঘণ্টার ৬ সপ্তাহ স্থায়ী প্রশিক্ষণ ক�োর্সে সানন্দে য�োগ দিতে শুরু করলাম। ক�োর্সের প্রধান শিক্ষক ছিলেন নারা সেনসেই স্বয়ং। আরেকজন জাপানি শিক্ষক ছিলেন যিনি নাকি এনএইচকের রেডিওতে বাংলা অনু ষ্ঠানের প্রয�োজক হিসাবে কাজ করেন। এঁদের সঙ্গে ইন্‌ফর্মান্ট হিসাবে আমাদের সাহায্য করেছিলেন কল্যাণদা, মঞ্জুলিকা দি, জয়শ্রী দি ও আজাদ ভাই। আজাদ ভাই তখনও বিয়ে করেন নি। এর মানে, ভাল ও সু স্বাদু খাবার জুটত না ওঁর খাবার টেবিলে । স্বভাবতই উনি ভীষণ র�োগা-পাতলা। কল্যাণদা কিন্তু একেবারে উলট�ো। র�োজ শিউলিদির হাতের রান্না উপভ�োগ করে ওঁর অবয়ব ‘বাঙালি বাবু ’ বলতে যা ব�োঝায়, ঠিক সেরকম। পরে একদিন উনি বাঙালি বাবু র বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করলেন; তাঁরা প্রায়ই পেটুক, এর ফলে স্বাস্থ্য তাঁদের ভাল ( অন্য কথায় ম�োটা) হয় এবং তাঁরা ভীষণ কথা বলতে ভালবাসেন অর্থাৎ তারা আলাপী ও আড্ডাবাজ—-ব্যাখ্যাটা শুনে বু ঝতে বাকি রইল না তখন যে টিপিক্যাল বাঙালি বাবু কে চ�োখের সামনে দেখছি ! ৬ সপ্তাহ ব্যাপী ক�োর্স শেষ হবার পর ক্লাসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন বাংলা চর্চা চালিয়ে নিতে চায়। তারা সপ্তাহে একদিন একত্র হয়ে বসে বাংলায় লেখা বিভিন্ন গল্প ও কবিতা পড়তে শুরু করে। এই “বঙ্গ সাহিত্য পাঠচক্র” (এটাও কল্যাণদার নামকরণ) –এর কর্ণধার ছিলেন কল্যাণদা স্বয়ং। নারা সেনসেই-এর অফিসে বসা এই সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন মাসাইউকি ওনিশি, তাম�োৎসু নাগাই(যিনি এখন প্রয়াত) ও কিয়�োক�ো নিওয়া, যারা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্য কর্মের জাপানি অনু বাদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ 124

ভূমিকা নিতে শুরু করলেন। কলকাতা থেকে ফিরে এসে মাসাইউকি উসু দাও পরে এই সভায় আসতে শুরু করেন। সবাই হয়ত জানেন যে উসু দা সান পরে ত�োকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েছেন, সেই সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ “রূপসী বাংলা” ও রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস “শেষের কবিতা”-র মত বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলি জাপানি ভাষায় অনু বাদ করেছেন। কল্যাণদা বাংলা শব্দ বা প্রকাশ ভঙ্গির সূ ক্ষ্ম অর্থ ও ব্যবহার নিয়ে বড় আগ্রহের সঙ্গে আমাদের ব�োঝাবার চেষ্টা করতেন, যেগুল�ো অভিধান থেকে জানা সম্ভব নয়। তার একটা উদাহরণ ‘রীতিমত’ কথাটার ব্যবহার। প্রথমে ধরে নিয়েছিলাম এর মানে হবে ‘প্রথা অনু যায়ী যা হয়’ অর্থাৎ ‘যেভাবে প্রত্যাশা করা যায় ঠিক তেমনই’। কিন্তু কল্যাণদা বললেন এর ব্যবহারিক মানে তা নয়। উনি যেভাবে বু ঝিয়ে দিলেন, আমি সেটি সঠিকভাবে অনু ধাবন করতে পেরেছি কিনা, সেটা বরং আপনারাই বলু ন এই বর্তমান লেখার শুরুতে কথাটার ব্যবহার দেখে। কল্যাণ দার কাছে শেখা আরেকটি কথা যা আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে, সেটি হল ‘অভিমান’। উনি ব্যাখ্যা করে বললেন, এর হুবহু অনু বাদ বা প্রতিশব্দ শুধু জাপানি ভাষা কেন, অন্য ক�োন�ো ভাষায় পাওয়া যাবে না। পরবর্তীকালে বেশ কয়েকজন বাঙ্গালির সঙ্গে য�োগায�োগের মাধ্যমে এবং তাঁদের সংস্পর্শে এসে আমি আস্তে আস্তে ধরে নিতে পেরেছি যে অভিমান জিনিসটা কী আর কল্যাণদা যা বললেন, সেটাই সত্য। উনি বাংলা সংস্কৃতির আরেকটা দিক আগ্রহ সমেত আমাদের বু ঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেটি ছিল ‘আড্ডা’। আড্ডার সারমর্ম সম্পর্কে জানাতে গিয়ে উনি আড্ডা নিয়ে বু দ্ধদেব বসু র লেখা প্রবন্ধ উপস্থাপন করলেন আমাদের পাঠ্য সামগ্রী হিসাবে। সেই সঙ্গে উনি একই লেখকের লেখা গল্প “আমরা তিনজন” পড়তে আমাদের উৎসাহিত করলেন। “আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি, অসিত আর হিতাংশু; ঢাকায় পুরানা পল্টনে, উনিশ-শ�ো সাতাশে। সেই ঢাকা, সেই পুরানা পল্টন, সেই মেঘে-ঢাকা সকাল!” এমন অতি সু ন্দর ছন্দযু ক্ত কথা দিয়ে শুরু হওয়া মন�োমুগ্ধকর এই গল্পে ম�োহিত হয়ে আমি কল্যাণদার কাছে বায়না করেছিলাম পুর�ো গল্পটি ওঁর গলায় রেকর্ডিং করে দিতে। ব্যাপারটা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ এবং জটিল, কিন্তু উনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন। যেকেউ বাংলা শিখতে চাইলে উনি কখন�ো তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দ্বিধা করেন নি, এটি তার অন্যতম প্রমাণ। ‘বঙ্গ সাহিত্য পাঠ্যচক্র’তে আমার উপস্থিতি কমে যায় চাকরিতে ঢ�োকার পর। ‘বাংলা দ্রুত প্রশিক্ষণ ক�োর্স’-এ যিনি শিক্ষক হিসাবে য�োগ দিয়েছিলেন, এনএইচকে-র সেই ভদ্রল�োক হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেওয়াতে অপ্রত্যাশিতভাবেই আমার সেই চাকরি জুটল। কল্যাণদাও তখন এনএইচকে-র বাংলা বিভাগে অনু বাদক ও ঘ�োষক হিসাবে কাজ

Anjali

www.batj.org


কেমন হল গো? – কল্যাণদার স্মৃতি

করছিলেন। তাই কাজের মাধ্যমেও কল্যাণদার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু শেখার সু য�োগ হয়েছিল আমার। শুধু যে বাংলার ভাষাগত জ্ঞান ওঁর কাছে রপ্ত করেছি তা নয়; ওঁর কথার মাধ্যমে জাপানি ভাষা নিয়েও ধারণা পেয়েছি যা আমি আগে জানতাম না অথবা বিষয়টি নিয়ে তেমন খেয়ালই করতাম না। এনএইচকের বহির্বিশ্ব কার্যক্রম রেডিও জাপান ( বর্তমানে ওরা অন্য নামে পরিচিত)-এ কাজের সাধারণ নিয়ম এমন ছিল যে চীনা ও ক�োরীয়-র মত মুষ্টিমেয় কয়েকটি বিভাগ ছাড়া বাকি সব ভাষা বিভাগ ( সেই সময় শর্টওয়েবের মাধ্যমে ২১টা ভাষায় রেডিও অনু ষ্ঠান প্রচার করা হত) মূ লত জাপানিতে লেখা স্ক্রিপ্টের ইংরেজি অনু বাদ থেকে নিজ নিজ ভাষায় পুনরায় অনু বাদ করে তার ভিত্তিতে অনু ষ্ঠান তৈরি করে। কিন্তু কল্যাণদা জাপানি স্ক্রিপ্ট থেকে সরাসরি বাংলায় অনু বাদ করতে পছন্দ করতেন। বলতেন, জাপানি ভাষা থেকে অনু বাদ করলে মূ ল লেখার মানে ও তাতে অন্তর্গত অনু ভূতি আরও সঠিক এবং সু ন্দরভাবে তুলে ধরা সম্ভব। আমার কাছেও ওঁর এই দাবি অত্যন্ত যু ক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে। একদিন তিনি জানতে চান “হিরে নিকু” কী জিনিস? আমি অপ্রস্তুত হয়ে অপরিষ্কার জবাব দিতে শুরু করেছিলাম এরকম বলে যে হিরে নিকু মানে ইয়ে, মাংসের এমন অংশ যেখানে চর্বি কম আর একটু দামী…তখন উনি আমাকে থামিয়ে স�োৎসাহে বলে উঠলেন, আচ্ছা বু ঝতে পেরেছি! fillet! আমি তখন পর্যন্ত জানতাম না সেই ইংরেজি (ফরাসি?) শব্দ থেকে জাপানি হিরে-নিকু কথাটার উৎপত্তি। তার আগে আমি ত�ো গভীর চিন্তা ছাড়াই ভাবছিলাম, ইংরেজি fin (মাছ ইত্যাদির)কে জাপানিতে ‘হিরে’ বলা হয়, তাই কথাটা তার সঙ্গে ক�োন�ো না ক�োন�োভাবে সম্পর্কযু ক্ত। সু তরাং কল্যাণদার দৃ ঢ়কন্ঠে সেই ঘ�োষণা না শুনলে এই শব্দের উৎপত্তি আমি হয়ত জীবনে জানতে পারতাম না। তবে জলের স্রোত প্রথা অনু যায়ী সব সময় উঁচু (কল্যাণদা) থেকে নিচে (আমি)-র দিকে প্রবাহিত হয়, তাও ছিল না। এর ব্যতিক্রমও ঘটেছিল। সেই সময় অফিসে কম্পিউটারের প্রচলন ঘটে নি। বাংলা টাইপরাইটার ব্যবহারও ক�োন�ো ছিল না। তাই বাংলা বিভাগে কর্মরত বাঙ্গালিরা সবাই নিজের হাতে লিখে স্ক্রিপ্ট তৈরি করতেন এবং সেটি স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে পড়তেন। একদিন কল্যাণদার সঙ্গে স্টুডিও গেলাম ক�োন�ো এক অনু ষ্ঠান রেকর্ডিং করতে। রেকর্ডিং শুরু হয়েছে, কিন্তু তার কিছু ক্ষণ পরে উনি হঠাৎ স্টুডিও থেকে বেরিয়ে এলেন। ওঁর হাতের বাংলা স্ক্রিপ্ট দেখিয়ে বললেন, “ওয়াতানাবে সান, আমি এখানে কী লিখেছি?” কল্যাণদা দ্রুত অনু বাদ করতে পারতেন—ওঁর শব্দ ভাণ্ডার এত

www.batj.org

সমৃ দ্ধ ছিল যে অনু বাদের জন্য যথাযথ শব্দ উনি অল্প সময়ের মধ্যে খুঁজে নিতে পারতেন। তার চেয়ে বড় কথা, উনি ভয়ংকর স্পীডে লিখতে পারতেন। কিন্তু মাঝেমাঝে এমন ঘটনাও ঘটেছিল যে খুব দ্রুত হাত নাড়ার ফলে লেখাটা এমন হয়েছে যে উনি নিজেই পড়তে পারেন না। সেদিন সেটাই ঘটেছিল। এদিকে, আমার অভ্যাস ছিল স্টুডিওতে যাওয়ার আগে অনূদিত স্ক্রিপ্টে চ�োখ বু লান�োর। এতে প্রয়�োজনে ক�োন�ো শব্দের মানে নিশ্চিত করা সম্ভব হত এবং অচেনা নতুন শব্দ ও তার ব্যবহার সম্বন্ধে জানার সু য�োগও হত। এই কাজ করতে করতে, এবং সেই সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে আমাদের শ্রোতাদের পাঠান�ো চিঠি ( বলাই বাহুল্য, হাতে লেখা) পড়তে পড়তে আমি বাংলা হাতের লেখা পড়ার ব্যাপারে একেবারে উস্তাদ বনে গিয়েছিলাম। যত ‘অনন্য ধরনের’ হাতের লেখা হ�োক না কেন, আমি সেটা পড়তে পারতাম বাংলা বিভাগের অন্য কারুর চেয়ে ভাল করে। সেই সূত্রে কল্যাণদার হাতের লেখা—অথবা হিজিবিজি বলা উচিত কিনা, কে জানে—আমি বিনা কষ্টে পড়ে ফেলতে পারতাম। চাকরির বাইরেও কল্যাণদার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বন্ধন ও বন্ধু ত্ব গভীর হতে থাকে। উনি প্রায়ই আমাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করে খাওয়াতেন। প্রথমে মিনামি-নাগাসাকির বাড়ি, তার পর ইয়াশিওর বাড়ি। বিশেষ করে ইয়াশিওর বাড়িতে গিয়ে কল্যাণদা ও শিউলিদির সঙ্গে আড্ডা এবং শিউলিদির (এবং পরে রুমাদিরও) হাতের রান্নার পাশাপাশি বাড়ির জানলা থেকে মন�োরম দৃ শ্য উপভ�োগ করতাম। কল্যাণদার বাড়িতে গিয়ে ওঁকে প্রায়ই শিউলিদি-কে হাঁক দিতে শুনতাম “ওগ�ো, শুনছ�ো?” বলে। অন্যান্যরা আমাকে জানালেন কথাটা একটু সেকেলে ধরনের, আজকাল এর তেমন ব্যবহার নেই। তবে ডাকটা আমার কানে খুব মধু র লাগত। আজও সেই ডাক যেন আমার কানে লেগে আছে। কল্যাণ দার মৃ ত্যু সংবাদ পাওয়ার পর আমার জন্য ওঁর রেকর্ড করা “আমরা তিনজন”-এর পাঠ সম্বলিত ক্যাসেট টেপ বের করলাম। চল্লিশেরও বেশি বছর আগে রেকর্ড করা ক্যাসেট টেপ বাজাতে গিয়ে দেখি, তার কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে কাঁচি ও স্কচ টেপের সাহায্যে ক�োন�ো রকমভাবে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তার পর সেটি কম্পিউটারে ট্রান্সফার করে ডিজিটাল ফাইল তৈরি করেছি। তার পরে বসে শুনলাম। কল্যাণদার গলা ভেসে এল। গল্পটি পড়া শেষ করার পর কল্যাণদা শিউলিদি-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “কেমন হল গ�ো?”। এই শুনে চ�োখের জল সামলাতে পারলাম না আর। 

Durga Puja 2020

125


কল্যাণদার স্মর

- মাসাইয়ুকি উসু দা

কল্যাণদা আর নেই। পরিচিত জনের পর পর অন্তর্ধান মনু ষ্যল�োকের অনিবার্য নিয়তি বটে। তবু কল্যাণদা যে আর নেই, তা মনের গভীরে অনির্বচনীয় বেদনা সৃ ষ্টি করে। ওঁকে নিয়ে কয়েকটি স্মৃতি লিপিবদ্ধ করে অতীত দিনের সু খের রাজ্যে ফিরে যেতে চাই। কল্যাণদার সঙ্গে প্রথম পরিচয় কলকাতায় লেক টেরাস’এর কাছে ওঁর বাড়িতে ১৯৭৩ সালে। দক্ষিণ কলকাতার শান্ত আবাসিক এলাকা লেক টেরাস। রাস্তার ধারে ছ�োট একতলা বাড়ি। ভেতরে আল�ো কম। বৈঠকখানার চ�ৌকাঠে হেলান দিয়ে শিউলিদি দাঁড়িয়েছিলেন। একদম নীরব। সু ন্দর মুখমণ্ডল বেদনায় আচ্ছন্ন। কল্যাণদা বললেন, “ত�োমরা নিশ্চয় জান�ো, কিছু দিন আগে পর্যন্ত এই শহরে নকশাল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত কাণ্ড কারখানা চলছিল। সেই ভয়ঙ্কর দৃ শ্য ওর কাছ থেকে হাসিমুখ কেড়ে নিয়েছিল”। যারা শিউলিদির পরের জীবনের উচ্চকণ্ঠের প্রাণখ�োলা হাসি শুনেছেন, তারা ওঁর সেইদিনের বিষণ্ণ মুখখানি কল্পনাও করতে পারবেননা। যাইহ�োক, কল্যাণদা এই সমস্ত কথাবার্তা উচ্চমানের জাপানি ভাষায় সম্পন্ন করলেন। আমার সঙ্গে তানিগুচি সান আর আমার স্ত্রী ছিলেন। অবাক হয়ে শুনলাম। উনি এই শহরে বসে কি করে জাপানি ভাষা আয়ত্ত করতে পেরেছেন? ওঁর জাপানি পড়ার কায়দা শুনে আমাদের বিষ্ময় আরও বেড়ে গেল। সেই প্রথম দেখাতেই আমরা ওঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। অল্পদিনের মধ্যেই আমরা ওঁর কাছে সত্যজিৎ বাবু র “এক ডজন গপ্‌প�ো” পড়তে আরম্ভ করেছিলাম। ওঁর ব্যাখ্যা এত স্পষ্ট ও উদ্দীপক যে আমরা একটু একটু ক’রে বাঙালি জীবনের খুঁটিনাটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। শুধু চমৎকার ভাষার ব্যবহারই নয়, সামাজিক জীবনের অন্তঃপুরের সম্যক ধারণা দেওয়াও ছিল তাঁর কার্যতালিকার এক বিশেষ অঙ্গ। এক ডজনের মধ্যে কয়েকটি পড়ার পর একদিন কল্যাণদা আমাদের নিয়ে গেলেন সত্যজিৎ বাবু ’র বাড়িতে। আলাপের শেষে সত্যজিৎ বাবু অনু মতি দিলেন সেই গল্পগুচ্ছের যে ক�োন�ো একটির জাপানি অনু বাদ প্রকাশ করতে। কয়েক মাস পর কল্যাণদা সপরিবার ত�োকিও অভিমুখে চলে গেলেন। ওঁদের মেয়ে এনিকা চানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বয়স হল। এই ব্যাপারে নারা সেনসেই আমার বাবাকে (উনি তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেডমাস্টার ছিলেন) সাহায্য করতে অনু র�োধ করলেন। বাবা কল্যাণদাকে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে প্রয়�োজনীয় ব্যবস্থা করেছিলেন। এভাবে কল্যাণদা আমাদের পরিবারেরও পরিচিত একজন হয়ে দাঁড়ান। আমরা কলকাতায় পড়াশ�োনা শেষ করে দেশে ফিরে এলাম। তারপর বাংলা সাহিত্যের অনু রাগী কয়েকজন মিলে ট�োকিও বিদেশীভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নারা সেনসেইয়ের কক্ষে “বাংলা পাঠ চক্র” নামক একটি ছ�োট দল গড়ে, প্রত্যেক বু ধবার বাংলা বই পড়তে আরম্ভ করলাম। কল্যাণদা উপস্থিত থাকতেন টিউটর হিসেবে। পড়া গল্পের সংখ্যা যখন বেশ কিছু তে প�ৌছাল�ো তখন “কল্যাণী” (কল্যাণদার নাম অনু সারে) নামে একটি পত্রিকা বার করলাম। আসলে এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওনিশি সান, ঁনাগাই সান আর ওয়াতানাবে সান। তখন সত্যিই সু খের দিন ছিল। আন্ডার গ্র্যাজুয়েটে পড়া নিওয়া সান তখন তরুণী। সকাল দশটা থেকে আরম্ভ করে প্রায় আড়াই ঘন্টা পড়াড় পর কফিটাইম, অনেক গল্প করতাম। সেই সময় নারা সেনসেইও এসে উপস্থিত হতেন। এই চক্রের উজ্জ্বল কেন্দ্রীয় তারকা ছিলেন কল্যাণদা। কত মজার মজার গল্প শুনতাম ওঁর মুখে। কত আনন্দের সময় কাটাতাম। ব্যক্তিগতভাবেও আমি কল্যাণদার কাছে ঋণী। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছ’মাস গবেষণার কাজ করে ইংরেজিতে কষ্ট করে একটি লম্বা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। কিন্তু নিজের ইংরেজি রচনায় ইংরেজির উপর আস্থা ছিলনা। কল্যাণদাকে অনু র�োধ করলাম সেটা সংশ�োধন করতে। উনিও নিশ্চয়ই ব্যস্ত ছিলেন। তবু কল্যাণদা যথাসময়ে সংশ�োধনের কাজ শেষ করে আমার চলনসই প্রবন্ধকে বেশ ভাল প্রবন্ধে রূপান্তরিত করার পর ফেরত দিলেন। সবশেষে বলতে হবে কল্যাণদার কাছে কথা দিয়েও রাখতে পারিনি এমন প্রতিশ্রুতি আমার আছে। কল্যাণদা ব�োধহয় দৃ ষ্টিহীনদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন। একদিন আমাকে রবীন্দ্রনাথের “দু ঃসময়” কবিতাটি জাপানিতে তর্জমা করতে বলেন। আমি একবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মনের মত হয়নি। তারপরে এতদিন পর্যন্ত করব�ো করব�ো করেও করতে পারিনি। দু ঃখের বিষয়, কল্যাণদাকে কথা দিয়েও কথা রাখতে পারিনি। এবার কল্যাণদাকে স্মরণ করতে করতে অনু বাদটি শেষ করেছি। সেটি কল্যাণদার স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করছি ----

126

Anjali

www.batj.org


কল্যাণদার স্মর

たとえ夕暮れが ゆっくりと たゆたげに おとずれ すべての歌が それを汐に 止んでしまったとしても たとえ果てしない空に 道連れがいなくても たとえ疲労が 手足を重たくして 大いなる怖れが 無言の呪文のうちに 数珠をまさぐり あたり一面が ヴェールで包まれたとしても―― それでも鳥よ、おお わたしの鳥よ すぐに 翼をたたんではならない 盲いた鳥よ ++

わざわいの時 ロビンロナト・タクゥル

おお 恐れはない 情愛のしがらみもない―― おお 希望はない、希望はあだな欺瞞にすぎない おお 言葉はない、むなしく座して 泣くこともない おお 家はない、花の褥の支度もない あるのは ただ翼だけ、あるのは 大空の中庭と 濃密な闇が織りなす 方角を失くした夜明けだ おお 鳥よ おお わたしの鳥よ すぐに 翼をたたんではならない 盲いた鳥よ カルカッタ、ジョラシャンコ 一三〇四年ボイシャク月十四日

「おいで おいで」の声に 悲しい願いが籠もっている おお 鳥よ おお わたしの鳥よ すぐに 翼をたたんではならない 盲いた鳥よ

これは ちがう とよもす 森の葉擦れのざわめきではない これは 大蛇の咆哮に 海が 膨れ上がっているのだ これは ちがう クンドの花の香りにむせぶ 四阿ではない 泡立つ大波が とどろいて ゆれているのだ どこなのだ あの岸は 花や葉の茂る岸辺は どこなのだ 巣は 身を寄せる枝は どこに! それでも鳥よ、おお わたしの鳥よ すぐに 翼をたたんではならない 盲いた鳥よ 今もなお 前方には 長い長い夜が ひかえている 太陽は 眠っている はるかに遠い 神話の山に 世界はどこも 息をひそめて ひとり ひっそり座について 時を数えている たった今 姿を現したのは 岸のない漆黒の闇を泳いで 遠くの地平線に 細く曲がった爪の月 おお 鳥よ おお わたしの鳥よ すぐに 翼をたたんではならない 盲いた鳥よ 空の高みでは 星たちが 指をひらいて 合図して おまえの方を 眺めている 下界では 深々と揺れ動く死が あふれて 百の波頭をもたげて おまえの方に 押し寄せる はるか遠くの岸で だれかが呼ぶ 両手を丸くメガフォンにして――

127

Durga Puja 2020

www.batj.org


কল্যাণদার স্মৃ ���������������������� ঠিক বলতে পারছি না, মনে হয় আমার প্রথমবার কল্যাণদার সাথে দেখা হয় ১৯৮১ বা ’৮২ সালে। তখন নারা-সেনসেই-এর রিসার্চ রুমে বাংলা সাহিত্যের পাঠচক্র অনু ষ্ঠিত হচ্ছিল। সেদিন নারা-সেনসেই ছিলেন না, বরং কল্যাণদাই পাঠচক্র পরিচালনা করছিলেন। এই পাঠচক্রটি প্রচলিত প্রথানু যায়ী ক্লাস ছিল না, যারা বাংলা সাহিত্য পড়তে চায় তারা ক�োন�ো একটা ভাল�ো রচনা পড়বার উদ্দেশ্যে একসঙ্গে মিলিত হত। উসু দাসেনসেই বা ওওনিশি-সানের মত বিশেষজ্ঞও সেখানে ছিলেন যাঁদের নিজেদের পড়তে ক�োন�ো অসু বিধা ছিল না, অন্য দিকে আমার মত ছাত্রীও ছিল যার কিছু জানা ছিল না। আমি তখন এম এ-র ছাত্রী ছিলাম। হিন্দির ছাত্রী হলেও রবীন্দ্রনাথের রচনায় মুগ্ধ হয়ে নিজে নিজে বাংলা শিখতে শুরু করেছি মাত্র। তখনও আমি বাংলা ঠিক পড়তে পারতাম না, একদম বলতেও পারতাম না। মাঝে মাঝে কল্যাণদা বিশেষ শব্দ বা বর্ণনার ব্যাখ্যা করে দিতেন। আমি শুধু শুনতে থাকতাম কল্যাণদার কথা, অথবা উসু দা-সেনসেই বা ওওনিশি-সানের সঙ্গে কল্যাণদার সাহিত্যচর্চা । দূ র থেকে দেখছিলাম কল্যাণদাকে তখন। জানতাম কল্যাণদা অত্যন্ত ভাল জাপানি জানেন ও নিজেও ভাষাবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ, তবে ক�োন�ো কিছু জিজ্ঞাসা করার আমার সাহস ছিলনা। ১৯৮৩ সালে আমি বিয়ে করে ট�োকিও ছেড়ে ফুকুওকা শহরে থাকতে গেলাম। সেখানে আমি প্রধানত ইংরেজী শেখাতাম। শহরটা ভাল, নিজেদের জীবনযাপনে ক�োন�ো অসু বিধা বা অতৃপ্তি ছিল না, তবে সেভাবে ভারত বা বাংলা সাহিত্য থেকে দূরে থাকাটা আমার ইচ্ছা ছিল না। অবশেষে

128

১৯৮৪ সালে ভারত সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে বাংলা সাহিত্যের গবেষণা করার জন্যে কলকাতায় যাওয়ার কথা ঠিক করলাম। তিন বছর পরে জাপানে ফিরে এলাম, তবে পাঠচক্র আর চলছিল না বলে কল্যাণদার সঙ্গে দেখা করার সু য�োগ বিশেষ পাইনি। কখন�ো কখন�ো দেখা হত দু র্গাপুজ�োর অনু ষ্ঠানে আর কিছু না কিছু কথাও হত। কল্যাণদার সঙ্গে কথা বলতে বলতে সব সময় মনে হত আমার আর�ো বেশি শেখার আছে। যখন আমি গ�ৌরী আইয়ু বের সঙ্গে মাতসু ও বাশ�োর ওকুন�ো হ�োস�োমিচির (দূ র প্রদেশের সংকীর্ণ পথ) অনু বাদ করছিলাম, তখন কল্যাণদার কাছে কয়েকটা পরামর্শ পেয়েছিলাম। তাদের মধ্যে একটা ছিল যে এটা প্রাচীন রচনা বলে সাধু ভাষায় অনু বাদ করা উচিত, কিন্তু সেই প্রস্তাব আমরা নিতে পারলাম না কারণ গ�ৌরীদির তাতে সায় ছিলনা। বইটা প্রকাশিত হল ১৯৯০ সালে। দু ঃখ হয় কারণ তারপরে অনু বাদ নিয়ে কল্যাণদার সঙ্গে বিশেষ চর্চা করার সু য�োগ পাইনি। ক�োন সালে আমার মনে নেই, কল্যাণদা আমেরিকা চলে গেলেন বসবাস করার জন্যে। আমি সব সময় ভাবতাম পরের বার সু য�োগ এলেই ওনার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলব। তবে সেই সু য�োগ আর পেলাম না। তিনি চলে গেলেন। আমার কথা তাঁর মনে ছিল কিনা জানিনা, তবে আমার স্পষ্ট মনে আছে তাঁর বু দ্ধিমত্তা, সক্রিয় ও হাসিখুশি আলাপআল�োচনার ভঙ্গি । দু ঃখের বিষয় হল আমি সব সময় আগামীবারের কথা ভাবতাম, তবে সেই আগামীবার কখনও আসেনি। 

Anjali

www.batj.org


コッリャンダの「ওগ�ো オゴ〜、」 - 奥田由香 お盆を迎えたというのに、ベランダの朝顔さえ躊躇うかのよう に、固く結んだ青をなかなか開こうとしない。こんな風に思うの も、コロナの呪縛だろうか。目にもとまらぬ微小なる不可思議な 物体から身を守ろうと小刻みに揺れ惑う私たちの姿は、あちら側 にもし鏡があるとしたら、どう映っているのだろう。そんな私の問 いに、几帳面に応えてくれそうな人がいた。遠い記憶の向こうか ら、懐かしいその声が聞こえてくる。 声の主は、コッリャン・ダスグプタさん、私が初めて出会ったベ ンガルファミリーの大黒柱だ。当時私はタゴールのベンガルを目 指し、インド留学に胸を膨らませ、半身乗り出す勢いだったと思 う。考えてみると、コッリャンダの声を聞いたのは、その短い巣立 ちの期間と、後に一時帰国する度に迎えてくださった、八潮の お宅でのひと時だった。巣立った地の匂いを忘れぬ渡り鳥のよ うに、私にとってコッリャンダのベンガル語の響きは、帰るべき地 だったのだろう。暫くして、コッリャンダファミリーは日本からアメ リカに居を移され、それからというもの、私は帰るべき音から遠ざ かってしまい、その音は遂に、永遠に求め続ける音となってしま ったのだ。けれど、消えてしまったわけではない。耳を通過した 声の記憶というのは不思議だ、何よりもその人であり続けるのだ から。 コッリャンダのベンガル語で、私を魅了した最初の言葉は、「 オゴ〜、」だった。奥さんのシウリディを呼ぶ時に、決まってそう 呼ぶのだ。ちょっと離れたキッチンの方からシウリディが、その度 に応答する。その「オゴ〜、」の響きがなんとも心地よくて、ある 時思わずコッリャンダに尋ねてしまったのだ、どうして「オゴ〜、」 と呼ぶのですか、その意味は何なのですか、と。すると、おやお や何を言い出すかと思えば、とでも言うように大きな瞳の目尻を 和らげて、深く腰掛けていたソファーから一旦身を起こすように 座り直して、おもむろに「それはですね〜、」と答えてくださった、 あの情景が私の目の奥に焼き付いている。そう、コッリャンダにど んな質問をしても、必ず解説が返ってくるのだ。質問の種が、数 十倍にも膨らんで、まるでポップコーンのように香ばしく、弾ける 楽しみとなって。ベンガルの人たちは会話好きだと、それまで話 には聞いていたけれど、コッリャンダファミリーの中に入った時、 会話とは、ある種のご馳走なんだと実感したのだ。いくつかの材 料をファミリーのメンバーが回し合いながら、時にスパイスを投入 したり、沸騰させたりして、どこかのタイミングで予想もしていなか ったフレッシュなアイテムが出来上がる、それこそが会話の醍醐 味だということを。 コッリャンダとシウリディの愛娘、長女のエニカちゃんはそうい う環境で育ったせいだろうか、彼女の落ち着いた話し方は、私 よりずっと年上に思えた。物静かにピアノの椅子に腰掛け、お父 さんの言葉に耳を傾けていた。次女は日本で生まれたので、キ クちゃんという名前だと嬉しそうに紹介してくださったのもコッリャ ンダだ。幼稚園に通っていたキクちゃんは、とてもはにかみ屋さ んで幼いモナ・リザのようだった。八潮のお宅に同居されていた もう一つのファミリーは、シウリディの弟ゴウトムダと奥さんのルマ ディ。息子のロニちゃんは、キクちゃんよりもまだ小さかったが、 彼もまた小さなジェントルマンだった。ルマディは、私がこれから シャンティニケタンに留学しても生活に困らないようにと、ベンガ ル語会話を教えて下さった。こうして家長コッリャンダを軸とする 総勢7人のジョイントファミリーの中で、私は日本に居ながらにし て、実は最も素晴らしい本物のベンガルに触れさせていただい ていたのだった。ジョイントファミリーという形はインドでは珍しく はないが、私は何か言いしれぬ温もりを感じた。そして、インド留 学に旅立ち、コルカタのシウリディのご実家でお世話になって、 温もりの原点を確信したのだ。 コルカタ、ゴルフグリーンのレジェントエステート。そこに、シウ リディのご両親と弟さん家族、三世代が身を寄せ合って暮らして www.batj.org

いた。弟さんの愛息子トゥバイ君は笑顔の美しい小さな大使だ った。留学中、そこは私にとって完全なるオアシスだった。萎み かけて辿り着いた時など、どれだけこのご家族に救われたことだ ろう。ベンガル語で言いたいことの半分も言い表せないもどかし さまで、丸ごと真剣に受けとめようとして下さるご両親の大きな懐 に入ると、途端に一筋の光が差し込んでくるようだった。それは 紛れもない「親身さ」、温もりの原点だ。私は思う、家族に流れる 喜びの芽を伸ばす力、悔しさをバネにする力、そして、あるがま まを受け容れる愛こそが、ベンガル、ひいてはインドの本当の豊 かさの根幹であると。豊かさを育む豊かさは、家族を単位にその 内側から生まれてくるものなのだということを、その当時も今も疑 わない。シウリディのお父様は、生前『 স্মৃতির কিরণে দেখা 思い出

の光に照らして』という自伝を出版されている。そこに書かれて いるのはご自身の功績ではなく、すべてご家族のことだ。一人 ひとりの面影が浮かんでくるほど、丁寧に優しいタッチで大事に 語られている。読み進めながら、家族との関わりの中にお父様、 キロンモエ・グプタという人のシルエットが生き生きと浮かび上が ってくる。そして、何と有り難いことに、そこに私のことまで触れて くださっている。Yukaはシャンティニケタンから泊まりに来ては、 ロビンドロションギートを歌って聞かせ、我が家の娘になったと。 そう、お父様もお母様も、いつだって心を込めて、私の拙い歌を 聞いてくださったのだ。そして又、私の母との富士山旅行の思い 出も印象的だったようで、それは母にとっても生涯忘れられない 思い出のページだ。お父様の記憶は素晴らしく、富士山旅行の ページには、初めて入る温泉風呂について、同行したコッリャン ダの詳しい解説が記されている。「お義父さん、お風呂に入る前 に、お風呂について少々説明させてください。お風呂場にはシ ャワーとその下に蛇口があります。その脇に四角い生け簀のよう な浴槽があります。そこには、とても熱いお湯が張ってあります。 先ず石鹸で身体をよく洗いシャワーで流し、それから浴槽に入

Durga Puja 2020

129


ওগ�ো コッリャンダの「 オゴ〜、」 彼の思慮深い判断は、どんな時も間違いはなかった。唯一、彼 の娘の将来についての判断が正しかったかは定かではない。

るのです。この浴槽のことを「お風呂」と言うんです。お風呂のお 湯は入る人が我慢できる、ほどよい熱さになっています。お湯に 浸かっていると、次第に身体が温まってきます。一日の仕事を終 え、ゆっくり浸かっていると疲れがすうっと取れて、よく眠れるん ですよ。しかも身体の節々の痛みも和らぎます。その昔、日本で は家にお風呂がある家庭は少なかったので、近所のお風呂屋さ んに入りに行ったそうです。今でも、そういうお風呂やさんはあっ て、夕食をすませてから仲間とお風呂に入りにいく、という人も少 なくないんです。聞いた話しによると、互いに互いの背中を流し 合うらしいですよ。」 なんと微笑ましい情景だろう。お風呂の入り方について少々 の説明をするコッリャンダと、それをじっくりと聞くお義父さんの姿 が湯けむりの向こうに浮かんでくるようだ。 この自伝の最後に、ご家族お一人お一人から祝辞のメッセー ジが捧げられている。シウリディは、もう一度生まれ変わっても、 この両親の元に生まれたいと。そして、コッリャンダは、「私のお 義父様」と題し、思いを綴られたー「私と義父キロン・グプタ氏と の最初の出会いは、1965年の中頃だった。当時、私はチェン ナイで働いており、仕事の関係でコルカタに帰郷し、その最中に 婚約が成立したのだ。義父にとっての長女であり唯一の娘との 結婚話だ。二人の息子と友人を一人連れて、私の元に会いに 来られた。そして、翌年の1月に結婚し、それ以来私はグプタ家 の婿である。 初対面の時から今日まで45年間、私は義父のことを一人の 人格者として見てきた。窮地に立たされた時など、義父の助言を 頼りにしてきた。それは私の人生に掛け替えのない経験となり、

キロンモエ・グプタという一人の人間像について、この本から 伝わってくることは多いだろう。しかし、彼自身の言葉で本人の ことが語られていないではないか。例えば、一冊の本について 彼が語る時、その本の真髄と彼の心模様がいかに共鳴している のか、聞く者を感動に包み込んでしまうこと。この45年間というも の、私はいつも驚きの眼差しで見つめてきた、とどまることのない 彼の生命力を。私が一時期オリッサに赴任していた時のこと、義 父が義母と二人の息子を連れて夜行列車でやってきた。彼は、 すぐにそこの環境が気に入り、とりわけ社宅近くの小高い丘を見 て感激していた。それは誰が見ても美しいと思うのだが、彼は他 の人とは違った。あの丘を登って頂上に立つと言い出したかと 思うと、もう歩き出していた。そして、その言葉通り頂上まで登り、 丘の上から一望する景色を堪能して降りてきた。その時、私は彼 が本当に羨ましいと感じた。ああ、自分の周囲をこんなにまで楽 しむことのできる力が、なぜ私にはないのだとうと。そう、身近に あるものを驚きを以て楽しむ気持ちが内から溢れてくる、そういう 人を私は彼の他に出会ったかと言うと思い当たらない。この天か ら与えられた才能で今も揺らぐことはなく、どんなに苦難に打ち のめされてもへこたれることはない。 彼を心から尊敬することが私の喜びの根源であり、私の人生 の道標でもある。プロナームを捧げてペンを置くことにしよう。 彼が人生を振り返り、この一冊に込めた願いが形になりますよ うに。思い出の一片一片が次の世代に英気を与えますように。」

尊敬すべきお義父さんとコッリャンダは彼岸でも互いに共鳴し あっているに違いない。私は、このお二人の家族の深い絆を通 して、揺らぐことなく生きてゆく生の姿を見せていただいたと思っ ている。だから、コッリャンダとの思い出はと問われれば、家族と いう豊潤な関係と切り離すことはできないのだ。あちらの鏡に映 る私たちに、きっと変わらぬエールを送ってくれていると思う。

最後に、私の質問「オゴ〜、」にコッリャンダの答えはこうだっ た。満面の笑みを湛え「それはですね〜、一番愛しい人に尊 敬の気持ちをこめて呼ぶ音なのですよ」と。その時から今も「オ ゴ〜、」は、永遠にコッリャンダの音なのだ。

প্রণাম 合掌

130

Anjali

www.batj.org


K. Dasgupta 家との思い出 - Akiko Nara K.Dasgupta さんが奥様のSeuli さんとお嬢さんさんのエニカち ゃんと来日されたのは、47年前の事です。Dasgupta さんが、私 が初めてお目にかかった時、流ちょうに日本語を話せれて驚い た記憶があります。Dasgupta さんは翻訳の仕事以外にベンガル 語やベンガル文学やベンガル歴史学の若い研究者のグループ に、私の late husband の大学の研究室で advice されていまし た。その若い研究者の方々は、後に、大学の Prof. になられ、各 々の分野で活躍されています。私は Dasgupta さんのお宅に招 かれるのを、とても楽しみにしていました。奥さんの作るおいしい ベンガル料理を食べられるからです。食後今は亡きkarabiさん がおいしいミルクティーを作って下さった事もなつかし思い出で す。エニカちゃんは、1才の我家の息子ヒロカズをだっこしたり、 かわいがって下さいました。 数年後次女のキクちゃんが誕生し、その後我家にも娘のナオ コが生まれ、後にseuliさんの弟さんのR.Gupta さん一家が来日 し息子さんのロニー君も加わって、我家の子供達は皆で遊ぶの をとても楽しにみにしていました。私の娘のナオコが1番年下で したので、皆が気をつかって遊ばせてくれていました。数年前ロ

ニーさんか ら「ナオコ ちゃんがお 医者さんに なって、ぼ く達が患者 さんの役と してお医者 さんごっこ をよくして いたんで すよ」とな つかしい思 い出話を聞きました。今は皆結婚してそれぞれ幸せな家族を築 けている事を幸せに思っています。エニカさんは全くとわらない 言語力で、日本語並びに日本文化を教えていらっしゃる事も嬉 しく思います。Dasguptaさんもきっと喜んでいらっしゃる事でしょ う。Seuli サン、エニカさん、キクさんが来日される機会が1日も早 く来るよう祈っています。 

コッラン・ダーシュグプト先生の思い出 - 齋藤 治之 私がコッラン・ダーシュグプト先生に初めてお目にかかった のは1975年の東京外国語大学ベンガル語夏期講習会の教 室で、先生は他の数名のベンガル語ネイティブスピーカーと共 にその中心的存在として我々の学習の手助けをして下さいまし た。夏期講習会が終了した後も講座参加者数名と読書会を発 足し、毎週集まってベンガル語の作品を翻訳し、コッラニという 同人誌も刊行しましたが、その際にはダーシュグプト先生のみが 毎回我々の翻訳の誤りを訂正し正確で美しい日本語訳の完成 へと導いて下さいました。時には池袋から数駅の東長崎にあっ た先生のお宅で開かれることもあり、香辛料の芳香で満たされた お部屋でのベンガル語の学習は私をそれまで未知の世界へと 誘ってくれました。私が当時ドイツ語を専攻していた関係で、先 生は私にドイツで出版されたKollol(コッロル)という名のベンガ ル文学作品をドイツ語に翻訳して掲載した同人誌を見せて下さ いました。我々の同人誌は会の中心メンバーである永井保さん がドイツの同人誌名を知らずに先生の苗字Kalyan(コッラン)に 因んでその女性形であるKalyanī(コッラ二)に基づいて命名した ものであり、ドイツの同人誌と意味は全く異なりますが音がとても よく似ていることに驚いた記憶があります。先生も同じ感想を抱 いたのではないかと思います。 インドの知識人にとっては当然のことかもしれませんが、先生 は母語のベンガル語のみでなくインド各地の諸言語、サンスク リット語、パーリ語を始めとするインド古語にも通じており、また、 他のインド・ヨーロッパ諸語についても広く深い知識を持ってお られました。私もインド・ヨーロッパ語比較言語学に興味を持ち、 大学卒業後もそれを専門にしたいと考えていたので先生との会 話の話題は当然この分野に関することが主でした。最もよく覚え ているのは何かある機会に先生と一緒に渋谷に行く山手線の車 中で先生がロシア語のčelovek(人)という語がサンスクリット語の www.batj.org

cāla vāka(歩き話す者)で説明することができると私に語ったこと です。確かに音韻的には問題ないかもしれませんが、このような 語源的解釈を私はその時初めて聞いたので驚いて先生の顔を 見つめてしまいましたが、先生は別に突飛な学説を披露したと いう様子もなく普段と同じ冷静な表情のままでした。このような発 想は日本人には到底不可能であり、人間という存在を把握し理 解する方法がインドの人々と我々とでは全く異なっていることを 私に痛感させたこの瞬間は今でも私の記憶に鮮明に残っていま す。その後、私がある私立大学のドイツ語教員としてドイツ語で 書かれた古代ドイツ語に関する紀要論文の抜き刷りを先生に差 し上げる機会がありましたが、この話はそれで終わることなく私の 学問人生に決定的な局面を切り開くきっかけを与えることになり ました。それは、当時先生がある翻訳関係の会社で仕事をして いて私の論文をデスクの上に置いたままにしていたところ、隣の 席の人が興味を抱いてこの論文の著者は誰かと先生に尋ねた そうです。その人はゲルマン古語の勉強会を主催しており、先 生の仲介で私もその勉強会に参加することを許され、その後約 15年に亘って私は自分の専門分野であるゲルマン語の知識を 深めることができました。この奇妙な偶然の出会いを作り出し、 私に研究者としての道を示して下さった先生には今でも感謝の 気持ちでいっぱいです。このように先生は日本の様々な人々と の交流関係の中でそれぞれの人々に忘れ難い思い出と恩恵を 与えた存在として皆の記憶に残され、それは今後とも消えること がないと確信しています。また、上に述べた幾つかの例からも分 かるように、先生には互いに無関係に存在する事柄を目に見え ぬ力によって結び付ける何か不思議な能力があるのではないか と思えてなりません。そのことは先生がSF小説をこよなく愛し数 編の作品を日本語からベンガル語に翻訳したことからも窺い知 ることができるのかもしれません。 

Durga Puja 2020

131


132

Anjali

www.batj.org


BENGALI ASSOCIATION OF TOKYO, JAPAN (BATJ) STATEMENT OF ACCOUNT FOR 2019-2020 INCOME ITEM

AMOUNT

Opening Balance on Aug 23 2019 (from 2018-2019)

 

In bank a/c Cash in hand

Collection by subscriptions, pronami, advertisements in Anjali etc.

TOTAL

EXPENDITURE ITEM

Yen 1,094,796 Expenses for Durga Puja, Anjali printing, Saraswati Puja, Rabindra Break up – Jayanti , Community meetings, Yen 593,425 Storage of Durga Pratima, Yen 501,371 Hall rentals, Rehearsals etc. Yen 2,671,011 Closing balance on Aug 22, 2020 (carried forward to 2020-2021)

 

In bank a/c Cash in hand

Yen 3,765,807

TOTAL

AMOUNT Yen 2,658,977

Yen 1,106,830 Break up – Yen 560,638 Yen 546,192

Yen 3,765,807

SINCERE THANKS FROM

Bengali Association of Tokyo, Japan www.batj.org

For assistance on the occasion of Durga Puja on October 06, 2019

- Mr. and Mrs. Ranjan Das for providing fruits and sweets for the Puja - Mr. and Mrs. Partha Kumar for providing sweets for the Puja - Mr. and Mrs. Biswanath Paul for providing fruits and flowers for the Puja - Mr. and Mrs. Prabir Patra for providing flower bouquets for Pratima decoration - Mr. and Mrs. Debraj Dasgupta for providing sweets for the Puja - Mr. and Mrs. Amit Roy for providing NamKeens for the Puja - Mr. and Mrs. Neelanjan Bhattacharjee for providing sweets for the Puja - Mr. Debashish Rakhit for providing sweets for the Puja

For assistance on the occasion of Saraswati Puja on February 2, 2020

- Mr. and Mrs. Biswanath Paul for providing fruits and flowers for the Puja - Mr. and Mrs. Ranjan Das for providing fruits and sweets for the Puja - Mr. and Mrs. Partha Kumar for providing sweets for the Puja - Mr. and Mrs. Ranajit Roy for providing decoration items for Pratima


134

Anjali

www.batj.org


www.batj.org

Durga Puja 2020

135









LAUNCHED NEW BRAND

Bringing India even closer to you with fresher goods and the highest quality. Create joyful times for lovers of Indian food.

*NEW PACKAGING LOOK

Ambika House, 3-19-2, Kuramae, Taito-ku,Tokyo, Japan, 111-0051 Tel: 03-5822-6655 | Fax: 0120-076-656 | www.ambikajapan.com


MOTI AKASAKA Wishes A Very Happy Durga Puja

MOTI AKASAKA, Near T.B.S 2-14-31-3F Akasaka, Minato-ku, Tokyo TEL (03) 3584-6640, 6649

TRY OUR SOUTH INDIAN SPECIALITIES

DELHI HEIGHTS

(A Branch of Moti Akasaka)

144

Anjali

www.batj.org


www.batj.org

Durga Puja 2020

145


146

Anjali

www.batj.org


www.batj.org

Durga Puja 2020

147


Celebrating 33 years in Travel Business!

インドのことなら北から南までお客様の要望に応えてオーダーメイドの旅行をアレンジします。 Please contact us for any travel assistance for India such as Air tickets, Trains, Hotels, Transport, Guides. COURSE EXAMPLE

※This is case of 2persons tour and cost given below per person basis.

EXCURSION PLAN

★AGRA Excursion

INR.6,500~ ~(Visit Taj mahal & agra fort)

★Delhi Full day sightseeing

★JAIPUR Excursion

INR.3,500~ ~

INR.8,500~ ~(Visit City palace,

Jantar mantar,Hawa mahal,Amber fort)

※Include Guide,AC Car, Lunch

※Include Guide,AC Car, Lunch

※Include Guide,AC Car, Lunch Rs.800 Extra

STAY PLAN※Cost is till 29 SEP Departure

Delhi CAR Charter

※Include Guide,AC Car, Lunch Please ask us detail schedule. ★ VARANASI & AGRA 3Days

★AGRA&JAIPUR 3Days

★Haridwar&Rishkesh 3Days

INR.22,000~ ~(Use 4★ ★ hotel) INR.19,500~ ~(Use 4★ ★ hotel)

INR.19,000~ ~(Use 4★ ★ hotel)

* Suzuki Desire class (2Seater) )INR.1,500~ ~

* Toyota Inova (4Seater) )INR.2,200~ ~ ※Cost is for in Delhi,8Hrs. Free use in Delhi until 80km.

※Air & Night train use,SPOT guide ※AC Car & through guide ※AC Car & through guide

Per room Per night with Breakfast Single:INR.2400~

PALS INN Hotel

Twin:INR.2600~

We also operate a standard hotel with convenience and cleanliness in center of Delhi. 30Minuts by car from New delhi Airport / 6Minuts on foot from Patel nagar Metro station. Total 23Rooms (Facility) Wi-fi Free, All room AC, TV, Coffee maker, Bath towel, Soap, Shampoo, Money Exchange, 1 Mineral water per person service! Meeting rooms are also available, you can use only meeting room for 20persons. Banquet room can accommodate 60person for parties please contact us!

TOKYO OFFICE

DELHI OFFICE

501, Dai2 Toei Bldg, 1-17-1 Nishi Gotanda,

#303-304, Padma Tower – 1, Rajendra Place, New Delhi

Shinagawa-ku, Tokyo 141-0031

TEL : 11-41264126

TEL : 03-3495-2829 FAX : 03-3495-2890

MOB : 9810125655 / 9810609989

WEB : www.vaishalitravels.com 148

E-Mail : info@vaishalitravels.com

E-Mail : vaishalitrvls@gmail.com

Anjali

www.batj.org


With Best Wishes

Please contact us for: 1) Remittance Services

2) Deposit Services

3) Trade-related Services

4) Foreign Exchange

Tokyo Marunouchi Nakadori Bldg. 2-2-3, Marunouchi Chiyoda-ku, Tokyo 100-0005

Osaka OAK Sakaisuji Honmachi Bldg. 1-8-12, Honmachi Chuo-ku, Osaka 541-0053

Phone: 03-3212-0911 e-mail: boitok@gol.com

Phone: 06-6261-4035 e-mail: boi.osaka@bankofindia.co.in

Please visit us at http://www.boijapan.com





Turn static files into dynamic content formats.

Create a flipbook
Issuu converts static files into: digital portfolios, online yearbooks, online catalogs, digital photo albums and more. Sign up and create your flipbook.